▶ প্রশ্ন: সাওম কাকে বলে? সাওম এর প্রকারভেদ ও সাওমের উপকারিতা বর্ণনা করুন। ▶ বিষয়: IST-602 : Study of Al-Fiqh ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)
সাওম কাকে বলে? সাওম এর প্রকারভেদ ও সাওমের উপকারিতা বর্ণনা করুন।
ভূমিকা
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি স্তর হলো সাওম বা রোজা। ইসলামী শরীয়াতে যতগুলো ইবাদাত রয়েছে তার সাওম অনন্য ও অন্যতম। অন্যান্য ইবাদাতের তুলনায় সাওমের মধ্যে অনন্য একটি বিশেষত্ব রয়েছে। যা মুসলিম মিল্লাতের তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠতম হাতিয়ার হিসেবে ফরজ করে দিয়েছেন। আত্মসংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মশুদ্ধি ও অধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনে সাওম বা রোজা একটি অপরিহার্য ইবাদত।
সাওম কাকে বলে
সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিয়ত করার মাধ্যমে পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার প্রক্রিয়াকে সাওম বলে।
অভিধানে صيام (সিয়াম)-এর সাধারণ অর্থ হল, বিরত থাকা। আর এ জন্যই কথা বলা থেকে যে বিরত থাকে -অর্থাৎ চুপ ও নিস্তব্ধ থাকে তাকে صائم (সায়েম) বলা হয়।
No posts
প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেকটি মানুষ অর্থাৎ নারী ও পুরুষ উভয়ের উপর রমজান মাসের একমাস রোজা বা সাওম পালন করা ফরজ।
সাওমের সংজ্ঞা: সাওম হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত যাওয়ার পর্যন্ত পুরো একটি দিন পানাহার এবং বিরত থাকার প্রক্রিয়া।
সাওম কত প্রকার ও কি কি
ইসলামী শরীয়াতে সাওম বা রোজা-কে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা-
- ফরয রোজা: প্রত্যেক বান্দার উপর ফরজ করা হয়েছে আদায় করার জন্য।
- ওয়াজিব রোজা: এটি ফরজ এর সমতুল্য একটি সাওম, যার মাধ্যমে ফরজের সমতুল্য নেকি অর্জন করা সম্ভব।
- মুস্তাহাব রোজা: এটির সুন্নতের সমতুল্য তবে সুন্নত নয়, এই সকল রোজা আমাদের প্রিয় নবী আদায় করতে পছন্দ করতেন।
- সুন্নত রোজা: সুন্নত রোজা হচ্ছে আমাদের প্রিয় নবীর সবচেয়ে পছন্দের রজাগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এই রোজাগুলো তিনি কখনো ছেড়ে দিতেন না।
- নফল রোজা: নফল রোজা আদায় না করলে কোন ধরনের গুনাহ লেখা হয় না এবং আদায় করলে নেকি লেখা হয়। এই সকল রোজার বিষয়ে কোন ফরজ, সুন্নত ও ওয়াজিবের বিধান নেই।
সাওমের উপকারিতা
সাওম বা রোজার ইহকালীন, পরকালীন, শারীরিক, মানসিক, স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ধরণের উপকারিতা রয়েছে। যা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
- রোজাদার ব্যক্তিকে দিনের বেলায় পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকতে হয়। যারা আল্লাহর এ নির্দেশ পালন করে তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ সওয়াব ও প্রতিদানের ঘোষণা। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘বান্দার সব নেক আমলের সওয়াব দানের জন্য একটি নিয়ম থাকে। নেক আমল অনুযায়ী সওয়াব দেওয়া হয়। তা দশ গুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু রোজার বিষয়টি সাধারণ নিয়মের উর্ধ্বে। আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার জন্যই পানাহার ত্যাগ করেছে, যৌন ক্রিয়া থেকে বিরত থেকেছে। সুতরাং আমি নিজে তাকে বিশেষ প্রতিদান ও সওয়াব দেব।’
- রোজা রাখলে জীবনের পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও বিশ্বাসের সঙ্গে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তার আগের (জীবনের) সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’
- রোজাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার দুর্গ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘রোযা হলো জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার শক্ত ঢাল এবং সুরক্ষিত বিশেষ দুর্গ।’
- রোজা কেয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য শাফায়াত করবে। রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমার জন্য এ বান্দা পানাহার ত্যাগ ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করেনি। সুতরাং এ বান্দাকে ক্ষমা করে দাও হে প্রভু! তখন আল্লাহ তাআলা রোজার সুপারিশ গ্রহণ করে নেবেন।
- রোজা মানুষের জন্য পশুত্বের স্বভাব থেকে বিরত থাকার অন্যতম প্রশিক্ষণ। কেননা পশুর বৈশিষ্ট্য হলো, যখন ইচ্ছে খায়, ইচ্ছে হলেই পান করে কিংবা যৌন কাজে জড়িয়ে পড়ে। আর মানুষ রমজানে রোজা রাখার মাধ্যমে পশুত্বের সে স্বভাব থেকে ফিরে নিজেদের মধ্যে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও পরিমিতবোধ তৈরি করে থাকে।
- রোজার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, তাকওয়া তথা মহান আল্লাহ তাআলা ভয় অর্জন করা। নিজেদের চরিত্রকে নিষ্কলুষ করে গড়ে তোলা। আল্লাহর হুকুম পালনে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হওয়া। শুধু তাই নয়, রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ কম খাওয়া, কম ঘুমানো ও কম কথা বলার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। আর তাতে মানুষের আত্মার অনেক উন্নতি হয় ও সৌন্দর্য বেড়ে যায়।
- সাওমের আত্মিক উপকারের মধ্যে রয়েছে এটি মানুষকে ধৈর্য শিক্ষা দেয় ও তাকে শক্তিশালী করে। ব্যক্তিকে আত্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা দেয় এবং এর ওপর চলতে সাহায্য করে। সাওমের মাধ্যমে মানুষ তাকওয়া অর্জন করে এবং সাওম মানুষকে তাকওয়া শিক্ষা দেয়।
- সাওমের সামাজিক উপকারের মধ্যে রয়েছে এটি জাতিকে শৃংখলা, একতা, ন্যায়পরায়নতা ও সমতা বজায় রাখতে অভ্যস্ত করে। মুমিনের মধ্যে ভালোবাসা, রহমত ও সচ্চরিত্র ইত্যাদি গুণ অর্জনে সাহায্য করে। এছাড়াও সমাজকে সব ধরণের অন্যায় ও বিশৃংখলা থেকে মুক্ত রাখে।
- সাওমের শারীরিক উপকারিতা হলো: সাওম মানুষের নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কার করে ও পাকস্থলী সুস্থ রাখে। শরীরকে অতিরিক্ত ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখে ও অতিরিক্ত ওজন কমায়।
- রোজা রেখে সতর্ক থাকতেও পরামর্শ দিয়েছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অন্য কারো মন্দ কথার জবাব না দিয়ে নিজেকে রোজাদার হিসেবে পরিচয় দেওয়ার মাধ্যমে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখবে, তখন দিনের বেলা সে যেন মুখে কোনো অশ্লীল কথা না বলে, হৈ চৈ না করে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তার সঙ্গে ঝগড়া করতে আসে কিংবা গালিগালাজ করে; তাহলে সে যেন শুধু এটুকু বলে চুপ থাকে যে, ‘আমি রোজাদার’, আমি রোজাদার।’
- রোজা যেহেতু আল্লাহর নির্দেশ ও ফরজ ইবাদত। সুতরাং তা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ও সক্ষম মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য পালন করা আবশ্যক। আর যখন মানুষ রোজার বিধান পালন করে ছোট বড় সব গুনাহ থেকে বিরত থাকবে, তখনই রোজার সব সুফলগুলো পাওয়া যাবে।
উপসংহার
সেহরি ও ইফতার রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমরা যদি এটিকে সুন্নত হিসেবে পালন করি তবে তা শুধু শারীরের পক্ষেই ভালো নয় বরং প্রভূত কল্যাণ ও উপকারিতা পাওয়ার কারণও হয়ে থাকে। তাই সময় মতো সেহরি খাওয়া যেমন সুন্নত তেমনি সময় মতো ইফতার করাও সুন্নত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই করতেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সেহরি খাও; কারণ এতে বরকত রয়েছে। আর খেজুর দিয়ে ইফতার করা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam •