Thursday, November 21, 2024

বাইয়ে সালাম কাকে বলে? বাইয়ে-সালাম বৈধ হওয়ার শরয়ী ভিত্তি আলোচনা কর।

প্রশ্ন: বাইয়ে সালাম কাকে বলে? বাইয়ে-সালাম বৈধ হওয়ার শরয়ী ভিত্তি আলোচনা কর। বিষয়: IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



বাইয়ে সালাম কাকে বলে? বাইয়ে-সালাম বৈধ হওয়ার শরয়ী ভিত্তি আলোচনা কর।

ভূমিকা

মহান আল্লাহ তায়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। এই বিধানকে কার্যকরী করতে গিয়ে ইসলামী শরীয়তের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন সুদবিহীন ব্যবসা পদ্ধতির প্রবর্তন করেছেন। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বাইয়ে-সালাম তার মধ্যে অন্যতম। বাইয়ে সালামের মাধ্যমে বিক্রেতা তার পণ্যকে অগ্রিম মূল্যে বিক্রি করে অভূতপূর্ব লাভবান হয় এবং ক্রেতা অগ্রিম পণ্য ক্রয়ের দুশ্চিন্তা থেকে স্বস্তি লাভ করে।

বাইয়ে সালাম এর পরিচয়

বাইয়ে সালাম শব্দের আভিধানিক অর্থ-


No posts


  1. আল্লামা ইবনে ইমাম (রহ.) উল্লেখ করেছেন যে, আরবী সালামুন শব্দটি তাসলীম মাসদার থেকে উৎসারিত। যার অর্থ  হলো– হস্তান্তর  করা, অর্পন করা। যেহেতু বাইয়ে-সালামের মাঝে দ্রব্য মূল্য মজলিসেই অর্পণ করা অপরিহার্য।
  2. বাইয়ে-সালামের আরেকটি পরিভাষা হচ্ছে বাইয়ে-সালাফ। অভিধানে “সালাম” অর্থ সমর্পণ করা এবং “সালাফ” অর্থ–অগ্রিম প্রদান করা। চুক্তির মজলিসে পণ্যের মূল্য বিক্রেতার কাছে সমর্পণ করা হয় বলে একে বাইয়ে সালাম বলা হয়। অনুরূপভাবে  পণ্যের মূল্য বিক্রেতাকে অগ্রিম প্রদান করা হয় বলে একে বাইয়ে– সালাম বলে।
  3. আল ইযাহ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে “সালাম” শব্দের আভিধানিক অর্থ কোনো কিছু দ্রুত চাওয়া বা কোনো কাজ দ্রুত করা। যেহেতু বাইয়ে– সালাম এর মাঝে দ্রব্য হাতে আসার আগে দ্রব্যমূল্য দ্রুত গ্রহণ করা হয়।
  4. কারো কারো মতে সালাম এর আভিধানিক অর্থ হলো দ্রুত কোনো কাজ করা বা দ্রুত কিছু চাওয়া আর বাইয়ে- সালাম হলো  বিক্রয়ের প্রকৃত সময় আসার পূর্বেই সম্পন্ন হয়।


বাইয়ের সালামের পারিভাষিক সংজ্ঞা

  1. বাইয়ে-সালাম ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সম্পাদিত এমন এক চুক্তি যার আওতায় বিক্রেতা কোনো পণ্য বা উৎপাদিত বস্তু ক্রেতার কাছে একটি সম্মত মূল্যে বিক্রি করে। ক্রেতা চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার সাথে সাথে তার মূল্য পরিশোধ করে। কিন্তু ভবিষ্যতের কোন নির্দিষ্ট সময়ে এবং কোনো নির্দিষ্ট স্থানে পণ্যের স্থিরীকৃত আকার, গুণ ও পরিমাণ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করে থাকে। অর্থাৎ ভবিষ্যতের নির্ধারিত কোনো সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎক্ষণিক সম্মত মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরীয়াহ  অনুমোদিত পণ্য সামগ্রী অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করাকে বাইয়ে-সালাম বলে।
  2. সেন্ট্রাল শরীয়াহ বোর্ড ফর ইসলামী ব্যাংকস অব বাংলাদেশ কর্তৃক প্রণীত ও প্রস্তাবিত “ইসলামী ব্যাংক কোম্পনি আইন” এ বাইয়ে-সালাম এর সংজ্ঞা হলো–

“বাইয়ে- সালাম বলতে এমন এক ক্রয় বিক্রয়ের চুক্তিকে বুঝায় যেখানে ভবিষ্যতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করার শর্তে ব্যাংক গ্রাহকের সাথে তার সম্মতির ভিত্তিতে নির্ধারিত ক্রয় মূল্য আগাম পরিশোধ করবে। এই চুক্তি সম্পাদনের সময় পণ্যের গুণগত মান, পরিমাণ, ধরণ, সরবরাহের স্থান ও সময় উল্লেখ করতে হবে।



  • AAOIFI বাইয়ে সালামের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা হলো–“সালাম লেনদেন হলো আগাম দাম শোধের বিপরীতে ভবিষ্যতে  সরবরাহের শর্তে পণ্য ক্রয়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সরবরাহ করা হবে এমন পণ্যের বিপরীতে পণ্যের দাম চুক্তির সময় আগাম পরিশোধ করা হয়।
  • ইবনে কায়উম বলেছেন, “অগ্রিম মূল্য পরিশোধের বিপরীতে ভবিষ্যতে সরবরাহের শর্তে ক্রয় করাকে বাইয়ে-সালাম বলে। স্মরণযোগ্য যে, এ পদ্ধতিতে ব্যাংক কাউকে ঝণ দেয় না। বরং পণ্য ক্রয় করার জন্য অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে থাকে। পরবর্তীতে  ব্যাংক তার ক্রয়কৃত পণ্য বাজারে বিক্রি করে। এক্ষেত্রে যদি বিক্রয় মূল্য ক্রয় মূল্য থেকে বেশি হয় তাহলেই ব্যাংকের মুনাফা অর্জিত হয়।

বাইয়ে সালাম বৈধ হওয়ার শরয়ী ভিত্তি

প্রকাশ থাকে যে, ইসলামী শরীয়তের প্রত্যেকটি ব্যবসা বা কারবার বৈধ হওয়ার জন্য কুরআন, হাদীস, ইজমা ও প্রয়োজন বোধে কিয়াসের দলীল বিদ্যমান থাকে। বাইয়ে–সালাম এর বৈধতা প্রশ্ন কুরআন, হাদীস ও ইজমার দলীল সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো-

আল্লাহ তায়ালার বাণী

বাইয়ে সালাম একটি শরীয়াহ স্বীকৃত বিনিয়োগ পদ্ধতি। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আল্লাহ তায়ালা ক্রয়-বিক্রকে হালাল সাব্যস্ত করেছের আর সুদকে করেছেন হারাম।” এই আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সুদমুক্ত সকল ব্যবসাকে বৈধ করা– বাইয়ে সালাম একটি স্বীকৃত বাইয়ে বা কারবার হওয়ায় তা আয়াতে আলোচিত বৈধ ক্রয়-বিক্রয়ের আওতায় গণ্য করেছে।



এছাড়া আল্লাহ পাক পবিত্র আল কুরআনুল কারীমের সূরা বাকারার ২৮২ নম্বর আয়াতে ঘোষণা দিয়েছেন যে, হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নির্দিষ্ট মেয়াদে কোনো ঋণের লেনদেন কর তখন তা লিপিবদ্ধ করে রাখো।

একথা প্রণিধানযোগ্য যে, উল্লিখিত আয়াতের তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সালাফ “বাইয়ে সালাম” নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদানকৃত একটি চুক্তি। এটাকে মহান আল্লাহ তায়ালা তার কিতাবে হালাল করেছেন। এদ্ব্যতীত তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, সুরা বাকারার ২৮২নং আয়াতটি বাইয়ে-সালাম সম্পর্কে নাযিল করা হয়েছে।

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বাণী

বিখ্যাত সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) মদীনায় আগমন করলে লোকেরা এক বছর বা দুই বছরের জন্য বাইয়ে-সালাম (বাইয়ে-সালাম) করত। রাসূল (সা.) বলেছেন খেজুরের ক্ষেত্রে কেউ সালাফ (বাইয়ে-সালাম) করলে, সে যেন তার নির্দিষ্ট পরিমাণ ও নির্দিষ্ট পরিমাণ খেজুরের মধ্যে করে।” অন্য এক বর্ণনায় আছে কোনো বস্তুতে কেউ সালাফ করলে সে যেন তা নির্দিষ্ট পরিমাপ, পরিমাণ ও নির্দিষ্ট মেয়াদে করে”।

ইজমা

আল্লামা শায়খ আল ইমাম আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে কুদামাহ তার লিখিত অলমুগনি কিতাবের ৪র্থ খণ্ডে বলেন যে, বাইয়ে-সালামা বৈধ হওয়ার পক্ষে ইজমা সংঘটিত হয়েছে বলে আল্লামা ইবনুল মুনজির বর্ণনা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, বাইয়ে-সালাম এর ব্যাপারে সাহাবীদের ঐকমতো পাওয়া গেছে। তাদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য হলো “একে অন্যের সাথে নির্দিষ্ট ধরনের পণ্যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ ও পরিমাপে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে বাইয়ে সালাম করতে পারে।



এ ইজমাকে আরো সুদৃঢ় করেছে যে বিষয়টি তা হল নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে, এবং খোলাফায়ে রাশেদার অন্যতম খলিফা হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর এর যুগে সাহাবীগণ বাইয়ে-সালাম পদ্ধতিতে কারবার বা লেনদেন করেছেন এবং কেউ এর বিপক্ষে অবস্থান নেননি। এছাড়া সকল মাযহাব এর ফকীহ ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে বাইয়ে সালাম বৈধ। এটা বৈধতার বিপক্ষে কেউ ভিন্নমত পোষণ করেছেন এমনটি পরিলক্ষিত হয়নি।

কিয়াস

আল্লাহ তায়ালা যেহেতু কুরআনে “দাইন” বা ঋণের চুক্তির কথা বলেছেন। ঋণ যেহেতু মানুষ প্রথমে নগদ গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে মেয়াদের মধ্যে তা পরিশোধ করে। তাই বলা যায় যে, বাইয়ে সালাম এর কারবারে পণ্য পরবর্তীতে প্রদান সাপেক্ষে নগদ মূল্য পূর্বে গ্রহণ করে থাকে। অতএব, কুরআনে বর্ণিত ঋণের চুক্তির সাথে বাইরে- সালামের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

উপসংহার

উল্লিখিত আলোচনান্তে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, বাইয়ে সালাম কুরআন-হাদীস ও ইজমা দ্বারা স্বীকৃত একটি বৈধ ব্যবসা। সুতরাং পরবর্তীতে পণ্য সরবরাহের শর্তে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে কুরআান হাদীস ও ইজমার বিধানকে যথাযথ অনুসরণ একান্ত কাম্য।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles