Thursday, November 21, 2024

ধর্ম কাকে বলে? ধর্মের আভিধানিক পরিচয় দিন? মানবজীবনে ধর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: ধর্ম কাকে বলে? ধর্মের আভিধানিক পরিচয় দিন? মানবজীবনে ধর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করুন। বিষয়: IST-603 : Philosophy of Religion and Comparative Religion কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



ধর্ম কাকে বলে? ধর্মের আভিধানিক পরিচয় দিন? মানবজীবনে ধর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করুন।

ভূমিকা

ধর্ম হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম বিষয়। ধর্মের সাথে মানুষের সামগ্রিক জীবনের সকল কার্যাবলী সম্পৃক্ত। ধর্মের সঙ্গে মানুষের জীবনের এই সংযোগ, সম্পৃক্তি কোনো অর্থহীন বা তাৎপর্যশূন্য বিষয় নয়। মূলত জীবনের সঙ্গে ধর্মের এই অবিভাজ্যতা, আবশ্যক নির্ভরতাই মানুষের জীবনে ধর্মের সীমাহীন গুরুত্ব ও অপ্রতিরোধ্য প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করে।

ধর্ম কাকে বলে? ধর্মের আভিধানিক পরিচয় দিন? মানবজীবনে ধর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করুন।

ধর্মের আভিধানিক পরিচয়

আভিধানিক অর্থে ধর্ম হলো ঈশ্বরের উপাসনা পদ্ধতি, আচার-আচরণ, ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কিত নির্দেশ, কর্তব্য কাজ, বিধান, সুনীতি, সাধনার পথ, স্বভাব ও গুণ। সংস্কৃতিতে ‘ধৃ’ ধাতুর সঙ্গে ‘মন’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ধর্ম শব্দটির উৎপত্তি। মানুষ তার জীবন ও চিন্তায় যা ধারণ করে, সামাজিক জীবনের বৃহত্তর ঐক্যের মধ্যে মানুষকে যে ধরে রাখে তা-ই হলো ধর্ম।

ধর্ম শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Religion. শাব্দিক বিবেচনায় এর অর্থ হলো belief in a higher unseen controlling power especially in a personal God বা অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ শক্তির অস্তিত্বে বিশেষত ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস। এ ছাড়াও শব্দটি আরো কিছু অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন-



  1. any system of faith and worship বা বিশ্বাস ও পূজার যে কোনো পদ্ধতি
  2. devoted fidelity বা ভক্তি ও নিষ্ঠাপূর্ণ আনুগত্য
  3. an action that one is bound to do বা এমন কাজ, যা করা আবশ্যক।

প্রচলিত অর্থে ধর্ম হলো বৈশিষ্ট্য, গুণ, চরিত্র বা নীতি। এ অর্থেই বলা হয়, নদীর ধর্ম (বৈশিষ্ট্য) বয়ে চলা।

জেমস ফ্রেজারের মতে, ধর্ম হলো মানুষের চেয়ে উচ্চতর এমন একটি শক্তিতে বিশ্বাস, যা মানবজীবন ও প্রকৃতির ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এমিলি দুরখীমের মতে, Unified system of beliefs and practices relative to sacred things that is to say, things set apart and forbidden. অর্থাৎ, ধর্ম হলো পবিত্র জগৎ সম্পর্কিত বিশ্বাস এবং সে বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান।

জেমস টেইলারের মতে, ধর্ম হলো belief in supernatural beings বা আত্মিক জীবে বিশ্বাস।

হার্বার্ট স্পেন্সারের মতে, ধর্ম হলো একটি আনুমানিক ধারণা, যা বিশ্বজগৎকে বোধগম্য করে তোলে।



বস্তুত ধর্মের উল্লিখিত সংজ্ঞাসমূহের কোনো একটি সংজ্ঞাও সর্বজনগ্রাহ্য বা পরিপূর্ণ নয়। তবে সংজ্ঞাসমূহের আলোকে এটা বলা যায় যে, ধর্ম হলো কিছু আবশ্যিক বিধি-বিধানের সমষ্টি, যার ভিত্তি হলো অতিপ্রাকৃত বা মানবাতীত কোনো এক বা একাধিক মহাশক্তিকে বিশ্বাস, যা বিশ্বজাহানের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।

মানবজীবনে ধর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

মানব জীবনে ধর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় অত্যধিক। নিম্নে ধর্মের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • জীবনের নিরাপত্তা বিধান: পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মে মানুষের জীবনের সীমাহীন গুরুত্ব ও সম্ভাবনার কথা বলা হয়। প্রতিটি ধর্মের মূল শিক্ষার মধ্যে তাই অন্যের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। পৃথিবীর সব ধর্মে সাধারণভাবেই যে কোনো অন্যায় হত্যাকাণ্ডকে মহাপাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। হত্যাকারীর জন্য সর্বোচ্চ দণ্ডবিধান মৃত্যু কার্যকর করার রীতিও অধিকাংশ ধর্মে অনুসৃত হয়েছে। ফলে যুগে-যুগে, কালে-কালে ধর্ম মানুষের জীবনের রক্ষক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে।
  • সম্পদের নিরাপত্তা বিধান: জীবনের পরেই মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও কাঙ্ক্ষিত বিষয় হলো অর্থ-সম্পদ। অমানুষিক পরিশ্রম ও কষ্ট স্বীকার করে মানুষ অর্থ-সম্পদ উপার্জন করে। পৃথিবীর সব ধর্মেই পরধন আত্মসাৎ, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, লুণ্ঠন, অবৈধ উপার্জন ও অযৌক্তিক ভোগ-বিলাসকে চরম ঘৃণ্য বিষয়।
  • জাতীয় জীবনে ধর্ম: আন্তঃজাতীয় বিদ্বেষ ও বিভেদ জাতীয় শান্তি, কল্যাণ ও উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করে। মানুষের মধ্যে শত্রুতা ও অন্যায় প্রতিযোগিতার মনোভাব এনে দেয়। সবাইকে দাবিয়ে রেখে একা শীর্ষে ওঠার অন্যায্য বাসনা তৈরি করে। ধর্ম শক্ত হাতে এসব প্রবণতা রোধ করে। মানুষের মধ্যে ঐক্য, সংহতি ও সহযোগিতার মনোভাব প্রতিষ্ঠা করে। বিশেষত ইসলামে এ জাতীয় ঐক্যবদ্ধতাকে ফরজ হিসেবে গণ্য করা হয়।


  • শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবনে ধর্ম: পৃথিবীর সব ধর্মই সাধারণভাবে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কেননা, ধর্মাচার পালনের জন্য শিক্ষা অনিবার্য। পৃথিবীর সত্যিকার ধর্মভীরু জাতি তাই অবশ্যই শিক্ষিত হয়ে থাকে। ইসলামে শিক্ষাকে মানুষের প্রথম অনিবার্য কর্তব্য হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
  • ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ধর্ম: ব্যক্তি জীবন থেকে আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে মানুষের মধ্যে সুবিচার প্রতিষ্ঠার অনন্য ব্যবস্থাপনা হলো ধর্ম। মানুষ ছোট হোক, বড় হোক, ধনী হোক বা না হোক, সাদা হোক বা কালো হোক- সব ক্ষেত্রেই তারা সুবিচার পাবে- এই বিষয়টি কেবল ধর্মই নিশ্চিত করে। এ কারণে অবিচারের আরেক নাম অধর্ম।
  • শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ধর্ম: ধর্মীয় জীবন মূলত শৃঙ্খলার জীবন। প্রতিটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, সেগুলো নিয়ম-শৃঙ্খলার সঙ্গে আদায় করতে হয়। ইচ্ছামতো বা যেভাবে খুশি সেভাবে কোনো ধর্মীয় বিধি পালন করা যায় না। ধর্মানুষ্ঠানের এই শৃঙ্খলা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনেও প্রভাব বিস্তার করে।
  • মনুষ্যত্বের বিকাশসাধনে ধর্ম: মানুষের মধ্যে যেমন কাম-ক্রোধ-হিংসা-ঘৃণা-লোভ ইত্যাদি মন্দ গুণ আছে, তেমনি ভালোবাসা, সহযোগিতা, সহানুভূতির মতো মানবিক গুণও রয়েছে। ধর্ম মানুষের এসব মানবিক গুণ বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি মন্দ গুণগুলো বর্জনেরও নির্দেশনা প্রদান করে।
  • সৃষ্টি ও মানবসেবায় ধর্ম: পৃথিবীর অধিকাংশ ধর্ম মানুষ ও সৃষ্টিসেবাকে ইবাদত বলে গণ্য করে থাকে। ইসলামে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে সৃষ্টি ও মানবসেবার কথা বলা হয়। সনাতন ধর্মের সাধারণ বিশ্বাস ‘জীবে দয়া করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর।’ খ্রিস্ট ধর্ম একান্তভাবে সেবাবাদী ধর্ম। এ ছাড়া অন্য যেসব ধর্ম রয়েছে তাও মানুষের সেবা আর জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শনকেই প্রথম মানবিক কর্তব্য বলে গণ্য করে থাকে।


  • আধ্যাত্মিক সাধনায় ধর্ম: মানুষ আত্মিক প্রাণী। পৃথিবীর সব সৃষ্টির মধ্যে একমাত্র মানুষেরই আত্মা রয়েছে বলে মনে করা হয়। যে কারণে মানুষ যেমন দৈহিকভাবে সাধনা করে, নিজের উন্নতি ও চেষ্টার জন্য কষ্ট করে; তেমনি তাকে আত্মিক দিক থেকেও উন্নত ও সমৃদ্ধ হতে হয়। একমাত্র ধর্মই মানুষকে আত্মিকভাবে সাধনা করার ও সমৃদ্ধ হওয়ার পথনির্দেশ করে। ধর্মেই মানবপ্রেমের যে শিক্ষা, অন্যকে সহযোগিতা করা, অন্যের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের যে ব্যবস্থা, পারস্পরিক সদাচারের যে বিধি-বিধান- তার প্রতিটিই একান্তভাবে সমাজকে সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতিকর আবহে ভরে তোলে।
  • রাজনৈতিক জীবনে ধর্ম: পৃথিবীর অধিকাংশ আঞ্চলিক, জাতীয় বা উপজাতীয় ধর্ম রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে। তবে বিশ্বজনীন ধর্মসমূহ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও রাজনীতিতে যেন কলুষ-কালিমা না থাকে, রাজনীতিবিদগণ যেন নিতান্তই বৈষয়িক স্বার্থে মানুষের অকল্যাণ ও সর্বনাশ ডেকে না আনেন, সে ব্যাপারে প্রতিটি ধর্মই সজাগ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষত ইসলাম ধর্মীয় আদর্শের ভিত্তিতে এক স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজনৈতিক মতাদর্শ পেশ করেছে- যা একই সঙ্গে মানুষের পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনে শান্তির নিশ্চয়তা বিধান করে।
  • অর্থনৈতিক জীবনে ধর্ম: মানুষের জীবনধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মধ্যে অর্থ অন্যতম। ধর্ম এ বিষয়কে উপেক্ষা করেনি। বরং এ ক্ষেত্রে নৈতিকতার সীমা ঠিক করে দিয়ে উপার্জন, বণ্টন, ভোগ ও ব্যবহারে বৈধতা ও অবৈধতার সীমা ঠিক করে দিয়েছে- যা মানুষকে অপচয়, অপব্যয়, অর্থহীন ভোগ-বিলাস থেকে মুক্তি দিয়ে সমন্বিত শান্তিপূর্ণ অর্থনৈতিক জীবন নির্বাহের তাগিদ প্রদান করেছে।

ডাউনলোড করুন তাফসীরের কিতাবসমূহ


  • নৈতিক জীবনে ধর্ম: পৃথিবীর সব ধর্মই উন্নত নৈতিক গুণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। সততা, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা, যৌন- পবিত্রতা, উদারতা ইত্যাদি পৃথিবীর সব ধর্মেই অবশ্য অর্জনীয় গুণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ধর্মই মানুষকে এই বোধ ও বিশ্বাসে উজ্জীবিত করে যে, মানুষ ও পশুতে প্রভেদ তৈরি করে মানুষের উন্নত চরিত্র ও মানবিক আচরণ।
  • রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্ম: মানুষ স্বভাবতই ক্ষমতাপ্রিয়। রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা নিযুক্ত থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতাপ্রিয়তা যেন কোনোক্রমেই স্বেচ্ছাচারিতায় রূপান্তরিত না হয়, ধর্ম বিশেষভাবে সে বিষয়টি নিশ্চিত করে। মানুষ শাসক যেন মানুষের প্রভুতে পরিণত না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় বিধি- বিধান প্রণয়ন করে। ধর্মেই রাষ্ট্রপতি বা রাজাকে প্রজাদের পিতা হিসেবে দেখানো হয়েছে, যাতে রাজা বা শাসক পিতার মতোই জনগণের সঙ্গে প্রেমময় ও ইনসাফপূর্ণ আচরণ করেন।
  • আন্তর্জাতিক জীবনে ধর্ম: পৃথিবীর সব মানুষ উৎসগত বিবেচনায় এক ও অভিন্ন। তাদের মাতা-পিতা এক, তাদের সৃষ্টিকর্তা এক, তাদের জীবনের উদ্ভব, বিকাশ ও সমাপ্তিও এক। ধর্ম একান্তভাবে বিশ্বমানবকে পারস্পরিক অভিন্নতার এই চেতনায় উজ্জীবিত করে। ফলে পৃথিবীর যে দেশেই অশান্তি-অনাচার তৈরি হোক, ধর্মভীরু মানুষ তা নিরসনে ভূমিকা পালন করে। কেউ কারো ওপর অন্যায় শোষণ ও আগ্রাসন পরিচালনা করে না, বরং বিশ্বজুড়ে তৈরি হয় ঐক্য ও সংহতি।

উপসংহার

ধর্ম একটি ব্যাপক বিষয়। ধর্মের সাথে মানুষ, মানব সমাজ তথা এই পৃথিবীর অস্তিত্বের সম্পর্ক গভীরতম। ধর্মের কারণে পৃথিবী সুসংহতভাবে টিকে আছে। মানুষ ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেই বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হয়। তাই ধর্মের সাথে সমস্ত বিষয়ে সম্পর্ক রয়েছে।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles