Wednesday, February 5, 2025

মহানবী (স.)-এর বিদায় হজ্জের ভাষণে মানবাধিকারের যে দিক ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করুন

প্রশ্ন: মহানবী (স.)-এর বিদায় হজ্জের ভাষণে মানবাধিকারের যে দিক ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করুনবিষয়: (IST-504) Human Rights in Islamকোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। সকল যুগের সকল নবীর শ্রেষ্ঠ নবী। জিন-ইনসানসহ পৃথিবীর সকল জাতির নবী। তিনি শেষ নবী। পৃথিবীর রহমত স্বরূপ যিনি এই পৃথিবীতে এসেছেন। তাঁর মর্যাদা ও সম্মানের কথা স্বয়ং আল্লাহ থেকে শুরু করে এ জগতের সকল নবী বলেছেন। তিনি দুনিয়া ও আখিরাতের সম্মানিত।

বিদায় হজ্জ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বিদায় হজ্জ।  নবীজির জীবদ্দশায় মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। এর চেয়ে বড় কোন আয়োজন ইতিপূর্বে হয়নি। প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে সাহাবীদের সামনে ভাষণ দিয়েছেন যা বিদায় হজের ভাষণ নামে খ্যাত। বিদায় হজ দশম হিজরী সনে রাসুল (সাঃ) এর অনুষ্ঠিত হয়। নবীজী দৃঢ় আশঙ্কা করেছিলেন যে, এটাই তার জীবনে সর্বশেষ হজ ও সর্বশেষ বিশ্ব সম্মেলন। তাই একে বিদায় হজ বলা হয়। এই বিদায় হজের ভাষণ কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জন্য স্থায়ী দিকনির্দেশক।


আরো পড়তে পারেন: মানবাধিকারের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা করুন?


বিদায় হজ্জের ভাষণে মানবাধিকারের ঘোষণা

মুশরিকমুক্ত পরিবেশে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই হজ করেন এবং এই হজের আমির ও প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি নিজেই। এই হজ্জে তিনি ৩১ টি বিষয়ে তিনি উম্মতকে সতর্ক করেন। ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৌলিক মানবাধিকারের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা হল-

  • হে মানবমণ্ডলী, স্মরণ রাখো, তোমাদের আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। তোমাদের আদি পিতা একজন, অনারবদের ওপর আরবদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তদ্রুপ সাদার ওপর কালোর কোনো প্রাধান্য নেই। আল্লাহ ভীতিই শুধু শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার মানদণ্ড।
  • তোমাদের পরস্পরের রক্ত ও ধন-সম্পদ আজকের দিন, এ মাস এবং এ শহরের মতো পবিত্র।
  • শোনো, জাহেলিয়াতের সব কিছু আমার পদতলে পিষ্ট করা হয়েছে। জাহেলিয়াতের রক্তের দাবিও রহিত করা হলো।
  • জাহেলি যুগের সুদ রহিত করা হলো। আমাদের মধ্যকার প্রথম যে সুদ আমি রহিত করছি তা হলো, আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিবের সুদ। এখন থেকে সব ধরনের সুদ হারাম করা হলো।

আরো পড়তে পারেন: সংখ্যালঘু কারা? ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার সমূহ কি কি বিস্তারিত ভাবে লিখুন?


  • স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা আল্লাহর আমানতস্বরূপ তোমরা তাদের গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কলেমার মাধ্যমে হালাল করা হয়েছে। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার রয়েছে যে তারা তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে স্থান দেবে না, যাদের তোমরা পছন্দ করো না।
  • তারা এরূপ করলে প্রহার করতে পারো। তবে কঠোর প্রহার করবে না। তোমাদের ওপর তাদের অধিকার হলো, তোমরা যথাযথ অন্ন-বস্ত্র প্রদান করবে।
  • আমি তোমাদের কাছে এমন দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি হলো আমার সুন্নাহ।
  • হে জনতা, মনে রেখো, আমার পরে কোনো নবী নেই। তোমাদের পরে কোনো উম্মত নেই। ফলে তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত করবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে, রমজানের রোজা রাখবে, স্বেচ্ছায় ধন-সম্পদের জাকাত দেবে, আল্লাহর ঘরে হজ করবে, শাসকের আনুগত্য করবে। যদি তোমরা এসব পালন করো, তাহলে তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
  • হে মানবমণ্ডলী, পিতার অপরাধে পুত্র দায়ী হবে না এবং পুত্রের অপরাধে কোনো পিতাকে দায়ী করা হবে না।
  •  তোমাদের সঙ্গে আমার সম্পর্কের প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হবে। তোমরা তখন কী বলবে? সাহাবায়ে কেরাম প্রত্যুত্তরে বলেন, আমরা সাক্ষ্য দেব যে আপনি দ্বিনের দাওয়াত দিয়েছেন, আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। (মহানবী (সাঃ) এ কথা শুনে শাহাদাত আঙুল আকাশের দিকে উত্তোলন করে লোকদের দিকে ঝুঁকিয়ে তিনবার বলেন, হে রব, আপনি সাক্ষী থাকুন।)
  • প্রত্যেক মুসলমান ভাই ভাই। তোমরা তোমাদের দাস-দাসী সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। তোমরা যা খাবে তাদেরও তা খেতে দেবে। তোমরা যা পরিধান করবে তাদেরও তা পরতে দেবে। তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবে। শাস্তি দেবে না।
  • হে মানবজাতি, ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না। কেননা অতীতের অনেক জাতি এ বাড়াবাড়ির কারণে ধ্বংস হয়েছে। উপস্থিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব হবে আমার এ কথাগুলো অনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।


উপসংহার

আরবি দশম হিজরী সনে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বিদায় হজ্জ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় সেখানে লক্ষাধিক সাহাবি উপস্থিত ছিলেন। যে কোন আদর্শিক নেতার জীবনের সর্বশেষ কর্মী সম্মেলনে দেওয়া ভাষণ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কেবল নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন শেষনবী ও বিশ্বনবী। অধিকন্তু তাঁর দৃঢ় আশংকা ছিল যে, এটাই তাঁর জীবনের সর্বশেষ হজ্জ ও সর্বশেষ বিশ্ব সম্মেলন। আর নবী জীবনের পরিপূর্ণতা সাধিত হয়েছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বিদায় হজ্জের ভাষণে। নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সেই ভাষণে মানবাধিকারের সকল দিক উত্থাপিত হয়েছে।


• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles