Friday, February 21, 2025

প্রযুক্তি কাকে বলে? প্রযুক্তির উন্নয়নে মুসলমানদের অবদান লিখুন।

প্রশ্ন: প্রযুক্তি কাকে বলে? প্রযুক্তির উন্নয়নে মুসলমানদের অবদান লিখুন। বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দুটি পাশাপাশি ব্যবহৃত শব্দ, একই সাথে সম্পর্কযুক্ত। যদিও বিজ্ঞান একটি বৃহৎ বিষয় তার সাথে প্রযুক্তি অত্যন্ত সংশ্লিষ্ট ও সম্পর্কযুক্ত। বর্তমান আধুনিক যুগকে বলা হয় প্রযুক্তির যুগ তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। মানুষের প্রাত্যাহিক জীবনে প্রযুক্তির সংশ্লিষ্টতা নেই- এমন কোন বিষয়ই নেই। আমাদের চারিদিক প্রযুক্তির অবদান দ্বারা পরিবেষ্টিত।

প্রযুক্তি কাকে বলে?

প্রযুক্তি (Technology) বলতে বিজ্ঞানের জ্ঞানকে বাস্তবে ব্যবহার করার বিষয়কে বোঝায়। অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে প্রযুক্তির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, The application of scientific knowledge for practical purposes. প্রযুক্তি বলতে কিছু প্রায়োগিক কৌশলকে বোঝায়, যার সাহায্যে মানুষ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত উপাদানকে নিজের প্রয়োজনে সহজে ও দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, এক সময় মানুষ যোগাযোগের জন্য উঁচু পাহাড়, প্রতিধ্বনি, আগুনের ধোঁয়া প্রভৃতি ব্যবহার করত। কিন্তু যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষ এখন কম্পিউটার, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল, স্যাটেলাইট প্রভৃতি ব্যবহার করছে। এটাই প্রযুক্তি।


শিশুর আধুনিক, সুন্দর ও অর্থবহ নাম


যোগাযোগ ছাড়াও প্রযুক্তির আরও অনেক প্রায়োগিক ক্ষেত্র রয়েছে। মানবজীবনের প্রায় প্রতিটি দিকের সাথেই প্রযুক্তি জড়িত। মানবজীবনে একেকটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সংযোজন ও উন্নয়ন সেই ক্ষেত্রকে করেছে অনেক সহজ ও গতিশীল। মানবজীবনে প্রযুক্তির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হলো- জৈব প্রযুক্তি, মহাকাশ প্রযুক্তি, যোগাযোগ প্রযুক্তি, চিকিৎসা প্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তি, নৌ প্রযুক্তি, ন্যানো প্রযুক্তি, রাসায়নিক প্রযুক্তি, কৃষি প্রযুক্তি, নির্মাণ প্রযুক্তি ইত্যাদি।

প্রযুক্তির উন্নয়নের মুসলমানদের অবদান

বিজ্ঞান অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শাখার মতো প্রযুক্তিতেও রয়েছে মুসলমানদের অসামান্য অবদান। মুসলমানরা বিজ্ঞানের প্রাথমিক যুগেই প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে উৎকর্ষ সাধন করে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো-

  • কাগজ আবিষ্কারের আগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবিগণ ওহি সংরক্ষণের জন্য গাছের পাতা, বাকল, পাথর প্রভৃতি ব্যবহার করতেন। ৭০৪ খ্রিস্টাব্দে সমরখন্দ যখন মুসলমানদের আয়ত্তে আসে তখন চীনে কাগজ শিল্প প্রযুক্তির প্রাথমিক স্তরের ব্যাপক উন্নয়ন করেন মুসলমানগণ। যার জন্য কাগজ শিল্পে মুসলমানদের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • স্পেনের বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী আব্বাস ইবনে ফারনাস (৮১০-৮৭৫ খ্রি.) সর্বপ্রথম সূক্ষ ক্রোনোমিটার ও চশমা আবিষ্কার করেন।
  • মুসলিম বিজ্ঞানী আল জাজারী ঘূর্ণায়মান হাতল আবিষ্কারের মাধ্যমে পানি উত্তোলনের যন্ত্র তৈরি করেন, যা হাইড্রো পাওয়ার প্রযুক্তিতে চালানো হতো। তিনি ১১৩৬ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ এবং ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই তার তৈরি এই যন্ত্রের ব্যবহার করে পানি উত্তোলন করা হতো।
  • মিশরীয় মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে ইউনুস (৯৫০-৯৯৬) সর্বপ্রথম ঘড়িতে দোলক বা পেন্ডুলামের সফল ব্যবহার করেন।


  • চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিসেবে খ্যাত বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার মায়ার আল আকল এ কপিকল ভারোক্তোলোক, স্ক্রু, গোঁজ, চরকি এর ব্যবহার সম্পর্কে প্রথম আলোকপাত করেন।
  • নবম শতাব্দীতে মহাবিজ্ঞানী যাকারিয়া আল রাযি কেরোসিন উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কার করে তৈরি করেন নাফাতাহ্ বা কেরোসিনের বাতি। সে সময়ে তিনি কৃত্রিম উপায়ে বরফ তৈরির পদ্ধতিও আবিস্কার করেন।
  • মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে আল রাযি, হাসান ইবনে হায়সাম প্রমুখ মনীষীগণ শরীরের বাড়তি গোশত কাটা, হাড় কাটা, দাঁত তোলা, ক্ষত সেলাই করার প্রয়োজনীয় কৌশলী যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রযুক্তিতে আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছিলেন।


  • মুসলিম বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হায়সাম সর্বপ্রথম ‘ম্যাগনিফাইং গ্লাস’ আবিস্কার করেন। যা পরবর্তীতে বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল এবং বর্তমানেও গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
  • একাদশ শতাব্দীর দিকে মুসলিম বিজ্ঞানী আবু মোহাম্মদ আল খুজাব্দী সূর্যের উচ্চতা নির্ণয়ের জন্য ‘আস সুদ আল ফাখরী’ এবং ‘আল আলা- আস সামিল’ নামে দুটি যন্ত্র তৈরি করেন।
  • জ্যোতির্বিজ্ঞানেও মুসলমান বিজ্ঞানীদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে ইব্রাহীম আল ফাজারী হলেন প্রথম প্রযুক্তিবিদ। তিনি সূর্য ও নক্ষত্রের উচ্চতা নির্ণয়ের সহায়ক যন্ত্র অ্যাস্ট্রলেইব (Astrolabe) তৈরি করেন।
  • দ্বাদশ শতাব্দীর দিকে জনাব নাসিরউদ্দিন তুসী বিজ্ঞান গবেষণার জন্য একটি ‘মানমন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। পঞ্চদশ শতাব্দীতে মুসলিম জ্যোতির্বিদ জামশিদ গিয়াসউদ্দিন আল কামী ‘ইকুয়েটেরিয়াম’ নামে গ্রহসমূহের অবস্থান নির্ণয়ে সহায়ক একটি যন্ত্র তৈরি করেন।
  • মুসলমান পরমাণু বিজ্ঞানীদের মধ্যে ভারতের ড. এ. পি. জে আব্দুল কালাম ও পাকিস্তানের ড. আব্দুল কাদির খানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


  • পোশাক প্রযুক্তির উন্নয়ন মুসলমানদের হাত ধরেই হয়েছিল। কুফাতে তৈরি মেয়েদের ওড়না কুফিয়া বাগদাদের ‘বাদাচিন’, মাওসিলের, ‘মসলিন’ মিসরের ফুসতাতের কাপড় ‘ফাসতিযান’ প্রভৃতি কাপড় তৈরির উন্নত প্রযুক্তির স্বাক্ষর বহন করে। বর্তমানেও ইরানের কার্পেট ও সিরামিক শিল্প বিখ্যাত। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ।

উপসংহার

মানুষ স্বভাবতই তার চাহিদা পূরণ এবং সমস্যার সমাধানে প্রযুক্তির উন্নয়নে সর্বদাই সচেষ্ট ছিল। আর মানুষের সকল চাহিদা ও সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর প্রযুক্তি এসব উন্নয়নে মুসলমানদের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। বিশেষ করে বিজ্ঞানে প্রাথমিক যুগে মুসলমান বিজ্ঞানীদের অবদান বলার অপেক্ষা রাখে না। মুসলমানগণই ছিলেন প্রযুক্তির এই উন্নয়নের পথ প্রদর্শক। বর্তমানের এই আধুনিক প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ, যার শুরুটা হয়েছিল মুসলমানদের হাতেই।



সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles