Sunday, December 22, 2024

ই-কমার্সের সংজ্ঞা দিন। এর প্রকারভেদ ও ইসলামের দৃষ্টিতে নীতিমালা তুলে ধরুন।

প্রশ্ন: ই-কমার্সের সংজ্ঞা দিন। এর প্রকারভেদ ও ইসলামের দৃষ্টিতে নীতিমালা তুলে ধরুন। বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



ই-কমার্সের সংজ্ঞা দিন। এর প্রকারভেদ ও ইসলামের দৃষ্টিতে নীতিমালা তুলে ধরুন।

ভূমিকা

পৃথিবীতে যতগুলো পেশা রয়েছে তার মধ্যে ব্যবসার গুরুত্ব সর্বাধিক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে ব্যবসা করেছেন এবং খোলাফায়ে রাশেদীনসহ অনেক সাহাবীগণও ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। ইসলামের প্রথম যুগে মূলত মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে এদেশে ইসলামের শুভাগমন হয়েছিল। বর্তমান যুগ হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তি বিস্তারের সুবর্ণ যুগ। ইন্টারনেটের কল্যাণে সারা পৃথিবী গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ঘরে বসে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের এক নয়া দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। আধুনিক প্রজন্মের কাছে ই-কমার্স একটি জনপ্রিয় ধারণা।

ই-কমার্সের সংজ্ঞা

ই-কমার্স ব্যবসা-বাণ্যিজ্যের একটি আধুনিক সহজ ও সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র। যেখানে ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম তথা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।

Click to see Ad

ইন্টারনেট ব্যবহার করে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, অর্থ লেনদেন ও ডাটা আদান-প্রদানই হচ্ছে ই-কমার্স। বিশ শতকের শেষের দিকে উন্নত দেশগুলোতে ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হ’লেও একুশ শতকে এসে উন্নয়নশীল দেশ সমূহে তার ছোঁয়া লাগে। ২০০৯ সাল পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেট বিস্তৃত হওয়ায় ই-কমার্স সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরী হয়। যান্ত্রিক জীবনে ব্যস্ত মানুষদের কাছে বর্তমানে ই-কমার্স হচ্ছে একটি জনপ্রিয় ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যম। বিশেষ করে করোনা মহামারির দুর্যোগপূর্ণ এ সময়ে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ই-কমার্সের প্রকারভেদ

সেবা ও পণ্য লেনদেনের ভিত্তিতে ই-কমার্সকে সাধারণত নিমোক্ত ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা যায়। যথা-

  1. ব্যবসা থেকে ব্যবসা (Business to Business- B2B)
  2. ব্যবসা থেকে ভোক্তা (Business to Consumer- B2C)
  3. ভোক্তা থেকে ব্যবসা (Consumer to Business- C2B)
  4. ভোক্তা থেকে ভোক্তা (Consumer to Consumer : C2C)
  5. এম-কমার্স (M-commerce)

Click to see Ad

ব্যবসা থেকে ব্যবসা

ব্যবসা থেকে ব্যবসা সংক্রান্ত ই-কমার্স একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংঘটিত হতে পারে। গতানুগতিক পদ্ধতিতে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাইকারি কেনাবেচাকে বিজনেস টু বিজনেস বলা হয়। এ ধরনের ই-কমার্স সিস্টেমে পক্ষগুলোর মধ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সরবরাহকারী কিংবা পণ্য উৎপাদনকারী হতে পারে। ই২ই ই-কমার্সে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেট এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সহজে এবং দ্রুতগতিতে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করে থাকে। উদাহরণ- আলিবাবা.কম, সিনদাবাদ.কম ইত্যাদি।

ব্যবসা থেকে ভোক্তা

এক বা একাধিক ক্রেতা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্য খুচরা বা পাইকারি লেনদেনসমূহ বিজনেস টু কনজিউমার এর অন্তর্গত। ব্যবসা থেকে ভোক্তা ই-কমার্স সিস্টেমে কোনো ভোক্তা সরাসরি কোনো ব্যবসায়ী বা উৎপাদনকারী থেকে পণ্য ক্রয় করে থাকে। অর্থাৎ ভোক্তাগণ ই-কমার্স সিস্টেমে কোনো পণ্য ক্রয় করলে তা এ জাতীয় লেনদেনের আওতায় পড়ে। এ ধরনের সিস্টেমে ভোক্তারা বা গ্রাহকরা সাধারণত ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত পণ্যসমূহ পর্যবেক্ষণ করে অর্ডার দিয়ে থাকে। তাই এ ধরনের ই-কমার্সের মাধ্যমে ভোক্তার নিকট পণ্য বিক্রয়ের জন্য ব্যবসায়কে অবশ্যই ইলেকট্রনিকস বাজার ব্যবস্থা আর্কষণীয় ও মানসম্মতভাবে উন্নয়ন করতে হয়। উদাহরণ- রকমারি.কম, আজকেরডিল.কম ইত্যাদি।

Click to see Ad

ভোক্তা থেকে ব্যবসা

কিছু কিছু ব্যবসা আছে যা সরাসরি ভোক্তা শ্রেণির কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করে। এ জাতীয় লেনদেন ভোক্তা থেকে ব্যবসা ই-কমার্সের আওতাভুক্ত। অর্থাৎ যখন কোনো ভোক্তা এককভাবে অন্য কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি লেনদেন করে তখন তাকে ভোক্তা থেকে ব্যবসায় বা কনজিউমার টু বিজনেস বলা হয়। এ ধরনের সিস্টেমে ভোক্তারা বা গ্রাহকরা সাধারণত কোনো বিজনেস সাইট থেকে পণ্য ক্রয়ের পরিবর্তে পণ্য ও সেবা বিক্রয় করে থাকে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহক তার পণ্য বা সেবার বিস্তারিত বিবরণসহ ওয়েবসাইটে পোস্ট করেন এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পছন্দ হলে তা ক্রয় করেন।  উদাহরণ- মোনস্টার.কম, দারাজ.কম ইত্যাদি।

ভোক্তা থেকে ভোক্তা

এ জাতীয় ব্যবসা কোনো ব্যবহারকারী থেকে অন্য কোনো ব্যবহারকারীর মধ্যে লেনদেন সম্পাদিত হয়। অর্থাৎ অন্য কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ছাড়াই ভোক্তা থেকে ভোক্তার লেনদেনকে ভোক্তা থেকে ভোক্তা বা কনজিউমার টু কনজিউমার বলা হয়। যেমন- এক শ্রেণির গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আছে যারা পুরাতন গাড়ি কেনাবেচা করে। অর্থাৎ যদি প্রতিষ্ঠানটি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে তাতে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পুরাতন গাড়ি ক্রয় করা একটি ব্যবস্থা রাখে এবং ক্রয় করে পুনরায় বিক্রয় করেন তাহলে এ ধরনের ই-কমার্সকে কনজিউমার টু কনজিউমার বলা হয়। উদাহরণ- ইবে.কম ইত্যাদি।

এম-কমার্স

এম কমার্স বা মোবাইল কমার্স হলো এমন একটি ব্যবসায়িক সিস্টেম যা তারবিহীন বা ওয়ারলেস পরিবেশে সংঘটিত হয়। অর্থাৎ আধুনিকায়নের যুগে মোবাইল, ট্যাবলেট ইত্যাদি ডিভাইসের মাধ্যমে তারবিহীন প্রযুক্তির ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় সিস্টেমকেই এম-কমার্স বলে অভিহিত করা হয়। মোবাইল কমার্সের ফলে বিভিন্ন মোবাইল ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী যেমন- ক্রেডিট সেবা, বিভিন্ন টিকেট, মেডিকেল রেকর্ড ইত্যাদি এবং অর্থ সংরক্ষিত করে রাখার জন্য ওয়ালেট ব্যবহার করছে যা ইলেকট্রনিক ফরমেটে সংরক্ষিত হয়। এম কমার্স প্রধানত ব্যাংকিং, টিকেট ক্রয়, আবহাওয়া ও ভ্রমণ তথ্য প্রাপ্তি, বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য শেয়ার করা, ই-মেইল ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে থাকে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ই-কমার্স

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানুষের চিন্তা-চেতনা, আচার-আচরণ, কৃষ্টি-কালচার সবকিছুর সমন্বয়েই হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম মানুষকে কোন ক্ষেত্রেই লাগামহীন স্বাধীনতা দেয়নি। সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। যেহেতু ই-কমার্স হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি নতুন সংস্করণ। সুতরাং ইসলামী নীতিমালার উপর ভিত্তি করে ই-কমার্সের একটি ধারণা রয়েছে, যা প্রচলিত বাণিজ্যনীতির অনুরূপ। ই-কমার্স গ্রহণীয় বা বর্জনীয় হওয়ার ব্যাপারে প্রধান দু’টি মূলনীতি রয়েছে-

  1. মূলগত: ই-কমার্সে লেন-দেনকৃত পণ্য ও উপাদান বৈধ হতে হবে। অবৈধ পণ্যের কারবার বা ব্যবসা বর্জন করতে হবে। যেমন মদ, জুয়া, সূদ ইত্যাদি। কারণ এসব বিষয় মৌলিকভাবে ইসলামে হারাম।
  2. পদ্ধতিগত: অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় সকল অবস্থায় বৈধ পন্থায় হতে হবে। অর্থাৎ সেখানে কোন ধরনের ধোঁকাবাজি, ভেজাল ও ফাঁক-ফোকর থাকতে পারবে না। কোন ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হালাল ও হারাম সুস্পষ্ট। আর যেকোন হালাল পণ্যে যদি নিম্নোক্ত দু’টি শর্ত পাওয়া যায় তবে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় জায়েয।

প্রথমত, বিক্রেতা যে পণ্যের বিজ্ঞাপন দিবে সেটি তার পূর্ণ মালিকানায় থাকতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘যা তোমার কাছে নেই তা বিক্রি কর না’। তবে যদি এমন হয় যে, বিক্রেতার ফ্যাক্টরীতে উপকরণসমূহ পূর্ণ মাত্রায় রয়েছে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রেতার হাতে পণ্য তুলে দিতে পারবে, তাহলে পণ্যের বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া বৈধ হবে।

দ্বিতীয়ত, পণ্যটি স্পষ্ট হতে হবে। অর্থাৎ যে পণ্যটি বিক্রয় করা হবে সেটির গুণ, পরিমাণসহ বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে হবে। কোন কিছু গোপন করা অথবা অস্পষ্ট রাখা যাবে না। নু‘মান বিন বশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু অস্পষ্ট বিষয়’।

উপসংহার

সততা, একাগ্রতা ও বিশ্বস্ততা ইসলামী ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ব্যবসায়িক লেনদেনে একজন উদ্যোক্তাকে সৎ এবং বিশ্বস্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ক্রয়-বিক্রয় বা লেনদেনে মিথ্যা, প্রতারণা এবং ওয়াদা ভঙ্গ করার কোন অভিপ্রায় রাখা যাবে না। তাছাড়া প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে তার দেওয়া শর্ত সমূহ যথাযথভাবে পূরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে। পণ্য বিক্রয়ের বিজ্ঞাপনে অবশ্যই স্পষ্ট ছবি দিতে হবে এবং পণ্য সংশ্লিষ্ট কোন সত্য গোপন করা যাবে না। এ বিষয়গুলি অবলম্বন করে একটি আদর্শিক ই-কমার্সের নমুনা দাঁড় করানো সম্ভব।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles