▶ প্রশ্ন: বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিন। আল কোরআনে বর্ণিত বিজ্ঞানের নির্দেশনাবলী আলোচনা করুন৷ ▶ বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)
ভূমিকা
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনের সূরা ইয়াসিনের শুরুতে শপথ করে বলেছেন, ‘বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ।’ আল কুরআনে বৈজ্ঞানিক অনেক গূঢ় তথ্য আছে বলে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের নাম রেখেছেন ‘হাকিম’। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সব কিছুর বর্ণনা দিয়েছেন। এ জন্য আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আমি এই কিতাবে কোনো কিছুই বাদ দেইনি।’ মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা অনেক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বর্ণনা করেছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা কুফরি করে তারা কী ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সব কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে; তবু কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’
বিজ্ঞান কাকে বলে?
পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে সুসংবদ্ধ সত্যির ওপর প্রতিষ্ঠিত যে জ্ঞান, তাকেই বলা হয় বিজ্ঞান। বিজ্ঞান এর অর্থ বিশেষ জ্ঞান। তবে বিজ্ঞান বিষয়টা বিস্তৃত। এর সজ্ঞাটা এমন হতে পারে, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা, নিরীক্ষা দ্বারা বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ জ্ঞানকে বিজ্ঞান বলে।
ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। অন্য ভাবে বলা যায়, বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে।
আল কোরআনে বর্ণিত বিজ্ঞানের নির্দেশনাবলী
কুরআন বিজ্ঞানের বাইরে কিছু নয়। কুরআন এবং বিজ্ঞানকে আলাদা করার কিছু নেই। আল-কুরআনে ছয় হাজারেরও বেশি নিদর্শনস্বরুপ আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে এক হাজারেরও বেশি আয়াত বিজ্ঞানের বিষয়বস্তুকে অন্তর্ভুক্ত করে নাযিল হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি যা জানতে পেরেছে সেসব কথা আরো ১৪০০ আগেই কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞানের অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়। কুরআনের যেসব আয়াতের বৈজ্ঞানিক সত্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অবশ্যই একদিন তা সত্য বলে প্রমানিত হবে।
কুরআনের যেসব আয়াত বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত সেসব আয়াতসমূহের কিছু নিন্মে উল্লেখ করা হলো-
দিন ও রাত্রির বিবর্তন সম্পর্কে
পৃথিবীর নিয়মানুসারে দিন শেষে রাত আসে। আবার রাত শেষে দিনের আগমন ঘটে। এই দিন রাত্রির পরিবর্তন সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা লুকমানের ২৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
اَلَمْ تَرَ اَنَّ اللهَ یُوْلِجُ الَّیْلَ فِی النَّهَارِ وَ یُوْلِجُ النَّهَارَ فِی الَّیْلِ وَ سَخَّرَ الشَّمْسَ وَ الْقَمَرَ ۫ كُلٌّ یَّجْرِیْۤ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی وَّ اَنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِیْرٌ ﴿۲۹﴾
অর্থ: তুমি দেখনি আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে প্রবিষ্ট করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করান এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিয়োজিত করে রেখেছেন, প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বিচরণশীল এবং (তুমি কি জান না) আল্লাহ তোমরা যা-কিছু করছ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত?
পৃথিবীর সাতটি স্তর সম্পর্কে
আল্লাহ রাববুল আলামীন পৃথিবীকে বিচিত্র ধারায় সৃষ্টি করেছেন। সাত আসমানের মত পৃথিবীরও যে সাতটি স্তর রয়েছে, তা বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তথ্য মহান আল্লাহ তায়ালা বহু পূর্বেই পবিত্র কোরআনের সূরা ত্বালাক এর ১২ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করেছেন।
اَللهُ الَّذِیْ خَلَقَ سَبْعَ سَمٰوٰتٍ وَّ مِنَ الْاَرْضِ مِثْلَهُنَّ ؕ یَتَنَزَّلُ الْاَمْرُ بَیْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْۤا اَنَّ اللهَ عَلٰی كُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ ۬ۙ وَّ اَنَّ اللهَ قَدْ اَحَاطَ بِكُلِّ شَیْءٍ عِلْمًا ﴿۠۱۲﴾
অর্থ: আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ এবং তার অনুরূপ পৃথিবীও। তাদের মাঝে আল্লাহর হুকুম অবতীর্ণ হতে থাকে, যাতে তোমরা জানতে পার আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিপূর্ণ শক্তি রাখেন এবং আল্লাহর জ্ঞান সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে।
বিশ্বের উৎপত্তি ও বিগ ব্যাঙ সম্পর্কে
এই বিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা আম্বিয়ার ৩০ নম্বর আয়াতে বলেন,
اَوَلَمْ یَرَ الَّذِیْنَ کَفَرُوْۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضَ کَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنٰهُمَا ؕ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَآءِ كُلَّ شَیْءٍ حَیٍّ ؕ اَفَلَا یُؤْمِنُوْنَ ﴿۳۰﴾
অর্থ: যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা কি জানে না আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী রুদ্ধ ছিল, তারপর আমি তা উন্মুক্ত করি এবং পানি হতে প্রাণবান সবকিছু সৃষ্টি করি? তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা হা-মীম সাজদাহ এর ১১ নম্বর আয়াতে আরো বলেন,
ثُمَّ اسْتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ وَ هِیَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَ لِلْاَرْضِ ائْتِیَا طَوْعًا اَوْ کَرْهًا ؕ قَالَتَاۤ اَتَیْنَا طَآئِعِیْنَ ﴿۱۱﴾
অর্থ: তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দান করলেন, যা ছিল ধোঁয়া রূপে। তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা চলে এসো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। উভয়ে বলল, আমরা ইচ্ছাক্রমেই আসলাম।
সূর্য ও চাঁদের আলোর পার্থক্য সম্পর্কে
বিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুযায়ী চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সূর্যের আলো থেকেই চাঁদ আলোকিত হয় এবং আলো বিতরণ করে। এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরা ইউনুস এর ০৫ নম্বর আয়াতে বলেন,
هُوَ الَّذِیْ جَعَلَ الشَّمْسَ ضِیَآءً وَّ الْقَمَرَ نُوْرًا وَّ قَدَّرَهٗ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوْا عَدَدَ السِّنِیْنَ وَالْحِسَابَ ؕ مَا خَلَقَ اللهُ ذٰلِکَ اِلَّا بِالْحَقِّ ۚ یُفَصِّلُ الْاٰیٰتِ لِقَوْمٍ یَّعْلَمُوْنَ ﴿۵﴾
অর্থ: তিনিই আল্লাহ, যিনি সূর্যকে রশ্মিময় ও চন্দ্রকে জ্যোতির্পূর্ণ করেছেন এবং তাঁর (পরিভ্রমণের) জন্য বিভিন্ন ‘মনযিল’ নির্ধারণ করেছেন, যাতে তোমরা বছরের গণনা ও (মাসসমূহের) হিসাব জানতে পার। আল্লাহ এসব যথার্থ উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে সৃষ্টি করেননি। যে সকল লোক জ্ঞান-বুদ্ধি রাখে, তাদের জন্য তিনি এসব নিদর্শন সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন।
এই বিষয়ে সূরা আল ফুরকানের ৬১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
تَبٰرَکَ الَّذِیْ جَعَلَ فِی السَّمَآءِ بُرُوْجًا وَّ جَعَلَ فِیْهَا سِرٰجًا وَّ قَمَرًا مُّنِیْرًا ﴿۶۱﴾
অর্থ: মহিমময় সেই সত্তা, যিনি আকাশে ‘বুরূজ’ বানিয়েছেন এবং তাতে এক উজ্জ্বল প্রদীপ ও আলো বিস্তারকারী চাঁদ সৃষ্টি করেছেন।
সূর্যের ও পৃথিবীর আবর্তন সম্পর্কে
আল্লাহ তায়ালা-ই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নম্বর আয়াতে বলেন,
وَ هُوَ الَّذِیْ خَلَقَ الَّیْلَ وَ النَّهَارَ وَ الشَّمْسَ وَ الْقَمَرَ ؕ كُلٌّ فِیْ فَلَكٍ یَّسْبَحُوْنَ ﴿۳۳﴾
অর্থ: এবং তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকেই কোনও না কোনও কক্ষপথে সাঁতার কাটছে।
সূরা ইয়াসিনের ৩৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
وَ الشَّمْسُ تَجْرِیْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ؕ ذٰلِکَ تَقْدِیْرُ الْعَزِیْزِ الْعَلِیْمِ ﴿ؕ۳۸﴾
অর্থ: সূর্য আপন গন্তব্যের দিকে পরিভ্রমণ করছে। এসব পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ সত্তার স্থিরীকৃত (ব্যবস্থাপনা)।
পানি বাষ্পে পরিনত হওয়া সম্পর্কে
পানি বাষ্পে পরিণত হওয়া সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআনের সূরা হিজর এর ২২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ রয়েছে,
وَ اَرْسَلْنَا الرِّیٰحَ لَوَاقِحَ فَاَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَسْقَیْنٰكُمُوْهُ ۚ وَ مَاۤ اَنْتُمْ لَهٗ بِخٰزِنِیْنَ ﴿۲۲﴾
অর্থ: এবং পাঠিয়েছি সেই বায়ু, যা মেঘমালাকে করে পানিপূর্ণ, তারপর আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি, তারপর আমি তা দ্বারা তোমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করি। তোমাদের সাধ্য নেই যে, তা সঞ্চয় করে রাখবে।
উপসংহার
পবিত্র আল কোরআন এক মহাবিস্ময়কর গ্রন্থ। সমস্ত বিজ্ঞানের উৎসস্থল হলো আল কোরআন। আল কোরআনে এরকম নানা ধরণের বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে। বিজ্ঞান বহু নির্দশন রয়েছে আল কোরআনে।
সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)
• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology •