▶ প্রশ্ন: ইজতিহাদ কী? এর প্রয়োজনীয়তা, শর্তাবলি এবং মুজতাহিদের যোগ্যতা ও গুণাবলি আলোচনা করুন? ▶ বিষয়: (IST-506) Principles of Islamic Jurisprudence ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ইজতিহাদের আভিধানিক অর্থ
ইজতিহাদের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে প্রচেষ্টা ব্যয় করা, শক্তি প্রয়োগ করা, কোন বিষয়ে চিন্তা গবেষণা করা, অনুসন্ধান করা, গবেষণা করা ইত্যাদি।
ইজতিহাদের পারিভার্ষিক অর্থ
ইসলামী শরীয়াতের পবিত্র বিশ্বাসগত ও কর্মজাতীয় সত্য উপলব্দির জন্য প্রাণন্তর প্রচেষ্টা করাকে ইজতিহাদ বলা হয়।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহ) বলেন, শরয়ী হুকুম নিরুপনে ব্যয় করাকে ইজতিহাদ বলে। যিনি ইজতিহাদ করেন তাকে মুজতাহিদ বলা হয়।
ইজতিহাদের শর্তাবলি
- ইজতিহাদের প্রথম শর্ত হচ্ছে, মুজতাহিদকে অবশ্যই কিতাবুল্লাহ এর শাব্দিক ও পারিভার্ষিক মর্ম এর যাবতীয় প্রকারভেদ যথা আম, খাস ইত্যাদি সস্পর্কে প্রজ্ঞার অধিকারি হতে হবে। তবে গোটা কিতাবুল্লাহ সম্পর্কে প্রজ্ঞা থাকা শর্ত নয়। বরং আহকাম এর সাথে সংশ্লিষ্ট যে ৫০০ আয়াত রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখা আবশ্যক।
- ইজতিহাদের দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, যে ৩ হাজার হাদিস থেকে আহকাম উদ্ভাবন করা হয় সে হাদিসগুলো এবং সেগুলোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে মুজতাহিদকে জ্ঞান রাখতে হবে। সুতরাং রাসুল (সা:) থেকে প্রকাশিত সব হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান রাখা শর্ত নয়।
- ইজতিহাদের তৃতীয় শর্ত হচ্ছে, কিয়াসের পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা।
- ইজতিহাদের চতুর্থ শর্ত হচ্ছে, মুজতাহিদকে অবশ্যই সৎ ও যোগ্য হওয়া। কেননা ফাসিক, ফাজির, বিদয়াতী, ইহুদী ও নাসরানী মুজতাহিদের ইজতিহাদ গ্রহণযোগ্য নয়।
- ইজতিহাদের পঞ্চম ও সর্বশেষ শর্ত হচ্ছে, ইজতিহাদের বিশুদ্ধ নিয়ত থাকা। অতএব ইজতিহাদ করতে হবে দ্বীনকে প্রচার প্রসার করতে আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের জন্য। এর পাশ্চাতে পার্থিব কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারবে না।
আরো পড়তে পারেন: উসুলে ফিকহ কী? এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করুন?
ইজতিহাদের প্রয়োজনীয়তা
বিশ্ব যতই অগ্রসরমান, আধুনিক ও উন্নত হোক না কেন, এবং সেখানে যতই নিত্য নতুন সমস্যা ও প্রয়োজনীয়তা দেখা যাক না কেন, ইসলাম তার সব কিছুর সাথে পূর্ণমাত্রায় সামঞ্জস্যশীল। মানব জীবনের গতিময়তা ও প্রবাহমানতার সাথে ইসলাম পুরোপুরি ফিট। আর তাই এর উপযুক্ততা ও সমকালীন যুগ জিজ্ঞাসার জবাব দানে সামর্থের পিছনে ইজতিহাদ অনন্য ভূমিকা রাখে। কেননা, কোনো একটি বিষয় যতই আধুনিক হোক না কেন তার দিকে একটি সুক্ষ্ণ ইশারা কুরআন হাদীসে থাকেই, যা বুঝবার জন্য কিতাব ও সুন্নাহের জ্ঞানে পারদর্শী হতে হয়। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা যায় ইজতিহাদ কিতাব ও সুন্নাহরই একটা অংশ। ফলে তাকে শরীয়তের একটি স্বতন্ত্র দলীল হিসেবে উল্লেখ করা নিঃপ্রয়োজন। আর এ কারণেই মহানবী (সা:) বলেন, আমি তোমাদের মাঝে রেখে গেলাম ২টি বিষয়। অর্থাৎ শরীয়তের ২টি উৎস।তথা কোরআন ও সুন্নাহ।
মুজতাহিদের যোগ্যতা ও গুণাবলি
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুজতাহিদের যোগ্যতা ও গুনাবলী প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যার সংক্ষিপ্ত ব্যক্তব্য উল্লেখ করা হলো।
- মুসলিম হওয়া। কেননা অমুসলিম কর্তৃক ইসলামী আইনের গবেষণা ত্রুটিমুক্ত হবে না এবং অমুসলিসের রায় মুসলিমের উপর প্রযোয্য নয়।
- মুজতাহিদের প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ও সুস্থ বিবেক সম্পন্ন হওয়া।
- স্বাধীন হওয়া।
- ন্যায়পরায়ন হওয়া।
- শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টি শক্তি এবং বাকশক্তি সম্পন্ন হওয়া।
- আল কুরআনের ও আল হাদীসের ভাষা যেহেতু আরবী কাজেই আরবী ভাষা তত্ত্ব ও ব্যাকরণ বিষয়ে বিশেষ পন্ডিত্য থাকতে হবে। আরবী ভাষা ও সাহিত্য ,আরবী ব্যাকরণ , অলংকার শাস্ত্র, আরবী বাগধারা প্রবাদ প্রভৃবি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান না থাকলে ইজতিহাদ করতে গেলে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছা অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে দাড়ায়।
আরো পড়তে পারেন: নাসখ কী? এর প্রকারভেদ। হাদিস দ্বারা কোরআন রহিত করা যাবে কিনা তা আলোচনা করুন?
- কোরআন মাজীদ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকতে হবে। কেননা কুরআন হচ্ছে ইসলামী শরীয়তের প্রধান উৎস। যে ব্যাক্তির কুরআনের উৎপত্তি সম্পর্কে জ্ঞান নেই তার পক্ষে ইজতিহাদের চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র। সুতরাং মুজতাহিদের পক্ষে কোরআন এর আয়াতসমূহের শানে নুযুল, কোনটি নাসখ, কোনটি মানসুখ, কোনটি মুজমাল, কোনটি মুফাস্সাল, কোনটি আম, কোনটি খাস এবং কোনটি মুহকাম এ সকল বিষয়ে জ্ঞান থাকা জরুরি। এছাড়াও শরীআতের আহকাম মতো মাকরুহ, হারাম, ওয়াজিব প্রভৃতি পারস্পরিক পার্থক্য এবং এর কোনটি কোন জাতীয় আয়াত হতে প্রমাণিত হয় সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকাও জরুরি।
- আল হাদীসের বিশেষ জ্ঞান থাকাও জরুরী। অর্থাৎ হাদীসের নাসখ ও মানসূখ, মুজমাল ও মুফাসসাল, আম ও খাস, মুহকাম ও মুতাশাবিহ এবং শারীআতের আহকামের কোনটি কোন জাতীয় হাদীস হতে প্রমাণিত তার সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। হাদীসসমূহের মধ্যে কোনটি সহীহ- কোনটি যঈফ, কোনটি মুসনাদ, কোনটি মুতাওয়াতিব, কোনটি খবরে ওয়াহিদ, এক কথায় হাদীসের সনদ, বর্ণনাকারী ও মতন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এছাড়া কোরআন ও হাদীসে যদি পরস্পয়ের বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়, তবে তা সমাধানে বা সমন্বয়ের উপায় সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকতে হবে।
- ইজমা সম্পর্কে জ্ঞান। শারীআতের কোন আহকাম সম্পর্কে সাহাবী, তাবেঈন বা পরবর্তী ফকীহগনের মধ্য মতৈক্য রয়েছে তার জ্ঞান থাকা জরুরি। অন্যথায় তার পক্ষে কোনো বিষয়ে ইজমা বিরোধী মত প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
- কিয়াসের জ্ঞান। অর্থাৎ কিয়াসের রুকন, শর্তাবধি এবং কিয়াস করার নিয়ম পদ্ধতির পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে।
- সাহাবী ,তাবিঈ, তাবি -তাবিঈ ও ইলমূল ফিকহ এর ইমামগণের যে সব বিষয়ের জ্ঞান থাকতে হবে। যাতে তারা কোনো কোনো মাসআলার ক্ষেত্রে এক মত পোষণ করতেন, আবার কোনো কোনো মাসআলার ক্ষেত্রে মত বিরোধ করেছেন সে বিষয়ে ধারণা থাকে।
- মানুষের আদাত-অভ্যাস বা সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকা জররী। অন্য কথায় স্থান ও কালের প্রভেদ এবং মানবজীবনের বাস্তব সমস্যাবলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিফহাল হওয়া।
- ইসলাম শারীআতের প্রকৃতি সম্পর্ক ওয়াকিবহাল হওয়া।
- নিয়্যাতকে পরিশুদ্ধ করা। অন্য কথায় ইজতিহাদকারীর মন ও মস্তিস্ককে প্রকৃতির দাসত্ব হতে মুক্ত করা। অর্থাৎ কোরআন ও হাদীসকে আপন প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা না করে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে কোরআন ও হাদীসকে হতে যা প্রমাণিত হয় তার সঙ্গে নিজের প্রবৃক্তিকে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করা।
- কাবীরা গুনাহসমূহ হতে বেঁচে থাকা এবং কোন সগীরা গোনাহ বারবার না করা। অর্থাৎ চরিত্র গতভাবে ভালো লোকদের আস্থাভাজন হওয়া।
- যে ব্যাক্তির মধ্যে এ সকল গুনের অভাব থাকবে তার ইজতিহাদ করা উচিত নয়। তার অন্য কোনো মুজতাহিদের অনুসরণ করা উচিত।
উপসংহার
ক্রম অগ্রসরমান আধুনিক বিশ্বে নিত্য নতুন সমস্যা ও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ইজতিহাদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পৃথিবীর সমস্ত বিষয়ে অবতারণা করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। কোন কোন ক্ষেত্রে তা অতি সুক্ষ্ণ। আর এই সুক্ষ্ণ বিষয়টি বোঝার জন্য ইসলামের গবেষণা প্রয়োজন। সেজন্য ইজতিহাদের ভূমিকা অপরিসীম।
• IST-501 : Study of Al-Quran (Surah: Al-Fatah and Al-Hujurat) • IST-502 : Introduction to Islamic Dawah • IST-503 : Al-Sirat Al-Nababiah • IST-504 : Human Rights in Islam • IST-505 : Principles and History of Tafsir literature • IST-506 : Principles of Islamic Jurisprudence •