উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
টাকা আর ফার্নিচারের বিনিময়ে ছেলে বিক্রি
গ্রাম বাংলার এক জনপদ। নাম তার ভান্ডারপোল। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত অশিক্ষত, বিভিন্ন পেশার মানুষ সুখে-শান্তিতে এ গ্রামে বসবাস করছে যুগ যুগ ধরে।
কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশের অন্য সকল জায়গার মত এখানেও যৌতুক প্রথা চরম অভিশাপের রূপ নিয়েছে। তাতে কারো সংসার ভাঙচে, কারো জীবন নিচ্ছে, আবার কারো সবকিছু কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দিচ্ছে। অসহায় কন্যার দায়গ্রস্ত পিতারা মাথা ঠুকে মরছে।
এক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা জিন্নত আলী মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন। কিন্তু ছেলেপক্ষের চাহিদায় তিনি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। কারণ, নগদ ৩০ হাজার টাকা, মটর সাইকেল, মেয়ের গহনা আর ফার্নিচারসহ অন্যান্য সকল জিনিসপত্র দিতে হবে। এসব কিছু দেয়া তার পক্ষে খুবই কষ্টকর। এদিকে মেয়ের বিয়ে না দিলে উপায় নেই। বয়স হয়েছে। কখন কে কি বলে বসে। তাই তিনি এর উপায় বের করার জন্য বুদ্ধি নিতে গেলেন নাসির গাজীর কাছে।
গাজী সাহেব সব শুনে বললেন- জিন্নত আলী! এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নিষ্ঠুরতার কবল থেকে মুক্তি পেতেই হবে। যে করে হোক, যৌতুক প্রথা বন্ধ করতে হবে। সে জন্য বুদ্ধিও একটা এঁটেছি। শোন, তুমি ছেলেপক্ষের সব চাহিদা গুছিয়ে ফেল। বিয়ের দিন দিয়ে দিবে।
জিন্নত আলী একথা শুনে বলল- কিন্তু এত টাকা কোথায় পাব? তখন নাসির গাজী তাকে নগদ টাকা ধার দিলেন এবং একটি বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়ে বললেন- এখন যাও। দেখে নিও, যৌতুকের এই টাকা দিয়ে যৌতুক বন্ধ করব ইনশাআল্লাহ।
নাসির গাজীর কথামত বিয়ে সম্পন্ন হল। এবার বর-বউয়ের বিদায়ের পালা। গাজী সাহেব জিন্নত আলীকে বললেন, সব কিছু শেষ হল, মালপত্রও বুঝিয়ে দিলে, এবার তোমার মেহমান বিদায় করো। তখন জিন্নত আলী নাসির গাজীর শেখানো কথা বলল,
- বেয়াই সাহেব! আপনার সব চাহিদা তো পূরণ করলাম। যা দাবী ছিল, তা-ই পেয়েছেন। এবার যেতে পারেন।
- তখন ছেলের বাবা বলল, তা বটে, তো বর আর বউ বের হোক।
- জিন্নত আলী বলল, না, ওরা বের হবে না।
- বরের বাবা বলল, মানে?
এবার গাজী সাহেব বললেন,
- মানে, বর-বউ বের হবে কেন? জিন্নত আলী তো নগদে ৩০ হাজার টাকা আর এই জিনিসপত্র দিয়ে তোমার ছেলেকে কিনে নিয়েছে। সে এখন থেকে এ বাড়িতে থাকবে। তোমার চাহিদা তো সে পূরণ করেছে। আর জিন্নত আলীর দাবী ছিল তোমার ছেলে। সে তাকেও পেয়েছে।
- ছেলের বাবা বলল, কেমন কথা হল?
- গাজী সাহেব এবার বললেন, মানুষ টাকা-পয়সার বিনিময় করে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে। আর এ বিয়েতে তো টাকার বিনিময় হয়েছে। তাতে তোমার ছেলে তুমি বিক্রি করেছো এবং বিনিময়ে টাকা এবং মালামাল নিয়েছো।
তখন সবাই বলে উঠল- হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক। ঠিক। যৌতুক নেয়া মানে তো ছেলে বিক্রি করা। বিক্রিত মাল ফেরত হয় না। সুতরাং ছেলেকে চাচ্ছেন কেন?
তখন লজ্জায় ছেলের বাবার মাথা নত হয়ে গেল। তার লোভ ও অর্থলিপ্সার ভুল ভাঙ্গল। তখন সে বলল, বিয়াই সাহেব আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি চরম অন্যায় করেছি। আমাকে ক্ষমা করুন। আপনার অর্থ, মালামাল ফেরত নিন। বিনিময়ে শুধু আমার বউমা আর ছেলেকে ফেরত দিন। বুঝতে পেরেছি- যৌতুক নেয়া অন্যায় ও পাপ। আমি যৌতুক নিব না।
শেষে ছেলের বাবা সমস্ত টাকা ও মালামাল ফেরত দিল। তখন জিন্নত আলী বর ও কনেকে বরের পিতার নিকট সোপর্দ করল। এভাবে নাসির গাজীর বুদ্ধির জন্য সেই গ্রামে যৌতুক প্রথা বন্ধ হল। তাই সকলে খুশী হয়ে নাসির গাজীর প্রশংসা করতে লাগল।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা