Wednesday, March 12, 2025

হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) এর জীবনী ও ইসলাম প্রচারে তার অবদান আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) এর জীবনী ও ইসলাম প্রচারে তার অবদান আলোচনা করুন। বিষয়: IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and Some Prominent কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) এর জীবনী ও ইসলাম প্রচারে তার অবদান আলোচনা করুন।

ভূমিকা

তৎকালীন পাক-ভারত উপমহাদেশে সুদূর আরবাঞ্চল হতে ধর্ম প্রচারার্থে আসা অন্যতম উল্লেখযোগ্য সুফি ব্যক্তিত্ব হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.)। তিনি একশত সঙ্গী নিয়ে এই অঞ্চলে আগমন করেন। তার নামানুসারে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে মিরপুর-এক নম্বর নামক স্থানে শাহ আলীর মাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে জাতি-ধর্ম র্নিবিশেষে পূণ্যার্থে প্রতিদিন শতশত নারী-পুরুষের সমাবেশ ঘটে।

হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) এর জীবনী ও ইসলাম প্রচারে তার অবদান আলোচনা করুন।

হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) এর জীবনী

  • জন্ম: শাহ আলীর জন্ম, দিল্লী ও বাংলাদেশ আগমন এবং মৃত্যু নিয়ে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে রয়েছে মতভেদ। তবে সকলের ঐকমতের বিষয়টি হল: শাহ আলীর জন্ম বাগদাদের ফোরাত নদীর তীরবর্তী একটি এলাকা কসবাতে জন্মগ্রহণ করেন।
  • বংশ পরিচিতি: তিনি হযরত আলী (রঃ)’র বংশধর। হযরত ইমাম হোসাইন হতে ইমাম আলী নকীর পিতা পর্যন্ত তার পূর্বপুরুষগনের মধ্যে সকলেই বসবাস করতেন মদিনায়। তার বংশ হতে শাহ ছৈয়দ সুলতান আলী সর্বপ্রথম বাগদাদে আসেন যিনি ছিলেন ইমাম আলী নকীর ছোট ভাই। পরবর্তীতে তিনি দিল্লীর সুলতাদের আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। বাগদাদের বাদশাহ সৈয়দ ফখরুদ্দিন রাজির জ্যেষ্ঠপুত্র ছিলেন শাহ্ আলী বাগদাদী।
  • তরীকার ধারা: পূর্ব হতে তিনি কাদেরীয়া তরীকা অনুসরণ করে থাকলেও সমসাময়িককালে ঢাকা ও তৎসংলগ্ন এলাকার প্রসিদ্ধ চিস্তিয়া ছুফি শাহ মোহাম্মদ বাহারের আস্তানায় গিয়ে তার নিকট চিশতিয়া তরিকা মোতাবেক বায়াত গ্রহণ করেন। অতপর তিনি পীরের নির্দেশে ঢাকায় ইসলাম প্রচারকালে মিরপুরের এক স্থানে একটি জরাজীর্ণ মসজিদের সন্ধান পান সে মসজিদ সংলগ্ন স্থানটিকে তার ইবাদত বন্দেগীর স্থান হিসাবে গ্রহণ করেন।


  • মৃত্যু: পরবর্তীকালে ফার্সি ভাষায় খোদাই করা একটি শিলালিপি উক্ত মাসজিদে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহী ঐ শিলালিপিতে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে ধারনা করা হয় শাহ আলী বোগদাদী ১৫৭৭ সালে মোগল আমলে মৃত্যুবরণ করেন। সন্ধান পাওয়া ঐ ধ্বংস প্রায় জরাজীর্ণ সমজিদে চর্তুদিকে বন্ধ অবস্থায় চল্লিশদিনের চিল্লা ব্রত পালন কালে তিনি নিহত হন।

ইসলাম প্রচারে হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) এর অবদান

শিয়া এবং সুন্নীদের ধর্ম বিরোধের সময় তিনি বাগদাদ নগরী হতে প্রস্থান করেন। অন্যদিকে দিল্লীর শাসকদের মধ্যে যখন ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরমাকার ধারণ করে তখন দিল্লীও ত্যাগ করেন। তিনি বাগদাদ হতে আসার পথে শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মুই মোবারক (পবিত্র কেশধাম), হযরত হোসাইনের জুলফ, আবদুল কাদির জিলানীর পিরহান্ বংশগত উত্তরাধিকার হিসাবে সাথে এনেছিলেন।



১৪৮৯ সালে শাহ আলী বোগদাদী বাংলায় পর্দাপন করেন। দিল্লী হতে তিনি প্রথমে ফরিদপুরের গেদ্দায় নামক স্থানে আসেন। অতপর ঢাকার আশে-পাশে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এমতাবস্থায় শাহ আলী বোগদাদী যখন মিরপুরাঞ্চলে এসে উপস্থিত হন তখন সেখানে ঐ জরার্জীর্ন অবস্থায় প্রায় ধংসোন্মুখ মসজিদটি দেখতে পান। বাহিরে তার অনুসারীগণ অবস্থান করলেও তিনি মসজিদের দরজা বন্ধ করে ভিতরে একা ৪০ দিনের মেয়াদে চিল্লায় বসেন। ভিতরে যতকিছুই হোক না কেন, তিনি তার মুরীদগণকে চিল্লার চল্লিশ দিন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন অবস্থায়ই ভিতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছিলেন। চিল্লার শেষ পর্যায়ে ৩৯ তম দিনে ভিতর হতে ভয়ংকর অওয়াজ ভেসে আসতে থাকে। যাতে মনে হচ্ছিল ভিতরে দুইট সত্ত্বার মধ্যে তুমুল লড়াই হচ্ছে। একা পক্ষ আর্তচিৎকার করছে। ফলে অসহায় হয়ে তার অনুসারীগণ দরজা ভেঙ্গে ফেলেন। দরজা ভাঙ্গার সাথে সাথে ভিতরের আওয়াজও বন্ধ হয়ে যায়। অথচ সেখানে তারা তার রক্তাক্ত ছিন্ন বিচ্ছিন্ন দেহ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি। সে সাথে একটি দৈববানী শুনতে পান যাতে বলা হয়, ‘যেখানে পড়ে আছে সেখানেই দাফন কর’। অতপর তাকে উক্ত মসজিদের ভিতরেই দাফন করা হয়। তখন হতে এ মসজিদটি তার দরগা শরীফে পরিণত হয়। সাধারণত আর কোন ছুফি-দরবেশের এরুপ মাজার কোথাও চোখে পড়েনা। তৎকালীন বাদশাহ নাসিরুল মুলক-এর আমলে হিজরী ১২২১ সালে (প্রায় ১৮০৭ ইং) মুহম্মদী শাহ নামক অপর এক ছুফি ব্যক্তিত্ব উক্ত দরগা শরীফকে তৃতীয় বারের মত পূণ নির্মাণ করেন।



শাহ আলী বোগদাদীর মাজার যে মসজিদে অবস্থিত তা তার নামে শাহ আলী মসজিদ হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করলেও মূলত তা তার আগমনপূর্ব একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। দিল্লী সম্রাট কর্তৃক মিরপুরে এ মসজিদটি নির্মিত হয়। একটি ঐতিহাসিক সূত্র হতে জানাযায়, বাংলার স্বাধীন সুলতান শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে (১৪৭৪-১৪৮১) এ অঞ্চলের গভর্নর জহিরউদ্দীন খান হিজরি ৮৮৫ সাল মোতাবেক ১৪৮০ খৃষ্টাব্ধে এটি নির্মাণ করেন। ঢাকায় আদি ইট নির্মিত যে সকল পুরার্কীতি বা ঐতিহাসিক স্থাপত্য দেখা যায় তার মধ্যে বিনতা বিবির মসজিদটি (১৪৫৭) সর্বপ্রথম নির্মিত হয়। এরপরই নির্মিত হয় শাহ আলীর মসজিদ।

উপসংহার

ইসলাম প্রচারে হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকার মিরপুরে শাহ আলী বাগদাদীর নামানুসারে শাহ আলী থানা ও শাহ আলী মহিলা কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles