▶ প্রশ্ন: মানবাধিকারের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা করুন? ▶ বিষয়: (IST-504) Human Rights in Islam ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
মানুষের অধিকরের ক্ষেত্রে কারও কোনো কমবেশি করার সুযোগ নেই। জন্মগতভাবে একটি শিশু অনেকগুলো মৌলিক অধিকার নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করে। এগুলো ছাড়া সে শিশুটির কোন অস্তিত্ব কল্পনা করা যায়। ঠিক তেমনিভাবে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার রয়েছে। আর ইসলাম এসব অধিকারের সুষমভাবে বণ্টন করেছে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মাঝে।
মানবাধিকারের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
ইসলামের দৃষ্টি থেকে মানবাধিকারের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
আদম (আ:) এর যুগে মানবাধিকার
প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আ:) ও বিবি হাওয়া (আ:) কে পৃথিবীতে পাঠিয়ে ছিলেন দুনিয়াতে মানবধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। যেমন- কুরবানী কবুল হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শয়তানের প্ররোচনায় কাবিল তার সহোদয় ভাই হাবিলকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। পরে কাবিল তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়।
আরো পড়তে পারেন: সংখ্যালঘু কারা? ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার সমূহ কি কি বিস্তারিত ভাবে লিখুন?
নূহ (আ:) এর যুগে মানবাধিকার
হযরত নুহ (আঃ) এর কওমের অবিশ্বাসী নেতারা জনগনকে বিভ্রান্ত করার জন্য নূহ (আ:) এর বিরুদ্ধে পাঁচটি আপত্তি উত্থাপন করেছিল। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো- তোমার অনুসারী হলো আমাদের মধ্যে নিতান্তই হীন ও গরিব, তাও আবার অল্প বুদ্ধি সম্পন্ন। আর আমাদের ওপর তোমাদের শ্রেষ্ঠত্বও আমরা দেখছি না। তাদের এ আপত্তির জবাবে নূহ (আ:) বলেন, হে আমার জাতির লোকেরা আমি এ দাওয়াতের বিপরীতে তোমাদের নিকট কোনো সম্পদ চাই না, প্রতিদান যা দেবার আল্লাহই দিবেন। আমি কোনো (গরিব) ঈমানদার ব্যক্তিকে তাড়িয়ে দিতে পারিনা। তারা অবশ্যই তাদের পালনকর্তার দীদার লাভে ধন্য হবে এবং আমি তোমাদের মুর্খ দেখছি হে আমার কত্তম। আমি যদি ঐসব লোকদের তাড়িয়ে দেই, তাহলে কে আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করবে। তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না। মহান আল্লাহ গরিব ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেননি বরং তাদের (দ্বীল) গরিব মিসকিনকে অনেক মর্যাদা, দিয়েছেন। যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর পূর্বে নূহ (আ:) মারফত ঘোষিত হয়েছে।
আরো পড়তে পারেন: বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র বর্ণনা করুন? বিদায় হজের আলোকে এর প্রতিকার বর্ণনা করুন
ইবরাহীম (আ:) এর যুগে মানবাধিকার
ইবরাহীম আলাইহীস সালাম প্রথমে নিজ ঘর থেকে দ্বীনের দাওয়াত আরম্ভ করেন। পিতা আযর তাঁকে ভয় প্রদর্শন করেন এবং ধমক দেন। হে ইবরাহীম, তুমি যদি তাই কর তবে আমি অবশ্যই পাথর মেরে তোমার প্রাণ নাশ করব। কথাবার্তা বলার পর ইবরাহীম আলাইহিস সালামের উপর কঠিন অগ্নি পরীক্ষা শুরু হলো। তিনি কোনো কিছুর পরোয়া না করে তাওহীদের দাওয়াত জাতির নিকট পেশ করতে থাকেন। ইবরাহীম (আ:) এর দাওয়াত যখন প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়লো তখন নমরূদ তাঁর জন্য শাস্তি স্বরূপ এক মহা পরীক্ষার সম্মুখীন করলেন তাকে। অবশেষে নমরূদের নির্দেশে ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার জন্য জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু যিনি লা-শরীক আল্লাহর উপর দৃঢ় প্রত্যয় রেখেছেন, স্বয়ং সেই আল্লাহই এ বান্দার সাহায্যকারী ও ত্রাণকর্তা।
লুত (আ:) এর যুগে মানবাধিকার
লুত আলাইহিস সালাম স্বীয় সম্প্রদায়কে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা পরিহার করে পবিত্র ও উন্নত জীবন যাপনের পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি তাদের নিকট আল্লাহর বাণী পৌছিয়ে দিচ্ছেন, এবং তাদের কুকর্মের পরিণতি সম্পর্কে সর্তক করছেন, যাতে তারা আল্লাহকে, ভয় করে এবং সৎপথে অবলম্বন করে। এর উত্তরে তাঁর কত্তম শুধু এ কথা বলল যে, আমাদের উপর আল্লাহর গযব নিয়ে এসো, যদি তুমি সত্যবাদী হও। এতটুকু কথার পরও লুত (আ:) তাঁর সম্প্রদায়ের উপর কোন বদদুআ করেননি। এটাই মানবাধিকার রক্ষার বিরাট প্রমাণ।
ইউসুফ (আ:) এর যুগে মানবাধিকার
একইভাবে ইউসুফ (আ:) এর অবস্থা। তার সৎভাইজন তাকে কূপে নিক্ষেপ করেন। একদল পথিক তাকে উঠিয়ে নিয়ে মিশরে এক মন্দীরের নিকট বিক্রয় করে দেয়। ইউসুফ (আঃ) ছিলেন খুব সুন্দর। এই সুন্দর তাঁকে কুকাজে আকৃষ্ট করার বহু রকম চেষ্টা করে। অবশেষে শহরের নারীগণ এ বিষয়ে জেনে তাদের দাওয়াত করে এনে কায়দা করে ইউসুফ (আ:) কে দেখিয়ে দেয়। ফলে ঐ শহরের গোটা নারী সমাজ ইউসুফ (আ:) কে পেতে চায়। তিনি যখন এ সকল অপকর্ম থেকে স্বীয় প্রভুর মেহেরবাণীতে নিজ চরিত্র গুণে আত্মরক্ষা করেন তখন তিনি আরেক পরীক্ষা উত্তীর্ণ হলেন। তখন তার ষড়যন্ত্র করে তাঁকে জেলেপুরে দেয়। তারপর তিনি জেলখানা গিয়ে সেখানে দ্বীন প্রচার করতে থাকে। তিনি জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে ঐ দেশের খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। যখন তার সাথে তাঁর ভাইগণ মন্ত্রী থাকা অবস্থায় দেখা করলেন। তখন তিনি তাদের কে কোনো প্রকার শাস্তি প্রদান করেননি। বরং তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেছেন।
মুসা (আ:) এর যুগে মানবাধিকার
মুসা (আ:) ফিরআউনকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু ফিরাউন তা অস্বীকার করেই শুধু ক্ষ্যন্ত হয়নি। বরং তাকে আরো বিভিন্ন নির্যাতন করতে থাকেন। ফিরাউন বলল, রাব্বুল আলামীন কি বস্তু? মুসা বললেন, তিনি হলেন আসমান-জমিন সব কিছুর মালিক। সত্যিই যদি তুমি কোনো মুজিযা নিয়ে আস তবে আমাকে দেখাও। কারণ আমি ছাড়া দুনিয়াতে আর কোনো প্রভু নেই। এর পর মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ প্রদত্ত মুজিযাগুলোর দেখালেন। ফিরাউন বলল, তুমি যাদুর। একজন যাদুকর ছাড়া আর কিছুই নও। তোমার যাদুর জবাব দেয়া হবে। এ বলে মিশরের সকল যাদুকরদের একত্রিত করে ফিরাআউন। মুসা (আ:) এর মুজিযা দেখে সকল যাদুকর মুসলমান হয়ে গেল। এভাবে মুসা (আ:) জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহর তায়ালার দ্বীন ও একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন। কারো প্রতি প্রতিরাধ পরায়ন হননি।
যাকারিয়্যা (আ:) এর যুগে মানবাধিকার
যাকারিয়্যা (আ:) বনী ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য প্রেরিত হয়েছিল। তিনি জীবনভর তাদেরকে গোমরাহী থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সর্বদা তাদেরকে ভালো কাজের উপদেশ দিতে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় যারা অস্বীকার করে আল্লাহর আয়াতসমূহ এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করে যারা, তাদের ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদের হত্যা করে তাদেরকে শুনিয়ে দিন এক মহাযন্ত্রনাদায়ক শাস্তির সংবাদ।
হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে মানবাধিকার
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার নবুওয়াতের ২৩ বছরের জীবন আরবের একটি অসভ্য ও বর্বর জাতিরকে সভ্য ও সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত করেছিলেন। বিশ্বনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নারী জাতিকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্টিত করেন। তিনি একত্ববাদের বানী প্রচার করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তারপরও তিনি কারো প্রতি প্রতিরোধ পরায়ন হয়নি।
উপসংহার
মানব জীবনের জন্য ইসলামের দৃষ্টিতে মানবাধিকারে উৎপত্তি ক্রমবিকাশ গুরুত্ব ও প্রয়োজন অপরিসীম। এভাবে প্রতিটি নবী-রাসুলের জীবনীতে দেখা যায়, তাঁরা তাওহীদের দাওয়াত প্রচার করতে গিয়ে অনেক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেক কষ্ট ক্লেশ সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও তাঁরা কারো জন্য বদ দোয়া করেননি, অমঙ্গল কামনা করেননি এবং কারো প্রতি হিংসা বা প্রতিশোধ পরায়ণ হননি।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •