Thursday, February 13, 2025

নাজাসাত কাকে বলে? তা কত প্রকার কি কি? বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করুন।

প্রশ্ন: নাজাসাত কাকে বলে? তা কত প্রকার কি কি? বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করুন। বিষয়: IST-602 : ‍Study of Al-Fiqh কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)



নাজাসাত কাকে বলে? তা কত প্রকার কি কি? বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করুন।

ভুমিকা

পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। বিশেষ কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে পবিত্রতা অর্জন করা পূর্বশর্ত ও অত্যাবশ্যক। যেমন: নামায, তাওয়াফ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি। তাই আমাদের জানতে হবে কিভাবে পেশাব-পায়খানা ও অন্যান্য অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। অযু, গোসল ও তায়াম্মুম করার পদ্ধতি কী? শরীর, পোশাক-পরিচ্ছদ ও অন্যান্য বস্তু পবিত্র করার নিয়ম পদ্ধতি কী? এসব কিছু না জানলে সঠিকভাবে পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব নয়।

নাজাসাত কাকে বলে

‘নাজাসাত’ অর্থ অপবিত্রতা ও অপবিত্র বস্তু। নাজাসাত এটা আরবি শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে, নাপাক। যে কোনো নাপাকক্ই নাজাসাত বলা হয়। মানুষ বা জীব-জন্তুর শরীর থেকে যে অপবিত্র ও নাপাক বস্তু বের হয়, একে শরীআতের পরিভাষায় ‘নাজাসাত’ বলা হয়।


No posts



হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (র) বলেন, নাজাসাত বলতে এমন বস্তুকে বোঝায় যাকে সুস্থ প্রকৃতি অপবিত্র বলে মনে করে, যাকে সে পরিহার করে এবং কাপড়ে লাগলে ধুয়ে ফেলে। যেমন, মল-মূত্র, রক্ত, পুঁজ, মদ ইত্যাদি।

নাসাজাতের প্রকারভেদ

নাসাজাত দুই প্রকার। (১) নাজাসাতে গলীজা (যে নাপাকীর হুকুম শক্ত) ও (২) নাজাসাতে খফীফা (যার হুকুম কিছুটা হালকা)। নিম্নে এই দুই প্রকার নাসাজাতের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

  • মানুষের মল মূত্র, মানুষ ও প্রাণীর রক্ত, বীর্য, মদ, সব ধরনের পশুর পায়খানা, সব ধরনের হারাম পশুর পেশাব এবং পাখীর মধ্যে শুধু হাঁস ও মুরগির বিষ্টা হল নাসাজাতে গলীজা বা শক্ত নাপাকী।
  • গরু, মহিষ, বকরী ইত্যাদি সকল হালাল পশুর পেশাব, কাক চিল ইত্যাদি সকল হারাম পাখির বিষ্ঠা এবং ঘোড়ার পেশাব হল নাসাজাতে খফীফা।
  • হাঁস, মুরগি ও পানকৌড়ি ব্যতীত অন্যান্য হালাল পাখির বিষ্ঠা (যেমন কবুতর, চড়ই, শালিক ইত্যাদির বিষ্ঠা) এবং বাদুর ও চামচিকার পেশাব পায়খানা পাক।এমনিভাবে মশা, মাছি, ছারপোকা এবং মাছের রক্তও পাক।


  • নাসাজাত কম হোক বা বেশী হোক পানিতে পড়লে সেই পানি নাজাছাত বা নাপাক হয়ে যাবে- নাজাছাতে গলীজা পড়লে পানিও নাসাজাতে গলীজা হয়ে যাবে এবং নাজাছাতে খফীফা পড়লে নাসাজাতে খফীফা হবে। তবে প্রবাহিত পানিতে বা ১০০ বর্গহাত কিংবা তার চেয়ে বড় কোন কুয়া হাউজ ইত্যাদিতে নাপাকী পড়লে তা নাপাক হবে না। তবে নাপাকী পড়ার কারণে তার রং স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তিত হয়ে গেলে নাপাক হয়ে যাবে। যে পানি দ্বারা কোন নাপাক জিনিস ধৌত করা হয়, সে পানি নাপাক হয়ে যায়। মৃতকে যে পানি দ্বারা গোসল দেয়া হয় সে পানিও নাপাক।
  • নাসাজাতে গলীজার মধ্যে যেগুলো তরল, যেমন রক্ত পেশাব ইত্যাদি, তা এক দেরহাম (গোলকৃত ভাবে একটা কাঁচা টাকা অর্থাৎ, হাতের তালুর নীচ স্থান পরিমাণের সমান) পর্যন্ত শরীর বা কাপড়ে লাগলে মাফ আছে অর্থাৎ, তা না ধুয়ে নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে, তবে বিনা ওজরে স্বেচ্ছায় এরূপ করা মাকরূহ। আর এক দেরহাম পরিমাণের চেয়ে বেশী হলে তা মাফ নয় অর্থাৎ, তা পাক না করে নামায পড়া জায়েয নয়।
  • নাসাজাতে গলীজার মধ্যে যেগুলো গাঢ় যেমন গোবর, পায়খানা ইত্যাদি তা এক সিকি পরিমাণ পর্যন্ত (অর্থাৎ, ৪.৮৬ গ্রাম পর্যন্ত) কাপড় বা শরীরে লাগলে মাফ কিন্তু তার চেয়ে অধিক পরিমাণ লাগলে মাফ নয়।


  • নাসাজাতে খফীফা শরীর বা কাপড়ে লাগলে যে অঙ্গে লেগেছে তার চার ভাগের এক ভাগের কম হলে মাফ, আর পূর্ণ চার ভাগের এক ভাগ বা আরও বেশী হলে মাফ নয়। জামার হাতা, কলি, কাপড়ের আঁচল, পায়জামার দুই মুহরীর প্রত্যেকটা ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গ (অংশ) বলে গণ্য হবে।
  • রাস্তা-ঘাটে বা বাজারে যে পানি বা কাদার ছিটা কাপড়ে কিংবা শরীরে লাগে তাতে স্পষ্টতঃ কোন নাপাক জিনিস দেখা গেলে তা নাপাক আর স্পষ্টতঃ কোন নাপাক জিনিস দেখা না গেলে নাপাক নয়। এটাই ফতওয়া; তবে মুত্তাকী লোকদের জন্য- যাদের হাটে বাজারে যাওয়ার অভ্যাস নয়, যারা সাধারণতঃ খুব পাক ছাফ থাকেন- তাদের শরীরে বা কাপড়ে এই পানি কাদা লাগলে তাতে কোন নাপাক জিনিস দেখা না গেলেও ধুয়ে নেয়া উচিৎ।
  • গাভী, বকরী দহন করার সময় যদি দুই একটি লেদা বা সামান্য গােবর দুধের মধ্যে পড়ে এবং সাথে সাথে তা বের করে ফেলা হয় তাহলে তা মাফ। কিন্তু যদি লেদা বা গোবর দুধের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে যায়, তাহলে সম্পূর্ণ দুধ নাপাক হয়ে যাবে, তা খাওয়া জায়েয হবে না।
  • উৎপন্ন ফসল মাড়াই করার সময় গরু অথবা অন্য কোন পশু তার উপর পেশাব করলে তা নাপাক হবে না। তবে মাড়াবার সময় ব্যতীত অন্য সময় পেশাব করলে নাপাক হয়ে যাবে।
  • কুকুর, শুকর, বানর এবং বাঘ, চিতাবাঘ প্রভৃতি হিংস্র প্রাণীর ঝুটা নাপাক। (খাদ্য বা পানীয় বস্তুতে মুখ লাগিয়ে ত্যাগ করলে তাকে ঝুটা বা উচ্ছিষ্ট বলা হয়)।
  • বিড়ালের ঝুটা পাক, তবে মাকরূহ। কোন পানিতে বিড়াল মুখ দিয়ে থাকলে তা দ্বারা উয়ু করবে না। অবশ্য যদি অন্য পানি না পাওয়া যায় তবে ঐ পানি দ্বারাই উযু করবে। আর দুধ বা তরকারী ইত্যাদি খাদ্য খাবারের মধ্যে মুখ দিয়ে থাকলে যদি মালিক অবস্থাপন্ন হয় তাহলে তা খাবে না- খাওয়া মাকরূহ হবে। যদি গরীব হয় তবে তার জন্য তা খাওয়া মাকরুহ নয়। তবে বিড়াল যদি সদ্য ইঁদুর ধরে এসে তৎক্ষণাৎ কোন পানি বা খাদ্য খাবারে মুখ দেয় তবে তা নাপাক হয়ে যাবে। আর যদি কিছুক্ষণ দেরী করে নিজের মুখ চেটে চুষে পরিষ্কার করে তারপর মুখ দেয় তখন নাপাক হবে না- এখন পূর্বের মাসআলার ন্যায় মাকরূহ হবে।

শিশুর আধুনিক, সুন্দর ও অর্থবহ নাম


  • যে সব প্রাণী ঘরে থাকে যেমন সাপ, বিচ্ছু, ইদুর, তেলাপোকা, টিকটিকি এবং মুরগি- যেগুলো সর্বত্র ছাড়া থাকে- এদের ঝুটা মাকরূহ তানযীহী। ইঁদুর যদি রুটির কিছু অংশ খেয়ে থাকে সেদিক দিয়ে কিছুটা ছিড়ে ফেলে অবশিষ্ট অংশ খাবে।
  • হালাল পশু ও হালাল পাখীর ঝুটা পাক। ঘােড়ার ঝুটাও পাক। যে কোন রকম পোষা পাখী যদি মরা না খায় এবং তার ঠোটে কোন রকম নাপাকী থাকার সন্দেহ না থাকে তবে তাদের ঝুটাও পাক ।
  • হালাল পশু ও হালাল জানোয়ারের ঝুটা পাক। তাদের ঘামও পাক। যাদের ঝুটা মাকরূহ তাদের ঘামও মাকরূহ।
  • মুসলমান অমুসলমান সব লোকের ঝুটা পাক, তবে কোন নাপাক বস্তু তার মুখে থাকা অবস্থায় পানি উচ্ছিষ্ট করলে ঐ পানি নাপাক হয়ে যাবে। জানা অবস্থায় বে-গানা পুরুষের ঝুটা খাদ্য ও পানি নারীর জন্য খাওয়া মাকরূহ। অনুরূপ বে-গানা নারীর ঝুটাও পুরুষের জন্য মাকরূহ। অবশ্য না জানা অবস্থায় খেয়ে ফেললে মাকরূহ হবে না।

উপসংহার

ইসলাম বাহ্যিক নাসাজাত থেকে পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি মনের পবিত্রতার ওপর খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ইসলামের ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাবগুলো যথাযথভাবে আদায়ের মাধ্যমে মনের পবিত্রতা অর্জন করা যায়। কোনো মুমিন যদি ইবাদাতের পাশাপাশি হালাল খাদ্য গ্রহণ করেন, হারাম থেকে বেঁচে থাকেন, কুরআন তিলাওয়াত করেন এবং সদা আল্লাহর যিকির করেন তবে তাঁর অন্তর পবিত্র থাকবে।



• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles