▶ প্রশ্ন: সুফিবাদ বলতে কি বুঝায়? সুফিবাদের পথ পরিক্রমা আলোচনা করুন। ▶ বিষয়: IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and Some Prominent ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)
সুফিবাদ বলতে কি বুঝায়? সুফিবাদের পথ পরিক্রমা আলোচনা করুন।
ভূমিকা
ইসলামি পরিভাষায় সুফিবাদকে তাসাওউফ বলা হয়, যার অর্থ আধ্যাত্মিক তত্ত্বজ্ঞান। তাসাওউফ বা সুফিবাদ বলতে আত্মার পরিশুদ্ধির সাধনাকে বুঝায়। আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান করা) এবং ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়িভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। সুফিবাদ একটি ব্যবহারিক বিষয়। কেউ জন্ম থেকে সুফি সাধনার বৈশিষ্ট্য প্রাপ্ত হয় না। সুফি সাধনার গুণগুলো অর্জন করতে হয়।
সুফিবাদ বলতে কি বুঝায়
সুফিবাদ বলতে ইসলামের একটি আধ্যাত্মিক দর্শনকে বোঝায়। এই দর্শনের মূল লক্ষ্য হল আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। সুফিরা বিশ্বাস করে যে, আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত সুখ এবং মুক্তি লাভ করতে পারে।
সুফিবাদের মূল বিষয়সমূহ
সুফিবাদের মূল বিষয়সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- আত্মার পরিশুদ্ধি: সুফিবাদে আত্মার পরিশুদ্ধিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। আত্মার পরিশুদ্ধি বলতে আত্মাকে সকল প্রকার পাপ, অন্ধকার এবং কুপ্রবৃত্তির হাত থেকে মুক্ত করাকে বোঝায়।
- ইহসান: সুফিবাদে ইহসানকে আল্লাহর ইবাদতের সর্বোচ্চ স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইহসান বলতে এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করাকে বোঝায় যে, মনে হয় আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি অথবা আল্লাহই আমাকে দেখছেন।
- প্রেম: সুফিবাদে প্রেমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুফিরা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর প্রেম ছাড়া আত্মার পরিশুদ্ধি সম্ভব নয়।
সুফিবাদের বিভিন্ন শাখা রয়েছে। এই শাখাগুলির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য শাখা হল-
- চিশতিয়া: চাশতিয়া হল সুফিবাদের একটি প্রাচীন শাখা। এই শাখার প্রতিষ্ঠাতা হলেন আবু ইয়াহিয়া চাশতী।
- নকশবন্দিয়া: নকশবন্দিয়া হল সুফিবাদের একটি অন্যতম প্রধান শাখা। এই শাখার প্রতিষ্ঠাতা হলেন বুরহানউদ্দীন নকশবন্দ।
- মাদারিয়া: মাদারিয়া হল সুফিবাদের একটি আধুনিক শাখা। এই শাখার প্রতিষ্ঠাতা হলেন শাহ আহমদ ফারুকি সারহিন্দি।
সুফিবাদ ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সুফিদের শিক্ষা ও অনুশীলন ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এছাড়াও, সুফিবাদ ইসলামী দর্শন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
সুফিবাদের পথ পরিক্রমা
সুফি সাধনার পথ বা স্তরসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- শরিয়ত: একজন সুফির জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ। সুফি পথ-পরিক্রমার প্রথম পথ হলো শরিয়ত। শরিয়ত বলতে বুঝায় ইসলামি জীবন বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন। ইসলামি শরিয়তের সকল হুকুম আহকাম সকলের জন্য অবশ্যই পালনীয়। ইসলামে যত নবী রাসূল এ দুনিয়াতে এসেছেন তারা সকলেই শরিয়ত পালন করেছেন।
- তরিকত: তরিকা অর্থ হলো পদ্ধতি। কোন কিছু করতে হলে এবং সেটি হতে সর্বোচ্চ ফল লাভ করতে হলে সেটি পদ্ধতি অনুসারে করতে হয়। সুফিবাদ মনে করেন যে, আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের জন্য এবং এর থেকে সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য তরিকত অনুসরণ করতে হবে। সুফি পীর বা মুর্শিদের নিকট বায়াত গ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে বিনা বাক্যে মুরিদ পালন প্রস্তত হয়।
- মারেফত: তরিকতের উচ্চ স্তর হলো মারেফত। এ স্তরকে আধ্যাত্মিক জ্যোতির স্তর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ স্তরে সুফিসাধকের কলবে আধ্যাত্মিক জ্যোতির ঝলক প্রতিফলিত হয়। এর ফলে সুফি বস্তুর নিগূঢ় তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারেন। সৃষ্টি রহস্যের কালো পর্দা তার কাছে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়। এর ফলে তাঁর অন্তরে এক আলোচিত সত্যের আলো প্রতিফলিত হয়।
- হকিকত: মারেফতের পরবর্তী স্তর হলো হকিকত। মারেফতের জ্ঞান লাভের পর হকিকতের স্তরে এসে সুফি সত্য জ্ঞান লাভে সমর্থ হয়। তবে এ স্তরে পৌঁছার জন্য আল্লাহর উপর করুণা আবশ্যক। কেননা, আল্লাহর অসীম রহমত ছাড়া তাঁর জ্ঞানের বিন্দু মাত্রও হতে পারেন না। সুফিগণ বিশ্বাস করেন যে, শুধু ধর্মীয় আচার ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি হয় না। এ স্তরে সুফি আল্লাহ হতে আত্মবিলোপ সাধন করে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, একজন সুফি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য নানাবিধ আধ্যাত্মিক সাধনা করে থাকে। সুফি সাধনা বিচিত্র ঘটনা। এর রয়েছে নির্দিষ্ট পথ। সেগুলো হলো শরিয়ত, তরিকত, মারেফত ও হকিকত।
• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam •
[…] সুফিবাদ বলতে কি বুঝায়? সুফিবাদের পথ পরিক্রমা আলোচনা করুন। ➔ উত্তর দেখুন […]