▶ প্রশ্ন: মহানবী (সা.)-এর মিরাজের ঘটনা ও ইসলামে এর তাৎপর্য বর্ণনা করুন ▶ বিষয়: (IST-503) Al-Sirat Al-Nababiah ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
মহান আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় দ্বীনের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই ইহজগত রেখে অসীম স্বর্গজগৎ, সাত আসমান, বায়তুল মামুরসহ সৃষ্টি রহস্য অবলোকন ও উপলন্ধি এবং বেহেশত-দোযখ পরিভ্রমণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ প্রদত্ত বাহনে আরোহন করে সুদীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে আল্লাহর সানিধ্য লাভ করেন এবং তার উম্মতের জন্য অশেষ নেয়ামতসহ একাধিক হুকুর-আহকাম নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন। বিশ্ব মানবকুলকে অবাক করে নবীর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রাখতে সক্ষম রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর এই মহান ঘটনাকে মিরাজুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বা মিরাজ নামে অভিহিত করা হয়।
মিরাজের ঘটনা
নবুয়তের দশম বর্ষে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ৫০ বছর বয়সে রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে মিরাজ অনুষ্ঠিত হয়। আবার কেউ কেউ মিরাজের সময়কাল নবুয়তের একাদশ সন বলেও উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সূরা বনি ইসরাঈলের শুরুতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِہٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَہٗ لِنُرِیَہٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّہٗ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ
আরো পড়তে পারেন: মদীনায় মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রধান কার্যাবলী বিবরণ দিন
অর্থ: পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।
হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক রাতে কাবা চত্বরে যমযম ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যখানে ঘুমিয়েছিলেন। এ সময় তিনি শুনতে পেলেন, কে যেন তাঁকে ডাকছেন। জেগে দেখলেন জিবরাঈল (আ) তাঁর শিয়রে দণ্ডায়মান, অদূরে বুরাক নামক এক বাহন অপেক্ষা করছে। যার রং সাদা এবং উচ্চতা খচ্চরের চাইতে একটু ছোট। এটি আলোর গতি সম্পন্ন ছিল বলে একে বুরাক নামকরণ করা হয়।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন বুরাকের ওপর আরোহণ করতে গেলেন, তখন তা নিজেকে সঙ্কুচিত করার চেষ্টা করলে হযরত জিবাইল (আ.) বুরাককে ধরে বলেন, সাবধান! ইতিপূর্বে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর চেয়ে কোনো শ্রেষ্ঠ মানুষ তোমার ওপর আরোহণ করেনি। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাতে আরোহণ করেন এবং হযরত জিবাইল (আ.) এর সাথে একসঙ্গে সফর আরম্ভ করেন।
মদিনায় তাঁরা প্রথম যাত্রা বিরতি করেন এবং সালাত আদায় করেন। জিবরাইল (আ.) বলেন, এটা আপনার হিজরতের স্থান। মক্কা ত্যাগ করে পরে আপনাকে মদিনায় আসতে হবে। দ্বিতীয়বার যাত্রা বিরতি করেন সিনাই পাহাড়ে। মুসা (আ.) আল্লাহর সাথে এই পাহাড়ে কথা বলেছেন। তৃতীয়বার যাত্রা বিরতি করেন হযরত ঈসা (আ) এর জন্মস্থান পশ্চিম জেরুজালেম এর বেখেলহেম।
আরো পড়তে পারেন: সীরাত সাহিত্য বলতে কী বুঝায়? কোরআন ও হাদিসের আলোকে রাসূল (সা.) এর জীবনী অধ্যয়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করুন
বায়তুল মোকাদ্দাসে পৌছার পর তিনি বুরাককে মসজিদে আকসার পশ্চিম দেয়ালের সাথে বাঁধেন। সেই দেয়ালের নাম হচ্ছে হায়েত আল-বুরাক বা বুরাক দেয়াল। তাঁর আগের নবীও এই একই দেয়ালে তাঁর সাওয়ারী বেঁধেছিলেন। যখন তিনি সুলাইমান (আ.)-এর তৈরি মসজিদে (মসজিদে আকসা) প্রবেশ করেন। তখন পৃথিবীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রেরিত সকল নবীকে উপস্থিত দেখতে পান। তাঁর উপস্থিতি উপলক্ষে সবাই জামায়াতে সালাত আদায় করেন। ঔই সময় কে ইমামতি করে তা দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলেন। হযরত জিবরাঈল (আ) মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে হাত ধরে সামনে ইমামতির জন্য এগিয়ে দেন। তিনি সবাইকে নিয়ে নামায আদায় করেন।
সপ্তম আসমানে তিনি বিরাট এক প্রাসাদ এবং বায়তুল মামুর দেখতে পান। বায়তুল মামুরের চারদিকে অসংখ্য ফেরেশতা তাওয়াফ করছে। বিরাট প্রাসাদের কাছে তিনি নিজের মতো এক ব্যক্তিকে দেখতে পান। তিনি হচ্ছেন হযরত ইবরাহীম (আ)। তারপর তাকে আরো ওপরে নেয়া হয়। তিনি সিদরাতুল মুন্তাহা নামক স্থানে পৌছেন। এই স্থানটিকে আল্লাহর আরশ ও তার সৃষ্টিজগতের মধ্যে একটি শুন্য এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লক্ষ্য করলেন, তাঁর সাথে আগত ফেরেশতারা এই পর্যন্ত পৌছে প্রয়োজনীয় বার্তা নিয়ে আসেন। তাঁদের এর ওপারে যাওয়ার অনুমতি নেই। এ স্থানেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে নেককার লোকদের উদ্দেশ্যে তৈরিকৃত বেহেশত ও প্রতিশ্রুত পুরস্কার দেখানো হয়। এ বেহেশতী নেয়ামত সম্পর্কে ইতঃপূর্বে কেউ কানে শুনেনি এবং চোখেও দেখেনি। এ স্থানেই হযরত জিবরাঈল (আ) থেকে গেলেন। এবার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একাকীই সামনে অগ্রসর হওয়ার পালা । যখন তিনি একটি উঁচু সমতল স্তরে পৌঁছেন তখন তিনি নিজেকে মহান আল্লাহ রাববুল আলামীনের দরবারে উপস্থিত দেখতে পান। তাকে আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলার বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। এ রাতেই ৫ ওয়াক্ত সালাত বাধ্যতামূলক করা হয়।
সকাল বেলা উপস্থিত লোকদেরকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন। মুখে মুখে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মিরাজের ঘটনা চারদিকে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু লোক হযরত আবু বকর সিদ্দিকের কাছে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলে থাকেন, তাহলে তা অবশ্যই সত্য হবে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমি প্রতিদিনই তার কাছে ফেরেশতার আগমন ও আল্লাহর বার্তা নাযিলের খবর শুনি এবং তা বিশ্বাস করি।
ইসলামের মিরাজের তাৎপর্য
মিরাজ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অসামান্য কীর্তি। কেবল সীমার মধ্যে বসে আমরা যেমন অসীমকে সত্য করে চিনতে পারি না, শুধু অসীমের মধ্যে থেকেও সেরূপ সসীমকে চেনা যায় না। স্রষ্টা চেনার জন্য তাই হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সৃষ্টিতে আসতে হয়েছিল; আবার সৃষ্টিকে চেনার জন্য তাঁকে স্রষ্টার কাছে যেতে হয়েছিল। এ জন্যই সৃষ্টি ও স্রষ্টা সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিল পরিপূর্ণ। এটাই মিরাজের তাৎপর্য। অন্যদিকে প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, সমাজ, রাষ্ট্রে গোপনীয় ও সংবেদনশীল বলতে কিছু বিষয় থাকে, যা সাধারণ্যে প্রকাশ করা হয় না। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তা সংঘটিত হয়ে থাকে। মিরাজের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সেখানেই।
হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল এবং পথপ্রদর্শক ও আদর্শ। সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ তাকেই বলে যার পূর্ণতা সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা মিরাজ রজনীতেই সম্পন্ন হয়েছে। তিনি মানুষের শক্তি ও সম্ভাবনার শেষ সীমায় গিয়ে পৌছেছেন। কাজেই আধ্যাত্মিক জীবনে যখন কারো আলোর প্রয়োজন হয়, তাকে বিশেষজ্ঞরূপে এ মরুভাস্করের চরণে শরণ নিতেই হয়। স্থান, কাল ও গতির ওপর মানুষের যে অপরিসীম শক্তি ও অধিকার আছে, জড় শক্তিকে সে যে আয়ত্ত করতে পারে, মানুষের মধ্যে যে বিরাট অতিমানুষ লুকিয়ে থাকতে পারে, মিরাজ সে কথাই প্রমাণ করে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হযরত ও আহমদ নামকরণের উদ্দেশ্য এবং সার্থকতাও মিরাজের মধ্যে নিহিত। এ নাম দুটি যে চরম সত্য, তা মিরাজের রাতে প্রমাণিত হয়েছে। মিরাজ রজনীতে আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সো.)-কে পরম গৌরব দান করেন। কোনো ফেরেশতা বা কোনো নবী-রাসূল যেখানে উপনীত হতে পারেননি, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে উপনীত হয়েছিলেন।
উপসংহার
মিরাজ আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর এক বিশেষ নেয়ামত। মিরাজের মাধ্যমে উম্মতে মুহাম্মদীর উপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ হুকুম নামাযসহ আরো অনেক হুকুম নাযিল করা হয়। তাই ইসলামের মিরাজের গুরুত্ব অনেক।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •
বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)
- (IST-501) Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) | Click for Details
- (IST-502) Introduction to Islamic Dawah | Click for Details
- (IST-503) Al-Sirat Al-Nababiah | Click for Details
- (IST-504) Human Rights in Islam | Click for Details
- (IST-505) Principles and History of Tafsir Literature | Click for Details
- (IST-506) Principles of Islamic Jurisprudence | Click for Details