Sunday, February 23, 2025

রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন দয়ার দরিয়া। প্রার্থীকে কখনো তিনি বিমুখ করতেন না। কিছু না কিছু তিনি প্রার্থীকে দান করতেনই। তৎক্ষণাৎ দান করতে না পারলে অন্য সময়ে দান করার জন্য ওয়াদা করতেন। সদা সত্য কথা বলতেন। মিথ্যাকে তিনি আদৌ পছন্দ করতেন না—সর্বদা ঘৃণা করতেন। নম্রতা ও কোমলতায় তাঁর দিল ভরপুর ছিল। ধীর, স্থির, শান্তভাবে কথা বলা ছিল তাঁর আদত। কটু কথা তিনি কখনও বলতেন না। জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চরিত্রে অসাধারণ সামঞ্জস্য দেখা যায়।

তিনি চিরদিন ছিলেন সরল, মুক্ত উদার, সুন্দর, কল্যাণময়। স্বীয় সঙ্গী-সাথীদের যেন কোন প্রকার কষ্ট-তকলিফ না হয়, সেদিকে তিনি সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতেন। রাতের বেলায় ঘরের বাহির থেকে নিঃশব্দে জুতা পায়ে দিয়ে নিরবে দরওয়াজা খুলে বের থেকেন। বাহিরের যরুরত পুরা করে আস্তে আস্তে নিরবে ঘরে প্রবেশ করতেন। কারো ঘুম নষ্ট করে কষ্ট দিতেন না। হাঁটার সময় দৃষ্টি নিচের দিকে রাখতেন। সঙ্গীদের সাথে চলার সময় পিছনে চলতেন। কারো সাক্ষাতে তিনি আগে সালাম করতেন। বসার সময় খুব আজেযীর সাথে বসতেন। আহার করার জন্য সময় নেহায়েত তাযীমের সাথে আহার করতেন। কখনও পেট পুরিয়া খাওয়া-দাওয়া করতেন না। সুস্বাদু বিলাস দ্রব্য আহার করা পছন্দ করতেন না। সবসময়ই আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকতেন। এই জন্যই অধিকাংশ সময় নিরব থাকতেন।

বিনা-যরুরতে তিনি কথা বলতেন না। যা বলতেন তা খুব স্পষ্ট করে বলতেন—যেন কথা বুঝতে কারো কষ্ট না হয়। কথাকে খুব লম্বা ও খুব খাট করে বলতেন না। ব্যবহার ও কথাবার্তায় খুব নম্রতা প্রকাশ পেতো। তার খেদমতে কেউ হাজির হলে তার যথার্থ সম্মান করতেন এবং তার বক্তব্য খুব আগ্রহ সহকারে শ্রবণ করতেন। শরীয়াত বিরোধী কথা বলিতে শুনলে বাধা দিতেন, অথবা নিজে দূরে সরে পড়তেন।

অতি নগণ্য বস্তুকেও তিনি আল্লাহ্ তা’আলার অসীম নেয়মাত হিসেবে গণ্য করতেন। কোন নেয়ামতকেই তিনি মন্দ বলতেন না। এমন উক্তিও করতেন না যে, সেটার স্বাদ বা গন্ধ ভাল নয়। অগত্যা কোন খাবার নিজের মন মতো না হলে খাইতেন না বা তারীফ করতেন না। কোন জিনিসের কোন দোষ খুজে বাহির করতেন না। কোন বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতেন না। কারো দ্বারা কোন লোকসান হলে বা কোন কাজকে কেউ নষ্ট করলে দিলে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করতেন না। হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, “আমি সুদীর্ঘ দশ বৎসর কাল হুযূর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে রয়েছি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে যা কিছু করেছি সেই সম্পর্কে তিনি কোনদিন এমন বলেন নাই যে, এটা কেন করেছ বা এটা কেন কর নাই? কিন্তু শরীআতের সীমা লঙ্ঘন করলে তখন রাসূলুল্লাহ্ রাগকে কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারতেন না। নিজস্ব স্বার্থের জন্য তিনি কখনও রাগ করতেন না। তিনি যার প্রতি রাগ থেকেন, তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন মাত্র—ভালমন্দ কিছুই বলতেন না। কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হলে নিচের দিকে দৃষ্টি রাখতেন। তাঁর লজ্জা অবিবাহিতা মেয়ের চাইতেও বেশী ছিল।

👉 আরো পড়তে পারেন: জামাআত ওয়াজিব হওয়ার শর্তসমূহ

প্রয়োজন বোধে মৃদু হাস্য করতেন। উচ্চৈঃস্বরের হাসিকে তিনি পছন্দ করতেন না। সকলের সাথে মিল-মহব্বত বজায় রেখে চলতেন। অহঙ্কারে মত্ত হয়ে কখনও নিজকে বড় মনে করতেন না। মাঝে মাঝে সত্য কথার মাধ্যমে হাসি মযাক করতেন।

নফল এবাদত নামায এত অধিক পড়তেন যে, দাঁড়াইয়া থাকতে থাকতে তাঁর কদম মোবারক ফুলে ফেটে যেতো। কোরআন শরীফ পড়ার ও শোনার সময় আল্লাহর মহব্বতে ও ভয়ে তিনি কান্না করতেন। সঙ্গী-সাথীগণকে প্রশংসায় লিপ্ত থেকে নিষেধ করতেন। দীনহীন লোকের ডাকে সাড়া দিতেও বিলম্ব করতেন না। রোগী- চাই সে গরীব হউক, চাই সে আমীর হউক -তার হাল হকিকত জিজ্ঞাসা করতেন। ধনী-গরীব সবার জানাযায়ই তিনি শরীক থাকতেন। কোন গোলাম বা বান্দীর দাওয়াতকেও তিনি সাগ্রহে কবুল ফরমাইতেন। তাঁর আচার-ব্যবহারে কখনও এইরূপ প্রকাশ পেতো না যেন কেউ নিরাশ হয় বা ঘাবড়ে যায়।

যালেম দুশমনের যুলুম থেকে বাচাঁর জন্য তিনি সর্বদা প্রাণপণে চেষ্টা করতেন। অথচ দুশমনের সাথে অতি নম্র, ভদ্র ব্যবহার করতেন এবং হাসি মুখে কথা বার্তা বলতেন। বসার সময়, দাঁড়ানোর সময় সর্বাবস্থায়ই আল্লাহকে স্মরণ রাখতেন। কোন মহফিলে হাজির হলে সর্ব-সাধারণের আসনেই উপবেশন করতেন। জনসাধারণকে রেখে কখনও উচ্চাসনে উপবেশন করতেন না। কতিপয় লোকের সাথে কথা বলার সময় সকলের প্রতি সমভাবেই দৃষ্টি করতেন। প্রত্যেকের সাথেই এমন দিলখোলা ব্যবহার করতেন, যেন সকলেই ধারণা করতো, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকেই বেশী মহব্বত করেন। কেউ তাঁর খেদমতে বসিলে বা কথা বলিতে লাগিলে, কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা সে ব্যক্তি না উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন।

👉 আরো পড়তে পারেন: চর্মরোগ থেকে রক্ষা পাবেন কীভাবে

অধিকাংশ গৃহস্থালী কার্য তিনি স্বহস্তে সমাধা করতেন। যাবতীয় কার্যের শৃঙ্খলা বজায় রাখতেন। অতি সাধারণের সাথেও তিনি বড়ই নম্রতা ও ভদ্রতার সাথে মিশতেন। কারো দ্বারা কোন অনিষ্ট সাধিত হলেও তিনি মুখের উপর ধমকি দিতেন না। ঝগড়া, ফাসাদ ও শোরগোলকে তিনি আদৌ পছন্দ করতেন না। কেউ মন্দ ব্যবহার করলে তিনি তার সাথে ভাল ব্যবহার করতেন এবং তার অপরাধ মার্জনা করতেন। কোন খাদেমা, গোলাম বা স্ত্রীলোক এমন কি কোন জানোয়ারকেও তিনি স্বহস্তে প্রহার করতেন না। অবশ্য শরীআতের হুকুম মোতাবেক শাস্তি প্রদান করা সেটা পৃথক কথা। কোন যালেমের যুলুমের বদলা তিনি নিতেন না। তাঁর চেহারা মেবারকে সদা হাসি ফুটিয়া থাকিত। কিন্তু অন্তর সদাসর্বদা আল্লাহর চিন্তা ও ধ্যানে মগ্ন থাকিত।

বেফিকির কোন কথাই বলতেন না। তাড়াতাড়ি কারো কুৎসা করতেন না। কোন বিষয়ে কৃপণতা করতেন না। তর্ক-বিতর্কে বা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়াকে অন্তরের সাথে ঘৃণা করতেন। অহঙ্কার বা গর্বের লেশমাত্রও তাঁর ভিতর ছিল না। প্রয়োজনীয় ও উপকারী কথা ব্যতীত একটি বৃথা কথাও বলতেন না। মেহমান ও অতিথিগণের যথাসাধ্য খেদমত করতেন। কারো বে-তমিযিকে তিনি সহ্য করতেন না। কাউকে তাঁর তারিফ বা প্রশংসা করতে দিতেন না। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মোবারক আদত-আলাক সম্পর্কে বহু কিছু লিখিত রয়েছে। এখানে সংক্ষেপে যা বর্ণনা করা হলো, এর উপর বা-আমল থেকে পারলেও যথেষ্ট।

তথ্যসূত্র

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles