Tuesday, June 18, 2024
Homeশিক্ষাহযরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (রহ.) এর জীবনী ও ইসলাম প্রচারে তার অবদান...

হযরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (রহ.) এর জীবনী ও ইসলাম প্রচারে তার অবদান আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: হযরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (রহ.) এর জীবনী ও ইসলাম প্রচারে তার অবদান আলোচনা করুন। বিষয়: IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and Some Prominent কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



হযরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (রহ.) এর জীবনী ও ইসলাম প্রচারে তার অবদান আলোচনা করুন।

ভূমিকা

যুগে যুগে যেখানে মুসলমানগণ হয়েছে নির্যাতিত অথবা ইসলাম ধর্ম হয়েছে দূর্বল, কুলষিত কিংবা আক্রান্ত, পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছেতে সেখানেই আর্বিভূত হয়েছেন এসব আউলিয়া দরবেশগণ। তাঁদের পবিত্র সাধনা ও আধ্যাত্মিকগণ। তাঁদের পবিত্র সাধনা ও আধ্যাত্মিক কর্মে মুসলমানরা লাভ করেছেন আবার নতুনভাবে আত্মপরিচিতি। বলীয়ান হয়েছে নতুন করে তৌহিদ ও রেছালতের তেজে। তাঁদের হাতেই সমৃদ্ধ প্রসার ঘটেছে ইসলাম প্রচারের পরিসীমার।

হযরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (রহ.) এর জীবনী ও ইসলাম প্রচারে তার অবদান আলোচনা করুন।

হযরত খাজা মইনউদ্দিন চিশতী (রহ.) এর জীবনী

সুলতান-উল-হিন্দ, খাজা মইনুদ্দিন চিশতী হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। নিম্নে তার জীবনী বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

প্রারম্ভিক জীবন ও নেপথ্য

খাজা মইনুদ্দিন চিশতী ৫৩৭ হিজরী/১১৩৮ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পারস্যের শকস্থান রাজ্যের চিশতীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পারস্যে বেড়ে উঠেন। পনেরো বছর বয়সে তার পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার পিতার কাছ থেকে একটি বাতচক্র (উইন্ডমিল) ও একটি ফলের বাগান উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। কিংবদন্তী অনুসারে, একদিন তিনি তার ফলবাগানে জল দিচ্ছিলেন তখন তার ফলবাগানে আসেন বিখ্যাত সুফি শেখ ইবরাহিম কুন্দুজী (কুন্দুজী নামটি জন্মস্থান কুন্দুজ থেকে এসেছে)। যুবক মইনুদ্দিন তটস্থ হয়ে যান এবং কুন্দুজীকে কিছু ফল দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এর প্রতিদানস্বরূপ কুন্দুজী মইনুদ্দিনকে এক টুকরা রুটি দেন ও তা খেতে বলেন। এরপর তিনি তার সম্পত্তি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গরীবদের মাঝে বিতরণ করে দেন। এরপর তিনি বিশ্বের মায়া ত্যাগ করে জ্ঞানার্জন ও উচ্চ শিক্ষার জন্য বুখারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।



সুফি দীক্ষা

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে চিশতীয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ সুফি সাধক খাজা উসমান হারুনীর নিকট মুরীদ হন/শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার সেবায় ২০ বছর একাগ্রভাবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে উসমান হারুনী তাকে খিলাফত বা সুফি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেন।

ভ্রমণ

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বহু দেশ ভ্রমণ করেন। তৎকালীন বিভিন্ন জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য সুফি সাধকের সাথে সাক্ষাত করেন বলে নানা গ্রন্থে তথ্য পাওয়া যায়। তিনি ইরাকের বাগদাদে আবদুল কাদির জিলানীর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। তার জীবনীতে বর্ণিত আছে যে, এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আজমিরে বসতি স্থাপন করেন।

ধর্ম প্রচার

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে কিংবদন্তিতুল্য একজন ঐতিহাসিক সুফি ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বীয় পীর উসমান হারুনীর নির্দেশে ভারতে আগমন করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং তারই মাধ্যমে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। তার বিখ্যাত একটি গ্রন্থ হল “আনিসুল আরওয়াহ”।



খেলাফত প্রদান

তিনি কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন।

মৃত্যু

খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ৬৩৩ হিজরীর ৫ রজব দিবাগত রাত অর্থাৎ ৬ রজব সূর্যোদয়ের সময় ইনতিকাল করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। বড় ছেলে খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। প্রতিবছর ১লা রজব হতে ৬ রজব পর্যন্ত আজমির শরীফে তার সমাধিস্থলে ওরস অনুষ্ঠিত হয়। নানা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে সমবেত হয়।

ইসলাম প্রচারে হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.)

হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী মধ্য এশিয়ার খোরাসানের অন্তর্গত ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী জেলার সঞ্জর নামক গ্রামে ১১৩৮ ইংরেজী ৫৩৭ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ খাজা গিয়াস উদ্দিন, মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল ওয়ারা মাহেনুর। পিতার দিক থেকে তিনি শেরে খোদা হজরত আলির চতুর্দশতম এবং মাতার দিক থেকে তিনি হজরত ফাতেমার দ্বাদশতম বংশধর। তার যখন পনের বছর হয় তখন তার পিতা ও মাতা মৃত্যু বরণ করেন।



হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি প্রথমে তার পিতার নিকট থেকে দ্বিনী শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি সাত কিংবা নয় বছর বয়সে পবিত্র কোরআন তরজামাসহ মুখস্ত করেন। অতঃপর ১৩ বছর পর্যন্ত পিতার সার্বিক তত্ত্বাবধানে কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, উসুল, তাফসির, আরবী, সাহিত্য ব্যাকরণ, মানতিক, হিকমত দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। তাছাড়া তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হজরত হুসামুদ্দীন (রহঃ) এর নিকট দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যায়ন করেন।

হজরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) ১৫ বছর বয়সে ইলমে তাসাওফ সম্পর্কিত মূল্যবান একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন, তিনি তাসাওফ তত্ত্বে অগাধ জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তারপর তার ওস্তাদ হযরত হিসাম উদ্দীন বুখারী এর নির্দেশ ক্রমে তিনি হজরত খাজা ওসমান হারুনী (রহ:)-এর কাছে মুরিদ হতে যান। নিশাপুরের কাছে হারুন নামের একটি ছোট শহরে বাস করতেন এই মহাসাধক হজরত ওসমান হারুনী (রহ:)। তিনি ছিলেন শরীফ জিলানী-এর মুরিদ ও প্রধান খলিফা। তার কাছে হিজরী ৫৬০ সালের ১১ শাওয়াল বুধবার যোহরের নামাজের পর খাজা মাঈনুদ্দীন চিশতি (রহ:) মুরিদ হয়েছিলেন। মুরিদ হওয়ার ২.৫ বছর পর হজরত ওসমান হারুনী (রহ:) তাকে খেলাফত দান করেন।


শিশুর আধুনিক, সুন্দর ও অর্থবহ নাম


হজরত ওসমান হারুনী তাকে চার কোনা বিশিষ্ট একটি টুপি পড়িয়ে দেয়, টুপিটি তিনি তার পিপির শরীফ পির শরীফ জিলানী-এর জিলানী-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ:) বহু দেশ সফর করেছেন। সফর করার পূর্বে কঠোর ইবাদাত বন্দেগী এবং মুরাকাবা মুশাহাদা করেছিলেন। তিনি হজ্জ পালন করেন। সফররত অবস্থায় হজরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) বহু পীর ওলীর সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন এমনকি স্বয়ং গাওসে পাক হজরত বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ:)- এর সান্নিধ্য প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং ৫৭ দিন তার সাথে অবস্থান করেন। গাওছে পাক তাকে বলেছিলেন, ইরাকের বেলায়ত সাহাবুদ্দিন সরোওয়ার্দীকে দান করা হয়েছে, আর তোমাকে প্রদান করা হয়েছে হিন্দু স্থানের বেলায়ত। এই সংবাদ নিজ পীর খাজা ওসমান হারুনীর সাথে মদিনায় অবস্থান ও জিয়ারত কালে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন।

হজরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) ৫৮৬ সালে মাত্র ৪০জন সফর সঙ্গীকে নিয়ে হিন্দুস্থানে আসেন। এরপর বিরতিহীনভাবে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেন। তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহরে পরে দিল্লি হয়ে আজমিরে আগমন করেন। আজমিরে পৌঁছালে সেই সময়ের হিন্দু রাজা পৃথ্বি রাজের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। পৃথ্বিরাজ খাজা মঈনুদ্দীনকে উৎখাত করার জন্য বিখ্যাত যাদুকর রামেদেওকে পাঠান, কিন্তু যাদুকর রামেদেও খাজার অত্যাধিক শক্তির কাছে নতস্বীকার হয়ে মুসলান হয়ে নাম রাখেন মোহাম্মদ সাতাফি।

হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) ছিলেন দরদি মনের মানুষ এবং চরিত্র ও তার আখলাক ছিল মহাশক্তি এবং অমোঘ অস্ত্র যেই কারণেই জাতী ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই তার সংশ্রবে এসে আকৃষ্ট হয়ে পড়ত এবং তাকে আন্তরিক ভক্তি ও শ্রদ্ধা করত।

উপসংহার

খাজা মইনুদ্দিন চিশতী হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি ১১৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ও ১২৩৫ সালে পরলোকগমন করেন। তিনি গরিবে নেওয়াজ নামেও পরিচিত। মইনুদ্দিন চিশতীই উপমহাদেশে প্রথম এই ধারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত করেন। তিনি ভারতে চিশতী ধারার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ধারা বা সিলসিলা এমনভাবে পরিচিত করেন; পরবর্তীতে তার অনুসারীরা যেমন, কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী, বাবা ফরিদ, নিজামুদ্দিন আউলিয়াসহ (প্রত্যেকে ক্রমানুযায়ী পূর্ববর্তীজনের শিষ্য) আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments