Wednesday, October 16, 2024

হযরত শাহজালাল (রহ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ইসলামের প্রচারের বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরুন।

প্রশ্ন: হযরত শাহজালাল (রহ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ইসলামের প্রচারের বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরুন। বিষয়: IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and Some Prominent কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



হযরত শাহজালাল (রহ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ইসলামের প্রচারের বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরুন।

ভূমিকা

বাংলাদেশকে ওলি আউলিয়ার দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেন অনেকেই । এই দেশে ইসলাম প্রচারে রয়েছে এ সকল ওলি আউলিয়াদের অন্যন্য অবদান ও কৃতিত্ব। তাদের ত্যাগ ও নিরলস চেষ্টার অবদানে এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ হয়ে উঠে। শিরকি ও একাধিক উপাসনার পথ ছেড়ে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপন করে। এ সকল ওলি আউলিয়াদের প্রাণ পুরুষ ও নেতা ছিলেন হযরত শাহ জালাল (রহ.)। যিনি ঘুমিয়ে আছেন সিলেটের মাটিতে। আজও লাখো লোখো ভক্তের ভালোবাসা ও দোয়ায় সিক্ত হচ্ছে তার কবর। যিনি ইসলাম প্রচারক হিসেবে বাংলাদেশের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন। বেঁচে আছেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় ও মননে।

হযরত শাহজালাল (রহ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ইসলামের প্রচারের বৈশিষ্ট্যসমূহ

হযরত শাহ জালাল (রহ.) ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি দরবেশ ছিলেন। তিনি ৬৭১ হিজরি বনাম ১২৭১ খ্রিষ্টাব্দে প্রাচীন আরব ও আযমের হেজাজ ভূমি তৎকালীন প্রদেশ ইয়েমেন দেশের কুনিয়া নামক শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শায়খ মুহাম্মদ। তিনি প্রখ্যাত সুফী জালাল আদ দ্বীন মুহাম্মদ রুমী (রহ:) এর সমসাময়িক ছিলন। তার মাতার নাম সৈয়দা ফাতিমা হাসিনা সাইদা। তিন মাস বয়সে তার স্নেহময়ী মাতা এবং পাঁচ বছর বয়সে তার বাবা ইন্তেকাল করেন। মাতৃ ও পিতৃহারা শিশু জালালের দায়িত্ব নেন মামা হজরত সৈয়দ শায়েখ আহমদ কবির সুরাওয়ার্দী (রহ:)।

Click to see Ad

হজরত শাহ জালাল (রহ.) একদিন স্বপ্নযোগে রাসুল (সা:) এর পক্ষ থেকে তৎকালীন ভারতবর্ষের গৌড় রাজ্যে ইসলাম প্রচারের আদেশ প্রাপ্ত হন। হজরত শাহ জালাল (রহ.) এই স্বপ্নের কথা সৈয়দ আহমদ কবির (রহ.) কে বলেন, একথা শুনে তিনি হযরত শাহ জালাল (রহ.) এর হাতে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেন, যে স্থানের মাটির রং ও গন্ধ এই মাটির সঙ্গে মিলে যাবে সেখানেই তুমি অবস্থান করবে। সেখান থেকে তুমি ধর্ম প্রচার শুরু করবে।

হযরত শাহ জালাল (রহ.) এর ইসলাম প্রচারকালে যে কয়েকজন সঙ্গী ছিলেন তার মধ্যে প্রধান ছিলেন হাজী ইউসুফ, হাজী খলীল, হাজী দরিয়া এবং চশনী পীর। হিন্দুস্তান আসার পূর্ব পর্যন্ত সমরবান্দ থেকে সৈয়দ ওমর, রোম থেকে করিমদাদ, বাগদাদ থেকে নিজাম উদ্দিন, ইরান থেকে জাকারিয়া ও শাহ দাউদ এবং সৈয়দ মুহাম্মদ প্রমুখ তার অনুগামী হলেন। তাদের নিয়ে হজরত শাহজালাল হিন্দুস্তানে প্রবেশ করলেন। এরপর সুলতান থেকে আরিফ, গুজরাট থেকে জুনায়েদ, আজমীর শরীফ থেকে মুহাম্মদ শরীফ, দাক্ষিনাত্য থেকে সৈয়দ কাসিম, মধ্য প্রদেশের হেলিম উদ্দিন প্রমুখ তার মুরীদ হয়ে তার সাথে চললেন।

Click to see Ad

এভাবে ১৩০৩ খিষ্ট্রাব্দে দিল্লী পর্যন্ত এসে পৌঁছলেন তখন শিষ্যদের সংখ্যা ছিল ২৪০ জন। ভারতে পৌঁছার পর তিনি খাজা মইনুদ্দীন চিশতী (র:) এর (১১৪১-১২৩০) মাজার জিয়ারত করে ফয়েজপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে তিনি সুলতানুল মাশায়েখ হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রহ:) এর (১২৩৮-১৩২৫) আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। বিদায় কালে তিনি হজরত শাহ জালালকে দুই জোরা কবুতর উপহার দেন। যা জালালি কবুতর নামে পরিচিত।

হযরত শাহ জালাল সিলেট এলাকাসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ইসলাম প্রচার করেছেন। তিনি উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক ছিলেন। হযরত শাহ জালাল তার শেষ জীবনে পর্যন্ত ধর্ম প্রচার করে গেছেন। ইসলাম প্রচারে তিনি অতুলনীয় ভূমিকা পালন করেছেন। তার অতুলনীয় ব্যবহার ও অন্যান্য গুণাবলীর দিকে আকৃষ্ট হয়ে বহু হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মালম্বী মানুষ ইসলামের শান্তির বাণী গ্রহণ করেন। যখন তিনি সিলেটে আস্তানা করেন তখন তার সাহচর্য পাওয়ার জন্য দূর দূরান্ত এলাকা থেকে লোকজন আসতে থাকে। তিনি এ সকল মানুষকে ইসলাম ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান দান করেন। একই সঙ্গ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনার্থে তিনি তার শিষ্যদের বিভিন্ন স্থানে ধর্ম প্রচারের আদেশ দিয়ে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে হজরত শাহ পরান সিলেট, হজরত শাজ মালেক ঢাকায়, সৈয়দ আহমদ ওরফে কল্লা শহীদ কুমিল্লায়, হজরত বুরহান উদ্দিন কাত্তান ও হজরত বদুরুদ্দীন চট্টগ্রামে, হজরত শাহ কামাল কাত্তানী (রহ:) সুনামগঞ্জ প্রমুখ।

Click to see Ad

হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মৃত্যু বরণের সুনির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুযায়ী হযরত শাহ জালাল (রহ.) ১৫০ বছর বয়সে ৭৪৭ হিজরি বনাম ১৩৪৭ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে সিলেটেই সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ এই ইসলাম প্রচারকের মাজার শরীফে এসে জিয়ারত করেন।

উপসংহার

হযরত শাহজালাল (রহ.) ও তার সঙ্গী সাথীরা আমৃত্যু ইসলাম প্রচারের কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। তার কঠিন সাধনা ও পরিশ্রমের ফলে এই উপমহাদেশের ইসলাম ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটে।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles