Saturday, September 28, 2024

ধর্মের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? মানব জীবনে ধর্মের ভূমিকা বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

প্রশ্ন: ধর্মের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? মানব জীবনে ধর্মের ভূমিকা বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর। বিষয়: IST-603 : Philosophy of Religion and Comparative Religion কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



ধর্মের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? মানব জীবনে ধর্মের ভূমিকা বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

ভূমিকা

ধর্ম স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির বন্ধনের এক অদৃশ্যবোধ। ঐশ্বরিক শক্তির নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করে নৈতিক জাগৃতির মাধ্যমেই ধর্মের বহিঃপ্রকাশ। ধর্মের উৎপত্তি সম্পর্কে নানাবিধ বিতর্ক রয়েছে। তবে ইসলামি আকীদা হচ্ছে পৃথিবীতে মানুষের আগমনের মধ্য দিয়েই ধর্মের আবির্ভাব। কালের বিবর্তনে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষ বিভিন্নভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে থাকে। তবে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্ম মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত, নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নতি সাধন পারস্পরিক সম্প্রীতি স্থাপন ইত্যাদি কল্যাণমুখী কর্মের উৎস হিসেবে মানব জীবনে এর ভূমিকা বা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

ধর্মের উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? মানব জীবনে ধর্মের ভূমিকা বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

ধর্মের উৎপত্তি যেভাবে হয়েছে

ধর্মীয় চিন্তার উৎপত্তি সম্পর্কে নৃ-বিজ্ঞানীদের ধারণা, আদিম মানুষের হৃদয় ছিল শূন্য। পৃথিবীর চারিদিকের পারিপার্শ্বিকতার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, শব্দ যোজনী, নিত্য-নৈমিত্তিক কর্মচাঞ্চল্য, নানা প্রকার ঘাত-প্রতিঘাত ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের শূন্য হৃদয়ে এক অনুভূতির সূত্রপাত ঘটে। সেই সূত্র ধরে ধর্মানুভূতি বা ধর্মীয় চিন্তার উৎপত্তি হয়।

ধর্মের উৎপত্তি সম্পর্কে ধর্মতত্ত্ববিদ ও দার্শনিকগণ স্ব-স্ব দৃষ্টিকোণ থেকে মতামত ব্যক্ত করেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

প্রত্যাদেশমূলক মতবাদ

এ মতবাদ অনুসারে অহী বা প্রত্যাদেশ থেকেই ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। এ জাতীয় ধর্ম মানব সৃষ্টির সূচনা থেকে শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে Man’s Religion গ্রন্থে বলা হয়েছে- Religion was originated with creation of the first man of earth.



আল্লাহর বাণী, “এবং আমি আদমকে হুকুম করলাম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং এখানে যা ইচ্ছা পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, কিন্তু এ গাছের নিকটবতী হয়ো না, অন্যথায় তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মানব সৃষ্টির সাথে সাথে তাঁদের প্রতি প্রেরিত প্রত্যাদেশ থেকেই ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে।

অপ্রত্যাদেশমূলক মতবাদ

এ মতবাদ অনুসারে ধর্ম দৈব-বাণী থেকে উৎপত্তি হয়নি। এটা হলো যুগ পরম্পরায় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বিবর্তিত রূপ। এটাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

  1. মানবীয় বিচার-বুদ্ধিভিত্তিক মতবাদ: অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংরেজ অতিবর্তীবাদীরা মনে করে, মানবীয় বিচার-বুদ্ধি থেকে ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। প্রত্যাদেশ থেকে ধর্মের উৎপত্তি-এ মতবাদ তারা স্বীকার করে না।
  2. আধুনিক মতবাদ: নৃ-তাত্ত্বিক ও মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এ মতবাদ ‘নৃ-তাত্ত্বিক’ ও ‘মনস্তাত্ত্বিক’ দুইটি শ্রেণিতে বিভক্ত। নিম্নে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

নৃ-তাত্ত্বিক মতবাদ: নৃ-তত্ত্ববিদগণ এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। যেমন-



  • সর্বপ্রাণবাদ: সর্বপ্রাণবাদ সম্পর্কে নৃ-বিজ্ঞানী Frazer S A. R. Radcliffe Brown বলেন- সর্বপ্রাণবাদ হলো মানুষের আত্মায় বিশ্বাস এবং মৃত্যুর পর আত্মার পুনর্জীবনে বিশ্বাস। কাজেই সর্বপ্রাণবাদ হলো মৃত্যুর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা থেকে উদ্ভূত এক ধরনের বিশ্বাস। এ বিশ্বাস থেকেই ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। বস্তুত প্রাচীন যুগের বর্বর মানুষ ধর্মীয় কুসংস্কারে বশবর্তী হয়ে সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাসী ছিল এবং প্রয়াত আত্মপূজায় নিমজ্জিত ছিল। প্রকৃতপক্ষে এর কোনো ভিত্তি নেই। সকল মঙ্গল-অমঙ্গলের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তিনিই সমস্ত কিছুর নিয়ামক। তিনি ব্যতীত ক্ষতি বা উপকার করার বিকল্প কোনো শক্তি নেই। তাই বলা যায়, নৃ-বিজ্ঞানীদের মতবাদ সর্বপ্রাণবাদ ধর্মের উৎস নয় এবং এটি ইসলামি বিশ্বাস মতে পরিত্যাজ্য।
  • প্রেতাত্মাবাদ: Herbert Spencer-এর মতে, প্রেতাত্মারূপে আবির্ভূত পূর্ব-পুরুষদের উপাসনা থেকেই ধর্মের উৎপত্তি। বস্তুত প্রেতাত্মার ধারণা অমূলক। কেননা আল্লাহই আত্মার সৃষ্টিকর্তা। তাই এটাও ধর্মের উৎস হিসেবে যথার্থ নয়।
  • টোটেমবাদ: Emile Durkheim-এর মতে, প্রাচীন যুগের মানুষ কোনো নির্দিষ্ট পশু পাখি, গাছপালা বা বস্তুকে তাদের সম্প্রদায়ের পূর্ব পুরুষ বা জাতি বলে মনে করে পূজা করত। এ থেকেই ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। মূলত এটিও বর্বর যুগের লোকদের ধারণা ও কুসংস্কার মাত্র। ইসলামি জীবন দর্শনে এর কোনো ভিত্তি নেই। সকল শক্তির উৎস হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা এবং তিনিই তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ইসলাম এটাকে মূলোৎপাটন করতে সর্বদা বদ্ধপরিকর। সুতরাং বর্বর ও অসভ্য লোকদের ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কারের প্রতিফলন Totemism-কে ইসলাম ধর্মের উৎস বলে স্বীকার করে না।


  • ট্যাবু প্রথা: নৃবিজ্ঞানী Arnold বলেন, Taboo is the oldest human unwritten code of law. W. Wundt বলেন, Taboo is or unwritten code of conduct. অর্থাৎ প্রাচীনকালের একটি অলিখিত সংবিধান হচ্ছে ট্যাবু। আর এটা থেকেই নৃ-বিজ্ঞানীদের মতে ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। মূলত ট্যাবুর কোনো বাস্তবতা নেই। এর পেছনে শরীআতের কোনো সমর্থনও নেই। আদিম যুগের মানুষের কুসংস্কারই হলো ট্যাবু। ইসলামি আকীদা হলো সকল শক্তির উৎস একমাত্র আল্লাহ তাআলা। মঙ্গল-অমঙ্গল সাধনের ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই হাতে ন্যস্ত। সুতরাং এটা থেকেও ধর্মের উৎপত্তি হয়নি।
  • মানাবাদ: Marett-এর মতে, নৈর্ব্যক্তিক অসাধারণ, দুর্জেয় ও আরোধ্য অতিপ্রাকৃত শক্তিই হলো মানা। এ থেকেই ধর্মের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন। সমালোচনায় বলা যায়, একটি কাঙ্ক্ষিত-বাঞ্ছিত বস্তুকে লাভ করার জন্য নিবিড় এবং গভীর সাধনার মাধ্যমে যে সফলতা লাভ করা যায়, একে বর্বর যুগের লোকেরা মানা নামে অভিহিত করেছে। বস্তুত ইসলামি দৃষ্টিভংগিতে স্রষ্টা এবং সৃষ্টির মাঝখানে মানা বলতে কোনো শক্তি নেই। কাজেই এটাও ধর্মের উৎস হতে পারে না।


  • জাদু প্রথা: Frazer-এর মতে, জাদু থেকেই ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে। যাদুর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, Magic. is a spurious systim of natural law as well as a falacious guide of human conduct; it is a false science as well as an abortive art. আবশ্য কেউ কেউ এর বিরোধিতাও করেছেন। তিনি মনে করেন প্রাচীন যুগে ধর্মের প্রচলন হওয়ার আগে যাদু বিদ্যার প্রচলন ছিল এবং মানুষ বিপদাপদে নিপতিত হয়ে যাদুর আশ্রয় গ্রহণ করত। পরবর্তীতে বিবর্তনের প্রেক্ষাপটে যাদু ধর্মের রূপ লাভ করে। তাই যাদু হলো ধর্মের উৎস।

উপসংহার

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ সামাজিক জীব। আর সামাজিক জীবনে সে যেসব সমস্যায় পড়ে অথবা সমাজে নৈতিকতা ও মানবতাবোধ নিয়ে বেঁচে থাকার দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে এ ধর্মীয় অনুশাসন। তাই সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনে ধর্ম একটি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে থাকে। ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ, ব্যক্তির আচার আচরণে শালীনতাবোধ সবই ধর্মীয় অনুশাসন শিক্ষা দেয়।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles