উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
অমুসলিম রাষ্ট্রের ন্যায় বিচার
অনেক দিন আগের কথা। এক দেশে ছিলেন এক খৃষ্টান রাজা। একদিন রাজার ইচ্ছা হল মুসলিম রাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করার। মুসলিম রাষ্ট্র দেখার অভিপ্রায়ে তিনি দেশ হতে বের হলেন। তার উদ্দেশ্য হল, মুসলিম রাষ্ট্রের জনগণের আচার-আচরণ, নিয়ম-নীতি দেখা।
তখনকার যুগেও এক দেশ আরেক দেশের উপর দোষারোপ করতো। আর প্রতিপক্ষ দেশটি যদি মুসলিম রাষ্ট্র হতো, তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। খারাপ সামান্য কিছু না পেলেও বড় করে প্রচার করতো খারাপ দিকগুলো। অনেকটা মনগড়া। যাক, সেই রাজা বের হলেন কেন এক মুসলিম দেশ দেখবেন বলে।
রাজা বনের মাঝ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে করতে সেদিনের মতো সূর্য ডুবে গিয়ে রাত নেমে এলো। রাতটাও ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাজা সেদিনের মতো পথ চলা বন্ধ করে একটি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে লাগলেন।
বনের ধারে ছিল নাসির গাজীর বাড়ি। রাজার পরিচয় পেয়ে নাসির গাজী তাকে সাদরে গ্রহণ করলেন। তাকে খাবার দিলেন। খাবার দেয়া হল আপেল, খেজুর ও কলার দ্বারা।
রাজা খেতে গিয়ে দেখলেন, আসলে সেগুলো ফল নয়। সেগুলো সোনা দিয়ে তৈরি। রাজা জিজ্ঞেস করলেন
- আপনার কি সোনার তৈরি ফল খান?
- তা হবে কেন? আমরা তো আল্লাহর দেয়া রিযিক খাই।
- তবে আমাকে যে সোনার তৈরি ফল দিলেন?
- নাসির গাজী হেসে জবাব দিলেন, আমার ধারণা- সোনার ফল যে দেশে রয়েছে, সে দেশ আপনি মনে মনে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। নইলে আপনি সারা জীবন ধরে এই শান্তির পৃথিবীতে এত রক্তপাত করে অশান্তির আগুন জ্বালাচ্ছেন কেন?
রাজা লজ্জিত হয়ে বললেন, সোনার ফল আমি চাই না। আপনাদের দেশের নিয়ম-নীতি জানার আগ্রহ নিয়ে আমি এসেছি।
সাধারণ খাওয়া-দাওয়ার পর নাসির গাজী ও রাজা বৈঠকখানায় বসে আলাপ করছেন। এমন সময় রাতের অন্ধকার ভেদ করে হাতে মশাল নিয়ে দুই ব্যক্তি নাসির গাজীর নিকট আসল বিচার নিয়ে।
একজন বলল, হুজুর! আমি একখন্ড জমি তার কাছ থেকে ক্রয় করেছি। আজ ভোরে সেই জমি চাষ করতে গিয়ে লাঙ্গলের আঘাতে একটি সোনার হাঁড়ি পেয়েছি। হাঁড়িটি মাটির নীচে পোঁতা ছিল। কিন্তু জমি বিক্রেতা তা কিছুতেই নিতে রাজি হচ্ছে না। আমি ক্রয় করেছি জমি, হাঁড়ি তো ক্রয় করিনি। কাজেই তা আমি নিতে পারি না।
অন্যজন বিনীতভাবে বলল, হুজুর! জমিতে যা কিছু ছিল, সব তার কাছে আমি বিক্রি করেছি। আমি কি করে তা নিয়ে অপরাধী হব?
নাসির গাজী তাদের কথা শ্রবণ করে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। অতঃপর দু’জনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের তো উভয়ের ছেলে-মেয়ে আছে, না? তারা বলল, জি হ্যাঁ, আছে। তখন নাসির গাজী বললেন, তোমাদের এ মামলার মীমাংসা হচ্ছে- একজনের ছেলের সাথে আরেকজনের মেয়ে বিয়ে দিবে। আর সেই বিবাহের খরচপতি ও মহর হল এই সোনার হাঁড়িটি। নাসির গাজীর এই সুন্দর রায়ে উভয়ে খুশী হয়ে বাড়ীতে চলে গেল।
এই বিচার কার্য দেখে রাজা বললেন,
- এতো চমৎকার বিচার! আমার জীবনে এমন বিচার আর দেখিনি।
- নাসির গাজী রাজাকে বললেন, এ মামলার বিচার আপনি কিভাবে করতেন?
- রাজা বললেন, এরকম মামলা আমাদের দেশে হতেই পারে না। নিজের ক্রয় করা জমিতে সোনার হাঁড়ি পেয়ে কেউ তা ফেরত দিতে আদৌ আসত না। সব নিজে ভোগ করতো। এমনকি জমি বিক্রেতাকে কখনো জানাতোই না।
- নাসির গাজী বললেন, ভারী মজার দেশতো আপনাদের। কেউ এসে যখন টাকা বা কোনজিনিস পাওয়ার খবর দেয়, তখন আপনারা কি বিচার করেন?
- রাজা বলল, সেটা সরকার বাজেয়াপ্ত করে ফেলে।
- নাসির গাজী বললেন, কি আশ্চর্য! এতো দেখছি বড় জুলুম! প্রজার জিনিস নিজের করে নেয়া!
রাজা মাথা নিচু করে ভাবতে লাগলেন, একটি মুসলিম রাষ্ট্রের প্রজারা যদি এমন হতে পারে, তাহলে না জানি রাজা কেমন হবেন! এতদিন যাদেরকে আমরা অসৎ, অশিক্ষিত ভেবেছি, আজ তারাই তো দেখছি সত্যিকারের মানব। যাদেরকে আমরা মূর্খ জাতি বলেছি এবং শত শত দোষ তাদের ঘাড়ে চাপিয়েছি, আজ তারাই তো সৎ ও ন্যায় বিচার করছে। রাজা তার জীবনের ভুল বুঝতে পেরে পরদিন বিদায় নিয়ে দেশে গিয়ে সৎ ও ন্যায়ের সাথে দেশ পরিচালনা করতে লাগলেন৷
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা