শিশুদের হৃৎপিণ্ডে ফুটো কীভাবে বুঝবেন, কী করবেন
পৃথিবীতে প্রতি হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে ৪ থেকে ৮ জন হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। নবজাতকের জন্মগত হৃৎপিণ্ডের মধ্যে অন্যতম হৃৎপিণ্ডের ফুটো। হৃৎপিণ্ডের দুই অলিন্দের মধ্যবর্তী দেয়ালে বা দুই নিলয়ের মধ্যবর্তী দেয়ালে ফুটো থাকতে পারে।
হৃৎপিণ্ডে ফুটোর প্রাথমিক লক্ষণ
- অল্প পরিশ্রমেই সারা শরীর নীলাভ হয়ে যাওয়া।
- ঠাণ্ডা বা গরমে তেমন কোনো অনিয়ম ছাড়াই বারবার বুকে কফ বসে যাওয়া৷
- ঘন ঘন শ্বাস নেয়া—মিনিটে ৫০ বার বা তারও বেশি। অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
- দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমতো না হওয়া।
- বুকের বামদিকের খাঁচা সামান্য বড় হওয়া।
- ডানদিকের উপরের পেটে যকৃত বড় ও শক্ত হয়ে যাওয়া।
- অনেক সময় হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটির সঙ্গে সঙ্গে অন্য কোনো ত্রুটিও থাকতে পারে।
আরো পড়তে পারেন: ফ্রি র্যাডিক্যাল! মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এটি কতটা বিপজ্জনক!!
কেন হয় হৃৎপিণ্ডে ফুটো
বিশেষ কোন একটি কারণে হৃদপিণ্ডে ফুটো হয় বিষয়টি এমন নয়। একাধিক কারণ মিলে এ সমস্যা তৈরি করে। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-
- ৩৫ বছরের বেশি বয়স্ক মায়েদের গর্ভধারণ।
- ঋতুচক্রের শেষ দিকের নিষেক।
- মায়ের ডায়াবেটিস।
- পাহাড়ি এলাকায় বসবাস ।
- গর্ভবতী মা স্টেরয়েড, খিঁচুনির ওষুধ বা থ্যালিডোমাইড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে।
- গর্ভাবস্থায় রুবেলা, মাম্পস, হাম, জলবসন্ত, টক্সোপ্লাজমোসিস জাতীয় ভাইরাসজনিত রোগ।
- শতকরা ৮ ভাগের ক্ষেত্রে বংশগত কারণ দায়ী।
নির্ধারিত পরীক্ষা
প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের স্টেথসকোপই হলো মূল যন্ত্র তারপর অন্য কিছু পরীক্ষাও লাগতে পারে। প্রাথমিকভাবে স্টেথসকোপের মাধ্যমে হৃদপিন্ডের ফুটো থাকার সমস্যা ধরা পড়তে পারে। এছাড়াও অন্যান্য পরীক্ষা যেমন রক্ত, বুকের এক্স-রে, ইসিজি, ইকো কার্ডিওগ্রামের মাধ্যমে এই সমস্যা ধরা পড়তে পারে।
চিকিৎসা
শিশুটি কিছুটা বড় হলে চিকিৎসা করা যেতে পারে। আপাতত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে হয়। সর্দি কাশি হলে তার চিকিৎসা করা, নিয়মিত চিকিৎসকের নজরদারিতে থাকা এটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখা দিলে বা শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হলে তখন ব্যবস্থা নিতে হবে। বেলুন ভালভোপ্লাস্টি থেকে শুরু করে চিকিৎসের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশনও করা হতে পারে। হৃৎপিণ্ডের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জন্মগত ত্রুটি অপারেশন ছাড়া সারিয়ে তোলা সম্ভব। আশার কথা দুই নিলয়ের মধ্যবর্তী দেয়ালের ফুটো ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে আপনি আপনিই সেরে ওঠে।
অনেক বাবা-মা’র প্রথম সন্তানটি হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি হওয়ার পর দ্বিতীয় সন্তান নেয়ার বেলায় বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। কিন্তু তাদের পরবর্তী সন্তানের অনুরূপ সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ২ থেকে ৫ ভাগ। আর দ্বিতীয় সন্তানের এ সমস্যা থাকলে তৃতীয়টির এ সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ২০ থেকে ২৫ ভাগ।