▶ প্রশ্ন: ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি? ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী আলোচনা করুন। ▶ বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)
ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি? ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী আলোচনা করুন।
ভূমিকা
বর্তমান যুগে সুসভ্য মানব সমাজের জন্য ব্যাংক যে একটি অত্যাবশ্যকীয় ব্যবস্থা তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। অনেক বড় বড় অর্থনৈতিক কাজই একমাত্র ব্যাংকের সাহায্যে সম্পন্ন করা সম্ভব। এতে প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও আধুনিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা ও ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা ইসলামের দৃস্টি আর আদুনিক বা প্রচলিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা পাশ্চাত্য জগতের সৃষ্টি। প্রচলিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ পরিচালার Measurement হচ্ছে Secularism ধর্মনিরপেক্ষতা, পক্ষান্তরে ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্য পরিচালনার Measurement হচ্ছে ইসলামি শরীআ।
ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক
যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান মুদ্রা এবং ব্যাংক ব্যবস্থা ইসলামি অর্থনীতির আলোকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইসলামি শারীআ মুতাবিক ব্যাংকসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সে অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করে তাকে ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে।
প্রচলিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলীর অনেক ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন- মুদ্রা ও নোট প্রচলন, নিকাশ ঘর হিসেবে কাজ করা, অন্যান্য ব্যাংকের এবং সরকারি ব্যাংকের হিসেবে কাজ করা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ঋণ দান ইত্যাদি। তবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোট প্রচলন কার্যে শরীআ বিরোধী কোন ছবি মুদ্রায় ছাপাতে পারে না। প্রচলিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ন্যায় ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার অধীনস্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মূলধন যোগান দিতে পারে। ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত সরকারি ঋণ হবে করযে হাসানা বা উত্তম ঋণ। এ কাজগুলো ছাড়াও ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো কর্ম সম্পাদন করে থাকে।
ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী
নিম্নে ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলী বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- শরী’আ বোর্ড গঠন: ইসলামি ব্যাংকের অর্থনৈতিক কার্যাবলী সূচারুরূপে পরিচালনার জন্য শরী’আ বোর্ড গঠন অপরিহার্য। বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, আলিমে দ্বীন, আইনবিদ এবং ইসলামি অর্থনীতিবিদদের মাধ্যমে এ বোর্ড গঠন করা হয়। তাঁরা কুর’আন সুন্নাহকে Measurement হিসেবে ধরে নীতিমালা প্রণয়ন করে থাকেন। ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বোর্ড হিসেবেও সঠিকভাবে কার্য সম্পাদন করে থাকে।
- প্রতীকী মুদ্রা প্রচলন: দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও জনসাধারণের প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে কারেন্সী নোট ছাড়ে। পাঁচ টাকা বা তার বেশি মূল্যের নোট আমাদের দেশে কারেন্সী বলে পরিচিত, বাকিটা রেজগি। আমাদের দেশের কাগজের নোটগুলো পরিবর্তনীয় মুদ্রা নয়। কাগজী মুদ্রাকে স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রায় রূপান্তর করা যায় না। কাগজী মুদ্রা প্রচলন যেন সরকারের একটি অনর্জিত আয়। স্বার্ণ বা রৌপ্য মুদ্রা প্রচলনের জন্য আয় করতে হয় কিন্তু কাগজী মুদ্রার জন্য আয়ের প্রয়োজন নেই, মেশিনে নোট ছাপালেই হলো। এর জন্য কোন কৈফিয়ত দিতে হয় না।
- সুদপ্রথা রহিত করে অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা: আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, “আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।” এ সুদ প্রথাকে রহিত করে অর্থনৈতিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। হারাম দ্রব্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, শিল্প বাণিজ্য সবই হারাম। এগুলোর উৎপাদন ও ব্যবসায় যেন কোন মূলধন বিনিয়োগ করা না হয়, তা ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
- যাকাত ফান্ড: যাকাতের অর্থ হিসেবে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে যে টাকা জমা হবে বায়তুল মাল তথা ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার হিসাব সংরক্ষণ করে এবং তা বণ্টনের ব্যবস্থা করে। অপরিবর্তনীয় মুদ্রা একদিকে যেমন মুদ্রাস্ফীতি ঘটিয়ে অর্থমূল্যকে সর্বদা অস্থির রাখে, অপরদিকে পুঁজিবাদের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটায়। তাছাড়া কাগজী মুদ্রার কারণেই পুঁজিবাদ দ্রুত বেড়ে ওঠে। কাগজী মুদ্রার অনেক সুবিধাও রয়েছে। যেমন- সহজেই বিনিময় করা যায়। সেজন্য এ মুদ্রা প্রতীক মুদ্রা হিসেবে চালু রাখা উচিত, যেন স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রার পরিবর্তন করা যায়। যার ফলে পাঁচ টাকার মুদ্রার গায়ে লিখিত এ কথাটি সত্যে পরিণত হয়- চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকবে। বর্তমানে বিভিন্ন নোটের গায়ে লেখাটা সত্যের অপলাপমাত্র। এ সমস্যা হয়েছে স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রায় পরিবর্তন যোগ্য না হওয়ায়। কাজেই ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি আবারো পরিবর্তন যোগ্য কাগজী মুদ্রার প্রচলন করে এবং কাগজী মুদ্রা সমমানের স্বর্ণ ও পৌপ্য মুদ্রা ট্রেজারিতে মওজুদ রাখে তবে এ সমস্যার সমাধান হবে।
- ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা: ইসলামে সুদ হারাম। তাই ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না। ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্যে ইসলামি চিন্তাবিদগণ সুদের পরিবর্তে ফী নেয়ার পরামর্শ দেয়। তবে সত্য কথা বলতে কি-কোন ইসলামি বাণিজ্যিক ব্যাংক করযে হাসানা ব্যতীত কোন ঋণ দিতে পারে না। যার ফলে ঋণ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নই ওঠে না। তবে দেশে স্বল্পমাত্রায় বিনিয়োগ হলে মুদ্রা সংকোচন এবং অধিক হলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটতে পারে। বিনিয়োগের পরিমাণের কারণে যদি বিভ্রাট দেখা দেয় তবে ইসলামি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লাভের হার কম-বেশি হতে পারে। ফলে সংগঠনগুলো মূলধন কম বা বেশি সংগ্রহ করবে। ব্যাংকের লভ্যাংশ ১৫% থেকে যদি ৩০% করা হয় তা হলে সংগঠনের লাভ থাকবে ২০%। এ অবস্থায় ইসলামি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
উপসংহার
ইসলামি ব্যাংকের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত পথে সমাজ থেকে শোষণের অবসান ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধনে সহায়তা করা। প্রচলিত ব্যাংকে সাধারণ মানুষের সেবা ও কল্যাণের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেই। অরে ব্যবসার মাধ্যমে সমাজের কতিপয় মানুষের ভাগ্যোন্নয়নেই প্রধান ভূমিকা হিসেবে কাজ করে।
• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam •