Wednesday, February 12, 2025

মজুদদারী, কালোবাজারি, ভেজাল মেশানো এবং ওজনে কম দেয়ার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: মজুদদারী, কালোবাজারি, ভেজাল মেশানো এবং ওজনে কম দেয়ার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি আলোচনা করুন। বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



মজুদদারী, কালোবাজারি, ভেজাল মেশানো এবং ওজনে কম দেয়ার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি আলোচনা করুন।

ভূমিকা

ইসলাম একটি শাশ্বত, সর্বজনীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। সৃষ্টি জগতের এমন কোন বিষয় নেই যে ব্যাপারে ইসলাম নির্দেশনা প্রদান করেনি। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট এবং এতদুভয়ের এতদুভয়ের মধ্যে যা রয়েছে তা সংশয় মুক্ত।

মজুদদারী, কালোবাজারি, ভেজাল মেশানো এবং ওজনে কম দেয়ার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টি ভঙ্গি

নিম্নে এসকল অনৈতিক কার্যাবলীতে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা হলো-

মজুদদারী

ইসলাম মানুষকে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছে। তবে এ সুযোগে মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী মজুদ রেখে বাজারে পণ্য সকট সৃষ্টি করে মুনাফা অর্জন ইসলামে বৈধ নয়। কেননা এতে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে এবং নিম্ন আয়ের মানুষেরা দুর্ভোগের শিকার হয়। আল্লাহর সৃষ্টি জীবকে কষ্ট দিয়ে বাজারে তথা অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে পণ্য মজুদ করে রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

“যে ব্যক্তি চল্লিশ রাত পযন্ত খাদ্য-এব মজুদ করবে সে মহান আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে এবং তার সঙ্গে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না।”


শিশুর আধুনিক, সুন্দর ও অর্থবহ নাম


আল্লামা শামী (রহ.) বলেন, দুর্ভিক্ষের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া যদি সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তবে বিচারক বা আদালত মজুদদারকে খাদ্যশস্য বিক্রি করে দেয়ার জন্য আদেশ জারী করবেন। যদি মজুদদার হুকুম তামিল না করেন তবে বিচারক তার খোরাকি বাবদ খাদ্য দ্রব্য রেখে বাকীগুলো বিক্রি করে দিবে। যদি জনগণের খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করার টাকা না থাকে তবে বিচারক ক্রমশ তা বণ্টন করে দিবেন। পরে তাদের নিকট খাদ্য দ্রব্য আসলে বিচারক আদালত তাদের নিকট থেকে উসূল করে দাতার নিকট পৌঁছে দিবে। নিজের জমির ব্যাপারেও এ বিধান। তবে কেউ যদি জমির ফসল হতে নিজের ও পরিবারের বাৎসরিক প্রয়োজন পূরণের জন্য সঞ্চয় রাখে তবে তাতে দোষ নেই।

কালোবাজারী

অধিক লাভের আশায় পণ্য সামগ্রি ক্রয় করে মজুদ করে রাখা এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হলে সে মজুদকৃত পণ্য অধিক লাভে পশ্চাতদ্বারে বিক্রি করাকে কালোবাজারী বলে অসৎ ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় এ পন্থা অবলম্বন করে। এতে জনসাধারণ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। কালোবাজারীর কারণে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায় এবং তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এজন্য কালোবাজারী ইসলামে নিষিদ্ধ। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকার উৎপাদিত লাল চিনি নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বেশি দামে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।



ভেজাল মেশানো

বর্তমানে পণ্য দ্রব্যে ভেজাল নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে ঔষধ পর্যন্ত প্রায় সকল পণ্যে ভেজালের উপস্থিতি লক্ষনীয়, পণ্য-সামগ্রীতে ভেজাল হিসাবে এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয় যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দিন দিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। খাদ্য-দ্রব্যে ভেজাল দেওয়া ইসলামে নিষিদ। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যে ও ঔষধে ভেজাল মেশানো হচ্ছে। মাছ গোশত শাক-সবজি ফলমূল থেকে শুরু করে ঔষধেও ভেজালে সয়লাভ হয়ে গেছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ক্ষতিগ্রস্থ হয়ো না এবং কারো ক্ষতি করো না।”

ইসলাম ধর্মে এ ধরণের কাজ চরমভাবে নিন্দিত। এ ভেজাল মিশ্রনের সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধ জড়িয়ে আছে। যেমন প্রতারণা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন, আত্মসাৎ, সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রন, অমানবিকতা এবং সাধারণ মানুষের জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

এসব কাজ ইসলামে মহাপাপ। যারা খাদ্যে ভেজাল মেশায় তাদের আল্লাহর নির্দেশের প্রতি সাবধান হওয়া উচিত। চিন্তা করা উচিত যে নিজের বৈধ পণ্যের ব্যবসায় ভেজাল মেশানোর ফলে ব্যবসাটি হারামে পরিণত হচ্ছে। আরও ভাবনার বিষয় হল শরীয়তে হারাম পদ্ধতিতে উপার্জিত মাল যারা ভক্ষণ করে তাদের ইবাদত কবুল হয় না। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাত করেন, “কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের পাপীরুপে উঠানো হবে তবে যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহকে ভয় করে, কল্যানের কাজ করে ও সত্যতা ধারণ করে তারা ব্যতীত”।


No posts


ওজনে কম দেয়া

পণ্য সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতাকে পরিমাপে কম কিংবা মেপে নেয়ার সময় বেশী নেয়াকে ইসলামে নিষিদ্ধ করেছে। ও হাদীসে এমন কর্মকাণ্ডকে অত্যন্ত্য নিরদলীয় ও পরকালীন দুর্ভোগের কারণ বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তিনি আকাশকে করেছেন অমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদণ্ড (দাঁড়িপাল্লা), যাতে তোমরা সীমালংঘন না কর তুলাদন্ডে। তোমরা ন্যায্য ওখন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিও না।”

এজন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওজনে কম না দিয়ে বেশি দেয়ার জন্য হুকুম করেছেন। তিনি বলেন, “ওজন কর এবং কিছু বেশি দিয়ে দাও।”

উপসংহার

বর্তমানে ব্যবসায় হারাম ও হালাল বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দ্রুত সম্পদশালী হওয়ার আশায় বিভিন্ন অনৈতিক কাজ যেমন- মজুদদারী, কালোবাজারি, ওজনে কম দেয়া ও ভেজাল মেশানো ইত্যাদির মধ্য দিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হচ্ছে। ব্যবসায়ী মহলকে এসব বিষয়ে সচেতন ও সাবধান করা এখন সময়ের দাবী।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles