Saturday, September 28, 2024

বনী ইসরাইল কারা? তাদের ধর্ম বিশ্বাসের স্বরুপ পর্যালোচনা করুন।

প্রশ্ন: বনী ইসরাইল কারা? তাদের ধর্ম বিশ্বাসের স্বরুপ পর্যালোচনা করুন। বিষয়: IST-603 : Philosophy of Religion and Comparative Religion কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



বনী ইসরাইল কারা? তাদের ধর্ম বিশ্বাসের স্বরুপ পর্যালোচনা করুন।

ভূমিকা

আল্লাহ তাআলা কুরআন মজিদের অনেক জায়গায় বনি ইসরাঈলদের নিয়ে আলোচনা করেছেন। বনি ইসরাঈল নামে অনেক বড় আলাদা স্বতন্ত্র একটি সূরা নাজিল করেন। বনি ইসরাইলদের দান করেছেন অসংখ্য নিয়ামত। যেসকল নিয়ামতের উল্লেখ রয়েছে কুরআনে। পরে তাদের অবাধ্যতার কারণে সমস্ত নিয়ামত কেড়ে নেন। মূলত ইসরাইল অকৃতজ্ঞ ও অভিশপ্ত জাতি।

বনী ইসরাইল কারা? তাদের ধর্ম বিশ্বাসের স্বরুপ পর্যালোচনা করুন।

বনি ইসরাইলদের পরিচয়

ইসরাইল হিব্রু ভাষার একটি শব্দ হিব্রু ভাষায় ইসরাইল অর্থ আল্লাহর দাস। মহান আল্লাহ পৃথিবীতে জিন ও মানুষের হিদায়াতের জন্য অসংখ্য নবী রাসূল প্রেরণ করেন। তাদের মধ্যে ইব্রাহিম (আঃ) কে ইরাকের বাবেল শহরে পাঠিয়েছেন। ইব্রাহিম (আঃ) এর বংশধারা হাজেরা ও সারাহ এর গর্ভ থেকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত হয়। ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রী হাজেরা (আঃ) এর গর্ভে জন্ম লাভ করেন ইসমাইল (আঃ), যিনি ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সরাসরি পূর্বপুরুষ। অপর স্ত্রী সারাহ এর গর্ভে জন্ম লাভ করে ইসহাক (আঃ)। আল্লাহ বলেন, “আমি ইব্রাহিমকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব। এবং তার বংশধরদের মধ্যে প্রবর্তন করলাম নব্যুয়ত ও কিতাব।”



ইয়াকূবের অপর নাম ইসরাইল বা আল্লাহর বান্দা। এই উপাধি অনুসারে তার বংশধরদের বলা হয় বনি-ইসরাইল। বনি অর্থ সন্তান, বনি ইসরাইল হল ইসরাইলের সন্তান। ইয়াকুব (আঃ) এর বারোজন পুত্র সন্তান ছিল। এভাবে বনি ইসরাইলে বারোটি গোত্রের সৃষ্টি হয়। ইয়াকুব (আঃ) এর প্রিয়পুত্র ছিলেন ইউসুফ (আঃ) যিনি মিশরের রাজদরবারে উচ্চপদে নিযুক্ত হন। এ সময় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। তখন আশেপাশের বনি ইসরাইল সম্প্রদায় মিশরে আশ্রয় লাভ করে। এভাবে মিশর বনি ইসরাইলিদের অন্যতম বসতি হয়ে উঠে। মিশরের ফারাও বা ফেরাউনের সময় বনি ইসরাইল চরম নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের দুঃসময়ে আল্লাহ মুসা (আঃ) নবী করে পাঠান এবং তাঁর উপর তাওরাত বা তোরাহ নাযিল করেন। আল্লাহ বলেন, আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ও বনি ইসরাইলদের জন্য পথ প্রদর্শক করে ছিলাম।

ইহুদীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর আগমনের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। তারা সেটা জানত কিন্তু ইসরাইলের সন্তানের বাইরে ইসমাঈলের বংশধরের মধ্যে একজনকে নবি হিসাবে মানা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াল, তাই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) যখন মক্কাবাসীদের ইসলামের পথে আহ্বান করেছিলেন। তাঁর আহ্বানের সত্যতা সম্পর্কে জানত ইহুদীরা কিন্তু তারা ইসলাম গ্রহণ না করে কুরাইশদের সঙ্গে মিলে ইসলামকে প্রতিহত করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। সত্য জেনেও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া বনি ইসরাইলকে (ইহুদি জাতিকে) অভিশপ্ত বলে ঘোষণা দিয়ে ছেন আল্লাহ।



বনি ইসরাইলদের ধর্ম বিশ্বাসের স্বরূপ

বনি ইসরাইলদের মূল ধর্মগ্রন্থ হল তাওরাত বা তোরাহ। যা মুসা (আঃ) এর উপর নাযিল হয়। এটি বনি ইসরাইলদের ঐশি ধর্মগ্রন্থ যা হিব্রু ভাষায় লিখিত। এর অর্থ আইন, নিয়ম। এটি ৫টি পুস্তকের সম্নয়ে গঠিত। এদের ধর্মবিশ্বাসগুলো হল-

  1. একত্ববাদী: তারা সৃষ্টিকর্তাকে এক ও একক বলে স্বীকার করে। তবে উজাইর কে তারা আল্লাহর পুত্র বলে মনে করে।
  2. পরকালবাদী: তারা বিশ্বাস করে মৃত্যুর পর মানুষ একটি অশেষ জীবনে প্রবেশ করবে, পুনরুত্থান হবে। মৃত্যুর পর তার কৃতকর্মের জন্য ঈশ্বরের সামনে দাড়াতে হবে। ইশ্বর তার কর্মের বিচারে স্বর্গ বা নরক দিবেন।
  3. মসীহবাদী: বনি ইসরাইলরা বিশ্বাস করে যে, এই পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বে কোন এক সময় পাপে নিমজ্জিত হবে। এ পাপ থেকে পরিত্রাণ রূপে মসীহর আগমন ঘটবে। তিনি পৃথিবীতে এসে মানুষকে পাপ ও পঙ্কিলতা থেকে উদ্ধার করে ইশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে। ইহুদীরা মসীহর পুনরুত্থানে বিশ্বাস করে। তিনিই হবেন তাদের রাজনৈতিক এক মহান নেতা, তিনি দাউদ এর বংশধর হবেন। তার আগমনে বিশ্বে শান্তির বাতাস বইরে। ইহুদিদের ধারণা এই মসীহ হল ঈসা (আঃ) যাকে তারা হত্যা করেছে। সেহেতু তাদের কিতাবে রয়েছে এ কারণে তারা মনে করে। প্রকৃতপক্ষে এই মসীহ হবে দাজ্জাল। যে দুষ্কর্মকারী মিথ্যুক।


  1. আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত জাতি: বনি ইসরাইলরা নিজেদের আল্লাহর মনোনীত জাতি মনে করেন। কিন্তু তারা আল্লাহকে জেহবা বলে। আল্লাহ বনী ইসরাইলদের উপর বিভিন্ন নেয়ামত দিয়েছিলেন। এককভাবে বনি ইসরাইলের উপর সবচেয়ে বেশি নবি প্রেরিত হয়েছে বলে বনি ইসরাইলকে বলা হয় নবিদের বংশধর। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে “আর যখন মূসা তার কাওমকে বলল কাওম তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ কর, হে আমার কাওম তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্স্মরণ কর. তিনি তোমাদের মধ্যে অনেক পয়গম্বর পাঠিয়েছেন, তোমাদের রাজ্যের অধিপতি করেছেন এবং তোমাদের এমন নিয়ামত দিয়েছেন যে বিশ্বজগতের কেউ পায়নি।”
  2. প্রত্যাদেশবাদী: ইহুদীরা মনে করে মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সঠিক পথে দেখানোর জন্য যুগে যুগে নবি রাসূল পাঠিয়েছেন। তারা বিশ্বাস করে ইব্রাহিম (আঃ) এর ধর্ম হিসাবে ইহুদি ধর্ম আসমানী ধর্ম। ইব্রাহিম (আঃ) কে এই মর্মে দান করেছেন যে ঈশ্বর ইহুদীকে জাতিকে সকল মানুষের উপর মর্যাদা দিবেন। এরূপ কথা আছে কথা আছে কিন্তু এ মঠাদা দিবে যতক্ষন তারা, সত্য পথে থাকবে। কিন্তু তারা এখন সত্য পথে নাই। তাই মামার্দা এ মর্যাদার যোগ্য তারা নয়।

উপসংহার

এই ৫টি হল ইহুদি ধর্ম বিশ্বাসের মৌলিক নীতি। ইসরাইলদের প্রধান নবী হলেন মূসা (আঃ) যিনি মোশী হিসাবে খ্যাত। এর পরে আর কোন নবীকে ইসরাইলরা নবী বলে মানতেন না। নবী হযরত মুসা (আঃ) এর অনুসারি হিসাবে বনি ইসরাইল ইহুদী নামে পরিচিতি পেয়েছে। ইয়াকুব (আঃ) আরেক পুত্রের নাম ইয়াহুদা। সে নাম অনুসারে তাদের নাম হয় ইহুদি। কিন্তু বনি ইসরাইল নানা অনাচারে লিপ্ত হয়, উজায়ের কে আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করে। তাদের সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ শেষ সে নবী হিসাবে ঈসা (আঃ) কে তাদের উপর প্রেরণ করেন। কিন্তু ইহুদীরা ঈসা (আঃ) এর উপর ঈমান আনতে অস্বীকার করেন এবং ঈসাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

Related Articles

1 COMMENT

Comments are closed.

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles