Thursday, June 27, 2024
Homeশিক্ষাবৌদ্ধ ধর্মের পরিচয় দিন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা করুন।

বৌদ্ধ ধর্মের পরিচয় দিন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা করুন।

প্রশ্ন: বৌদ্ধ ধর্মের পরিচয় দিন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা করুন। বিষয়: IST-603 : Philosophy of Religion and Comparative Religion কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



বৌদ্ধ ধর্মের পরিচয় দিন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা করুন।

ভূমিকা

বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত বিশ্বজনীন ধর্মের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্ম অন্যতম। বৌদ্ধ ধর্ম বলতে সাধারণত গৌতম বুদ্ধের প্রচারিত বাণী ও জীবনদর্শনকে বোঝানো হয়। শুধু নিজের মুক্তি নয় বরং মানব জাতিকে চিরকালীন দুঃখ-দুর্দশা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে বুদ্ধদেব তাঁর ধর্মবাণী প্রচার করেছেন। তিনি ছয় বছর কঠোর সাধনা করে জগতে বুদ্ধরূপে খ্যাত হলেন। প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করলেন বিশ্বজনীন অহিংসার ধর্ম, মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতি, ভালোবাসা, মানবতার উৎকর্ষ সাধন, নৈতিক উন্নতি ও আধ্যাত্মিক উন্নতিসহ বহু কল্যাণকামী বাণী। গৌতম বুদ্ধের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল দুঃখ-দুর্দশা থেকে মানুষের পরিত্রাণের পথ আবিষ্কার করা এবং জনগণকে ঐ পথের নির্দেশ দেয়া।

বৌদ্ধ ধর্মের পরিচয় দিন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রকৃতি ও স্বরূপ আলোচনা করুন।

বৌদ্ধ ধর্মের পরিচয়

সাধারণভাবে গৌতম বুদ্ধ প্রচারিত ও প্রতিষ্ঠিত ধর্মই বৌদ্ধ ধর্ম। পাশাপাশি বুদ্ধের অনুসারী কবি ও দার্শনিকবৃন্দের জ্ঞানের ফসলও বৌদ্ধ ধর্মকে সমৃদ্ধ করেছে। শেষ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্ম জগৎ ও জীবন সম্পর্কিত সব জিজ্ঞাসার জবাবে পরিণত হয়েছে। এর ফলে যা জগৎ ও জীবন সম্পর্কীয় যাবতীয় প্রশ্নের সমাধান যুগিয়েছে তাকেই বৌদ্ধ ধর্ম বলে অভিহিত করা হয়। বুদ্ধকে দুঃখ, কষ্ট, জরা, মৃত্যু প্রভৃতি গভীরভাবে আলোড়িত করে। তবে তিনি সময় ও সমাজকে অবজ্ঞা করেননি বরং এ সম্পর্কে সবিশেষ সচেতনতা অবলম্বন করেছেন।

এ কারণে তিনি ঈশ্বরকে কোনো ব্যাখ্যাতে আনতেন না। তাকে ব্যাখ্যাতীত এবং প্রশ্নাতীত করে রেখে গৌতম বুদ্ধ কর্মকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিষয় হিসেবে ঘোষণা করেন। আর্যসত্য অনুসারে, নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে ভবচক্রকে অতিক্রম করলেই মুক্তি। এ কারণে তিনি ঈশ্বর, আত্মা, জগৎ প্রভৃতি সসীম না অসীম কিংবা এগুলো অস্তিত্বশীল না। অস্তিত্বহীন সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতেন না। তাঁর মতে, এগুলো একেবারেই অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন।



গৌতম বুদ্ধ ঈশ্বর পূজার কেন্দ্র হতে ধর্মকে সরিয়ে এনে মানুষের সেবায় সংস্থাপন করেন। বিশ্ব সৃষ্টির জটিল দর্শনে না গিয়ে মানুষকে তিনি নতুন মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি সবাইকে এ চেতনায় উজ্জীবিত করেন যে, আপাত যা নিত্য ও সৎ বলে মনে হয় তা বস্তুত পরিবর্তনশীল। অবিকৃত সত্তার ধারণাটিও একটি আপাত ধারণা মাত্র। এ জাগতিক দুঃখ, কষ্ট ও নৈরাশ্যের মাঝে তিনি মানুষকে আশার বাণী শুনিয়েছেন। গৌতম বুদ্ধের এই আশার বাণীর সার সংক্ষেপই বৌদ্ধ ধর্ম। এ ধর্মের মাধ্যমে বুদ্ধদেব মানুষকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেন। মানুষকে দুঃখ মুক্তির কথা বলেন। তাঁর মতে, দুঃখ মুক্তির সাধনাই বৌদ্ধ ধর্ম। তেলের অভাবে প্রদীপের শিখাটি যেমন নিভে যায়, ঠিক তেমনি কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, ঘৃণা, সুখ, আনন্দ, ভোগের ইচ্ছা প্রভৃতি তৃষ্ণা যখন নিবৃত্ত হয় তখন সব দুঃখ দূর হয়ে যায়। এ অবস্থায় মানুষ নির্বাণ বা মহামুক্তি লাভ করে। বৌদ্ধ ধর্মে নির্বাণই পরম সত্য, নির্বাণই পরম লক্ষ্য।

বৌদ্ধ ধর্মের বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি ও স্বরূপ

বৌদ্ধ ধর্ম মানবতবাদী, জীবপ্রেমী একটি অহিংস ও মধ্যপন্থি ধর্ম। বিশ্বের অন্যতম প্রধান এই ধর্মটি নানাবিধ বৈশিষ্ট্যে বিশিষ্ট। যেমন-



বৌদ্ধ ধর্ম ঈশ্বর নিরপেক্ষ

বৌদ্ধ ধর্ম মতে, নৈতিক অগ্রগতি বা পূর্ণতা অর্জনের জন্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা আবশ্যক নয়। কেননা ঈশ্বরের অস্তিত্বের ধারণা ও তাঁর অসীম ক্ষমতায় বিশ্বাস মানুষকে নিষ্ক্রিয় ও দায়িত্বহীন করে তোলে। আবার ঈশ্বর যদি সবকিছুর কারণ হন তাহলে মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা থাকে না। ঈশ্বরকে যদি করুণার আধার বলে বিশ্বাস করা হয় তাহলে মানুষের মধ্যে ভালো কাজ করার কোনো প্রয়োজন থাকে না। মানুষ করুণা করার ক্ষেত্রে আন্তরিক হয় না। বৌদ্ধ ধর্মতত্ত্ববিদগণ বলেছেন, জগৎ সৃষ্টির ব্যাখ্যার জন্যও ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার অনিবার্য হয়ে ওঠে না। কারণ বস্তু ও চিন্তা সবই কর্মফল।

বৌদ্ধ ধর্ম কর্মবাদী ধর্ম

কর্মবাদ অনুসারে মানুষ পৃথিবীতে তার জীবদ্দশায় যে কাজই করে তাকে সে কাজের ফলভোগ করতে হয়। তার কাজ সৎ হলে সে ভালো প্রতিদান পায় আর মন্দ হলে মন্দ প্রতিদান পায়। এই ফল ভোগ যদি এক জীবনে শেষ না হয় তাহলে কর্মফল ভোগ করার জন্যই মানুষকে বারবার জন্মগ্রহণ করতে হয়। গৌতম বুদ্ধ কর্মবাদের কোনো জটিল বিশ্লেষণ বা কঠোর আলোচনা উৎসাহিত করেননি। তিনি বরং মানুষকে নিষ্কাম কর্মে নিবেদিত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।

দার্শনিক বা তত্ত্বালোচনায় তিনি আগ্রহী ছিলেন না বরং নিষ্কাম কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে তা নিয়েই তিনি উদ্যোগী ছিলেন। রাগ, দ্বেষ, কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে যে কর্ম সম্পাদন করা হয় তাই নিষ্কাম কর্ম। অষ্টাঙ্গিক মার্গ সঠিকভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে পুনর্জন্ম রোধ করতে পারলে দুঃখ থেকে চিরমুক্তি লাভ সম্ভব হয়। এ কর্মবাদ কার্যকারণ শৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত। তাই পূর্ব জন্মের কৃতকর্মের ফল ভোগ শেষ না হওয়ায় বর্তমান জন্ম। সুতরাং বর্তমান জন্মের কারণ পূর্ব জন্মের কৃতকর্ম।

ইচ্ছার স্বাধীনতার স্বীকৃতি

কর্মবাদের সঙ্গে ইচ্ছার স্বাধীনতার কোনো বিরোধ নেই বরং কর্মবাদে ইচ্ছার স্বাধীনতাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কারণ বর্তমান অতীতের দ্বারা নির্ধারিত হলেও ভবিষ্যৎ জীবনের অবস্থা কেমন হবে তা জীবের স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মের ওপর নির্ভর করে। অতীতে যদি মানুষ নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে ভবচক্রকে অতিক্রম করতে পারত তাহলে কারো বর্তমান জন্ম হতো না। বৌদ্ধ দর্শনে ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কিত নিয়ন্ত্রণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদকেও স্বীকার করা হয় না। ইচ্ছার স্বাধীনতার সর্বোচ্চ প্রয়োগের জন্য এ দর্শনে স্বনিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়।



বৌদ্ধ ধর্মে নিজের কৃতকর্মের নিয়ন্ত্রক মানুষ নিজে হওয়ায় মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কিত নিয়ন্ত্রণবাদ ও অনিয়ন্ত্রণবাদকে স্বীকার বা অস্বীকার করার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অন্য যে কোনো ধর্ম বা দর্শনের চেয়ে কর্মবাদের সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মেই ইচ্ছার সর্বোচ্চ স্বাধীনতার কথা স্বীকার করা হয়।

বৌদ্ধ ধর্ম আত্মা নিরপেক্ষ

বৌদ্ধ ধর্মে আত্মার নিত্যতা বা অনিত্যতাকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় না। বুদ্ধদেবের মতে, সবকিছুই অনিত্য এবং ক্ষণকালের। তাই চিরন্তন আত্মার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, কোনো এক বিশেষ মুহূর্তে নিজেদের মধ্যে মানুষ যে মানসিক প্রতিক্রিয়াসমূহ লক্ষ করে সেই মানসিক প্রক্রিয়াসমূহের অবিরাম প্রবাহ বা ধারাই হলো আত্মা। তিনি পুনর্জন্ম স্বীকার করেন কিন্তু হিন্দু ধর্মের জন্মান্তরবাদ অস্বীকার করেন। তাঁর মতে, জীব হলো মানসিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়াই এক জন্ম থেকে আরেক জন্মে প্রবাহিত হয়। যেমন দুটি প্রদীপ সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও একটি প্রদীপের আগুন দিয়ে অবলীলায় অপর প্রদীপটি জ্বালানো যায় । আত্মার প্রবাহও জীবন থেকে জীবনে তেমনি। এ কারণে গৌতম বুদ্ধ নৈরাত্মবাদের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ আত্মা সম্পর্কে ভুল ধারণা মানুষকে দুঃখবোধে আক্রান্ত করে।

বৌদ্ধ ধর্ম প্রত্যক্ষবাদী

বৌদ্ধধর্ম একান্তভাবে অভিজ্ঞতাবাদী বা প্রত্যক্ষবাদী। এ ধর্মমতে, যা মানুষ প্রত্যক্ষ করতে পারে তাই সত্য। আর যা প্রত্যক্ষ করতে পারে না তা সত্য নয়। ঈশ্বর, আত্মা ইত্যাদি প্রত্যক্ষণাতীত বিষয় বলে এগুলো সত্য নয়। মানুষের দুঃখহীন জীবন তৈরির জন্য এগুলো সত্য হওয়াও অনিবার্য নয়। বুদ্ধদেব তাই সনাতন আত্মা এবং অতীন্দ্রিয় যে কোনো সত্তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন। যে বিষয়গুলোকে প্রত্যক্ষণযোগ্য যেমন তিনি দেখেছিলেন, মানুষ বিভিন্নভাবে দুঃখ পেয়ে কাঁদছে, এ দুঃখই সত্য। দুঃখ থেকে মুক্তির পথ অন্বেষণে তিনি স্ত্রী, পুত্র, রাজ্য ছেড়ে সত্যের ধ্যানে মগ্ন হলেন। বোধি লাভের পরও অপ্রত্যক্ষিত বিষয় নিয়ে আলোচনাকে তিনি অর্থহীন এবং অপ্রয়োজনীয়ই মনে করতেন।

বৌদ্ধ ধর্ম প্রয়োজনবাদী

বৌদ্ধ ধর্ম মানুষের প্রয়োজনকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। প্রয়োজনবাদ অনুসারে, যে বস্তু বা বিষয় মানুষের প্রয়োজন পূরণ করে সে বস্তু বা বিষয়ই সত্য। গৌতম বুদ্ধ দেখেছেন মানুষ রোগ, শোক, জরা ইত্যাদি দুঃখে নিপতিত। তাই তিনি দর্শনের জটিল আলোচনায় না গিয়ে কীভাবে মানুষকে দুঃখ থেকে মুক্ত করা যায় সে চেষ্টা করেছেন। দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে তিনি আর্যসত্য ও অন্যান্য দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

বৌদ্ধ ধর্ম তত্ত্বালোচনা বিরোধী

বৌদ্ধ ধর্মতত্ত্ব আলোচনায় মত্ত হতে একেবারেই অনাগ্রহী। আত্মা কী, আত্মার স্বরূপ কী, ঈশ্বর সসীম নাকি অসীম, তাঁর অস্তিত্ব আছে কী নেই, অধিবিদ্যা কী, জগৎ নিত্য নাকি অনিত্য ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গে আলোচনাকে গৌতম বুদ্ধ একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এবং সময়, মেধা ও যোগ্যতার অপচয় মনে করতেন। তাঁর মতে, এসব প্রশ্ন নিরর্থক। এসব প্রশ্নের জালে আবদ্ধ হয়ে কেউ সত্যের পূর্ণ রূপটি উপলব্ধি করতে পারেন না। তাই এ জাতীয় আলোচনা শুধু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং মানুষকে জীবনের মূল লক্ষ্য দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। সূক্ষ্ম, জটিল, অপ্রত্যক্ষিত বিষয়ের আলোচনায় মানব জীবনের কোনো সাধনই সফল হতে পারে না।

দুঃখ মুক্তিই লক্ষ্য

বৌদ্ধ ধর্মে সবকিছুকে দুঃখময় হিসেবে বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন মহামতি বৌদ্ধ বলেছেন, সর্বং দুক্খং বা সবই দুঃখময়। অপ্রিয় সংযোগ, প্রিয় বিচ্ছেদ, উদ্বেগ, রোগ, শোক, জরা, ব্যাধি, আতঙ্ক, হতাশা প্রভৃতি দুঃখে মানুষ নিয়ত চোখের জল ফেলছে। যা কিছু ক্ষণস্থায়ী তাই দুঃখ সৃষ্টি করে। গৌতম বুদ্ধের মতে, এ সংসারে সুখ আছি কিন্তু সত্য দ্রষ্টা বা জ্ঞানীর দৃষ্টিতে সে জাগতিক সুখের মধ্যে দুঃখের বীজ নিহিত রয়েছে। গৌতম বুদ্ধ দুঃখের কারণ নির্দেশ করে সে কারণকে দূর করার জন্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের কথা বলেছেন। এ পথ অনুসরণ করে মানুষ পুনর্জন্ম রোধ করতে পারবে এবং নির্বাণ লাভ করতে পারবে। এভাবে নির্বাণ লাভ করা সম্ভব হলে মানুষ জীবনব্যাপী অন্তহীন দুঃখের নাগপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে।

নির্বাণ চূড়ান্ত গন্তব্য

বৌদ্ধ ধর্ম কর্মবাদ ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সাধনার একটি মাত্র চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করে, তা হলো নির্বাণ লাভ করা। শব্দগত বিবেচনায় নির্বাণ অর্থ নির্বাপিত হওয়া বা নিভে যাওয়া। তেলের অভাবে প্রদীপ যেমন নিভে যায় তেমনি ভোগাকাঙ্ক্ষার অভাবে কামনা-বাসনার পূর্ণ বিলুপ্তি হচ্ছে নির্বাণ। সাধনায় সিদ্ধি লাভের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধ প্রথমে জীবিত অবস্থায় নির্বাণ লাভ করেন, নির্বাণের নাম মহানির্বাণ আর মৃত্যুর পর তিনি যে নির্বাণ লাভ করেন তাকে বলে পরনির্বাণ। বৌদ্ধ ধর্মে নির্বাণকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন-

ক. নির্বাণ হলো পূর্ণ বিলুপ্তি;

খ. নির্বাণ হলো শাশ্বত আনন্দের অবস্থা;

গ. নির্বাণ হলো অচিন্তনীয় অবস্থা;

ঘ. নির্বাণ হলো অপরিবর্তিত অবস্থা।

বৌদ্ধ ধর্মীয় পণ্ডিতগণ শেষ পর্যন্ত এভাবে বলেছেন, নির্বাণকে বর্ণনা বা ব্যাখ্যা করা যায় না। বরং এ হলো বোধ ও উপলব্ধির বিষয়। এ কারণে স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ নির্বাণকে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করে ব্যাখ্যা করেছেন।

বৌদ্ধ ধর্ম মধ্যপন্থী

বৌদ্ধ ধর্ম চরমপন্থি নয়। চিন্তা-দর্শনে, জীবনাচারে, বিধি-নিষেধ আরোপ ও কার্যকর করার কোনো পর্যায়েই এ ধর্ম চরমপন্থা সমর্থন করে না। গৌতম বুদ্ধ চরমপন্থা বিরোধী ছিলেন। কারণ অসংযত ভোগবিলাসের পথ হবে অসম্মানজনক, আধ্যাত্মিকতা বর্জিত ও ঘৃণ্য। আবার অনাবশ্যক কৃচ্ছ্রতাসাধনের পথ হলো দুঃখময়, অনর্থক ও অবাস্তব। মানুষের কল্যাণ কামনায় বুদ্ধদেব উপরোক্ত দুই চরমপন্থা পরিহার করে মধ্যপথের কথা প্রচার করেছেন। এ মধ্যপথ হলো বুদ্ধ নির্দেশিত অষ্টাঙ্গিক মার্গ। এতে অসংযত ইন্দ্রিয় ভোগ নেই ও অনাবশ্যক কৃচ্ছ্রতাসাধনও নেই । আছে সংযম, চিত্তের একাগ্রতা ইত্যাদি। যে কোনো ব্যক্তি এ মধ্যপথ অবলম্বন করে দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে পারে। মধ্যপথ অবলম্বনকারী সব জীবের মঙ্গল কামনা করবে, অন্যের সুখে আনন্দিত হবে, অন্যের দোষের প্রতি উদাসীন হবে, অসহায়-দুঃখীর প্রতি করুণা করবে এবং নিজ কর্ম নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন করবে। এ মধ্যপথই বৌদ্ধধর্মের নীতিতত্ত্ব।

বৌদ্ধ সম্প্রদায়

বৌদ্ধ ধর্ম তার সহজবোধ্য জীবন দর্শনের জন্য মানুষের কাছে বিশেষভাবে গ্রহণীয় হয়ে ওঠে। দেখতে দেখতে এর অনুসারী সংখ্যা অনেক হয়ে যায়। অনুসারীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে গৌতম বুদ্ধের মহাপ্রয়াণের পর তাঁর আদর্শের ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়। অধিকসংখ্যক অনুসারীর কারণে তারা ঐকমত্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হন এবং এভাবেই বৌদ্ধ ধর্মে দুটি বিভাগ তৈরি হয়। এগুলো হলো-

  1. হীনযান: প্রাচীনপন্থি গোঁড়া বৌদ্ধগণ যারা স্থবিরবাদী নামে পরিচিত তারাই হীনযান বৌদ্ধ। এরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পালনীয় আচার-ব্যবহারের কঠোরতা শিথিল করার বিরোধী।
  2. মহাযান: মহাযানীরা আত্মমুক্তির কথা প্রচার না করে সবার মুক্তির কথা বলেন। তারা ঈশ্বর, আত্মা এবং মানুষের পরিণতি সম্পর্কে ভাবাত্মক ধারণা প্রচার করেন। তাদের বিশ্বাসে বুদ্ধই ঈশ্বর।

উপসংহার

যে কোনো ধর্মমতের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা যেমন আবশ্যক তেমনি তাকে উদার এবং সর্বজনীন করে তোলাও কর্তব্য। সে কারণে বাহ্যত হীনযান ও মহাযান সম্প্রদায়কে বৌদ্ধ ধর্মের দুটি আলাদা সম্প্রদায় মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা এক পক্ষ ধর্মের বিশুদ্ধতা রক্ষার কাজ করে চলেছে, অন্য পক্ষ একে উদার এবং সর্বজনীন করে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে- যা সবারই কাম্য বিষয়। বৌদ্ধ ধর্মের মূলভিত্তি ত্রিপিটক। এটি তিনটি পিটকের সংকলন। পিটকগুলোতে মহামতি বুদ্ধের উপদেশ, বাণী ও শিক্ষাসমূহ সংকলিত হয়েছে।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

x

tiltony.com
tiltony.comhttp://www.tiltony.com
তিলটনি.কম একটি বাংলা ব্লগ সাইট। সঠিক, নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ তথ্য সমৃদ্ধ কনটেন্ট প্রকাশ করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ওয়েবসাইটটি।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ‣ শিক্ষা ‣ স্বাস্থ্য ‣ জীবনযাপন ‣ পাঁচমিশালি ‣ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও সংবাদ পেতে ভিজিট করুন।
RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments