উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
ছায়া ও ঘ্রাণের মালিকানা
এক গ্রামে সাদ্দাদ নামে এক লোক বাস করত। সে ছিল খুব ধূর্ত। সব কাজ সে কৌশলে করে নিতো। সরল সোজা মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাত করতো।
সেই গ্রামের জনগণও ছিল খুব সরলমনা। ধোঁকা-প্রতারণার ধারে-কাছেও যেতোনা। যেন তারা জানেই না-মানুষ মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে।
একদিন সাদ্দাদ সেই গ্রামের এক কৃষকের গাছ থেকে আম চুরি করে খায় এবং তার আঁচিটা অন্য এক কৃষকের বাড়ীর পাশে পুঁতে রাখে। কিছুদিন পর তা অঙ্কুরোদগম হয়ে ধীরে ধীরে বেশ বড় হয়ে ওঠে। সাদ্দাদ গাছের পরিচর্যায় যথাযথ আত্মনিয়োগ করে। এক সময় গাছটি সূর্যের আলোতে অনেক দূর বিস্তৃত ছায়া দিতে লাগল।
একদিন চালাক সাদ্দাদ গাছের পাশের বাড়ির মালিকের নিকট এসে বলল, আচ্ছা! আপনার এই জাম গাছটি যে দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছায়া দিচ্ছে, তার মালিক কি আপনি নন? জামগাছের ছায়া তার জমির সীমানার মধ্যেই ছিল। তাই বলল, হ্যাঁ, অবশ্যই আমি এর মালিক। সাদ্দাদ বলল, তাহলে আমার এই আমগাছটিও তো আপনার পুকুর পাড়ে ছায়া দিচ্ছে, তার মালিক কি আমি নই? সরল কৃষক তার ধোঁকা বুঝতে না পেরে নিশ্চিন্তে সায় দেয়, হ্যাঁ, তা তো তোমারই।
এরপর থেকে সাদ্দাদ সেই পুকুরের মাছ বিক্রি করে খায় আর ফুর্তি করে বেড়ায়। দিনে দিনে গাছটিও বড় থেকে বড় হতে লাগল। এক পর্যায়ে গাছটির ছায়া নিকটেই এক বৃদ্ধার শীর্ণ কুটিরে পড়ল। বৃদ্ধার বিত্ত-সম্বল বলতে স্বামীর রেখে যাওয়া কিছু বকরী ছাড়া কিছুই নেই। দুষ্ট সাদ্দাদদের লোলুপ দৃষ্টি এবার বৃদ্ধার বেঁচে থাকার সম্বলের উপর পড়ল। সে বৃদ্ধার নিকট পূর্বের কৌশলে তার বকরীর পালসহ কুঁড়ে ঘরটিও দাবী করল। বৃদ্ধা তা দিতে অস্বীকার করল। শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে ফায়সালার জন্য পাশের গ্রামের বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ মাতাব্বর নাসির গাজীর নিকট যেতে চাইল। সাদ্দাদ এতে রাজী হল।
নাসির গাজী সব শুনে বললেন, আমাকে গাছের নিকট যেয়েই ফায়সালা দিতে হবে। গাছের কাছে এসে নাসির গাজী সাদ্দাদকে লক্ষ্য করে বললেন, বৃদ্ধার পাল থেকে একটি খাসী এনে জবাই করে গাছের নিচে রান্না কর। সাদ্দাদ তাই করল। বৃদ্ধা পাশে বসে অসহায় হয়ে কাঁদতে লাগল। নাসির গাজী গোশত দ্বারা কাবাব তৈরী করা শুরু করলেন। যখন কাবাব হয়ে এল, তখন নাসির গাজী সাদ্দাদকে প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা! বলতো সাদ্দাদ! এ কাবাবের ঘ্রাণ কতদূর ছড়াচ্ছে? সাদ্দাদ ভাবহীন জবাব দিল, আশ-পাশ তো আছেই এমনকি আমার আমগাছটির সীমানা পার হয়ে এর ঘ্রাণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। নাসির গাজীর আবার প্রশ্ন- “কাবাবের ঘ্রাণ কি তোমার গাছকে স্পর্শ করছেনা?” সাদ্দাদ এর জোরালো জবাব “অবশ্যই করছে।” নাসির গাজী এবার মোড় নিয়ে বসলেন। ভাব গাম্বীর্যের সাথে বললেন, “শুধু তোমার গাছের ছায়া পড়তেই যদি তুমি বৃদ্ধার সম্পদের মালিক হতে পার, তাহলে বৃদ্ধার খাসীর কাবাবের ঘ্রাণ তোমার গাছেও স্পর্শ করেছে। তা তোমার বাড়ীতেও গিয়ে পৌঁছেছে। তাহলে সেই গাছের মালিক হবে বৃদ্ধা এবং তোমার বাড়ির মালিকও হবে বৃদ্ধা। নিশ্চয় এতে তোমার কোন আপত্তি থাকবে না ।” একথা শ্রবণে চালাক সাদ্দাদ নিশ্চুপ হয়ে গেল। বিচারানুযায়ী বাধ্য হয়ে বৃদ্ধার নিকট গাছ ও বাড়ি হস্তান্তর করে সে অন্যত্র চলে গেল।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা