Wednesday, February 5, 2025

মহিলাদের মার্কেটিং বা অনুষ্ঠানে যাওয়া, চাকুরী করা

মহিলাদের মার্কেটিং বা অনুষ্ঠানে যাওয়া, চাকুরী করা

মহিলাদের স্বীয় দ্বীনদারী টিকিয়ে রাখার জন্য এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সুউচ্চ মর্যাদার আসনে আসীন হওয়ার জন্য তাদের কর্তব্য হল সর্বদা বাড়ীর ভিতরে থাকা, কোন অপারগতা বা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া পর্দা করেও বাড়ী থেকে বের না হওয়া।

বর্তমানে মহিলাগণ আনন্দ ফুর্তির সাথে যেভাবে মার্কেটে ঘোরাফেরা করছে তা সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং জাহেলিয়াতের বেহায়াপনা। তবে একান্ত প্রয়োজনে অর্থাৎ এমন প্রয়োজন যে, বাড়ীর বাইরে বের না হলে বিশেষ অসুবিধা হতে পারে বা অস্বাভাবিক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে অথবা শর‘ঈ কোন দায়িত্ব পালনের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষের সাথে পর্দার সাথে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে। মহিলাদের জন্য মার্কেটিং করা, স্কুল-কলেজের শিক্ষিকা হওয়া, অফিস-আদালতে পুরুষদের সাথে চাকুরী করা পর্দা লঙ্ঘিত হওয়ার কারণে নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে অনেক দলীল পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে কিছু দলীল-প্রমাণ ও ক্ষতির দিক তুলে ধরা হল।



কুরআন কারীমে মহিলাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-  وقرن فى بيوتكن  ‘তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে, মূর্খ যুগের মেয়েদের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বের হবে না।’ (সূরা আহযাব-৩৩)

এমনিভাবে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের পরে হযরত আয়িশা রা. বলেন, যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্তমান পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করতেন, তাহলে তিনি অবশ্যই মহিলাদেরকে মসজিদে গমনে নিষেধ করতেন।1

ঐ সময় হযরত উমর রা. মহিলাদের জামা‘আতে হাজির হওয়ার জন্য মসজিদে আসা কঠোরভাবে নিষেধ করে দেন এবং সকল সাহাবা রা. তা মেনে নেন।

দ্বিতীয়ত স্ত্রীর নিজের পক্ষ থেকে জিনিস পছন্দ করাটা স্বামীর প্রতি পূর্ণ ভালবাসা ও বিশ্বাস না থাকার পরিচয় বহন করে। কারণ, লেবাস-পোশাক, অলংকার ইত্যাদি দ্বারা একমাত্র স্বামীকে খুশী করাই স্ত্রীর খোদা প্রদত্ত দায়িত্ব। সুতরাং, যাকে খুশী করা উদ্দেশ্য, তিনি নিজের পছন্দমত জিনিস কিনবেন এটাই তো যুক্তিযুক্ত। নতুবা স্ত্রীর পছন্দ হল কিন্তু স্বামীর নিকট বেঢঙ্গা মনে হল, সেক্ষেত্রে তো স্ত্রী স্বামীকে খুশী করতে ব্যর্থ হল এবং তার চেষ্টা তদবীরও পণ্ড হল, যা চরম মূর্খতা এবং দুঃখজনক বিষয়।

তাছাড়া মহিলাগণ স্বামীর সাথে বোরকা পরিধান করে মার্কেটে গেলে যদিও তার সৌন্দর্য কোন বেগানা পুরুষ দেখতে পারবে না; কিন্তু সেতো একটি অযথা কাজ করতে গিয়ে নিজে বিভিন্ন পুরুষকে দেখবে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপছন্দনীয় হবার বিষয়টি ইতিপূর্বে একজন অন্ধ সাহাবীর আগমনের ঘটনায় উল্লেখ করা হয়েছে।



সুতরাং, মহিলাদের জন্য উচিত নিজ গৃহে অবস্থান করা। মার্কেটে, পার্কে এবং বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে না যাওয়া; বরং মার্কেটিংসহ বাইরের সকল কাজ-কর্ম স্বামীর উপর ন্যস্ত করে স্বামীর পছন্দকে নিজের পছন্দ বানিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য অর্জন করা।

বর্তমানে দ্বীনদার লোকেরা ওলীমা ইত্যাদি অনুষ্ঠানে মহিলাদেরকেও দাওয়াত করে এবং নিজেদের দ্বীনদারী বহাল রাখার জন্য মহিলাদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা রাখে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এতে পর্দা তেমন রক্ষিত হয় না। বরং প্রচুর পরিমাণ বেপর্দেগী এবং পোশাক ও অলংকারের প্রদর্শনী হয়ে থাকে। মেয়েরা পুরুষদের মহলে চলে আসে। আবার অনেক স্থানে পুরুষ খাদেম দ্বারা মহিলাদের খানা পরিবেশন করা হয়। তাহলে শর‘ঈ পর্দা কোথায় থাকল এবং কোথায় তাদের দ্বীনদারী বজায় থাকল? (আল বাহরুর রায়িক-১/ ৬২৮)

এজন্য হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. কছদুছ ছাবীল (পৃ.৭১) কিতাবে মহিলাদের এ ধরনের অনুষ্ঠানে যেতে নিষেধ করেছেন।

মহিলাদের মধ্যে আপনজনদের দ্বারা খানা পৌঁছান যেত বা কোন সুযোগে তাদেরকে নিজের বাড়ীতে মহিলাদের মাধ্যমে মেহমানদারী করা যেত; কিন্তু তা না করে দ্বীনদারীর নামে বদদ্বীনী তরীকায় এগুলি করা হচ্ছে, মুসলিম মিল্লাতের জন্য যা বড়ই পরিতাপের বিষয়। আল্লাহর পানাহ। (ফাতাওয়ায়ে রাহীমিয়া-১/৩০)

অবশ্য যেসব মহিলার আয়-রোযগারের কেউ নেই, তাদের উচিত বেপর্দা হয়ে আল্লাহকে নারায না করে নিজের ঘরের মধ্যে থেকে সেলাই মেশিনের কাজ করবে, কাঁথা সেলাই করবে, হাঁস-মুরগী পালন করবে। অথবা নূরানী মহিলা মু‘আল্লিমা ট্রেনিং নিয়ে কুরআনের শিক্ষিকা হয়ে নিজ ঘরের মধ্যে বেতন নিয়ে মেয়েদের কুরআন শিক্ষা দিবে।

সূত্র

  1. সহীহ বুখারী শরীফ ও সহীহ মুসলিম শরীফ ↩︎

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles