উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
বোরকা পরিধানে খুবই কষ্ট
মডার্ণ মেয়ে ঝর্ণা, বোরকা পরা একদম পছন্দ করে না। বোরকার নাম শুনলেই যেন ওর সমস্ত শরীর ঘৃণায় জ্বলে উঠে।
এদিকে ঝর্ণার মা-বাবা মেয়েকে বার বার বুঝালেন বোরকা পরিধান করে পর্দা করে চলাফেরা করার জন্য। কিন্তু আধুনিকা মেয়ে ঝর্ণা মা-বাবার কথা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, এভাবে আপাদমস্তক ব্যান্ডজ করে চলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
ঝর্ণার মা-বাবা ভাবলেন- মেয়ে যদি বোরকা না পরে নির্লজ্জভাবে চলাফেরা করে, তাহলে কখন যে কি ঘটবে বলা মুশকিল। তারা শংকিত হয়ে পড়লেন।
মেয়ের অবস্থা দেখে ঝর্ণার মা-বাবা চিন্তায় অস্থির। মেয়েকে বোরকা পরিধান করাতে পারছেন না এবং মেয়ের মনের বিরুদ্ধেও কোন এ্যাকশন নিতে পারছেন না। এখন কি করবেন? পড়লেন তারা মহাবিপাকে।
কয়েকদিন পর ঝর্ণাদের বাড়িতে নাসির গাজীর আগমন হল। অনেক পূর্ব থেকেই নাসির গাজীর সাথে ঝর্ণার বাবার দহরম-মহরম ছিল। নাসির গাজীর সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে ঝর্ণার বাবা বললেন, গাজী সাহেব! বেশ ক‘দিন ধরে আমি একটি সমস্যায় ভুগছি, শত চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারছি না । আর এখন কি করবো, তাও ভেবে পাচ্ছি না।
কি সমস্যা জিজ্ঞাসা করলেন নাসির গাজী। মেয়ের বোরকা না পরার কথা বিস্তারিত খুলে বললেন ঝর্ণার বাবা। নাসির গাজী একগাল হেসে বললেন, এটি কোন সমস্যা হলো নাকি? কথা শুনে ঋর্ণার মা-বাবা অবাক হযে বললেন, একি বলছেন গাজী সাহেব? শত চেষ্টা করেও যার সমাধান দিতে পারছি না, আর আপনি বলেছেন- এটা কোন সমস্যাই না।
নাসির গাজী হেসে বললেন, মেয়েকে ডাকুন। মেয়েকে ডাকা হল। ঝর্ণা নাসির গাজীকে সালাম দিয়ে বলল,
- আংকেল আমায় ডেকেছেন?
- হ্যাঁ, মা! তুমি নাকি বোরকা পরিধান করোনা? কেন পরিধান করো না, বলবে?
- আংকেল! বোরকা পরা আমার একদম ভাল লাগে না। আমি কখনো বোরকা পরিধান করতে পারবো না। দয়া করে আপনি আমাকে এই উপদেশ দিবেন না। আর যাই বলুন, আমি কথা দিলাম আপনার কথা অমান্য করবো না- শুধু এটা ছাড়া।
- নাসির গাজী বললেন, ঠিক আছে মা! আজ থেকে তুমি বোরকা পরিধান করবে না। তোমার কথায় আমিও একমত।
নাসির গাজীর কথা শুনে ঝর্ণার মা-বাবা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বন্ধুর কাছ থেকে এমন উত্তর পাবেন- কল্পনাও করেননি।
এমন সময় নাসির গাজী ঝর্ণাকে বললেন,
- কথা যখন দিয়েছ, তাহলে আমার একটি কথা মেনে চলবে।
- কি কথা আংকেল? প্রশ্ন করল ঝর্ণা।
- আজ থেকে তুমি কোন পরপুরুষের সামনে দেখা দিতে পারবে না।
- ঝর্ণা বলল, ঠিক আছে আংকেল।
এরপর নাসির গাজী বিদায় নিয়ে চলে গেলেন৷ পরদিন ঝর্ণা মার্কেটে যেতে উদ্যত হলে, মনে পড়ে গেল নাসির গাজীর সাথে ওয়াদা করা সেই কথা। তখন আর যেতে পারলো না। পরদিন পশ্চিম পাড়ায় তার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন হল। কিন্তু বেরুলেই তো পরপুরুষের সামনে পড়ে যাবে। তাতে নাসির গাজীকে দেয়া তার ওয়াদা ভঙ্গ হবে। এভাবে তার বাহিরের অনেক প্লান- প্রোগ্রাম নষ্ট হল।
কিন্তু আর কত এভাবে প্রোগ্রাম নষ্ট করা যায়? শেষ পর্যন্ত সে ঠিক করল- বোরকা পরে বের হলে সে পরপুরুষের সামনে হওয়া থেকে বাঁচতে পারবে। তাই সে বোরকা ধরল। ঝর্ণার মা-বাবা নাসির গাজীর বুদ্ধির প্রশংসা করলেন এবং নাসির গাজীকে আবার বাসায় দাওয়াত করে খুব খাওয়ালেন।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা