জমাআতে নামায পড়ার হেকমত ও উপকারিতা
জমা’আতে নামায পড়ার হেকমত সম্বন্ধে শ্রদ্ধেয় ওলামাগণ অনেকে অনেক কিছু আলোচনা করেছেন। কিন্ত হযরত শাহ্ ওলিউল্লাহ্ (রাঃ) মুহাদ্দিসে দেহলভী সার্বিক ও সূক্ষ্ম তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট। হযরত শাহ্ ওলিউল্লাহ্ (রাঃ) মুহাদ্দিসে দেহলভী ছাহেবের বর্ণনার সারমর্ম নিম্নরূপ:
- একমাত্র উত্তম পন্থা যে, কোন এবাদতকে মুসলিম সমাজে এমনভাবে প্রথায় প্রচলিত করে দেওয়া, যেন তা একটি অত্যাবশ্যকীয় হিতকর এবাদতে পরিগণিত হয় এবং পরে তা বর্জন করা চিরাচরিত অভ্যাস বর্জন করার ন্যায় দুস্কর ও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ইসলামের একমাত্র নামাযই সর্বাধিক শানদার এবং গুরুত্বপূর্ণ এবাদত। কাজেই নামাযকে অত্যাধিক গুরুত্ব ও যত্ন সহকারে বিশেষ ব্যবস্থাপনার সাথে আদায় করতে হবে। তা একমাত্র জমা’আতে নামায পড়ার মাধ্যমেই সম্ভব।
- সমাজে বিভিন্ন প্রকারের লোক থাকে। জাহেলও থাকে আবার আলেমও থাকে। সুতরাং তা খু্বই যুক্তিযুক্ত যে, সকলে একস্থানে মিলিত হয়ে পরস্পরের সম্মুখে এই এবাদতকে আদায় করে। কারো কোন ভুল ভ্রান্তি হলে অন্যে তা সংশোধন করে দিবে। যেন আল্লাহ্ তা’য়ালার ইবাদত একটি অলংকার বিশেষ। যেমন যারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে, তারা তাতে দোষ থাকলে বলে দেয়, আর যা ভাল হয় তা পছন্দ করে। নামাযকে পূর্ণাঙ্গ করবার ইচ্ছা একটি উত্তম পন্থা।
- যারা বে-নামাযী তাদের অবস্থাও প্রকাশ হয়ে পড়বে। তাতে তাদের ওয়ায নছীহতের সুযোগ হবে।
- কতিপয় মুসলমান মিলিতভাবে আল্লাহর এবাদত করা এবং তার নিকট দো’আ প্রার্থনা করার মধ্যে আল্লাহর রহমত নাযিল ও দো’আ কবূল হওয়ার একটি আশ্চর্যজনক বিশেষত্ব রয়েছে।
- এই উম্মত দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য হল তার বাণীকে সমুন্নত করা এবং কুফরকে অধঃপতিত করা। ভূপৃষ্টে কোন ধর্ম যেন ইসলামের উপর প্রবল না থাকে। তা তখনই সম্ভব হতে পারে, যখন এই নিয়ম নির্ধারিত হবে যে, সাধারণ ও বিশিষ্ট, মুকীম মুসাফির, ছোট বড় সকল মুসলমান নিজেদের কোন বড় ও প্রসিদ্ধ এবাদতের জন্য এক স্থানে সমবেত (একত্রিত) হবে এবং ইসলামের শান শওকত প্রকাশ করবে। এই সমস্ত যুক্তিতে শরীঅতের পূর্ণ দৃষ্টি জমা’আতের দিকে নিবদ্ধ হয়েছে এবং তার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং জমা’আতের ত্যাগ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
- জমা’আতে এই উপকারিতাও রয়েছে যে, সকল মুসলমান একে অপরের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হতে থাকবে। একে অপরের ব্যথা বেদনায় শরীক হতে পারবে, যার মাধ্যমে ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব এবং ঈমানী ভালবাসা পূর্ণ বিকাশ ও তার দৃঢ়তা সাধিত হবে। তা শরীঅতের একটি মহান উদ্দেশ্যও বটে। কোরআন মজীদ ও হাদীস শরীফের বিভিন্ন স্থানে তার তাকীদ ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।
অতীব দুঃখের বিষয় যে, আমাদের এই যুগে জমা’আত তরক করা একটি সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। জাহেলদের তো কথাই নাই, অনেক আলেমও এই গর্হিত কাজে লিপ্ত রয়েছেন দেখা যায়। পরিত্যাগের বিষয়, তারা হাদীস পড়ে এবং অর্থ বুঝে, অথচ জমা’আতে নামায পড়ার কঠোর তাকীদগুলি তাদের প্রস্তর হতেও কঠিন হৃদয়ে কোন ক্রিয়া করছে না। কিয়ামতে মহাবিচারকের সামনে যখন নামাযের মোকদ্দমা পেশ করা হবে এবং তা অনাদায়কারী বা অপূর্ণ আদায়কারীদিগণ জিজ্ঞাসা শুরু হবে, তখন তারা কি জবাব দিবে?
তথ্যসূত্র
- বেহেশতী জেওর • লেখক: হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) • অনুবাদক: হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)