▶ প্রশ্ন: তাওহীদ কাকে বলে? প্রমাণ করুন- “মহাবিশ্বজগতে একাধিক স্রষ্টা থাকলে মহাবিপর্যয় অনিবার্য হতো।” ▶ বিষয়: IST-603 : Philosophy of Religion and Comparative Religion ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)
তাওহীদ কাকে বলে? প্রমাণ করুন- “মহাবিশ্বজগতে একাধিক স্রষ্টা থাকলে মহাবিপর্যয় অনিবার্য হতো।”
ভূমিকা
ইসলামি পরিভাষায় তাওহীদ হলো সৃষ্টি ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করা, সকল ইবাদাত-উপাসনা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য করা, অন্য সবকিছুর উপাসনা ত্যাগ করা, আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও সুউচ্চ গুণাবলীকে তার জন্য সাব্যস্ত করা এবং দোষ ত্রুটি থেকে আল্লাহকে পবিত্র ও মুক্ত ঘোষণা করা।
তাওহীদের সংজ্ঞা
তাওহীদ শব্দটি (وحد) ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ কোনো জিনিসকে একক হিসেবে নির্ধারণ করা। একককৃত বস্তু ব্যতীত অন্য বস্তু হতে কোনো বিধানকে অস্বীকার করে একককৃত বস্তুর জন্য তা সাব্যস্ত করা। উদাহরণস্বরূপ, “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই” একথার সাক্ষ্য দেওয়া ব্যতীত কোনো ব্যক্তির তাওহীদ পূর্ণ হবে না। যেই ব্যক্তি এই সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, সে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য সকল বস্তুর ইবাদাত অস্বীকার করে এবং শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করবে।
“আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই” এই বাক্যের মাধ্যমে মুসলমানগণ ঈমান আনয়ন করে। অর্থাৎ তারা তাওহীদ তথা একত্ববাদের স্বীকারোক্তি দিয়ে থাকে। এই বাক্যটি এভাবে বলা কারণ হলো এখানে ইবাদাতের জন্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে খাস ভাবে একক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ যদি বলা হয়, ‘রিফাত আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে’। এ বাক্যে রিফাতকে আপনার জন্য দণ্ডায়মান হওয়াকে সাব্যস্ত করা হলো। তাকে দণ্ডায়মান গুণের মাধ্যমে একক হিসাবে সাব্যস্ত করা হলো না। হতে পারে এ গুণের মাঝে অন্যরাও শরীক আছে। অর্থাৎ রিফাতের সাথে সাথে অন্যান্য ব্যক্তিগণও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আর যদি বলা হয়, “রিফাত ব্যতীত আমার জন্য আর কেউ দাঁড়ানো নেই” তবে দণ্ডায়মান হওয়াকে শুধুমাত্র রিফাতের সাথে সীমিত করে দিলেন। এ বাক্যে দন্ডায়মানের মাধ্যমে রিফাতকে একক করে দেয়া হলো। দাঁড়ানো গুণটিকে রিফাত ব্যতীত অন্য কারো জন্য হওয়াকে অস্বীকার করা হলো।
একাধিক স্রষ্টা থাকলে মহাবিপর্যয় অনিবার্য
মহাবিশ্বজগতে একাধিক স্রষ্টা থাকলে মহাবিপর্যয় অনিবার্য হতো এ বিষয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনের সূরা আম্বিয়ার ২২ নম্বর আয়াতে বলেন,
لَوۡ کَانَ فِیۡهِمَاۤ اٰلِهَۃٌ اِلَّا اللّٰهُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبۡحٰنَ اللّٰهِ رَبِّ الۡعَرۡشِ عَمَّا یَصِفُوۡنَ ﴿۲۲﴾
অর্থ: আসমান ও যমীনে যদি আল্লাহ ছাড়া আরো অনেক ইলাহ থাকত তবে (আসমান ও যমীন) উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। কাজেই আরশের অধিপতি আল্লাহ মহান ও পবিত্র সে সব থেকে যা তারা তাঁর প্রতি আরোপ করে।
এই আয়াত তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ। মক্কার মুশরিকরাও স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করত, কিন্তু বিশ্বব্যবস্থাপনায় তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্যদের শরিক করত। সেগুলোকে আল্লাহর সঙ্গে নিজেদের মধ্যস্থতাকারী মনে করত। এর জবাবে আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, যদি সত্যিই আল্লাহ ছাড়া অন্য ইলাহ বা উপাস্য থাকত, তাহলে উভয়েই ধ্বংস হয়ে যেতো।
কথাটি সাধারণ অভ্যাসের উপর ভিত্তিশীল এবং যুক্তিসঙ্গত প্রমাণের দিকেও ইঙ্গিত করে। সাধারণ জ্ঞানে বোঝা যায়, পৃথিবী ও আকাশে দুই ইলাহ থাকলে উভয়ই সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হবে। এমতাবস্থায় উভয়ের নির্দেশাবলী পৃথিবী ও আকাশে পূর্ণরূপে কার্যকরী হওয়া উচিত। অভ্যাসগতভাবে এটা অসম্ভব যে, একজন যে নির্দেশ দেবে, অন্যজনও সেই নির্দেশ দেবে, একজন যা পছন্দ করবে, অন্যজনও তাই পছন্দ করবে। তাই উভয়ের মধ্যে মাঝে মাঝে মতবিরোধ ও নির্দেশ বিরোধ হওয়া অবশ্যম্ভাবী। যখন দুই ইলাহর নির্দেশাবলী পৃথিবী ও আকাশে বিভিন্নরূপ হবে, তখন এর ফলশ্রুতি পৃথিবী ও আকাশের ধ্বংস ছাড়া আর কি হবে। এক ইলাহ চাইবে যে এখন দিন হোক, অপর ইলাহ চাইবে এখন রাত্রি হোক। একজন চাইবে বৃষ্টি হোক, অপরজন চাইবে বৃষ্টি না হোক।
এমতাবস্থায় উভয়ের পরস্পর বিরোধী নির্দেশ কিভাবে বাস্তবায়ন হবে? যদি একজন পরাভূত হয়ে যায়, তবে সে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী ও ইলাহ্ থাকতে পারবে না। যদি প্রশ্ন করা হয় যে, উভয় ইলাহ পরস্পরে পরামর্শ করে নির্দেশ জারি করলে তাতে অসুবিধা কি? তার উত্তর হলো এই যে, যদি উভয়ই পরামর্শের অধীন হয় এবং একজন অন্যজনের পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ করতে না পারে, তবে এতে জরুরী হয়ে যায় যে, তাদের কেউ সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী নয় এবং কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। বলাবাহুল্য, স্বয়ংসম্পূর্ণ না হয়ে ইলাহ হওয়া যায় না।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনের সূরা আল-মুমিনুন এর ৯১ নম্বর আয়াতে বলেন, “আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যে গুণে তাকে গুণান্বিত করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র- মহান!”
এই আয়াতের আলোকে দেখা যায় যে, পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই চন্দ্র, সূর্য, জন্ম-মৃত্যু, বৃষ্টি-বাতাস ইত্যাদি একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের কার্যাবলী সম্পন্ন হচ্ছে। যদি পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা দুইজন থাকতো তাহলে এতোদিনে এইগুলোর কার্যাবলীতে নিয়মতান্ত্রিকতার একটু হলেও ব্যাঘাত ঘটতো। যা প্রমাণ করে মহানবিশ্বজগতের স্রষ্টা তথা ইলাহ একজনই। তা না হলে এগুলো বিশৃঙ্খলা দেখা দিতো, পৃথিবীতে ধ্বংস হয়ে যেতো।
উপসংহার
মানুষের সাধারণ বুদ্ধিমত্তার আলোকেই বলা যায় এই মহাবিশ্বজগতের ইলাহ একজনই। কারণ পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রেই কোন সময় একাধিক রাষ্ট্র প্রধান ছিলো না বা থাকতে পারে না, কোন প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্রধান ব্যক্তি দায়িত্বরত থাকতে পারে না, কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তি সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। সাধারণভাবে যেহেতু বোঝা যায় যে, কোন রাষ্ট্রে বা প্রতিষ্ঠানে একাধিক প্রধান থাকলে সে রাষ্ট্রে বা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা অনিবার্য। তাই এটা সহজেই প্রমান হয় যে, মহাবিশ্বজগতে একাধিক স্রষ্টা থাকলে মহাবিপর্যয় অনিবার্য হতো।
• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam •
[…] তাওহীদ কাকে বলে? প্রমাণ করুন- “মহাবিশ্বজগতে একাধিক স্রষ্টা থাকলে মহাবিপর্যয় অনিবার্য হতো।” ➔ উত্তর দেখুন […]