Monday, December 23, 2024

বিদায় হজের ভাষণের প্রধান দিকগুলো উল্লেখ করুন এবং এ ভাষণের গুরুত্ব তাৎপর্য আলোচনা করুন

প্রশ্ন: বিদায় হজের ভাষণের প্রধান দিকগুলো উল্লেখ করুন এবং এ ভাষণের গুরুত্ব তাৎপর্য আলোচনা করুনবিষয়: (IST-503) Al-Sirat Al-Nababiahকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

বিদায় হজ্জ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবনের একটি বড় উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা। এটা ইসলামের ইতিহাসেও এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিদায় হজ্জ মুসলমানদের সামগ্রিক জীবনের দিক নির্দেশনা সম্বলিত একটি ভাষণ। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর জীবনের শেষ লগ্নে এসে প্রায় লক্ষাধিক সাহাবীর সামনে দিক নির্দেশনা মূলক এই ভাষণ উপস্থাপন করেন। যার গুরুত্ব অপরিসীম।

বিদায় হজ্জ

অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর লোকেরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। আরবের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও ইসলামের দাওয়াত পৌঁছতে শুরু করে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বুঝতে পারলেন, তাঁকে অতি শীঘ্রই তাঁর মহান রবের নিকট চলে যেতে হবে। তাই তিনি ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে (দশম হিজরি) হজ্জ করার ইচ্ছা করেন। এ উদ্দেশ্যে দশম হিজরি যিলকদ মাসে লক্ষাধিক সাহাবি নিয়ে হজ্জ পালন করতে মক্কায় যান এবং পালন করেন। এটাই ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজ্জ নামে পরিচিত।


আরো পড়তে পারেন: খন্দক যুদ্ধ কী? খন্দক যুদ্ধের বিবরণ দিন।


বিদায় হজ্জের ভাষণের প্রধান দিকগুলো

দশম হিজরির ৯ই জিলহজ মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণে মানুষের জন্য দিক-নির্দেশনা ছিলো। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিদায় হজ্জ যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তার প্রধান সারকথা নিম্নরূপ-

  • হে মানব মন্ডলি! তোমরা আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনো। কেননা আমি এ স্থানে তোমাদের সাথে পুনরায় মিলিত নাও হতে পারি।
  • আজকের এ দিন, এ স্থান, এ মাস যেমন পবিত্র, তোমাদের জীবন ও সম্পদ তেমন পবিত্র।
  • মনে রাখবে, নিশ্চই তোমরা তোমাদের প্রভুর সাথে মিলিত হবে। তখন তোমাদের প্রভু তোমাদের কাজের হিসাব নেবেন।
  • যে ব্যক্তি অন্যের সম্পদের আমানতদার, তার উচিত তা মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া।
  • নিশ্চয় জাহিলিয়া যুগের সকল আচার-আচারণ নিষিদ্ধ করা হলো।
  • কোনো আরব কোনো অনারব থেকে শ্রেষ্ঠ নয় বরং কোনো অনারবকে কোনো আরবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়নি।
  • মনে রাখবে, মুসলমান মুসলমানের ভাই।

আরো পড়তে পারেন: বদর যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল বিস্তারিত আলোচনা করুন


  • অধিনস্থদের সাথে সদাচরণ করবে। তোমরা যা খাবে, তাদেরকেও তা খাওয়াবে এবং তোমরা যা পড়বে তাদেরকেও তা পরাবে।
  • জাহিলিয়া যুগে সংঘটিত সকল খুনের শাস্তি রহিত করা হলো। সর্বপ্রথম আমি হারিস এবং ইবন আবদুল মুত্তালিবের গোত্র ইবন রাবিয়াহ-এর হত্যার শাস্তি রহিত ঘোষণা করছি।
  • জাহিলিয়া যুগের সমস্ত সুদ বাতিল করা হলো। সর্বপ্রথম আব্বাস ইবন  আবদুল মুত্তালিবের সমস্ত সুদ বাতিল করা হলো।
  • হে লোক সকল! নারীদের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করবে।
  • তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি যেমন তোমাদের অধিকার আছে, তাদেরও তেমনি তোমাদের উপর অধিকার রয়েছে।
  • দ্বীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। পূর্বের অনেক জাতি এ কারণে ধ্বংস হয়েছে।
  • কোনো ক্রীতদাস যদি নিজের যোগ্যতায় নেতা হয়, তাহলে তোমরা তার আনুগত্য করবে।
  • আমিই শেষ নবি। আমার পর আর কোনো নবি আসবে না।
  • আমি তোমাদের জন্য দু’টি বস্তু রেখে যাচ্ছি, যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনো পথ হারাবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব (পবিত্র আল-কুরআন) ও আমার সুন্নাহ।
  • যারা উপস্থিত আছো, তারা অনুপস্থিতদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দিবে। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন, হে আল্লাহ! আমি কি তোমার রিসালাতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পৌঁছাতে পেরেছি? সকলে উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন, হ্যাঁ (আপনে আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়েছেন)। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো। অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা নিকট হতে সূরা মায়িদার ৩ নম্বর আয়াত নাযিল হয়-

حُرِّمَتۡ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃُ وَالدَّمُ وَلَحۡمُ الۡخِنۡزِیۡرِ وَمَاۤ اُہِلَّ لِغَیۡرِ اللّٰہِ بِہٖ وَالۡمُنۡخَنِقَۃُ وَالۡمَوۡقُوۡذَۃُ وَالۡمُتَرَدِّیَۃُ وَالنَّطِیۡحَۃُ وَمَاۤ اَکَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَکَّیۡتُمۡ ۟ وَمَا ذُبِحَ عَلَی النُّصُبِ وَاَنۡ تَسۡتَقۡسِمُوۡا بِالۡاَزۡلَامِ ؕ ذٰلِکُمۡ فِسۡقٌ ؕ اَلۡیَوۡمَ یَئِسَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ دِیۡنِکُمۡ فَلَا تَخۡشَوۡہُمۡ وَاخۡشَوۡنِ ؕ اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَاَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَرَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا ؕ فَمَنِ اضۡطُرَّ فِیۡ مَخۡمَصَۃٍ غَیۡرَ مُتَجَانِفٍ لِّاِثۡمٍ ۙ فَاِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ



অর্থ: তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল। 

উপসংহার

দশম হিজরি সালে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে হজ্জ পালন করেন তাই বিদায় হজ্জ নামে পরিচিত। হজ্জ পালন শেষে তিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। মানবজাতি এই ঐতিহাসিক ভাষণ মেনে চললে ইহকালিন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভ করতে পারবে। আমরা আমাদের বাস্তবজীবনে তা অনুশীলন করার চেষ্টা করবো।



• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence


বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles