উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
চিনির সিরা দিয়ে মান কচুর স্পেশাল মেনু
এক গ্রামে হনুমানের অত্যাচার বেড়ে গেল। হনুমানের বিভিন্ন অত্যাচারে মানুষ পাগল হবার অবস্থা। হনুমানের দলের জন্যে বাগানের গাছে ফল রাখার উপায় নেই। খোলা ছাদে কোন কিছু শুকাতে দেয়া যায় না।
শুধু তাই নয়, হনুমানের দল বাহিরে থেকে জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে যা জিনিস পায় টেনে নেয়। আবার ঘরের দরজা খোলা থাকলে তো কথাই নেই, ওরা সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে রান্নাঘরের সবজির ঝুড়ি পুরোটাই নিয়ে পালায়। যদি ঘরে খাবার না পায়, তাহলে সব জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে যায়।
গ্রামের লোকেরা হনুমান তাড়ানোর জন্যে নাসির গাজীর সাহায্য চাইল। নাসির গাজীও ভাবছিলেন হনুমানের ব্যাপারে কিছু একটা করার। কিছুদিন আগে জানালার ফাঁক দিয়ে নাসির গাজীর টুপিটা তুলে নিয়েছে হনুমানের দল।
নাসির গাজী লোকদেরকে বললেন, আপনারা আগামী কাল দু’টি বড় দেখে মান কঁচু ও ১ কেজি চিনি নিয়ে আমার বাড়িতে আসবেন।
পরদিন কথামত লোকেরা মান কঁচু ও চিনি নিয়ে হাজির হল। নাসির গাজী তাদের বললেন কঁচুগুলো ছোট ছোট পিস করার জন্যে। পিস করা শেষ হলে সেগুলো সিদ্ধ করা হল এবং চিনির সিরা তৈরী করে তার মধ্যে সিদ্ধ কঁচু ডুবিয়ে স্পেশাল মেনু বানিয়ে রাখলেন।
কিছুক্ষণ পরে তা ঠাণ্ডা হতেই সিদ্ধ কঁচুর টুকরোগুলোকে জড়িয়ে জমাট বাঁধল চিনির রস। ইতিমধ্যে দেখা গেল- হনুমানের দল পাশের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। তখন নাসির গাজী একটি ঝুড়িতে স্পেশাল মেনু ঢেলে তা উঠানে রেখে এলেন। নাসির গাজী দরজা বন্ধ করে সবাইকে নিয়ে আড়াল থেকে পরিস্থিতি লক্ষ্য করতে লাগলেন।
হুপ, হুপ, হুউস, হুউস শব্দ করতে করতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই গাজীর উঠানের পাশের গাছটিতে হনুমানের দল এসে পড়ল।
দলের লিডার হুনুমানটির চোখ ঝুড়ির উপর পড়লে সে দ্রুত ঝুঁড়ির কাছে এসে সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করতে লাগল-এগুলো খাওয়ার উপযোগী কিনা?
চিনির রসের মিষ্টি গন্ধ শুকে ভাল লাগায় একটি একটি করে মুখে পুরতে লাগল স্পেশাল মেনু। ইতিমধ্যে দলের অন্যরা এসে খাওয়ায় যোগ দিল। তারা একের পর এক প্রতিযোগিতামূলকভাবে খেতে লাগল।
হঠাৎ দলপতি খাওয়া বন্ধ করে গলা-খাকারি দিতে লাগল এবং গলার বাইরে হাত দিয়ে চুলকাতে লাগল। এর মধ্যে অন্য হনুমানদেরও গলা চুলকানি আরম্ভ হল। গড়াগড়ি, দাপাদাপি, অস্থিরতা ও ছটফটানির সাথে চিৎকার করার সময় সকলের মুখ দিয়ে লালা ঝরতে লাগল। পাগলের মত দাপাদাপি করতে করতে হনুমানের দল লোকালয় ছেড়ে বনের দিকে দৌড়ে পালাতে লাগল। সেদিন থেকে এই এলাকায় আর কোন দিন এই হনুমানের দলের আসার দুঃসাহস হল না।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা