Saturday, December 21, 2024

আল-কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলনের ইতিহাস আলোচনা করুন

প্রশ্ন: আল-কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলনের ইতিহাস আলোচনা করুন ▶ বিষয়: (IST-505) Principles and History of Tafsir Literatureকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

মহাবিস্ময়কর গ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল কোরআনে মোট ১১৪টি সূরা আছে। নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুয়তী জীবনের প্রায় ২৩ বছর ধরে এসকল সূরা নাযিল করা হয়েছে। হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর তেইশ বছরের নবী-জীবন, মাক্কী ও মাদানী-এ দুই ভাগে বিভক্ত। কুরআন তথা কোরআনের সূরাগুলোও ও দুই পর্বে বিভক্ত। এজন্য কুরআন নাযিলের সময় ও স্থান অনুযায়ী কুরআনের সূরা ও আয়াতকে মাক্কী ও মাদানী দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলনের ইতিহাস

মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুগে কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলনের ব্যবস্থাসমূহ ছিল নিম্নরূপ-

(ক) কুরআন মুখস্তকরণ

কুরআন মাজীদ নাযিল হওয়ার সাথে সাথে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুখস্থ করে নিতেন এবং তা জিবরাঈল (আ)-কে শুনাতেন। সাথে সাথে সাহাবীগণকেও কণ্ঠস্থ করে স্মৃতিভাণ্ডারে সঞ্চিত করে রাখার নির্দেশ দিতেন।


আরো পড়তে পারেন: ইজাজুল কুরআন কি? কুরআনের অলৌকিকতা বিস্তারিত আলোচনা করুন


(খ) পারস্পরিক পঠন-পাঠন ও শ্রবণ

অধিকতর সতর্কতার জন্য মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি বছর রামযান মাসে জিবরাঈলের (আ) সাথে কুরআন পারস্পরিক পঠন-পাঠন ও শ্রবণ করতেন। তেমনিভাবে তিনি সাহাবীগণকে শুনাতেন আর সাহাবীগণও তাঁকে শুনাতেন।

(গ) ব্যাপক চর্চা ও শিক্ষাদান

সাহাবীগণের মধ্যে কুরআন মুখস্থ করা, স্মরণ রাখা এবং শিক্ষাদানের অদম্য আগ্রহ বিদ্যমান ছিল। পবিত্র কুরআনকে স্বীয় স্মৃতির মণিকোঠায় সুরক্ষিত রাখার নিমিত্তে হাজার হাজার সাহাবী সকল মগ্নতা ত্যাগ করে এ সাধনায় জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। নিয়মিত রাত জেগে তারা নফল নামাযেও তিলাওয়াত করতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা আল-ইমরানের ১১৩ নম্বর আয়াতে বলেন-

لَیۡسُوۡا سَوَآءً ؕ مِنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ اُمَّۃٌ قَآئِمَۃٌ یَّتۡلُوۡنَ اٰیٰتِ اللّٰهِ اٰنَآءَ الَّیۡلِ وَ هُمۡ یَسۡجُدُوۡنَ

অর্থ: তারা সকলে সমান নয়; আহলে কিতাবের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা গভীর রাত পর্যন্ত আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং সাজদাহ করে।

মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সময় মদীনায় আরো বেশ কয়েকটি মসজিদ কায়েম হয়েছিল। সেগুলোতে কুরআন শিক্ষাদানের ব্যবস্থা ছিল। বহু সাহাবী মানুষকে কুরআন শিক্ষাদানে ব্যস্ত ছিলেন। অনেক মহিলা বিয়ের মোহরানা স্বরূপ স্বামীর নিকট কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করতেন। এভাবে ব্যাপক চর্চা ও শিক্ষাদানের বিপুল আগ্রহ ও তৎপরতার দ্বারা কুরআনের বাণী ছিল সকলের মুখে মুখে।

(ঘ) কুরআনের বাস্তব আমল

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং সাহাবীগণ কুরআনের প্রতিটি আয়াতের মর্ম বাস্তব জীবনে রূপায়িত করার চেষ্টা করতেন।


আরো পড়তে পারেন: মাক্কী ও মাদানী সূরা কাকে বলে? মাক্কী ও মাদানী সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য লিখুন।


(ঙ) কুরআন লিখন, উপকরণ ও বিন্যাস

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সুচারুরূপে ওহী লিখন দফতর-এর মাধ্যমে কুরআনের লিখনের কাজটি করানো হয়। তবে এ সময় কুরআন মাজীদ একই পাণ্ডুলিপিতে একত্র করা হয়নি। মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে কুরআন লিখনের উপকরণ ছিল গাছের বাকল, হাড়, চামড়া, পাথর, কাপড়, মিশরীয় ফোম, বস্ত্র এবং তখনকার মতো আবিষ্কৃত এক প্রকার কাগজ। কুরআনের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সময় নাযিল হয় এবং তা সুচারুরূপে লিখিত হয়। সূরার নামকরণ, ধারাবাহিকতা এবং কোন আয়াত কোন সূরার কোথায় লিখিত হবে তার সবকিছুই আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সুবিন্যস্ত ছিল।

প্রথম খলীফার আমলে কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলন

মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে কুরআনের যেসব পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হয়েছিল তা একই গ্রন্থে ছিল না বরং বিভিন্ন বস্তুর উপর বিক্ষিপ্তভাবে ছিল। এদিকে মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিরোধানের পর হযরত আবু বকরের খিলাফতের প্রথম দিকে ইসলাম বিরোধী চক্র ও ভণ্ড নবীর বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে কুরআনের বহু হাফিয শাহাদাতবরণ করেন। হযরত উমর (রা) কুরআন একত্রে গ্রন্থাবদ্ধ করে সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্বারোপ করলে হযরত আবু বকর (রা) তা সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

তৃতীয় খলীফার আমলে কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলন

ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমানের (রা) আমলে আরব সীমান্ত পেরিয়ে পারস্য ও রোমের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। ফলে কুরআনের পঠনে আঞ্চলিক ভাষা ও উচ্চারণের প্রভাব কুরআনের বিশুদ্ধ পাঠে বিঘ্নতা দেখা দেয়। এ অবস্থা দেখে হযরত উসমান (রা) উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি নেতৃ স্থানীয় সাহাবীদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে যায়িদ ইবনে সাবিত (র)-এর নেতৃত্বে একটি সংস্থা গঠন করেন। এ সংস্থা মূল পাণ্ডুলিপির অনুকরণে একই পঠন রীতিতে কুরআনের মাসহাফ তৈরি করেন এবং তার অনুলিপি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। আর সতর্কতার জন্য পূর্বের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শুদ্ধ, অশুদ্ধ ও আঞ্চলিক উচ্চারণের কুরআনের সমস্ত অংশ বা কপি তলব করে নেওয়া হয়। আর তা আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করে দেওয়া হয়। এভাবেই কুরআন মাজীদ সংকলিত ও সংরক্ষিত হয়।



পরবর্তীকালে কুরআন সংরক্ষণ ও সংকলন

কুরআনের পাঠ সহজতর করার জন্য হরকত সংযোজন করেন হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ। তারপর থেকে কুরআনে আর কোন কিছু অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়নি। তখন থেকে আজ পর্যন্ত কুরআন হাফিযদের স্মৃতিভাণ্ডার এবং মুদ্রণ শিল্পের মাধ্যমে ও লিখিত আকারে নির্ভুলভাবে সংরক্ষিত রয়েছে এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।

উপসংহার

আল-কুরআন সুদীর্ঘ ২৩ বছরব্যাপী নাযিল হয়। নাযিল হওয়ার সাথে সাথে তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবায়ে কিরাম মুখস্থ করতেন। ওহীর লেখকগণের দ্বারা লিখিয়ে রাখতেন। তা নিজ জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বাস্তবায়ন করতেন। তা ব্যাপক পঠন পাঠন হতো। প্রথম খলিফার আমলে তা একই গ্রন্থে গ্রন্থায়ন করা হয়। তৃতীয় খলিফার আমলে কুরআনের একই পঠনরীতি চালু করা হয়। এভাবে কুরআন সংরক্ষিত আছে। এতে কোনরূপ বিকৃতি হয়নি এবং কিয়ামত পর্যন্ত মহান আল্লাহ তা সংরক্ষণ করে রাখবেন।



• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles