Sunday, December 22, 2024

হিন্দু ধর্মের পরিচয় দিন। হিন্দু ধর্মের প্রধান প্রধান ধর্মগ্রন্থের বিবরণ দিন৷

প্রশ্ন: হিন্দু ধর্মের পরিচয় দিন। হিন্দু ধর্মের প্রধান প্রধান ধর্মগ্রন্থের বিবরণ দিন৷ বিষয়: IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম একটি ধর্ম হলো হিন্দুধর্ম। হিন্দু ধর্মের অনুসারী তাদের ধর্মমতকে সনাতন ধর্ম নামেও অভিহিত করে থাকে। হিন্দুধর্ম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন একটি ধর্ম। তবে হিন্দু নামটি আধুনিকালের দেয়া। এর প্রাচীন নাম হলো সনাতন ধর্ম। আবার এই ধর্মকে অনেকেই বৈদিক ধর্ম নামেও বলে থাকেন। বেদ এর উপর ভিত্তি করে এই ধর্ম গড়ে উঠায় অনেকেই একে বৈদিক ধর্ম বলে। এ ধর্মত্ত্বের মূল কথা হল ঈশ্বরের অস্তিত্বেই সকল কিছুর অস্তিত্ব এবং সকল কিছুর মূলেই স্বয়ং ঈশ্বর। 

হিন্দু ধর্মের পরিচয়

হিন্দুধর্ম বা সনাতন ধর্ম ভারতীয় উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক প্রাকৃতিক ধর্ম। ধর্মাবলম্বীগণ নিজেদের হিন্দু ধর্মমতকে সনাতন ধর্ম নামেও অভিহিত করেন। সনাতন অর্থ চিরন্তনকে ধারণ করা৷ হিন্দুধর্মের সাধারণ “ধরনগুলির” মধ্যে ইতিহাস, পুরান ও বৈদিক হিন্দুধর্ম থেকে বৈষ্ণবধর্মের অনুরূপ ভক্তিবাদী ধারার মতো একাধিক জটিল মতবাদগুলির সমন্বয়ের প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়।

হিন্দু ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই। অনাদি কাল থেকে এই পরম্পরা চলে আসছে লৌহযুগীয় ভারতের ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মে এই ধর্মের শিকড় নিবদ্ধ। হিন্দুধর্মকে বলা হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম। হিন্দুধর্মকে বিশ্বের “প্রাচীনতম জীবিত ধর্মবিশ্বাস” বা “প্রাচীনতম জীবিত প্রধান মতবাদ” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। কারণ এটি প্রাচীনযুগে আবির্ভূত হয়েছে। এই ধর্মাবলম্বীরা একে সনাতন ধর্ম বা চিরন্তন নিয়ম বা চিরন্তন পথ বলে আখ্যায়িত করেন। হিন্দু ধর্মীয় মতবাদ অনুসারে এই ধর্মের শুরুও নেই, আবার শেষও নেই।

বিভিন্ন ধর্ম বিশারদ হিন্দুধর্মকে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ এবং সংশ্লেষণ হিসেবে গণ্য করেন। অন্যান্য অনেক ধর্মের মতো যার মূলে একক কোন ব্যক্তি বা সত্ত্বার অবদান নেই। একাধিক উৎপত্তি উৎস থেকে এই ধর্মের প্রবাহমানতা। এটি সনাতনি বা চিরন্তন কর্তব্যের কথা যেমন সততা, অহিংসা, ধৈর্যশীলতা, সমবেদনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আরও অনেক মানবিক উৎকর্ষজনক উপায়ের কথা বলে। বাহ্যিক দিক থেকে হিন্দু ধর্ম পরম সত্যের জ্ঞানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

হিন্দুধর্মের অনেক শাস্ত্রগ্রন্থ রয়েছে। হিন্দুশাস্ত্র শ্রুতি ও স্মৃতি- এই দুই নামে দুই ভাগে বিভক্ত। এই গ্রন্থগুলিতে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও পুরাণ আলোচিত হয়েছে এবং ধর্মানুশীলন সংক্রান্ত নানা তথ্য উল্লেখিত রয়েছে। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে বেদ সর্বপ্রাচীন, সর্বপ্রধান ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হলো উপনিষদ, পুরাণ, ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত ভগবদ গীতা নামে পরিচিত মহাভারতের কৃষ্ণ-কথিত একটি অংশ বিশেষ গুরুত্বসম্পন্ন ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা পেয়ে থাকে।

হিন্দু ধর্মের প্রধান প্রধান ধর্মগ্রন্থের বিবরণ

হিন্দুধর্ম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা আবিষ্কৃত আধ্যাত্মিক আইন সঞ্চিত কোষাগার-এর উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। লিপিবদ্ধ করার আগে বহু শতাব্দী ধরে, ধর্মগ্রন্থগুলি মুখস্থ বিদ্যার সাহায্যে পদ্য আকারে মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে, ঋষিগণ ধর্মশাস্ত্রগুলিকে পরিবর্ধিত এবং তার শিক্ষাসমূহের পরিমার্জন করেছেন। বৈদিক পরবর্তী এবং বর্তমান হিন্দুদের বিশ্বাস, অধিকাংশ হিন্দু ধর্মগ্রন্থের সাধারণতঃ আক্ষরিক ব্যাখ্যা করা হয় না। অধিকাংশ পবিত্র গ্রন্থগুলি সংস্কৃত ভাষায় লিখিত।

হিন্দু ধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলো ২ ভাগে বিভক্ত- শ্রুতি ও স্মৃতি। শ্রুতি হল বেদ (৪ টি), বেদাঙ্গ (৬ টি), বেদান্ত/উপনিষদ (১২টি)। স্মৃতি ২ ভাগে বিভক্ত – সংহিতা ও পুরাণ। সংহিতার মধ্যে আছে মনুসংহিতা, অত্রিসংহিতা, যাজ্ঞ্যবল্ক সংহিতা, শুক্র সংহিতা, ব্যাস সংহিতা ইত্যাদি। আর পুরাণ হল রামায়ণ, মহাভারত, ১৮টি প্রধাণ পুরাণসহ ২০০ টি উপপুরাণ। রামায়ন ও মহাভারত পুরাণ হলেও একে অনেকে ঐতিহাসিক গ্রন্থ বলেন এবং এই দুইটি পুরাণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রামাণিক। পুরাণের থেকে সংহিতা ও সংহিতা থেকে শ্রুতি শাস্ত্র বেশি প্রামাণিক।

ধর্মগ্রন্থ- শ্রুতি

ঋগ্বেদ হল একটি প্রাচীনতম ধর্মীয় গ্রন্থ। এইটি দেবনাগরী লিপিতে লিখিত হস্তলিখিত ঋগ্বেদ। শ্রুতি আক্ষরিক অর্থে- যা শুনতে হয় অর্থাৎ শ্রোতব্য। শ্রুতি প্রাথমিকভাবে বেদকে বোঝায়, যা হিন্দু ধর্মগ্রন্থের প্রাচীনতম সাক্ষ্যপ্রমাণ। যদিও বেশিরভাগ হিন্দু বেদকে শাশ্বত সত্য প্রকাশ হিসাবে এবং প্রাচীন মুণিদের দ্বারা শ্রুত বলে সম্মান করে। অনেক হিন্দু পন্ডিত কোন দেবতা বা ব্যক্তি বেদ সৃষ্টির সাথে সংযুক্ত নয় বলে মনে করে। তারা এটিকে আধ্যাত্মিক জগতের আইন হিসাবে মনে করে, যা ঋষিদের দ্বারা উদ্ভূত না হওয়া সত্ত্বেও এখনও বিদ্যমান। হিন্দুদের বিশ্বাস, যেহেতু বেদের আধ্যাত্মিক সত্য শাশ্বত, সেহেতু সেগুলিকে অবিরত নতুন উপায়ে প্রকাশ করা সম্ভব।

বেদ চার ভাগে বিভক্ত (ঋক্, সাম, যজু এবং অথর্ব)। ঋগ্বেদ হল সর্বপ্রথম এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বেদ। প্রত্যেক বেদ আবার চার ভাগে বিভক্ত: প্রাথমিক ভাগ, মূল বেদ, সংহিতা বর্তমান, যাতে পবিত্র মন্ত্র রয়েছে। অন্য তিনটি অংশ সাধারণত গদ্য আকারে গঠিত ত্রিস্তর আলোচনা সমাহার এবং সংহিতা থেকে বয়সে সামান্য পরবর্তীকালের বলে বিশ্বাস করা হয়। এগুলি হল: ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ্। প্রথম দুটি অংশকে পরবর্তীকালে কর্মকাণ্ড (আনুষ্ঠানিক অংশ) বলা হয়েছে, যেখানে শেষের দুইটি অংশ নিয়ে জ্ঞানকান্ড (শিক্ষামূলক অংশ) গঠিত। যেখানে বেদ ধর্মানুষ্ঠানের উপর কেন্দ্রীভূত, সেখানে উপনিষদ আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি ও দার্শনিক শিক্ষার উপর অধিশ্রিত, এবং ব্রহ্ম ও জন্মান্তর বিষয়ে আলোচিত।

বৃহদারণ্যক উপনিষদের একটি সুপরিচিত শ্লোক হলো:

অসতো মা সদ্গাময়।

তমসো মা জ্যোতির্গময়।

মৃত্যোর্ মা অমৃতম্ গময়।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।

শ্লোকটির বাংলা অনুবাদ হলো:

অবাস্তব থেকে বাস্তবে আমাদের পথপ্রদর্শন কর।

অন্ধকার থেকে আলোকে আমাদের পথপ্রদর্শন কর।

মৃত্যু থেকে অমরত্বে আমাদের পথপ্রদর্শন কর।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ৷৷

ধর্মগ্রন্থ- স্মৃতি

ভগবদ্গীতা, একটি ১৯ শতকের পাণ্ডুলিপি নারদীয় পুরাণ নিসর্গ বলবিজ্ঞান বর্ণনা করে। এখানে দেখানো হয়েছে শীষনাগের উপর বিষ্ণু তাঁর সহধর্মিনী লক্ষ্মীর সঙ্গে যোগনিদ্রায় মগ্ন। এছাড়া নারদ এবং ব্রহ্মা-ও অঙ্কিত রয়েছে। শ্রুতি ছাড়া অন্যান্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিকে সামগ্রিকভাবে স্মৃতি (যে বিষয় স্মরণ করা হইয়াছে) বলা হয়। স্মৃতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল মহাকাব্যগুলি, যা মহাভারত এবং রামায়ণ ইত্যাদিতে নিহিত রয়েছে। ভগবদ্গীতা মহাভারতের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং হিন্দুধর্মের একটি সবচেয়ে জনপ্রিয় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। এতে একটি মহান যুদ্ধ প্রাক্কালে রাজকুমার অর্জুনকে বলা, একজন বিষ্ণু অবতার, শ্রীকৃষ্ণ থেকে প্রাপ্ত দার্শনিক শিক্ষা রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা কথিত, ভগবদ্গীতা, বেদের সারাংশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে কখনও কখনও গীতোপনিষদ্ বলে উল্লেখিত, ভগবদ্গীতা, ঔপনিষদ্ধি তত্ত্বের কারণে, বিভাগ হিসাবে, প্রায় শ্রুতির মধ্যেই ধরা হয়। স্মৃতির অন্তর্গত পুরাণ, যা বিভিন্ন অবিস্মরণীয় আখ্যায়িকা দ্বারা হিন্দু ধারণা চিত্রিত করে। এর অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল দেবীমাহাত্ম্যম্, তন্ত্র, যোগসুত্র, তিরুমন্ত্রম্, শিবসূত্র এবং হিন্দু আগম মনুস্মৃতি হল একটি প্রচলিত নীতিগ্রন্থ, যা সামাজিক স্তরবিন্যাসের উপর নিবন্ধিত সামাজিক নিয়মাবলী, যা পরে ভারতীয় বর্ণাশ্রম তৈরি করতে সমাজকে সাহায্য করেছে।

ভগবদ্গীতা থেকে কর্মযোগ সম্বন্ধে একটি ধারণা বর্ণনার একটি সুপরিচিত শ্লোক ব্যাখ্যা করা হয় নিম্নরূপে-

কর্মেই তোমার অধিকার, কর্মফলে কখনও তোমার অধিকার নাই।

কর্মফল যেন তোমার কর্মপ্রবৃত্তির হেতু না হয়, কর্মত্যাগেও যেন তোমার প্রবৃত্তি না হয়।

উপসংহার

শ্রুতি গ্রন্থগুলি, যেগুলিকে ঈশ্বরের বাণী হিসাবে বিবেচনা করা হয়, সেগুলির বিশেষত্বের মধ্যে খুব বেশি যায় না। তারা ধর্ম, অর্থ এবং কামের সাথে মোকাবিলা করে, যা মোক্ষের দিকে নিয়ে যায় এবং কীভাবে একজন মোক্ষ অর্জন করতে পারে। এর মধ্যে একজন ভাল ব্যক্তি হওয়া, আপনার ধর্ম অনুসরণ করা, অন্যান্য যোগিক অনুশীলনে জড়িত হওয়া ইত্যাদি বিষয় জড়িত। তবে তারা অন্য কোনও বিষয়ে খুব বেশি বিশদ বর্ণনা করে না।



সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ • এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব, ২য় সেমিস্টার)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles