▶ প্রশ্ন: ব্যবসা বলতে কি বোঝেন। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যবসার গুরুত্ব ও মূলনীতি আলোচনা করুন। ▶ বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)
ব্যবসা বলতে কি বোঝেন। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যবসার গুরুত্ব ও মূলনীতি আলোচনা করুন।
ভূমিকা
মহানবী (সা.) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শের নজির স্থাপন করেছেন। জীবিকা উপার্জনের উপায় হিসেবে ব্যবসায়-বাণিজ্যে মহানবী (সা.) পথ-প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। ৪০ বছর বয়সে নবী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করার আগেও তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। মহানবী (সা.) ব্যবসায়ের কাজে বিভিন্ন সময় সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, বাহরাইন, ইথিওপিয়াসহ আরবের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভ্রমণ করেছেন।
ব্যবসা কাকে বলে
ইসলামি অর্থনীতির পরিভাষায় ব্যবসায় বলতে মুনাফা ও উপকারিতা লাভের আশায় সন্তুষ্টচিত্তে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাথে অনুরূপ মূল্যমানের লেন-দেনের যাবতীয় কার্যাবলীকে বুঝায়। আধুনিক অর্থনীতিবিগণ ব্যবসায়ের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তার সাথে ইসলামি সংজ্ঞার কোনরূপ বৈপরীত্য নেই। তাদের মতে ধন-সম্পদ অর্জনের লক্ষ্যে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন অথবা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মানুষের যাবতীয় কার্যাবলীকে ব্যবসায় বলা হয়। পার্থক্য হচ্ছে, যে সব ব্যবসায়ে সামান্য অকল্যাণ বা প্রতারণার আশ্রয় আছে ইসলাম তা সমর্থন করে না। যেমন মদ ও হিরোইনের ব্যবসায়। অপরপক্ষে সাধারণ ব্যবসায়নীতি এ ধরনের ব্যবসায়কে উপেক্ষা করে না।
Click to see Ad
ব্যবসায়ের মূলনীতি
ইসলাম মানুষকে কোনো ক্ষেত্রেই বল্গাহীন স্বাধীনতা দেয় নি। সব ক্ষেত্রেই রয়েছে নির্দিষ্ট নীতিমালা। আয়-উপার্জন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটে নি। এ ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে ইসলামের দু’টি মূলনীতি রয়েছে। যথা-
- ব্যবসায়িক পণ্য, উপাদান ও কায়কারবারগুলো বৈধ হতে হবে। অবৈধ পণ্যের ব্যবসা ও অবৈধ কায়কারবারকে ইসলাম বৈধতা দেয় না। যেমন, মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ ইত্যাদির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়া ইসলামে অনুমোদন নেই। কারণ, এসব বিষয়কে ইসলামে মৌলিকভাবেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং আপনার ব্যবসার সাথে এসবের সংমিশ্রণ আপনার ব্যবসাকে কলুষিত করে।
- ব্যবসা-বাণিজ্য সকল অবস্থায় বৈধ পন্থায় হতে হবে। অর্থাৎ সেখানে কোনো ধরনের ধোঁকাবাজি, ভেজাল ও ফাঁক-ফোকর থাকতে পারবে না। কোনো ধরনের মিথ্যার আশ্রয় থাকতে পারবে না।
ব্যবসার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে মানুষের জন্য বিভিন্নভাবে হালাল রিযিকের ব্যবস্থা করে থাকেন। হালাল রিযিক উপার্জন করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীকৃতি দিয়েছেন। হালাল জীবিকা উপার্জনের যত পদ্ধতি আছে, ব্যবসা-বাণিজ্যই এসবের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে ব্যবসাই উপার্জনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রাধান্যের অন্তর্নিহিত রহস্য সবচেয়ে বেশি ব্যবসা-বাণিজ্যে। এ অঙ্গনে যে জাতি যত বেশি মনোযোগী হয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তারাই তত বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।
ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব এবং ব্যাপক উৎসাহ দিয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদের সূরা আন-নিসার ২৯ নম্বর আয়াতে বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَٰرَةً عَن تَرَاضٖ مِّنكُمۡۚ ٢٩﴾ [النساء : ٢٩]
অর্থ: তোমরা একে অপরের ধনসম্পদ অবৈধ উপায়ে আত্মসাৎ করো না। পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করো”।
একজন মানুষের জন্য তার অপর ভাইয়ের সম্পদ কখনোই বৈধ হয় না। বৈধ হওয়ার একমাত্র উপায় হলো, বিনিময় বা ব্যবসা। উভয়ের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয়, তাতে একে অপরের সম্পদকে নিজের জন্য হালাল করে নিতে পারে এবং অপরের সম্পদের মালিকানা অর্জন করতে পারে। একেই বলা হয় ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন করা বা হালাল রুজী উপার্জন করা।
এ ধরনের উপার্জনকে হাদীসে উত্তম উপার্জন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “উত্তম কামাই হলো, একজন মানুষের তার নিজের হাতের কামাই এবং সব ধরনের মাবরুর ব্যবসা-বাণিজ্যের কামাই”।
মাবরুর ব্যবসা হলো, যে বেচা-কেনাতে কোনো প্রকার ধোঁকা, খিয়ানত, মিথ্যা ও প্রতারণা থাকে না। পক্ষান্তরে যে ব্যবসার সাথে মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকা ও খিয়ানতের সংমিশ্রণ ঘটে তাকে মাবরুর বলা যাবে না। এ ধরনের ব্যবসায়ীকে সত্যিকার ব্যবসায়ী বলা যাবে না। কিয়ামতের দিন ফাজের (অপরাধী) লোকদের সাথে হাশরের মাঠে তাদের পূণরুত্থান হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই ব্যবসায়ীদের কিয়ামতের দিন ফাজের হিসেবেই উপস্থিত করা হবে। তবে যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে, সৎ কর্ম করে ও সত্য কথা বলে, তাকে ছাড়া”।
Click to see Ad
মুমিন ব্যবসায়ীদের গুণাগুণ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা আন-নূর এর ৩৭-৩৮ নম্বর আয়াতে বলেন, এমন লোকেরা, যাদেরকে ব্যবসা বাণিজ্য ও ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, সালাত কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে। তারা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে, যাতে আল্লাহ তাদের উৎকৃষ্টতর কাজের প্রতিদান দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও অধিক দেন। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিযিক দান করেন”।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীগণ হাশরের দিন নবী, শহীদ ও সত্যবাদীদের সঙ্গে অবস্থান করার সৌভাগ্য অর্জন করবে”
উপসংহার
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য-পানীয় ও বস্ত্রের প্রয়োজন। যতদিন জীবন আছে ততদিন কেউ খাদ্য-বস্ত্র থেকে বিমুখ হতে পারে না। এসব জিনিসের সবকিছু ব্যক্তির নিজের পক্ষে সমাধা করা সম্ভব হয় না। এজন্য তাকে অন্যের দ্বারস্থ হতে হয়। পারস্পরিক লেন-দেনের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে তার জন্য যা প্রয়োজন তা অন্য থেকে গ্রহণ করবে আর যার প্রয়োজন নেই অথচ নিজের কাছে আছে তা অন্যের চাহিদা অনুযায়ী প্রদান করবে। লেন-দেনের এ পন্থায় বিধি-নিষেধ নেই। সকলের চাহিদা পূরণ হওয়ার এ পদ্ধতির নামই ব্যবসায়।
• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam •