ওহী কাকে বলে? ওহীর প্রকারভেদ আলোচনা করুন। ওহী কি আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক আপনার মতামত দিন।
▶ প্রশ্ন: ▶ বিষয়: ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ওহীর পরিচয় বা ওহী কাকে বলে:
ওহী আরবি শব্দ। এটি বাবে দারাবা হতে ব্যবহৃত হয়। যার অর্থ হচ্ছে ইঙ্গিত করা, প্রেরণ করা, গোপনে জানিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। পরিভাষায়, নবী-রাসূলদের উপর আল্লাহ তায়ালার অবতারিত বাণীকে ওহী বলে। গোপনে আল্লাহ প্রদত্ত নবী রাসূলদেরকে কোন কিছু জানানোর নামি ওহী।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে নবী-রাসূলগণের নিকট পাঠানো প্রত্যাদেশ-ই ওহী। মুজামুল ওয়াসিত অভিধানে বলা হয়েছে, নবীদের উপর আল্লাহ তায়ালার অবতারিত বাণী-ই ওহী।
নবী-রাসূলগণের নিকট মানুষের হেদায়েতের জন্য পাঠানো উপদেশ সম্বলিত মহান আল্লাহর ভাষণকে ওহী বলে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর কোন মানুষেরই এমন কোন মর্যাদা নেই যে আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওহীর মাধ্যমে ছাড়া অথবা পর্দার আড়াল ছাড়া অথবা দূত প্রেরণ ছাড়া যে দূত তার অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ওহী করেন। তিনি সর্বোচ্চ হেকমতওয়ালা।
-সূরা আশ সুরা, আয়াত: ৫১।
ওহীর প্রকারভেদ:
ওহী প্রধানত দুই প্রকার। যথা- ১. পঠিত ওহী, ২. অপঠিত ওহী। যেমন পবিত্র কোরআন শরীফ হলো পঠিত। আর পবিত্র হাদিস শরীফ হলো অপঠিত ওহী।
তবে নবী-রাসূলদের প্রত্যাদেশ প্রাপ্তির ধরন হিসেবে ওহী অবতীর্ণের পদ্ধতি সাতটি। ওহীর প্রকারভেদ সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম যে আলোচনা করেছেন তা উল্লেখ করা হলো-
১. সত্য স্বপ্ন:
নবুওয়াতের প্রাথমিক অবস্থায় স্বপ্নের মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ওহী অবতীর্ণ হয়।
২. ফেরেস্তা না দেখা দিয়ে:
ফেরেস্তা না দেখা দিয়ে অর্থাৎ অদৃশ্য অবস্থান থেকেই রাসুল এর অন্তরে ওহী প্রবেশ করিয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে নবী করীম যেমনটি এরশাদ করেছেন, “জিব্রাইল আমার অন্তরে এ কথা নিক্ষেপ করলেন যে, কোন আত্মা সে পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না, যে পর্যন্ত তার ভাগ্যে যতটুকু খাদ্যের বরাদ্দ রয়েছে। অতএব তোমরা আল্লাহকে সমীহ কর এবং রুজি অন্বেষণের জন্য ভালো পথ অবলম্বন কর। রুজি প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়ায় তোমরা আল্লাহর অসন্তোষের পথ অন্বেষণে যেন উদ্বুদ্ধ না হও। কারণ আল্লাহর নিকট যা কিছু রয়েছে তার আনুগত্য ছাড়া পাওয়া দুষ্কর।
৩. ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণের মাধ্যমে:
ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণপূর্বক নবী করিমকে সম্বোধন করতেন। তারপর তিনি যা কিছু বলতেন নবী করীম তা মুখস্ত করে নিতেন। এ অবস্থায় সাহাবীগণও ফেরেশতাকে দেখতে পেতেন।
৪. টুনটুন ধ্বনির মাধ্যমে:
ওহী অবতীর্ণ হওয়ার সময় নবী করিম এর নিকট ঘন্টার টুনটুন ধ্বনির মত ধ্বনি শোনা যেত। ওহী নাযিলের এটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন অবস্থা। ওহী নাযিলের সময় কঠিন শীতের দিনেও রাসূলুল্লাহ এর কপাল থেকে ঘাম ঝরতে থাকে।
৫. ফেরেশতার নিজস্ব জন্মগত আকৃতিতে:
নবী করিম ফেরেশতাকে কোন কোন সময় নিজস্ব জন্মগত আকৃতিতে প্রত্যক্ষ করতেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় সেই অবস্থাতেই তিনি তার নিকট ওহী নিয়ে আগমন করতেন। নবী করীম এর এরকম অবস্থা দুই বার সংঘটিত হয়েছিল। যা আল্লাহ তায়ালা সূরা নাজমে উল্লেখ করেছেন।
৬. পবিত্র মেরাজ রজনীতে:
পবিত্র মেরাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ যখন আকাশের উপর অবস্থান করছিলেন সেই সময় আল্লাহ তায়ালা সালাত এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে সরাসরি হুকুমের মাধ্যমে ওহীর ব্যবস্থা করেছিলেন।
৭. আল্লাহ তায়ালার সাথে সরাসরি কথোপকথন:
আল্লাহ তায়ালা সঙ্গে নবী করিমের সরাসরি কথোপকথন যেমনটি হয়েছিল তেমনি মূসা আলাইহিস সালামের সাথে হয়েছিল। তা কুরআন কারীমে অকথ্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলার সাথে নবী করিমের কথোপকথনের ব্যাপারটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
ওহী কি আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক:
আল কুরআন শ্রেষ্ঠতম মহাবিজ্ঞান। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “শপথ বিজ্ঞানময় কোরআনের।”
বিজ্ঞানীরা তাদের নানা আবিষ্কারের জন্য কোরআন থেকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তাদের তথ্য ও তত্ত্বগুলো কোরআনের সূত্রের অনুকূলে এসেছে। বিশ্বের বহু বড় বড় বিজ্ঞানী কুরআন পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো ও কুরআন পরস্পর সংগতিপূর্ণ। এতকাল কোরআনের যেসব আয়াতের ব্যাখ্যা করা কঠিন ছিল, আধুনিক বিজ্ঞানের জ্ঞান আমাদের সেসব অর্থ বুঝার ব্যাপারে সাহায্য করেছে।
আল কুরআনের বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলো প্রমাণ করে যে ওহী অর্থাৎ কুরআনের সাথে আধুনিক বিজ্ঞান সাংঘর্ষিক নয়। নিম্নে এর ব্যাখ্যাগুলো তুলে ধরা হলো-
১. মহাশূন্যে বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহ যে একটি অপরদিকে আকর্ষণ করে, এর ফলে এরা শূন্যে ভেসে রয়েছে। যে থিওরি থেকে নিউটন মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার করেন নিউটনের জন্মের প্রায় হাজার বছর আগে এই তত্ত্ব আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে তার নবীকে জানিয়েছিলেন। এ সম্পর্কিত আয়াত হল, আর সমস্ত নক্ষত্ররাজি তারই আমর দ্বারা বাধা (নিয়ন্ত্রিত)। নিশ্চয়ই এর মধ্যে বিজ্ঞ লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যে মহাশক্তি বলে উর্ধলোকের যাবতীয় বস্তু এবং ভূমন্ডল শূন্যে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে তাকে আয়াতে আমরুল্লাহ (আমর) বলা হয়েছে। আর সেটাই নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি।
২. ভ্রুণতত্ত্ব আধুনিক বিজ্ঞানের একটি জটিলতম বিষয়। কুরআনে ভ্রুণ সৃষ্টি ও বিকাশ সম্পর্কিত যথাযথ বর্ণনা রয়েছে, “আমি তো মানুষকে মাটির উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক নিরাপদ আধারে স্থাপন করি। পরে শুক্রবিন্দুতে পরিণত করি জমাট রক্তে। অতঃপর জমাট রক্তকে পরিণত করি পিন্ডে। তারপর পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি পিঞ্জরে। অতঃপর পরিণত করে তারপর তাকে মাংস দ্বারা ঢেকে দেই। অবশেষে তাকে রূপ দান করি। সুনিপুন স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান। এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে। কিয়ামতের দিনে পুনরুত্থিত হবে। আমি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সাজিয়েছি। সৃষ্টির বিষয়ে বেখবর নই।
৩. আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম সাফল্য মহাকাশ বিজ্ঞান। অর্থাৎ বিগ ব্যাঙ্গ থিওরি। এ ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে, “অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখেনা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল। তারপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম। আর জীবন্ত সবকিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে।” পানি থেকে জীবন সৃষ্টি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক। সব প্রাণী প্রোটোপ্লাজম দিয়ে তৈরি আর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পানি।