▶ প্রশ্ন: ▶ বিষয়: IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and Some Prominent ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে সুফিবাদের অবদান আলোচনা করুন।
ভূমিকা
আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশ সূফী ঐতিহ্যের একটি দেশ। বাংলাদেশে যত সূফী দরবেশদের আগমন হয়েছে বিশ্বের ইতিহাসে অন্য কোন দেশে তা হয়নি। সূফী গবেষকদের মতে বহিরাগত সূফী সাধক ছাড়াও বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই সূফী সাধনা শুরু হয়। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ বিজয় এর পরে পশ্চিমা দেশ থেকে বহু সূফী দরবেশ এর আগমন ঘটে। মুসলিম বণিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম বাংলাদেশে ইসলামের সূচনা হয় এবং প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে হক্কানী আউলিয়া ও সুফি সাধকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক নিষ্ঠার ফলে। আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, খোরাসান, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে আলেম ও সুফীগণ বাংলায় আগমন করেন। ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে তারা অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন।
বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে সুফিবাদের অবদান
বাংলায় মুসলিম বিজয়ের পূর্বে যে সকল সুফীগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এদেশে আগমন করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হচ্ছেন-
Click to see Ad
- শাহ মুহাম্মদ সুলতান রুমী: বাঙ্গালার সুবাদার শাহসুজার সনদপত্রে উল্লেখিত হয়েছে যে, শাহ মুহাম্মদ সুলতান রুমী ১০৫৩ সালে তাঁর মুর্শিদ সৈয়দ শাহ সুখখুল আনাতিয়াসহ তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার মদনপুরে আসেন। মদনপুরেই তাঁর মাজার বিদ্যমান।
- শাহ সুলতান বলখী মাহী সাওয়ার: তিনি প্রথমে ঢাকার হরিরামপুর নগর এবং পরে বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে ইসলাম প্রচার করেন। মৎস্যাকৃতি নৌকায় সমুদ্রপথে বাংলায় আগমন করার কারণে তিনি মাহী সাওয়ার ওলী নামে খ্যাত।
- বাবা আদম শহীদ: রাজা বল্লাল সেনের শাসনামলে (১১৫৮-৭৯) তিনি ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার আব্দুল্লাহপুর গ্রামে ইসলাম প্রচার করতে আসেন। যুদ্ধে তিনি শহীদ হন এবং এখানেই তাঁর মাযার অবস্থিত।
- মাখদুম শাহ্ দৌলা শহীদ: ইয়ামেনের অধিবাসী মাখদুম শাহ দৌলা এক বোন, তিন ভাগিনা ও বহু শিষ্যসহ পাবনা জেলার শাহজাদপুর অঞ্চলে আগমন করেন। ইসলাম প্রচারের এক পর্যায়ে স্থানীয় হিন্দু রাজার সাথে এ দরবেশের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মাখদুম শাহসহ ২১ জন মুজাহিদ শহীদ হন। এরপর সমগ্র বগুড়া অঞ্চলে ইসলাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
Click to see Ad
- সৈয়দ নাসিরউদ্দীন শাহ্ আউলিয়া: তিনি দিনাজপুর জেলার প্রাচীনতম ইসলাম প্রচারক। ওই অঞ্চলে তিনি সৈয়দ নেকমদ’বা নেকবাবা বলে পরিচিত।
- জালালুদ্দীন তাবরিজী: পারস্যের তাবরিজ নগরে জন্মগ্রহণকারী জালালুদ্দীন তাবরিজী সুলতান গিয়াস উদ্দীন খিলজীর শাসনামলে তৎকালীন বাংলার রাজধানী মালদহ জেলার লাখনৌতি নগরে উপনীত হন এবং রাজধানী থেকে ১৭ মাইল দূরে পান্ডুয়ায় আস্তানা স্থাপন করেন। বাংলার উচ্চশ্রেণীর হিন্দু ও বৌদ্ধসমাজ তাঁর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।
মুসলিম বিজয়ের পূর্বে আরো যে সকল সুফী এদেশে আগমন করেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মাখদুম শাহ, গজনবী, বায়েজীদ বোস্তামী, শায়খ ফরিদ উদ্দীন শকরগঞ্জ প্রমুখ। মুসলিম বিজয়ের পর যে সকল সুফী-আলেমগণ ইসলাম প্রচারের জন্য এদেশে আগমন করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-
- শেখ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা: বুখারার অধিবাসী সুফী শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা বিহারের মানের হয়ে বাংলার সোনারগাঁও আসেন সুলতান বুগরাখান ও সুলতান রুকনউদ্দীন কায়কাউসের শাসনামলে। তিনিই প্রথম এদেশে বোখারী শরীফ নিয়ে আসেন। সোনারগাঁও-এ তিনি ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ১৩০০ সালে ইন্তেকালের পর সোনারগাঁও-এ তিনি সমাধিস্থ হন।
- হজরত শাহাজালাল ইয়ামেনী (রহ.): পূর্ববাংলায় ইসলাম প্রচারের প্রধান পথিকৃত এই সনামধন্য সুফী দরবেশ ১৩০৩ সালে রাজা গৌড়গোবিন্দকে পরাজিত করে সিলেট অধিকার করেন। এই যুদ্ধে তাঁর সিপাহসালার ছিলেন সৈয়দ নাসির উদ্দীন। হজরত শাহাজালাল ইয়ামেনী (রহ.)- আনুমানিক ১৩৪৭ সালে সিলেটেই ইন্তেকাল করেন। বিশ্ব পর্যটক ইবনে বতুতা বলেন, বাংলার অধিকাংশ লোক তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। সিলেটে তাঁর মাজার অবস্থিত।
Click to see Ad
- হযরত শাহ আলী বাগদাদী: শাহআলী বাগদাদী (রহঃ) বাংলায় আসেন ১৪৮৯ সালে। দিল্লী হয়ে প্রথমে তিনি ফরিদপুর আসেন। পরে তিনি ঢাকার আশে-পাশে ইসলাম প্রচার করেন। ঢাকার মিরপুরে তাঁর মাজার রয়েছে।
- হযরত শাহ্ আহসান উল্লাহ্ (রহ.): ঢাকা জিলার নারিন্দায় এই সূফী সাধকের দরবার ও মাজার। হযরতের পূর্ব্ পূরুষ আরব থেকে দিল্লিতে আসেন এবং একটি গোত্র বাংলাদেশের সোনারগাও এ বসতী স্থাপন করেন। হযরত শাহ্ আহসান উল্লাহ্ (রহঃ) ১২১১ বাংলা ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি হযরত খাজা লশকর (রহঃ), কালিম শাহ্ বোগদাদী (রহঃ) এর কাছ থেকে বেলায়েতের সর্বোচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। তিনি তাসাউফ শিক্ষার পাশাপাশি একজন সমাজ সেবক ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত আহ্সানিয়া মিশন আজ পর্য্ন্ত দেশ বিদেশে বহু সুনাম অর্জ্ন করেছে। আহসানিয়া মিশন দেশে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, মাদরাসা, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, হাসপাতাল সহ বিভিন্ন সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে।
- শেখ নূর কুতুবুল আলম: তিনি ছিলেন বাংলার ইলিয়াছশাহী বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা সুলতান গিয়াসউদ্দীন আজমশাহের সহপাঠী। তিনি তৎকালীন অবৈধ,কুখ্যাত রাজা গণেশের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেন।
- খাজা খানজাহান আলী: সর্বজনমান্য দরবেশ হিসেবে সুপরিচিত খানজাহান আলীই দক্ষিণ বঙ্গজয়ের কৃতিত্বের অধিকারী। পরবর্তী ইলিয়াস শাহী বংশের শাসনামলে তিনি দক্ষিণবঙ্গ জয় করেন। এই দরবেশ শাসনকর্তা বাগেরহাট শহর নির্মাণ করেন, এবং ঐ অঞ্চলের নামকরণ করেন খলিফতাবাদ, বহু রাস্তা, দীঘি, মসজিদ, শিক্ষালয় এবং বাগেরহাটের ষাট গুম্বুজ মসজিদ তিনিই নির্মাণ করেন।
- মাওলানা আবুবকর সিদ্দিক: রমাওলানা আবুবকর সিদ্দিক ১৮৪১ সালে কলকাতার হুগলী জেলার ফুরফুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সুফী ফতেহ আলীর নিকট তিনি বয়াত গ্রহণ করেন। মাওলানা আবুবকরের সংস্কার ছিল বহুমুখী ও গঠনমূলক।
- মাওলানা নেছার উদ্দীন: মাওলানা নেছার উদ্দীন বরিশালের বর্তমান পিরোজপুর জেলার ছারছীনা গ্রামে তাঁর জন্ম। তিনি ফুরফুরার আবু বকর সিদ্দিকের শিষ্য ছিলেন। বাংলায় ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশী। তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকা প্রতিষ্ঠা করেন।
- হযরত ফকির আদু শাহ্ আউলিয়া (রহ.): হযরত ফকির আদু শাহ্ আউলিয়া (রহ.) নেছারাবাদ থানার পাটিকেলবাড়ী গ্রামে ২০০ বছর পূর্বে জন্মগ্রহন করেন। সাধনার জগতে সকল স্তরএ উত্তীর্ন এই সাধক আবদাল শ্রেনীর আউলীয়া ছিলেন। তিনি দয়াল নবী (সঃ) সত্য তরিকত এর শিক্ষা দেয়ার জন্য পাটিকেলবাড়ী গ্রামে একটি খানকা প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন যা আজ পাটিকেলবাড়ী দরগাহ্ শরীফ ইসলামীক কমপ্লেক্স । এ খানে আছে সেচ্ছা সেবক সংগঠন, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও স্থায়ী পুলিশ ফারি। ফকির সাহেবের পঞ্চম বংশধর ফকির মোঃ নাসির উদ্দিন সাহেব বর্তমান দরবার এর মোতাওয়াল্লী এবং তিনি ১৯৭৭ ইং সন থেকে দরবার সংস্কার কার্য শুরুকরেন। দরবাবেরর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফকির নাসির সাহেব এর প্রতিষ্ঠত।
- হযরত খাজা ইউনুস আলী নকশবন্দী মোজাদ্দাদী (রহঃ) এনায়েতপুরী: বাংলাদেশের অন্যতম সূফী সাধক এই পীর সাহেব বাংলা ১২৯৩ সালে জন্মগ্রহন করেন । হক্কানী সহী সূফী সাধক নকশবন্দীয়া মোজাদ্দেদীয়া তরিকার বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ আউলিয়াছিলেন। বাংলাদেশের বড় ধরনের প্রায় সকল দরবারের সূফী গন তার মূরীদ ছিলেন এবং তার দরবার থেকে সূফী সাধনা করতেন। পাবনা জেলার বিশ্ব শান্তির মঞ্জিল (এনায়েতপুর দরবার শরীফ) তার প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম বৃহৎ ইসলামীক কমপ্লেক্স।
- হযরত খাজা হাসমত উল্লাহ্ নক্শবন্দী মোজাদ্দদী (রহঃ) ফরিদপুরী- আধুনিক কালের জজ্বুল কলব্ কামেল আউলিয়াদের মধ্যে হযরত শাহ্ সূফী খাজা ফরিদপুরী (রহঃ) সাহেবর নাম বিশেষ ভাবে উল্রেথযোগ্য। হযরত খাজা এনায়েতপুরী (রহঃ) এর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ সাধনার পরে কামালিয়াতের সর্বোচ্চ স্তর হাসেল করেন এবং ফরিদপুরের আটরশীতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল- বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামীক কম্পেক্স প্রতিষ্ঠা করেন এবং কোটি কোটি মুরিদ সন্তান কে সঠিক ইসলাম ও দয়াল নবী (সঃ) এর সত্য তরীকা প্রচার করতেন। তিনি বহু মসজিদ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
উপসংহার
এছাড়াও আরো অনেক সুফী সাধক বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের কাজ করেছেন। ৪০ জন ইসলাম প্রচারকের একটি দল দিনাজপুর অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন, যাদেরকে চিহিল গাজী বলা হতো। সায়্যিদ আব্বাস আলী মক্কী, শাহ সুফী শহীদ, শায়খ আব্দুল্লাহ কিরমানী, মাওলানা তাকিউদ্দীন আরাবী, শাহতুর্কান শহীদ, পীর বদর আলম, শেখ রোজা বিয়াবানী, আখি সিরাজউদ্দীন উসমান, শেখ আলাউল হক, শাহ আফজল মাহম্মুদ শায়খ জালাল হালবী, শাহ সুলতান আনসারী, শাহ চাঁদ আওলিয়া তাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁদের চারিত্রিক মাধুর্যে উজ্জীবিত হয়ে হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায় দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেয়।
• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam •