সুদ সংক্রান্ত আল কুরআনের পাঁচটি আয়াতের অনুবাদ লিখুন।

প্রশ্ন: সুদ সংক্রান্ত আল কুরআনের পাঁচটি আয়াতের অনুবাদ লিখুন। বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



সুদ সংক্রান্ত আল কুরআনের পাঁচটি আয়াতের অনুবাদ লিখুন।

ভুমিকা

সুদ বাহ্য দৃষ্টিতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও প্রচুর মনে হয়, আসলে কিন্তু তা নয়। বরং সুদের অভিশাপ ইহ-পরকালে ধ্বংসের কারণ। এ থেকে সতর্ক করাও উদ্দেশ্য। অর্থাৎ, সুদ খাওয়া থেকে বিরত না হলে, এই হারাম কাজ তোমাদেরকে কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। কারণ, সুদ খাওয়া মানে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা।

সুদ সম্পর্কিত কোরআনের ৫টি আয়াত

সূরা রূম আয়াত ৩৯

وَمَا آتَيْتُم مِّن رِّبًا لِّيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُو عِندَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ

Click to see Ad

অর্থ: মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না। পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।

সূরা আন নিসা আয়াত ১৬১ ও ১৬২

وَأَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُواْ عَنْهُ وَأَكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ مِنْهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا

অর্থ: আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায় ভাবে। বস্তুত; আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব।

لَّـكِنِ الرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُونَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَالْمُقِيمِينَ الصَّلاَةَ وَالْمُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أُوْلَـئِكَ سَنُؤْتِيهِمْ أَجْرًا عَظِيمًا

অর্থ: কিন্তু যারা তাদের মধ্যে জ্ঞানপক্ক ও ঈমানদার, তারা তাও মান্য করে যা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার পূর্বে। আর যারা নামাযে অনুবর্তিতা পালনকারী, যারা যাকাত দানকারী এবং যারা আল্লাহ ও কেয়ামতে আস্থাশীল। বস্তুতঃ এমন লোকদেরকে আমি দান করবো মহাপুণ্য।

Click to see Ad

সূরা বাকারা ২৭৫

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থ: যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।

সূরা বাকারা আয়াত ২৭৬

يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ

Click to see Ad

অর্থ: আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে।

সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৩০

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।

উপসংহার

মহানবী হযরত মুহাম্মদ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সাদকা কবুল করেন এবং ডান হাতে তা গ্রহণ করেন, তারপর তিনি সেটাকে এমনভাবে বাড়িয়ে তোলেন যেমন তোমাদের কেউ উটের বাচ্চাকে লালন-পালন করে বাড়িয়ে তোলে। এমনকি শেষ পর্যন্ত সেই একটি লোকমাও বাড়িয়ে ওহুদ পাহাড়ের সমান করে দেন। লোকেরা ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এ উদ্দেশ্যে যে সুদ দিয়ে থাকে আল্লাহর দৃষ্টিতে তা বৃদ্ধি হয় না। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত প্রদান করা হয়ে থাকে তাই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

ই-কমার্সের সংজ্ঞা দিন। এর প্রকারভেদ ও ইসলামের দৃষ্টিতে নীতিমালা তুলে ধরুন।

প্রশ্ন: ই-কমার্সের সংজ্ঞা দিন। এর প্রকারভেদ ও ইসলামের দৃষ্টিতে নীতিমালা তুলে ধরুন। বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



ই-কমার্সের সংজ্ঞা দিন। এর প্রকারভেদ ও ইসলামের দৃষ্টিতে নীতিমালা তুলে ধরুন।

ভূমিকা

পৃথিবীতে যতগুলো পেশা রয়েছে তার মধ্যে ব্যবসার গুরুত্ব সর্বাধিক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে ব্যবসা করেছেন এবং খোলাফায়ে রাশেদীনসহ অনেক সাহাবীগণও ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। ইসলামের প্রথম যুগে মূলত মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে এদেশে ইসলামের শুভাগমন হয়েছিল। বর্তমান যুগ হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তি বিস্তারের সুবর্ণ যুগ। ইন্টারনেটের কল্যাণে সারা পৃথিবী গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ঘরে বসে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের এক নয়া দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। আধুনিক প্রজন্মের কাছে ই-কমার্স একটি জনপ্রিয় ধারণা।

ই-কমার্সের সংজ্ঞা

ই-কমার্স ব্যবসা-বাণ্যিজ্যের একটি আধুনিক সহজ ও সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র। যেখানে ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম তথা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।

Click to see Ad

ইন্টারনেট ব্যবহার করে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, অর্থ লেনদেন ও ডাটা আদান-প্রদানই হচ্ছে ই-কমার্স। বিশ শতকের শেষের দিকে উন্নত দেশগুলোতে ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হ’লেও একুশ শতকে এসে উন্নয়নশীল দেশ সমূহে তার ছোঁয়া লাগে। ২০০৯ সাল পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেট বিস্তৃত হওয়ায় ই-কমার্স সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরী হয়। যান্ত্রিক জীবনে ব্যস্ত মানুষদের কাছে বর্তমানে ই-কমার্স হচ্ছে একটি জনপ্রিয় ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যম। বিশেষ করে করোনা মহামারির দুর্যোগপূর্ণ এ সময়ে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ই-কমার্সের প্রকারভেদ

সেবা ও পণ্য লেনদেনের ভিত্তিতে ই-কমার্সকে সাধারণত নিমোক্ত ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা যায়। যথা-

  1. ব্যবসা থেকে ব্যবসা (Business to Business- B2B)
  2. ব্যবসা থেকে ভোক্তা (Business to Consumer- B2C)
  3. ভোক্তা থেকে ব্যবসা (Consumer to Business- C2B)
  4. ভোক্তা থেকে ভোক্তা (Consumer to Consumer : C2C)
  5. এম-কমার্স (M-commerce)

Click to see Ad

ব্যবসা থেকে ব্যবসা

ব্যবসা থেকে ব্যবসা সংক্রান্ত ই-কমার্স একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংঘটিত হতে পারে। গতানুগতিক পদ্ধতিতে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাইকারি কেনাবেচাকে বিজনেস টু বিজনেস বলা হয়। এ ধরনের ই-কমার্স সিস্টেমে পক্ষগুলোর মধ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সরবরাহকারী কিংবা পণ্য উৎপাদনকারী হতে পারে। ই২ই ই-কমার্সে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেট এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সহজে এবং দ্রুতগতিতে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করে থাকে। উদাহরণ- আলিবাবা.কম, সিনদাবাদ.কম ইত্যাদি।

ব্যবসা থেকে ভোক্তা

এক বা একাধিক ক্রেতা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্য খুচরা বা পাইকারি লেনদেনসমূহ বিজনেস টু কনজিউমার এর অন্তর্গত। ব্যবসা থেকে ভোক্তা ই-কমার্স সিস্টেমে কোনো ভোক্তা সরাসরি কোনো ব্যবসায়ী বা উৎপাদনকারী থেকে পণ্য ক্রয় করে থাকে। অর্থাৎ ভোক্তাগণ ই-কমার্স সিস্টেমে কোনো পণ্য ক্রয় করলে তা এ জাতীয় লেনদেনের আওতায় পড়ে। এ ধরনের সিস্টেমে ভোক্তারা বা গ্রাহকরা সাধারণত ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত পণ্যসমূহ পর্যবেক্ষণ করে অর্ডার দিয়ে থাকে। তাই এ ধরনের ই-কমার্সের মাধ্যমে ভোক্তার নিকট পণ্য বিক্রয়ের জন্য ব্যবসায়কে অবশ্যই ইলেকট্রনিকস বাজার ব্যবস্থা আর্কষণীয় ও মানসম্মতভাবে উন্নয়ন করতে হয়। উদাহরণ- রকমারি.কম, আজকেরডিল.কম ইত্যাদি।

Click to see Ad

ভোক্তা থেকে ব্যবসা

কিছু কিছু ব্যবসা আছে যা সরাসরি ভোক্তা শ্রেণির কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করে। এ জাতীয় লেনদেন ভোক্তা থেকে ব্যবসা ই-কমার্সের আওতাভুক্ত। অর্থাৎ যখন কোনো ভোক্তা এককভাবে অন্য কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি লেনদেন করে তখন তাকে ভোক্তা থেকে ব্যবসায় বা কনজিউমার টু বিজনেস বলা হয়। এ ধরনের সিস্টেমে ভোক্তারা বা গ্রাহকরা সাধারণত কোনো বিজনেস সাইট থেকে পণ্য ক্রয়ের পরিবর্তে পণ্য ও সেবা বিক্রয় করে থাকে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহক তার পণ্য বা সেবার বিস্তারিত বিবরণসহ ওয়েবসাইটে পোস্ট করেন এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পছন্দ হলে তা ক্রয় করেন।  উদাহরণ- মোনস্টার.কম, দারাজ.কম ইত্যাদি।

ভোক্তা থেকে ভোক্তা

এ জাতীয় ব্যবসা কোনো ব্যবহারকারী থেকে অন্য কোনো ব্যবহারকারীর মধ্যে লেনদেন সম্পাদিত হয়। অর্থাৎ অন্য কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ছাড়াই ভোক্তা থেকে ভোক্তার লেনদেনকে ভোক্তা থেকে ভোক্তা বা কনজিউমার টু কনজিউমার বলা হয়। যেমন- এক শ্রেণির গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আছে যারা পুরাতন গাড়ি কেনাবেচা করে। অর্থাৎ যদি প্রতিষ্ঠানটি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে তাতে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পুরাতন গাড়ি ক্রয় করা একটি ব্যবস্থা রাখে এবং ক্রয় করে পুনরায় বিক্রয় করেন তাহলে এ ধরনের ই-কমার্সকে কনজিউমার টু কনজিউমার বলা হয়। উদাহরণ- ইবে.কম ইত্যাদি।

এম-কমার্স

এম কমার্স বা মোবাইল কমার্স হলো এমন একটি ব্যবসায়িক সিস্টেম যা তারবিহীন বা ওয়ারলেস পরিবেশে সংঘটিত হয়। অর্থাৎ আধুনিকায়নের যুগে মোবাইল, ট্যাবলেট ইত্যাদি ডিভাইসের মাধ্যমে তারবিহীন প্রযুক্তির ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় সিস্টেমকেই এম-কমার্স বলে অভিহিত করা হয়। মোবাইল কমার্সের ফলে বিভিন্ন মোবাইল ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী যেমন- ক্রেডিট সেবা, বিভিন্ন টিকেট, মেডিকেল রেকর্ড ইত্যাদি এবং অর্থ সংরক্ষিত করে রাখার জন্য ওয়ালেট ব্যবহার করছে যা ইলেকট্রনিক ফরমেটে সংরক্ষিত হয়। এম কমার্স প্রধানত ব্যাংকিং, টিকেট ক্রয়, আবহাওয়া ও ভ্রমণ তথ্য প্রাপ্তি, বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য শেয়ার করা, ই-মেইল ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে থাকে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ই-কমার্স

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানুষের চিন্তা-চেতনা, আচার-আচরণ, কৃষ্টি-কালচার সবকিছুর সমন্বয়েই হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম মানুষকে কোন ক্ষেত্রেই লাগামহীন স্বাধীনতা দেয়নি। সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। যেহেতু ই-কমার্স হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি নতুন সংস্করণ। সুতরাং ইসলামী নীতিমালার উপর ভিত্তি করে ই-কমার্সের একটি ধারণা রয়েছে, যা প্রচলিত বাণিজ্যনীতির অনুরূপ। ই-কমার্স গ্রহণীয় বা বর্জনীয় হওয়ার ব্যাপারে প্রধান দু’টি মূলনীতি রয়েছে-

  1. মূলগত: ই-কমার্সে লেন-দেনকৃত পণ্য ও উপাদান বৈধ হতে হবে। অবৈধ পণ্যের কারবার বা ব্যবসা বর্জন করতে হবে। যেমন মদ, জুয়া, সূদ ইত্যাদি। কারণ এসব বিষয় মৌলিকভাবে ইসলামে হারাম।
  2. পদ্ধতিগত: অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় সকল অবস্থায় বৈধ পন্থায় হতে হবে। অর্থাৎ সেখানে কোন ধরনের ধোঁকাবাজি, ভেজাল ও ফাঁক-ফোকর থাকতে পারবে না। কোন ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হালাল ও হারাম সুস্পষ্ট। আর যেকোন হালাল পণ্যে যদি নিম্নোক্ত দু’টি শর্ত পাওয়া যায় তবে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় জায়েয।

প্রথমত, বিক্রেতা যে পণ্যের বিজ্ঞাপন দিবে সেটি তার পূর্ণ মালিকানায় থাকতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যা তোমার কাছে নেই তা বিক্রি কর না’। তবে যদি এমন হয় যে, বিক্রেতার ফ্যাক্টরীতে উপকরণসমূহ পূর্ণ মাত্রায় রয়েছে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেতার হাতে পণ্য তুলে দিতে পারবে, তাহলে পণ্যের বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া বৈধ হবে।

দ্বিতীয়ত, পণ্যটি স্পষ্ট হতে হবে। অর্থাৎ যে পণ্যটি বিক্রয় করা হবে সেটির গুণ, পরিমাণসহ বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে হবে। কোন কিছু গোপন করা অথবা অস্পষ্ট রাখা যাবে না। নু‘মান বিন বশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু অস্পষ্ট বিষয়’।

উপসংহার

সততা, একাগ্রতা ও বিশ্বস্ততা ইসলামী ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ব্যবসায়িক লেনদেনে একজন উদ্যোক্তাকে সৎ এবং বিশ্বস্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ক্রয়-বিক্রয় বা লেনদেনে মিথ্যা, প্রতারণা এবং ওয়াদা ভঙ্গ করার কোন অভিপ্রায় রাখা যাবে না। তাছাড়া প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে তার দেওয়া শর্ত সমূহ যথাযথভাবে পূরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। পণ্য বিক্রয়ের বিজ্ঞাপনে অবশ্যই স্পষ্ট ছবি দিতে হবে এবং পণ্য সংশ্লিষ্ট কোন সত্য গোপন করা যাবে না। এ বিষয়গুলি অবলম্বন করে একটি আদর্শিক ই-কমার্সের নমুনা দাঁড় করানো সম্ভব।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

সুদ বলতে কি বুঝায়? সুদ ও মুনাফার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করুন। সুদের কুফলতা কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: সুদ বলতে কি বুঝায়? সুদ ও মুনাফার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করুন। সুদের কুফলতা কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করুন। বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



সুদ বলতে কি বুঝায়? সুদ ও মুনাফার মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করুন। সুদের কুফলতা কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করুন।

ভূমিকা

ঋণ গ্রহিতা মূলধন বা ঋণ ব্যবহার বাবদ ঋণ দাতাকে যে মূল্য প্রদান করে, তাকে সুদ বলে। কাজেই সুদ হলো ঋণ ব্যবহারের মূল্য। অন্যান্য উপকরণের ন্যায় মূলধনেরও উৎপাদন ক্ষমতা আছে। উৎপাদন ক্ষমতা থাকার কারণে মূলধনের প্রয়োজন পড়ে। মূলধনের উৎপাদন ক্ষমতা আছে বলেই মূলধন বাবদ সুদ দিতে হয়। সুদকে এভাবেও সংজ্ঞায়িত করা যায় যে − সুদ হলো অপেক্ষার পুরস্কার। অর্থাৎ বর্তমান ভোগ ত্যাগের বিনিময়ে ভবিষ্যতে যে প্রাপ্তি আশা করা হয়, তাই সুদ।

সুদ কাকে বলে

কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় সুদকে (ربا) ‘রিবা’ বলা হয়। এই শব্দের মূল ধাতু হল (ر ب و ) যার আভিধানিক অর্থ হল, বাড়, বৃদ্ধি, আধিক্য, স্ফীতি প্রভৃতি। رَبَاঅর্থাৎ বেড়েছে বা বৃদ্ধি পেয়েছে।

Click to see Ad

শরীয়তের ফিক্হবিদ্দের পরিভাষায় সুদের সংজ্ঞা হল, একই শ্রেণীভুক্ত দুটি জিনিসের পরস্পর আদান-প্রদান করার সময় একজনের অপরজনের নিকট এমন বেশী নেওয়া যাতে এ বেশী অংশের বিনিময়ে কোন জিনিস থাকে না।

ফতোয়া আলামগীরীতে সুদের সংজ্ঞা করা হয়েছে, এক মালের বদলে অন্য মালের আদান-প্রদানকালে সেই অতিরিক্ত (নেওয়া) মালকে সূদ বলা হয়; যার কোন বিনিমেয় থাকে না।

মূল থেকে যে পরিমাণ অংশ বেশী নেওয়া বা দেওয়া হবে সেটাকেই সুদ বলা হবে। সুতরাং সুদের সংজ্ঞা হলো, ‘ঋণে দেওয়া মূল অর্থের চেয়ে সময়ের বিনিময়ে যে অতিরিক্ত অর্থ শর্ত ও নির্দিষ্টরূপে নেওয়া হয় তার নাম হল সুদ।

সুদ ও মুনাফার মধ্যে পার্থক্য

আধুনিক বিশ্বে এমনকি আমাদের সমাজেও কেউ কেউ সুদ ও মুনাফাকে একই জিনিস মনে করে থাকে যা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে করা হত। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘তারা বলে ব্যবসাতো সুদেরই মত। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর সুদকে করেছেন হারাম।’’ নিম্নে সুদ ও মুনাফার মধ্যে কয়েকটি মৌলিক পার্থক্য উল্লেখ করা হলো-

Click to see Ad

সুদমুনাফা
অর্থ বা দ্রব্য ঋণ দানের বিপরীতে সময়ের ভিত্তিতে পুর্ব নির্ধারিত হারে ঋণ হিসেবে প্রদত্ত মূল অর্থ বা দ্রব্যের অতিরিক্ত নির্দিষ্ট যে অর্থ বা দ্রব্য গ্রহণ করা হয় তাকে সুদ বলা হয়।উৎপাদন কিংবা ক্রয় বিক্রয়ের ফলে অথবা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগের ফলশ্রুতিতে মূলধন মূলধনের অতিরিক্ত উপার্জিত অর্থ বা সম্পদকে মুনাফা বলা হয়।
সুদের নির্ধারক উপাদান হলো তিনটি; সময়, সুদের হার ও মূলধনের পরিমান। নির্দিষ্ট সুদের হারে ধার দেয়া কোন মূলধনের সুদ ঋণের সময় বদ্ধির সাথে সাথে আনুপাতিক হারে বদ্ধি পায়।অপরপক্ষে মুনাফা হওয়া বা না হওয়া কিংবা কম বেশী হওয়া নির্ভর করে অনুকূল ব্যবসায়িক লেনদেন, ব্যয়, সাশ্রয় ও অনুকূল বাজার চাহিদার উপর।
সুদের ভিত্তি হলো ঋণ। ঋণ থেকেই সুদের উৎপত্তি। অন্যকথায়, সুদমুক্ত ঋণ সম্ভব কিন্তু ঋণ ব্যতিরেকে সুদের উদ্ভব সম্ভব নয়।মুনাফার ভিত্তি হলো প্রত্যক্ষভাবে দ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রয় কিংবা লাভ-লোকসানে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থ ও সম্পদ বিনিয়োগ করা।
সুদের বেলায় ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ মালিক পুঁজি খোয়াবার ঝুঁকি বহন করে না।মুনাফার বেলায় ক্ষতি হবার ঝুঁকি প্রযোজ্য। অন্য কথায় মালিক সম্পূর্ণ বা আংশিক পুঁজি খোয়াবার ঝুঁকি বহন করে।
একটি ফার্মের মূলধন কাঠামোতে সুদযুক্ত ঋণের পরিমান যত বৃদ্ধি পায় ফার্মটি তত বেশী ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হয়। নতুন বিনিয়োগকারীগণ ঋণ ভারাক্রান্ত ফার্মে বিনিয়োগ করতে নিরূৎসাহিত হয়।লাভ লোকসানে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যে কোন পরিমাণ বিনিয়োগ ফার্মের আর্থিক ঝুঁকি বৃদ্ধি করে না।
প্রাপক ঋণদাতা নিজেই কেবল সুদের সুবিধা লাভ করে থাকেন। অর্থাৎ সুদের সব টাকাগুলো চলে যায় ঋণদাতার পকেটে।অন্যদিকে ইসলামি বিনিয়োগ ব্যবস্থায় মুনাফা বাবদ উদ্যোক্তার মাঝে চুক্তি অনুপাতে বন্টন করা হয়।
সুদের হার ও সময় পূর্ব নির্ধারিত বিধায় এক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার কোন উপাদান নেই। ঋণদাতা নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট সময় শেষে সুদ পাবেন তা আগে থেকেই জানতে পারেন।সময় যেহেতু মুনাফা নির্ধারণের কোন নিয়ামক উপাদান নয় এবং মুনাফার হার যেহেতু পূর্ব নির্ধারিত হয় না সেহেতু একজন বিনিয়োগকারী নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগে আদৌ মুনাফা পাবেন কি না অথবা কি হারে বা কি পরিমাণ পাবেন তার কোন নিশ্চয়তা লাভ করা সম্ভব হয় না।
একটি মাত্র ঋণচুক্তির অধীনে ঋণদাতা দীর্ঘকালব্যাপী একই পরিমাণ সুদ বারবার পেতে থাকে।পক্ষান্তরে ক্রয়-বিক্রয়ের ফলে অর্জিত মুনাফা একবারই পাওয়া যায় এবং বিনিয়োগ চুক্তির অধীনে মুনাফা অর্জন সাপেক্ষে পাওয়া যায় বিধায় একই ফল বারবার পাওয়ার প্রশ্ন আসে না।
সুদ একটি স্থির ব্যয় হিসেবে বিবেচিত হয় বলে অনিবার্যভাবে দাম স্তরের বৃদ্ধি ঘটায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে মূল্যস্ফীতির প্রসার ঘটায়।অপরপক্ষে মুনাফা ব্যয় হিসেবে বিবেচিত হয় না বলে অনিবার্যভাবে দামের বদ্ধি ঘটায় না, ফলে মূল্যস্ফীতির প্রসারে সরাসরি কোন প্রভাব রাখে না।
সুদ ইসলামে চুড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ। কোনভাবেই সুদ বৈধ হওয়ায় কোন সুযোগ নেই।অন্যদিকে মুনাফা ইসলামে অনুমোদিত। ইসলাম অবশ্যই স্বাভাবিক মুনাফা অর্জনে উৎসাহিত করে।
মূলধন সংরক্ষণ সুদী ব্যবস্থায় মূলধন সর্বাবস্থায় সুরক্ষিত। অর্থাৎ ঋণগ্রহীতার ব্যবসায় উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও   ঋণদাতার মূলধনের উপর তার বিন্দুমাত্র আঁচড় লাগে না।ব্যবসায় কিংবা লাভ-লোকসানে অংশীদারিত্বের  বিনিয়োগের বেলায় লোকসান হলে বিনিয়োগকৃত মূলধন আনুপাতিক হারে হ্রাস পায়।

সুদের কুফলতা

কুরআন ও সুন্নায় রিবা বা সুদ থেকে সতর্ক করা হয়েছে বারংবার। নিম্নে সুদের কুফলতা সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো-

  • আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’
  • আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তাওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা যুলম করবে না এবং তোমাদের যুলম করা হবে না।’

Click to see Ad

  • আল্লাহ তাআলা সুদ হারাম করেন আর ইহুদিরা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে সুদ বৈধ করার চেষ্টা করে, সেদিকে ইঙ্গিত করে মহান রব বলেন- ‘আর তাদের সুদ গ্রহণের কারণে, অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল।’ ‘আর তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক, মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলতঃ আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাক আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে (তাই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগুণ সম্পদ প্রাপ্ত।’
  • জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদদাতা, গ্রহীতা এবং এর লেখক ও সাক্ষীদ্বয়কে অভিশাপ দিয়েছেন।’
  • সামুরা বিন জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘রাতে আমি দেখলাম, দু’জন লোক এসে আমার কাছে এলো। তারা আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে গেল। আমরা চলছিলাম, সহসা এক রক্ত নদীর পাড়ে গিয়ে উপস্থিত হলাম যার মাঝে দন্ডায়মান এক ব্যক্তি। নদীর মাঝখানে এক ব্যক্তিকে দেখা গেল। সামনে তার পাথর। মাঝের লোকটি নদী পেরুনোর জন্য যেই সামনে অগ্রসর হয়, পাথর হাতে দাঁড়ানো ব্যক্তি অমনি তার মুখে পাথর মেরে তাকে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে দেয়। এভাবে যখনই সে নদী পেরিয়ে আসতে চায়, লোকটি তখনই তার মুখে পাথর মেরে পেছনে ঠেলে দেয়। আমি বললাম, ব্যাপার কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম বললেন, আমি যাকে নদীর মধ্যখানে দেখেছি সে সুদখোর।’
  • আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ধ্বংসকারী সাতটি জিনিস থেকে বেঁচে থাক। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, সেগুলো কী কী? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, শিরক করা, যাদু করা, অনুমোদিত কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল ভক্ষণ করা, জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা এবং সতী সরলা মুমিনা নারীকে ব্যাভিচারের অপবাদ দেয়া।’
  • ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘সুদের অর্থ দিয়ে যা-ই বৃদ্ধি করুক না কেন অল্পই কিন্তু তার শেষ পরিণাম।’
  • সালমান বিন আমর তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- কে বিদায় হজে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেন- ‘মনে রেখ জাহিলি যুগের সকল সুদ ভিত্তিহীন। তোমাদের জন্য শুধুই মূলধন। তোমরা জুলুম করবেও না এবং সইবেও না।’
  • আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘এমন এক সময় উপস্থিত হবে যখন লোকেরা পরোয়া করবে না সম্পদ হালাল নাকি হারাম উপায়ে অর্জিত।’
  • আবি জুহায়ফা রা. তদীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘নবী সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্ত ও কুকুরের মূল্য নিতে এবং দাসীর উপার্জন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। অভিশাপ দিয়েছেন উল্কি অঙ্কনকারী, উল্কি গ্রহণকারী এবং সুদ গ্রহীতা ও সুদদাতাকে। আরও অভিশাপ দিয়েছেন তিনি চিত্রাঙ্কনকারীকে।’
  • আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘সুদের তিয়াত্তরটি স্তর রয়েছে। সর্বনিম্নটি হলো নিজের মায়ের সঙ্গে জেনা করার সমতুল্য। আর অপর ভাইয়ের সম্মান নষ্ট করা সবচে’ নিকৃষ্ট সুদ।
  • ফেরেশতা কর্তৃক গোসল করার সৌভাগ্যধন্য হানযালা তনয় আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘জেনে বুঝে এক দিরহাম পরিমাণ সুদ খাওয়া ছত্রিশবার জেনা করার চেয়েও বড় অপরাধ।
  • ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো জনপদে সুদ ও ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়ে তখন তারা নিজেদের ওপর আল্লাহর আজাব বৈধ করে নেয়।

উপসংহার

বর্তমানে কেউ কেউ সুদকে মুনাফা বলেও প্রচার করছে এবং কাগজপত্রে ‘সুদ’-এর স্থলে ‘মুনাফা’, ‘লাভ’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে হারামকে নিজেদের মনগড়াভাবে হালাল বানানোর চেষ্টা চালাচেছ। তাদের বক্তব্য হচেছ, ‘সুদের অর্থ যেমন অতিরিক্ত, বেশী, বদ্ধি, তদরূপ ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত মুনাফাও তো অতিরিক্ত, বেশী বা বদ্ধি। কাজেই সুদ ও মুনাফা একই জিনিস।’’ অথচ সুদ ও মুনাফা কখনো এক জিনিস নয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে এক মনে হলেও এ দু’য়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিষিদ্ধ ও অনুমোদিত মূলনীতিসমূহ আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিষিদ্ধ ও অনুমোদিত মূলনীতিসমূহ আলোচনা করুন। বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিষিদ্ধ ও অনুমোদিত মূলনীতিসমূহ আলোচনা করুন।

ভূমিকা

ব্যবসা-বাণিজ্যে ইসলাম কতগুলো সুনির্দিষ্ট নীতি মেনে চলার তাগিদ দিয়েছে। আর্থিক লেনদেনে সততা, স্বচ্ছতা, অঙ্গীকার পূরণ করা, জাকাত দেওয়া এবং ভালো গ্রাহকসেবা প্রদান করার ওপর ইসলামী শরিয়া গুরুত্ব আরোপ করেছে। ইসলাম ব্যবসায় ধোঁকা, প্রতারণা, মজুতদারি, খাদ্যে ভেজাল মেশানো, মাপে কম দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করা ইত্যাদি বিষয়কে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। একইভাবে ফটকাবাজি, সুদ, জুয়া, গোষ্ঠীবিশেষের বাজার নিয়ন্ত্রণ, একচেটিয়া কারবার, পণ্যের দোষত্রুটি গোপন করা, মিথ্যা শপথ করা ইত্যাদি নেতিবাচক কাজকেও ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।

ইসলামে ব্যবসার মূলনীতিসমূহ

ইসলাম মানুষকে কোনো ক্ষেত্রেই বল্গাহীন স্বাধীনতা দেয় নি। সব ক্ষেত্রেই রয়েছে নির্দিষ্ট নীতিমালা। আয়-উপার্জন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটে নি। এ ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে ইসলামের দু’টি মূলনীতি রয়েছে।

Click to see Ad

  1. ব্যবসায়িক পণ্য, উপাদান ও কায়কারবারগুলো বৈধ হতে হবে। অবৈধ পণ্যের ব্যবসা ও অবৈধ কায়কারবারকে ইসলাম বৈধতা দেয় না। যেমন, মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ ইত্যাদির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়া ইসলামে অনুমোদন নেই। কারণ, এসব বিষয়কে ইসলামে মৌলিকভাবেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং আপনার ব্যবসার সাথে এসবের সংমিশ্রণ আপনার ব্যবসাকে কলুষিত করে।
  2. ব্যবসা-বাণিজ্য সকল অবস্থায় বৈধ পন্থায় হতে হবে। অর্থাৎ সেখানে কোনো ধরনের ধোঁকাবাজি, ভেজাল ও ফাঁক-ফোকর থাকতে পারবে না। কোনো ধরনের মিথ্যার আশ্রয় থাকতে পারবে না।

নিম্নে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

ব্যবসায় কারো ক্ষতি করা যাবে না

ব্যবসা দ্বারা মানুষের উপকার করার মানসিকতা থাকতে হবে। কারো ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিদ্ধান্ত দেন যে, “নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং অন্যের ক্ষতি করা কোনোটিই উচিত নয়”। ব্যবসা করে গ্রাহকের কাছ থেকে আমরা শুধু লাভ করছি তা নয়; বরং আমরা তাদের জিনিস ও সেবা প্রদান করছি। যদি আমরা যৌক্তিক লাভ করে থাকি এবং মনোপলি না করি তবে সমাজের জন্য এটি একটি বড় সহায়তা। ভালো জিনিস যৌক্তিক দামে প্রদান করায় সমাজের মানুষ সন্তুষ্ট হবে, তাতে আল্লাহ তা‘আলাও আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হবেন।

Click to see Ad

ধোঁকা, প্রতারণা ও ফাঁকিবাজি করা যাবে না

এ ধরনের অপকর্ম ইসলামে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত। মন্দ জিনিস ভালো বলে চালিয়ে দেওয়া, ভালোর সঙ্গে মন্দের মিশ্রণ ঘটিয়ে ধোঁকা দেওয়া ইত্যাদি সম্পূর্ণ হারাম। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে গিয়ে একজন খাদ্য বিক্রেতার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তিনি খাদ্যের ভিতরে হাত প্রবেশ করে দেখলেন ভিতরের খাদ্যগুলো ভিজা বা নিম্নমান। এ অবস্থা দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খাবারের পন্যের মালিক এটা কী? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল, এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সেটাকে খাবারের উপরে রাখলে না কেন; যাতে লোকেরা দেখতে পেত? “যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়”।

মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না

মিথ্যা অবশ্যই একটি নিন্দনীয় ও বড় ধরনের অপরাধ। ব্যবসার সাথে মিথ্যার সংমিশ্রণ আরও বেশি মারাত্মক ও ক্ষতিকর। কোনো মুসলিম সত্যের সঙ্গে মিথ্যার সংমিশ্রণ করতে পারে না। সত্যকে গোপন করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তোমরা সত্যের সঙ্গে অসত্যের মিশ্রণ ঘটাবে না। জেনেশুনে সত্য গোপন করো না”।

একজন মুমিনের দোষ-ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক, যা মেনে নেওয়া যায়; কিন্তু একজন মুমিনের মধ্যে মিথ্যা ও খিয়ানতের দোষ থাকাকে কোনোক্রমেই মেনে নেওয়া যায় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, “একজন মুমিন দুর্বল হওয়া কি স্বাভাবিক? তিনি বললেন, হ্যাঁ- হতে পারে। আবারও জিজ্ঞাসা করা হলো, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে? বললেন, হ্যাঁ। তারপর জিজ্ঞাসা করা হলো, একজন মুমিন মিথ্যুক হতে পারে? বললেন, “না”।

ওজনে কমবেশি করা যাবে না

অন্যকে দেওয়ার সময় ওজনে কম দেওয়া আর নেওয়ার সময় বেশি করে নেওয়া জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “ধ্বংস যারা পরিমাপে কম দেয় তাদের জন্য। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়”।

সুতরাং তুমি যখন কাউকে দেবে তখন কম দেবে না। তুমি যে কাজটি তোমার নিজের জন্য পছন্দ করো না, তা অন্যের জন্য কীভাবে পছন্দ কর। তুমি যখন নিজের জন্য নাও তখনতো তোমাকে মাপে কম দিলে তুমি রাজি হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তুমি তোমার নিজের জন্য যা ভালোবাসো তা অন্যের জন্যও ভালোবাসার আগ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না”।

মিথ্যা শপথ করা যাবে না

মিথ্যা মানবতাবোধকে লোপ করে, নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় ঘটায়। মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর অভিশাপ। মিথ্যা বলে বা মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রি করার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তিন ব্যক্তির সাথে কোনো ধরনের কথা বলবেন না, তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তাদের একজন- যে তার ব্যবসায়িক পণ্যকে মিথ্যা কসম খেয়ে বিক্রি করে”।

অপর একটি হাদীসে এ দৃষ্টান্ত এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, “এক ব্যক্তি আসরের পর তার পণ্য সম্পর্কে কসম খেয়ে বলে, তাকে পণ্যটি এত এত মূল্যে দেওয়া হয়েছে। তার কথা ক্রেতা বিশ্বাস করল, অথচ সে মিথ্যুক”।

ব্যবসার সাথে সুদকে মেশানো যাবে না

সুদ একটি মারাত্মক অপরাধ। সুদ থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। ব্যবসার নামে কোন প্রকার সুদ চালু করা যাবে না। সুদের পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতের দিন দণ্ডায়মান হবে শয়তানের আসরে মোহাবিষ্টদের মতো। কারণ, তারা বলে ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) ওতো সুদের মতো, অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন”।

লেনদেন যদি সুদ সংক্রান্ত হয় তবে হাদীসে এসেছে, জাবের ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, হিসাবকারী এবং সাক্ষী সকলের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন এবং তিনি বলেন তারা সকলেই সমান”।

উপসংহার

নবী করিম (সা.) কেনাবেচার ক্ষেত্রে পণ্যের বিবরণ, মূল্য, মূল্য পরিশোধের সময় সুস্পষ্ট করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে লেনদেনের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা না দেয় এবং ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি না হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং যদি তুমি কোনো সম্প্রদায় থেকে খিয়ানতের (চুক্তি ভঙ্গের) আশঙ্কা করো, সে ক্ষেত্রে তোমার চুক্তি তুমি একইভাবে বাতিল করবে।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

ব্যবসা বলতে কি বোঝেন। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যবসার গুরুত্ব ও মূলনীতি আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: ব্যবসা বলতে কি বোঝেন। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যবসার গুরুত্ব ও মূলনীতি আলোচনা করুন। বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



ব্যবসা বলতে কি বোঝেন। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যবসার গুরুত্ব ও মূলনীতি আলোচনা করুন।

ভূমিকা

মহানবী (সা.) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শের নজির স্থাপন করেছেন। জীবিকা উপার্জনের উপায় হিসেবে ব্যবসায়-বাণিজ্যে মহানবী (সা.) পথ-প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। ৪০ বছর বয়সে নবী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করার আগেও তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। মহানবী (সা.) ব্যবসায়ের কাজে বিভিন্ন সময় সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, বাহরাইন, ইথিওপিয়াসহ আরবের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন।

ব্যবসা কাকে বলে

ইসলামি অর্থনীতির পরিভাষায় ব্যবসায় বলতে মুনাফা ও উপকারিতা লাভের আশায় সন্তুষ্টচিত্তে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাথে অনুরূপ মূল্যমানের লেন-দেনের যাবতীয় কার্যাবলীকে বুঝায়। আধুনিক অর্থনীতিবিগণ ব্যবসায়ের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তার সাথে ইসলামি সংজ্ঞার কোনরূপ বৈপরীত্য নেই। তাদের মতে ধন-সম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন অথবা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মানুষের যাবতীয় কার্যাবলীকে ব্যবসায় বলা হয়। পার্থক্য হচ্ছে, যে সব ব্যবসায়ে সামান্য অকল্যাণ বা প্রতারণার আশ্রয় আছে ইসলাম তা সমর্থন করে না। যেমন মদ ও হিরোইনের ব্যবসায়। অপরপক্ষে সাধারণ ব্যবসায়নীতি এ ধরনের ব্যবসায়কে উপেক্ষা করে না।


Click to see Ad


ব্যবসায়ের মূলনীতি

ইসলাম মানুষকে কোনো ক্ষেত্রেই বল্গাহীন স্বাধীনতা দেয় নি। সব ক্ষেত্রেই রয়েছে নির্দিষ্ট নীতিমালা। আয়-উপার্জন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটে নি। এ ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে ইসলামের দু’টি মূলনীতি রয়েছে। যথা-

  1. ব্যবসায়িক পণ্য, উপাদান ও কায়কারবারগুলো বৈধ হতে হবে। অবৈধ পণ্যের ব্যবসা ও অবৈধ কায়কারবারকে ইসলাম বৈধতা দেয় না। যেমন, মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ ইত্যাদির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়া ইসলামে অনুমোদন নেই। কারণ, এসব বিষয়কে ইসলামে মৌলিকভাবেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং আপনার ব্যবসার সাথে এসবের সংমিশ্রণ আপনার ব্যবসাকে কলুষিত করে।
  2. ব্যবসা-বাণিজ্য সকল অবস্থায় বৈধ পন্থায় হতে হবে। অর্থাৎ সেখানে কোনো ধরনের ধোঁকাবাজি, ভেজাল ও ফাঁক-ফোকর থাকতে পারবে না। কোনো ধরনের মিথ্যার আশ্রয় থাকতে পারবে না।

ব্যবসার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে মানুষের জন্য বিভিন্নভাবে হালাল রিযিকের ব্যবস্থা করে থাকেন। হালাল রিযিক উপার্জন করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীকৃতি দিয়েছেন। হালাল জীবিকা উপার্জনের যত পদ্ধতি আছে, ব্যবসা-বাণিজ্যই এসবের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ব্যবসাই উপার্জনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রাধান্যের অন্তর্নিহিত রহস্য সবচেয়ে বেশি ব্যবসা-বাণিজ্যে। এ অঙ্গনে যে জাতি যত বেশি মনোযোগী হয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তারাই তত বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।



ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব এবং ব্যাপক উৎসাহ দিয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদের সূরা আন-নিসার ২৯ নম্বর আয়াতে বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَٰرَةً عَن تَرَاضٖ مِّنكُمۡۚ ٢٩﴾ [النساء : ٢٩]

অর্থ: তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অবৈধ উপায়ে আত্মসাৎ করো না। পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করো”।

একজন মানুষের জন্য তার অপর ভাইয়ের সম্পদ কখনোই বৈধ হয় না। বৈধ হওয়ার একমাত্র উপায় হলো, বিনিময় বা ব্যবসা। উভয়ের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয়, তাতে একে অপরের সম্পদকে নিজের জন্য হালাল করে নিতে পারে এবং অপরের সম্পদের মালিকানা অর্জন করতে পারে। একেই বলা হয় ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন করা বা হালাল রুজী উপার্জন করা।

এ ধরনের উপার্জনকে হাদীসে উত্তম উপার্জন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “উত্তম কামাই হলো, একজন মানুষের তার নিজের হাতের কামাই এবং সব ধরনের মাবরুর ব্যবসা-বাণিজ্যের কামাই”।

মাবরুর ব্যবসা হলো, যে বেচা-কেনাতে কোনো প্রকার ধোঁকা, খিয়ানত, মিথ্যা ও প্রতারণা থাকে না। পক্ষান্তরে যে ব্যবসার সাথে মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকা ও খিয়ানতের সংমিশ্রণ ঘটে তাকে মাবরুর বলা যাবে না। এ ধরনের ব্যবসায়ীকে সত্যিকার ব্যবসায়ী বলা যাবে না। কিয়ামতের দিন ফাজের (অপরাধী) লোকদের সাথে হাশরের মাঠে তাদের পূণরুত্থান হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই ব্যবসায়ীদের কিয়ামতের দিন ফাজের হিসেবেই উপস্থিত করা হবে। তবে যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, সৎ কর্ম করে ও সত্য কথা বলে, তাকে ছাড়া”।


Click to see Ad


মুমিন ব্যবসায়ীদের গুণাগুণ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা আন-নূর এর ৩৭-৩৮ নম্বর আয়াতে বলেন, এমন লোকেরা, যাদেরকে ব্যবসা বাণিজ্য ও ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, সালাত কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। তারা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে, যাতে আল্লাহ তাদের উৎকৃষ্টতর কাজের প্রতিদান দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও অধিক দেন। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিযিক দান করেন”।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীগণ হাশরের দিন নবী, শহীদ ও সত্যবাদীদের সঙ্গে অবস্থান করার সৌভাগ্য অর্জন করবে”

উপসংহার

মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য-পানীয় ও বস্ত্রের প্রয়োজন। যতদিন জীবন আছে ততদিন কেউ খাদ্য-বস্ত্র থেকে বিমুখ হতে পারে না। এসব জিনিসের সবকিছু ব্যক্তির নিজের পক্ষে সমাধা করা সম্ভব হয় না। এজন্য তাকে অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়। পারস্পরিক লেন-দেনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে তার জন্য যা প্রয়োজন তা অন্য থেকে গ্রহণ করবে আর যার প্রয়োজন নেই অথচ নিজের কাছে আছে তা অন্যের চাহিদা অনুযায়ী প্রদান করবে। লেন-দেনের এ পন্থায় বিধি-নিষেধ নেই। সকলের চাহিদা পূরণ হওয়ার এ পদ্ধতির নামই ব্যবসায়।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

আল ইজারা বলতে কী বোঝায়? আল ইজারার শর্তাবলী ও হুকুমসমূহ বর্ণনা করুন।

প্রশ্ন: আল ইজারা বলতে কী বোঝায়? আল ইজারার শর্তাবলী ও হুকুমসমূহ বর্ণনা করুন। বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



আল ইজারা বলতে কী বোঝায়? আল ইজারার শর্তাবলী ও হুকুমসমূহ বর্ণনা করুন।

ভূমিকা

যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মধ্যমেয়াদি ও দীঘর্মেয়াদি অর্থায়নের প্রয়োজন পড়ে। ইজারা অর্থায়ন মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের একটি উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়। ইজারা অর্থায়ন ইজারাদাতা ও ইজারা গ্রহীতার মধ্যে একটি চুক্তি যেখানে ইজারাদাতা নির্দিষ্ট কিস্তির বিনিময়ে ইজারা গ্রহীতাকে দীর্ঘমেয়াদে সম্পত্তি ব্যবহার করার একচ্ছত্র অধিকার প্রদান করে। ইজারা অর্থায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট দুটি পক্ষ ইজারা গ্রহীতা ও ইজারা দাতা ইজারা অর্থায়নের মাধ্যমে লাভবান হন।

আল ইজারা

নির্দিষ্ট মেয়াদে দু’জনের মধ্যে বৈধ উপকারের বিনিময় চুক্তি করা। ইজারা অর্থায়ন মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস যেখানে সম্পত্তির মালিক সম্পত্তি অন্য একজনকে নির্দিষ্ট মেয়াদে কিস্তি পরিশোধের বিপরীতে ব্যবহার করার অধিকার প্রদান করে। যে সম্পত্তির মালিক তাকে ইজারাদাতা এবং যে সম্পত্তি ব্যবহার করে তাকে ইজারা গ্রহীতা বলে। ইজারা গ্রহীতা প্রতি মেয়াদ অন্তর অন্তর ইজারাদাতাকে যে টাকা পরিশোধ করে তাকে ইজারার ভাড়া বলে। ইজারা অর্থায়নে ইজারা গ্রহীতাকে শুধুমাত্র সম্পদ ব্যবহার করার অধিকার প্রদান করে কিন্তু মালিকানা ইজারাদাতার নিকটই থাকে এবং ইজারা চুক্তির মেয়াদ শেষে সম্পত্তিটি ইজারাদাতাকে ফেরত দিতে হয় অথবা ইজারা গ্রহীতা সম্পত্তিটি ক্রয় করার অথবা ইজারা চুক্তিটি নবায়ন করার সুযোগ পান।


Click to see Ad


ইজারার হুকুম

ইজারা জায়েয। এটা দুপক্ষের মাঝে অত্যাবশ্যকীয় চুক্তি। ইজারা মূলত মানুষের মাঝে পরস্পর সুবিধা বিনিময়। শ্রমিকদের কাজের প্রয়োজন, থাকার জন্য ঘরের দরকার, মালামাল বহন, মানুষের আরোহণ ও সুবিধার জন্য পশু, গাড়ি ও যন্ত্রের দরকার। আর ইজারা তথা ভাড়ায় খাটানো বৈধ হওয়ায় মানুষের জন্য অনেক কিছু সহজ হয়েছে ও তারা তাদের প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হচ্ছে।

ইজারার প্রকারভেদ

ইজারা দু’প্রকার। তা হচ্ছে:

  1. নির্দিষ্ট জিনিস ও আসবাবপত্র ভাড়া দেওয়া। যেমন, কেউ বলল, আমি আপনাকে এ ঘর বা গাড়িটি ভাড়া দিলাম।
  2. কাজের ওপর ভাড়া দেওয়া। যেমন, কেউ দেয়াল নির্মাণ বা জমি চাষাবাদ ইত্যাদি করতে কোনো শ্রমিককে ভাড়া করল।


ইজারার শর্তাবলী

ইজারার শর্ত চারটি। তা হলো:

  1. লেনদেনটি জায়েয হওয়া।
  2. উপকারটি নির্দিষ্ট হওয়া। যেমন, ঘরে থাকা বা মানুষের খিদমত বা ইলম শিক্ষা দেওয়া ইত্যাদি।
  3. ভাড়া নির্ধারণ করা।
  4. উপকারটি বৈধ হওয়া। যেমন ঘরটি বসবাসের জন্য হওয়া। অতএব, কোনো হারাম উপকার সাধনে যেমন, যিনা, গান বাজনা, ঘরটি গীর্যার জন্য ভাড়া দেওয়া বা মদ বিক্রির জন্য ব্যবহার করা ইত্যাদি হারাম কাজের সুবিধার জন্য ভাড়া দেওয়া বৈধ নয়।

Click to see Ad


কেউ বিনা চুক্তিতে গাড়ি, বিমান, ট্রেন ও নৌকা ইত্যাদিতে আরোহণ করলে বা দর্জিকে কাপড় কাটতে বা সেলাই করতে দিলে বা কুলিকে দিয়ে বোঝা বহন করালে তার এসব কাজ জায়েয হবে এবং তাকে সেখানকার ‘উরফ তথা প্রচলিত নিয়মানুসারে ভাড়া প্রদান করতে হবে। কেননা ‘উরফ তথা প্রচলিত প্রথা এসব ব্যাপারে ও এ জাতীয় আরো অন্যান্য ব্যাপারে কথা বলে চুক্তি করার মতোই।

ভাড়াকৃত নির্দিষ্ট জিনিসের মধ্যে শর্ত হচ্ছে সেটি ভালো করে দেখা ও এর গুণাবলী জানা, এর প্রদত্ত উপকারের ব্যাপারে চুক্তি করা, এর অংশের ওপর চুক্তি নয়, সেটা সমর্পন করতে সমর্থ হওয়া, বাস্তবেই তাতে উপকার থাকা এবং ভাড়াকৃত জিনিসটি ভাড়া প্রদানকারীর মালিকানাধীন থাকা বা তার ভাড়া দেওয়ার অনুমতি থাকা।

উপসংহার

যেসব জিনিস বেচাকেনা হারাম সেসব জিনিস ভাড়া দেওয়াও হারাম, তবে ওয়াকফ, স্বাধীন ব্যক্তিকে আযাদ ও উম্মে ওয়ালাদ তথা মালিকের কাছে যে দাসীর বাচ্চা হয়েছে এসব বাদে। কেননা এসব জিনিসে ভাড়া জায়েয। ভাড়াকৃত জিনিসটি নষ্ট হয়ে গেলে এবং উপকার সাধন শেষ হয়ে গেলে ইজারা বাতিল হয়ে যাবে। ভাড়াগ্রহণকারী অবহেলা ও সীমালঙ্ঘন না করলে ভাড়াকৃত জিনিস তার কাছে নষ্ট হলে এর কোনো জরিমানা দিতে হবে না। চুক্তি করার দ্বারা ভাড়া দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়, ভাড়াকৃত জিনিস ফেরত দেওয়ার সময় ভাড়াও জমা দেওয়া ওয়াজিব, তবে দুজনে বিলম্বে বা কিস্তিতে প্রদানে রাজি থাকলে তাও জায়েয। আর শ্রমিক তার কাজ শেষ করলে সে তার পারিশ্রমিকের অধিকারী হবে।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

সরকারী দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকুরীতে সরাসরি নিয়োগের নির্ধারিত কোটা পদ্ধতির সংশোধন।

সরকারী দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকুরীতে সরাসরি নিয়োগের নির্ধারিত কোটা পদ্ধতির সংশোধন।

সরকারী দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকুরীতে সরাসরি নিয়োগের নির্ধারিত কোটা পদ্ধতির সংশোধন। | বিস্তারিত…



সরকারী দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকুরীতে সরাসরি নিয়োগের নির্ধারিত কোটা পদ্ধতির সংশোধন PDF Download

DOWNLOAD LINK


রাষ্ট্রপতির কার্যালয় • প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় • সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ • মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ • শিক্ষা মন্ত্রণালয়গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ভূমি মন্ত্রণালয়পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কৃষি মন্ত্রণালয়স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়খাদ্য মন্ত্রণালয়স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়শিল্প মন্ত্রণালয়শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়রেলপথ মন্ত্রণালয়নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়অর্থ মন্ত্রণালয়


ইহুদি ও নাসারা কাকে বলে এবং কেন আল্লাহর পুত্র মনে করে?

প্রশ্ন: ইহুদি ও নাসারা কাকে বলে এবং কেন আল্লাহর পুত্র মনে করে? বিষয়: IST-601 : Study of Al Tafsir কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



ইহুদি ও নাসারা কাকে বলে এবং কেন আল্লাহর পুত্র মনে করে?

ভূমিকা

কুরআনে ইহুদি নাসারাদের কথা এসেছে। অনেকেই জানে না ইয়াহুদি নাসারাদের পরিচয়। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকের ধর্ম গ্রন্থেই শেষ নবি ও রাসুল আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন। উল্লেখিত জাতির যারাই শেষ রাসুলকে পাবে, তারা অবশ্যই তাঁর প্রচারিত জীবন ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার এবং তাঁকে মেনে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইহুদি ও নাসারাদের পরিচয়

উল্লেখিত জাতিসমূহের পরিচয় তুলে ধরা হলো-

  • ইহুদি: হযরত মুসা আলাইহিস সালামের অনুসারীরাই (বনি ইসরাইল) ইহুদি। ইহুদি শব্দের অর্থ হচ্ছে বন্ধুত্ব। যেহেতু মুসা আলাইহিস সালামের অনুসারীরা অপরাধের কারণে আল্লাহর নিকট তাওবা করে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে তাই তাদেরকে ইহুদি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কেউ কেউ বলেন, ইহুদের সন্তান ছিল বলে তাদেরকে ইহুদি বলা হয়। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বড় ছেলের নাম ছিল ইহুদ। তারা তাওরাত পড়ার সময় নড়াচড়া করত বিধায় তাদেরক ইয়াহুদ বা হরকতকারী বলা হয় বলেও একটি মত পাওয়া যায়।

Click to see Ad


  • নাসারা: বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের যারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে পেয়েছে তাঁদের প্রতি নির্দেশ ছিল ঈসা আলাইহিস সালামের শরীয়তকে মেনে নেয়া। তাঁকে বিশ্বাস করা এবং মেনে নেয়া ছিল ওয়াজিব। তাদের নাম হয় নাসারা তথা সাহায্যকারী। কেননা তারা একে অপরকে সাহায্য করেছিল। তাদেরকে আনসারও বলা হয়। কুরআনে ঈসা আলাইহিস সালামের কথা উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে, আল্লাহর দ্বীনে আমার সাহায্যকারী কে আছে? হাওয়ারীগণ বলে, আমরা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী। কেউ কেউ বলেন, এসব লোক যেখানে অবতরণ করে ঐ জায়গার নাম নাসেরাহ বিধায় তাদেরকে নাসারা বলা হয়েছে।

ঈসা মসীহকে কেন আল্লাহর পুত্র বলা হয়?

এক সময়ে ইসলামের অনুসারীদের এক অংশের মধ্যে বিশ্বাস বিদ্যমান ছিল যে, আল্লাহ্ তায়ালার দেহ বা হাত পা ছিল। তারা বিশ্বাস করত, আল্লাহ্ ছিল হাত, মুখ ইত্যাদি দৈহিক অঙ্গপ্রতঙ্গ ধারণকারী। কোরআন ও হাদিসের অংশ বিশেষের আক্ষরিক বর্ণনার ফলে, এই বিশ্বাসকে প্রমাণ করে তুলেছেন। যেমন ইসলামী দর্শনে লেখা আছে, “এদের (যাহারিয়া ও মুশাব্বিহা) মতে, আল্লাহ্ শরীরী, আপন আসনে আসীন। তাঁর হাত মুখ আছে। তিনি রসুল করীমের পবিত্র স্কন্ধে হাত রাখেন এবং রসুল করীমও তার হাতের স্নিগ্ধতা অনুভব করেন।”



পরবর্তীতে অবশ্যই ইসলামী চিন্তাবিদ ও পণ্ডিতরা উপলব্ধি করেছিলেন যে, আক্ষরিক দৃষ্টিকোণে ঐ সব অংশের ব্যাখ্যা দেয়া বা গ্রহণ করা যাবে না। ঐ সব অংশকে সব সময় অলংকারিক রূপক অর্থে গণ্য করতে হবে।

রূপক ব্যাখ্যা

এক সময়ে এটা বুঝতে পারা গেল যে, ধর্মগ্রন্থের কোন কোন অংশকে রূপকভাব অবশ্যই গণ্য করতে হবে। এর পরে কীভাবে অন্যান্য কঠিন অংশগুলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। যেমন নিম্নলিখিত হাদিসগুলো আক্ষরিক অর্থে বুঝতে খুবই কষ্টকর ছিল। রসুল করিম বলেছিলেন, “কালো পাথর (হাজরে আসওয়াদ) হলো আল্লাহর হাত।”, “মুসলমানের অন্তর আল্লাহর আঙ্গুলসমূহের মধ্যে অবস্থিত।’, “আমি ইয়ামেন থেকে আল্লাহ্ খোশবু পাচ্ছি”।

এখানে অপ্রত্যক্ষ এবং রূপক ব্যাখ্যা গ্রহণ করায় সমস্ত অসুবিধাগুলো দূরীভূত হয়েছে এবং প্রকৃত অর্থ স্পষ্টরূপে ভেসে উঠেছে। আগেকার ভুল বুঝাবুঝি উক্ত প্রকৃতির ধর্মীয় ভুল বুঝাবুঝি শুধুমাত্র কোরআন এবং হাদিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তৌরাত, জবুর এবং ইঞ্জিলের মধ্যেও এমন বহু ব্যাখ্যার জটিলতা আছে। যেমন, নবিদের উপাধিগুলো নিয়ে সহজেই ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করা সম্ভব।


Click to see Ad


ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ

উদাহরণস্বরূপ আমরা হযরত ইবরাহিম (আঃ) সম্বন্ধে একটু চিন্তা করতে পারি। তাঁকে উপাধিটা দেয়া হয়েছিল ‘খলিলুল্লাহ্” বা ‘আল্লাহর দোস্ত’। এখানে যারা আক্ষরিক অর্থ উপাধিটা বুঝতে চায়, তাদের অনেক জটিলতা ও সমস্যা রয়েছে। কারণ মানুষের দোস্ত থাকতে পারে, কিন্তু আল্লাহর দোস্ত থাকা কেমন করে সম্ভব? একজন মানুষ তার বন্ধুর সাথে উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া করে, এবং তার কাছে পরামর্শ পায়। জগতের দিক দিয়ে ‘দোস্ত’ শব্দটা সেই অর্থে বুঝায়। কিন্তু সে অর্থে কি আল্লাহর দোস্ত কোন দিন থাকতে পারে? কখনও না। বরং এর নিশ্চিত অর্থ হলো রূপক।

এটা স্পষ্ট যে, সর্বশক্তিমান ও নিরাকার আল্লাহ তায়ালার সাথে হযরত ইবরাহিম (আঃ) উঠা-বসা ও খাওয়া-দাওয়া করেননি বা তার কাছে পরামর্শের জন্য যাননি। আর তা করা সম্ভবও ছিল না। বরং আল্লাহর কাছে ইবরাহিম নবী তাঁর জীবনকে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করলেন। আল্লাহ্ হুকুমে তিনি তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ী ও আত্মীয়স্বজন সবাইকে ত্যাগ করে অন্য এক দেশে চলে গেলেন। সব সময় তিনি আল্লাহর অনুগত ছিলেন এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য চেষ্টাই তাঁর জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিল। সেইজন্য এখানে ‘খলিলুল্লাহ্’-এর স্পষ্ট অর্থ হলো আক্ষরিক নয় বরং রূপক। আল্লাহ্তা’আলার সাথে ইবরাহিম নবীর ঘনিষ্ঠ রূহানিক বা আধ্যাত্মিক সম্পর্ক ছিল বলে তাঁকে বলা হয় ‘খলিলুল্লাহ্’। রূপক অর্থে তিনি আল্লাহ্র দোস্ত ছিলেন, জাগতিক অর্থে নয়।

আল্লাহর পুত্র

তারপর কিতাবের আর একটি উপাধি আছে যার সঠিক ব্যাখ্যা করার পিছনে অনেক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। সে উপাধি হলো ‘আল্লাহর পুত্র’ এবং সেটাকে নিয়ে নিঃসন্দেহেই ব্যাপক ও কঠিন ভুল বুঝাবুঝি অবকাশ আছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ‘আল্লাহর পুত্র’ শব্দটা সমগ্র ইহুদী জাতিকে জড়িত করে, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ঈসা মসীকে জড়িত করে।



আক্ষরিক অর্থ নয় বরং রূপক যারা এই অভিধানিক শব্দটার আপত্তি তুলেছে তারা এর আক্ষরিক অর্থকে গ্রহণ করেছে এবং এর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করায় তাদেরকে অনেক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করলে, এ মেনে নিতে হবে যে, আল্লাহর একজন স্ত্রী ছিল এবং আল্লাহ্ দৈহিক প্রক্রিয়ায় সন্তানাদির জন্ম দিয়েছিলেন (নাউজুবিল্লাহ্)। কিন্তু ইঞ্জিলের নিজস্ব শিক্ষাই পরিষ্কার রূপে এমন একটি মারাত্মক ভুলের বিরোধিতা করেছে। ঈসা মসীহ্ নিজেই ইঞ্জিল শরীফের সাক্ষ্য দিয়েছেন যে আল্লাহ্ এক এবং তাঁর কোন শরিক নেই। উনি মানুষকে হেদায়েত করলেন এভাবে,

“আমাদের মাবুদ আল্লাহ এক। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত দিল, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমাদের মাবুদ আল্লাহকে মহব্বত করবে।”

ইঞ্জিল কিতাব আরো পরিষ্কার শিক্ষা দেয় যে, আল্লাহর কোন দেহ নেই। আল্লাহ্ প্রাকৃতিক নিয়মে বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্তান জন্ম দান করেন, এই ধারণা যেমন অসম্ভব তেমনি জঘন্য ও কুৎসিকতাপূর্ণ। অতএব যারা ‘আল্লাহর পুত্র’ এর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করবে; তারা তাদের মতো একই সমস্যায় পতিত হবে যারা কোরআন ও হাদিসের উপরোক্ত অংশের ব্যাখ্যার আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করেছে। প্রকৃতপক্ষে ‘আল্লাহর পুত্র’ শব্দটাকে রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করতে হবে বলে ইঞ্জিলের প্রকৃত অনুসারীরা সবাই এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন। তাই এখন শব্দটার রূপক ভাবার্থ উপলব্ধি করার জন্য আসুন আমরা আরো কতগুলো বিষয়ের দিকে নজর দেই।

ঈসা কালিমুল্লাহ

কোরআন শরীফ ও ইঞ্জিল শরীফে ঈসা মসীহের আর একটি উপাধি ‘কালেমাতুল্লাহ্’ বা আল্লাহর বাণী লিপিবদ্ধ আছে। এ ক্ষেত্রেও উপাধিটাকে পরিষ্কারভাবে আক্ষরিক অর্থে নেয়া যাবে না। তিনি একটি আক্ষরিক কালাম, আওয়াজ, অক্ষর বা শব্দ নন। বরং এখানে ‘কালাম’ শব্দটাকে রূপক অর্থে গ্রহণ করতে হবে। রূপক অর্থে ‘কালাম’ হচ্ছে একটি মাধ্যম একজনের চিন্তা এবং ইচ্ছাকে অপরের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়ার অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্র বা বাহক। ঠিক সেভাবে ঈসা মসীহ্ ছিলেন আল্লাহ্ এবং মানব জাতির সাথে আল্লাহ তায়ালার যোগসূত্র। ঈসা মসীহের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর চিন্তাধারা এবং আকাঙ্খাকে মানুষের নিকট ব্যক্ত করতে পারতেন। এখন এটা সুস্পষ্ট যে, ‘খলিলুল্লাহ্’ উপাধিটার মতো ‘কালিমাতুল্লাহ্’ উপাধিটাকেও রূপক অর্থে বুঝতে ও গ্রহণ করতে হবে। তাই এটা আশ্চর্যজনক কিছু নয় যে, কিতাবের আর একটা উপাধি ‘আল্লাহর পুত্র’ রূপক অর্থে থাকবে। এই ধরণের রূপক অর্থ শুধু ধর্মীয় বষয়ে নয়, বরং অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা যায়। যেমন এটা সহজভাবে প্রমাণ করা যায় যে, আমরা ঠিক যেভাবে ব্যাখ্যা দিতেছি ‘পুত্র’ ও ‘পিতা’ শব্দগুলো প্রায়ই সেইভাবে, রূপক অর্থে, ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

উপসংহার

সাধারণভাবে বলা হয় যে, অমুক ব্যক্তি একটা জাতির পিতা। কিন্তু কেউই এতো বোকা নয় যে সে চিন্তা করবে যে ঐ নামীয় ব্যক্তিটি ঐ দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্মদাতা পিতা। কিন্তু তা নয়, প্রকৃতপক্ষে এটা রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেহেতু জাতীয় স্বাধীনতা এবং অগ্রগতিতে ওই ব্যক্তি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন, তাই তাঁকে সম্মান ও স্নেহসূচক ‘জাতির পিতা’ আখ্যায় আখ্যায়িত করা হয়। এ শুধু একটি উপাধি। ঐ ব্যক্তি যে তার দেশের সাথে নিবিড় সম্পর্ক পোষণ করে, এই আখ্যার দ্বারা তাই প্রতিপন্ন হয়। পিতার এই ধরনের রূপক ব্যবহার শুধুমাত্র মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আল্লাহ্র প্রতি তা প্রয়োগ হতে দেখা যায়। আল্লাহ্ শেষ পর্যন্ত সব কিছুর স্রষ্টা, সরবরাহকারী ও পালনকারী।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

তাকওয়া কাকে বলে এর গুরুত্ব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: তাকওয়া কাকে বলে এর গুরুত্ব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে আলোচনা করুন। বিষয়: IST-601 : Study of Al Tafsir কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



তাকওয়া কাকে বলে এর গুরুত্ব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে আলোচনা করুন।

ভূমিকা

আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা মানুষকে হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ, ভাল-মন্দ বিচার করে চলার জন্য তাকিদ দিয়েছেন। অন্যায়, অবৈধ, অবিচার ও অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকর জন্য খোদাভীতির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিহার্য। একজন মানুষকে সৎ, যোগ্য ও আদর্শবান ব্যক্তি হতে হলে তাক্বওয়ার বিকল্প নেই। তাকওয়া হচ্ছে সব ভালো কাজের উৎস, পুণ্য কাজের জন্য পথের দিশারি। তাকওয়া হচ্ছে ভালো কাজের মাধ্যমে আল্লাহর আজাব থেকে বেঁচে থাকা। আগের ও পরের সব উম্মতকে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।



তাকওয়া কি

তাক্বওয়া আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল ভয় করা, বিরত থাকা, সংকোচ বোধ করা, হারাম থেকে বিরত থাকা, (বিশেষ অর্থে) হালাল ও মুবাহ বস্তু থেকে বিরত থাকা, আল্লাহভীতি, বেছে চলা, আত্নশুদ্ধি, রক্ষা করা, সতর্কতা অবলম্বন করা ইত্যাদি।

তাকওয়ার গুরুত্ব

কোরআনের পরতে পরতে তাকওয়া অর্জনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তাকওয়ার সবচেয়ে ভালো সংজ্ঞা দিয়েছেন বিশিষ্ট সাহাবি উবাই ইবনে কাব (রা.)। একবার উমর (রা.) উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তাকওয়া কী? উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আপনি কি কখনো কাঁটা বিছানো পথে হেঁটেছেন? উমর (রা.) বলেন, হ্যাঁ। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, (কাঁটা বিছানো পথে) আপনি কিভাবে হেঁটেছেন? উমর (রা.) বলেন, খুব সাবধানে, কষ্ট সহ্য করে হেঁটেছি, যাতে আমার শরীরে কাঁটা বিঁধে না যায়। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, এটাই হচ্ছে তাকওয়া। কাঁটাযুক্ত পথে কাঁটা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেভাবে সতর্ক হয়ে চলে, ঠিক সেভাবে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য আল্লাহ যা ভালোবাসেন, সেই অনুযায়ী আমল করার নাম তাকওয়া।



তাকওয়াবানদের নিকট সত্য-মিথ্যার পরিচয় সুস্পষ্ট

যাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় প্রবল, তাদের নিকট আল্লাহর আদেশ-নিষেধ তথা জায়িয-নাজায়িয, হালাল-হারাম, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি বিষয়গুলোর অতি সুক্ষ সুক্ষ প্রার্থক্যগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। দুনিয়াদাররা কিন্তু তা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র আল কুরআনুল কারীমের সূরা আনফাল এর ২৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا ﴿الأنفال: ٢٩

অর্থ: হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে সত্য-মিথ্যার প্রার্থক্য নির্ণয়কারী একটি মানদণ্ড দান করবেন।

উত্তম ও অধমের মাপকাঠি হল তাকওয়া

মানুষের কাছে মানুষের সম্মান ও সুখ্যাতি অর্থ-বিত্ত, ক্ষমতা, পদমর্যাদা ইত্যাদি দ্বারা ছড়িয়ে পরলেও আল্লাহ তা‘আলার নিকট সম্মান ও মর্যাদার একমাত্র মানদন্ড হল তাক্বওয়া বা খোদাভীতি। আল্লাহ তা‘আলা সূরা ‍হুজরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে বলেন, “নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার নিকট সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাক্বওয়াবান।’’


No posts


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ যর (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুমি সাদা বা কাল এর ভিত্তিতে উত্তম হতে পারবে না, যদি তাকওয়ার দিক থেকে তুমি এগিয়ে না থাক।’’

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে একবার জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশী সম্মানিত। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে বেশি পরহিযগার সে বেশি সম্মানিত।

তাকওয়া উত্তম পাথেয়

আল্লাহ্ তা‘আলা সূরা বাকারার ১৯৭ নম্বর আয়াতে বলেন, “তোমরা পাথেয় সঞ্চয় কর, আর উত্তম পাথেয় হল তাকওয়া। অতঃএব ওহে জ্ঞানী ব্যক্তিরা! তোমরা আমাকেই ভয় কর।’’

জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আগমন করে আরয করল: ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি সফরে যেতে ইচ্ছা করেছি। আমাকে কিছু পাথেয় দান করুন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে পাথেয় হিসেবে তাকওয়া বা পরহিযগারী দান করুন।


Click to see Ad


তাকওয়ার স্তর

তাকওয়ার তিনটি স্তর

  1. অন্তর ও সব অঙ্গ গুনাহ ও হারাম কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখা।
  2. মাকরুহ বা ঘৃণিত কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।
  3. অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।

তাকওয়ার উপকারিতা

  1. আল্লাহর সাহায্য ও নৈকট্য পাওয়া যায়।
  2. শেষ পরিণাম ভালো হয়।
  3. উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়।
  4. সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
  5. দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জিত হয়।
  6. উপকারী ইলম অর্জনে সহায়ক হয়।
  7. সত্য ও বিশুদ্ধ বিষয় পেতে সহায়ক হয়।
  8. অফুরন্ত রিজিক পাওয়া যায়।
  9. জান্নাত পাওয়া যায়।
  10. জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

উপসংহার

আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ব্যাপারে অবগত আছেন। আমাদের অপরাধগুলো পৃথিবীর কেউ দেখুক আর না দেখুক, আল্লাহ তায়ালা কিন্তু সব ঠিকই দেখছেন। পৃথিবীর অন্য কোনো শক্তি নয়। শুধুমাত্র এই অনুভূতিটাই আপনাকে হারাম কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। এই অনুভূতিটা থাকার কারণেই সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময়েও সোঁনার মানুষে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা আল্লাহকে ভয় করে সব ধরনের গুনাহর কাজ থেকে বিরত থেকেছেন।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব আলোচনা করুন। বিষয়: IST-601 : Study of Al Tafsir কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব আলোচনা করুন।

ভূমিকা

ইসলামে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামি বিধান মতে, বিচারক ও সাক্ষ্যদাতা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে চলবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থেকো। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা ন্যায়বিচার করো—এটি আল্লাহভীতির নিকটতর। আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা করো নিশ্চয়ই আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন।’

ন্যায় বিচারের গুরুত্ব

ন্যায় বিচার স্বয়ং আল্লাহ তাআলারই অন্যতম একটি গুণ। তিনি জমিনে তার প্রতিনিধিকেও ন্যায় বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের সূরা সোয়াদ এর ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

یٰدَاوٗدُ اِنَّا جَعَلْنٰکَ خَلِیْفَۃً فِی الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَیْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰی فَیُضِلَّکَ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ ؕ اِنَّ الَّذِیْنَ یَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِیْدٌۢ بِمَا نَسُوْا یَوْمَ الْحِسَابِ ﴿۠۲۶﴾

অর্থ: হে দাউদ! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছি। সুতরাং তুমি মানুষের মধ্যে যথাযথভাবে বিচার করো।



ন্যায়নিষ্ঠ বিচারকের অনন্য মর্যাদা দান করেছে ইসলাম। কেননা ন্যায়নিষ্ঠ বিচারক সমাজে অবিচারের পরিবর্তে সুবিচার, অপরাধের পরিবর্তে শৃঙ্খলা, অন্যায়ের পরিবর্তে ন্যায়, মন্দের পরিবর্তে ভালো প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তুমি বিচার করো, তখন তাদের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে ফায়সালা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়নিষ্ঠদের ভালোবাসেন।’

হাদিসে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিচারকাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের যথাযথ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের পুরস্কারের ও ঘোষণা রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন—

‘কোনো বিচারক যখন বিচার করে এবং বিচারকাজে (সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে) যথাযথ প্রচেষ্টা চালায় আর তার রায় সঠিক হয়, তবে তার জন্য দুটি নেকি। আর বিচারক যখন বিচার করে এবং বিচারকাজে যথাযথ প্রচেষ্টা চালায় (ইজতিহাদ করে) আর তার রায় ভুল হয়, তবে তার জন্য একটি নেকি।’



উক্ত হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, যিনি বিচারকাজে নিযুক্ত হবেন তিনি বিধান উদ্ভাবন, সত্য-মিথ্যা যাচাইকরণ এবং দলিল-প্রমাণ মূল্যায়নের যোগ্যতা রাখেন। আল্লাহ তায়ালা সুরা হুজরাতের ৬ নম্বর আয়াতে বলেন, “হে মুমিনরা! যখন তোমাদের কাছে কোনো ফাসিক ব্যক্তি সংবাদ নিয়ে আসে, তোমরা তা যাচাই করো।”

মূর্খ ও অযোগ্যদের বিচারক পদ গ্রহণ করা বৈধ নয়। বিশেষত বিচারকাজে নিযুক্ত ব্যক্তি অবশ্যই কোরআন, সুন্নাহ, ইসলামি আইনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে পূর্ববর্তী আলেমদের মতামত এবং কিয়াস (অন্য বিধানের আলোকে বিধান উদ্ভাবন) করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করা জরুরি।

ইসলাম যেমন বিচারকের জন্য পুরস্কার ও মর্যাদা ঘোষণা করেছে, তেমনি বিচারকদের সতর্কও করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যাকে মানুষের মধ্যে বিচারক বানানো হলো, তাকে ছুরি ছাড়া জবাই করা হলো।’

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার বিচারক জান্নাতি আর অপর দুই প্রকার বিচারক জাহান্নামি। জান্নাতি হলো সেই বিচারক, যে সত্যকে জেনে-বুঝে সে অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে। আর যে বিচারক সত্যকে জানার পর বিচারে জুলুম করে সে জাহান্নামি এবং যে বিচারক অজ্ঞতাবশত ফায়সালা দেয় সেও জাহান্নামি।’



মনে রাখতে হবে, একটি সুন্দর সমাজের মেরুদণ্ড শক্তিশালী থাকে ন্যায় বিচারের ওপর। আর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে আল্লাহর বিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি আমার রাসুলদেরকে নিদর্শনাদি দিয়ে প্রেরণ করেছি এবং তাদের সঙ্গে নাজিল করেছি কিতাব ও মাপার পাল্লা, যেন মানুষ ন্যায় বিচার কায়েম করতে পারে।’

সূরা হুজরাতের ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘যদি মুসলমানদের দুদল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি ওদের একদল অন্য দলের উপর চড়াও হয় তাহলে তোমরা সকলে সেই চড়াওকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে, তবে উভয় দলের মাঝে ন্যায়ের সঙ্গে বিচার করে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সুবিচারকারীদেরকে ভালোবাসেন।’

নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সাত শ্রেণির লোক হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে। প্রথম শ্রেণি হচ্ছেন ন্যায়পরায়ণ শাসক।

ন্যায়বিচার যেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলোও জটিল। কোরআনের ভাষায় মৌলিকভাবে দুটি কারণে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা থেকে বিচ্যুত হয়। সেগুলো হলো- স্বজনপ্রীতি ও ভালোবাসা।

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতে বলেন, “হে ইমানদারগণ! তোমরা ইনসাফের পূর্ণ প্রতিষ্ঠাকারী, আল্লাহর জন্য সাক্ষ্য প্রদানকারী হয়ে যাও, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা (তোমাদের) মাতাপিতা ও আত্মীয়স্বজনের বিপক্ষে হয়। অতএব তোমরা ইনসাফ করার বিষয়ে অন্তরের খেয়াল খুশির অনুসরণ করো না।”

উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদানকারী ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যদি নিজেদের, পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়র বিপক্ষে গিয়েও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হয় তাও করতে হবে। মুফাসসিরগণ বলেন, একথা বলার কারণ হচ্ছে, মানুষকে সতর্ক করা। কারণ, এদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়েই মানুষ ইনসাফের পথ থেকে বিচ্যুত হয়। এখানে কিছু শ্রেণির কথা উল্লেখ করে মূলত পারস্পরিক সম্পর্কের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সম্পর্কের কারণে মানুষ ইনসাফের পথ থেকে সরে আসে, যাকে স্বজনপ্রীতি বলা হয়।

উপসংহার

বর্তমানে স্বজনপ্রীতি মহামারির রূপ নিয়েছে। আদালত, প্রশাসন, রাজনীতি ও সামাজিক সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে মানুষ নিজের লোকদেরকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে মানুষ ইনসাফ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদের সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা সুবিচার করো, এটাই তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী।’ আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুবিচার করার তাওফিক দান করুন।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam