▶ প্রশ্ন: চুরির শাস্তির বিধান বিস্তারিতভাবে বর্ণনা দিন। ▶ বিষয়: IST-601 : Study of Al Tafsir ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)
চুরির শাস্তির বিধান বিস্তারিতভাবে বর্ণনা দিন।
ভূমিকা
অন্যের মাল হেফাজতকৃত ও সংরক্ষিত স্থান থেকে বিনা অনুমতিতে গোপনে নিয়ে যাওয়াকে ইসলামের পরিভাষায় চুরি বলা হয়। চুরি করা বড় অন্যায়। ইসলাম চুরি করাকে হারাম বলেছে। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। কেউ যেন অন্যের ধন-সম্পদ চুরি করার সাহস না পায় এজন্য ইসলামে চোরের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইসলামে চুরির শাস্তির বিধান
কারোর ব্যাপারে তার নিজস্ব স্বীকারোক্তি অথবা গ্রহণযোগ্য যে কোন দু’জন সাক্ষীর মাধ্যমে চুরির বিষয়টি প্রমাণিত হলে অথচ চোরা বস্ত্তটি যথাযোগ্য হিফাযতে ছিলো এবং বস্ত্তটি তার মালিকানাধীন হওয়ার ব্যাপারে তার কোন সন্দেহ ছিলো না এমনকি বস্ত্তটি সোয়া চার গ্রাম স্বর্ণ অথবা পৌনে তিন গ্রাম রূপা সমমূল্য কিংবা এর চাইতেও বেশি ছিলো তখন তার ডান হাত কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলা হবে, আবার চুরি করলে তার বাম পা, আবার চুরি করলে তার বাম হাত এবং আবার চুরি করলে তার ডান পা কেটে ফেলা হবে। এটাই ইসলামী শরীয়াতের বিধান। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ তায়ালা সূরা মায়েদার ৩৮ নম্বর আয়াতে বলেন,
«وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْا أَيْدِيَهُمَا جَـزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِ، وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ
অর্থ: তোমরা চোর ও চুন্নির (ডান) হাত কেটে দিবে তাদের কৃতকর্মের (চৌর্যবৃত্তি) দরুন আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে শাস্তি সরূপ। বস্তত আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় ক্ষমতাবান মহান প্রজ্ঞাময়।
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, ‘সিকি দিনার তথা এক গ্রাম থেকে একটু বেশি স্বর্ণ (অথবা উহার সমমূল্য) এবং এর চাইতে বেশি চুরি করলেই কোন চোরের হাত কাটা হয়, নতুবা নয়।’
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক চোরের হাত কাটলেন একটি ঢাল চুরির জন্য যার মূল্য ছিলো তিন দিরহাম তথা প্রায় নয় গ্রাম রূপা কিংবা উহার সমমূল্য’।
কারোর চুরির ব্যাপারটি যদি বিচারকের নিকট না পৌঁছায় এবং সে এতে অভ্যস্তও নয় এমনকি সে উক্ত কাজ থেকে অতিসত্বর তাওবা করে নেক আমলে মনোনিবেশ করে তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবা কবুল করবেন। এমতাবস্থায় তার ব্যাপারটি বিচারকের নিকট না পৌঁছানোই উত্তম। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা মায়েদার ৩৯ নম্বর আয়াতে বলেন,
فَمَنْ تَابَ مِنْۢ بَعْدِ ظُلْمِهٖ وَاَصْلَحَ فَاِنَّ اللهَ یَتُوْبُ عَلَیْهِ ؕ اِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ ﴿۳۹﴾
অর্থ: অতঃপর যে ব্যক্তি নিজ সীমালংঘনমূলক কার্যক্রম থেকে তাওবা করবে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেবে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আর যদি কোন ব্যক্তি চুরিতে অভ্যস্ত হয় এবং সে চুরিতে কারোর হাতে ধরাও পড়েছে তখন তার ব্যাপারটি বিচারকের নিকট অবশ্যই জানানো প্রয়োজন। যাতে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে অপকর্মটি ছেড়ে দেয়।
কারোর নিকট কোন কিছু আমানত রাখার পর সে তা আত্মসাৎ করলে এবং কেউ কারোর কোন সম্পদ লুট অথবা ছিনতাই করে ধরা পড়লে চোর হিসেবে তার হাত খানা কাটা হবে না। পকেটমারের বিধানও তাই। তবে তারা কখনোই শাস্তি পাওয়া থেকে একেবারেই ছাড় পাবে না। এদের বিধান হত্যাকারীর বিধানাধীন উল্লেখ করা হয়েছে।
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, ‘আমানত আত্মসাৎকারী, লুটেরা এবং ছিনতাইকারীর হাতও কাটা হবে না।’
কেউ কারোর কোন ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেয়ে ধরা পড়লে তার হাতও কাটা হবে না। এমনকি তাকে কোন কিছুই দিতে হবে না। আর যদি সে কিছু সাথে নিয়ে যায় তখন তাকে জরিমানাও দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর যদি গাছ থেকে ফল পেড়ে নির্দিষ্ট কোথাও শুকাতে দেয়া হয় এবং সেখান থেকেই কেউ চুরি করলো তখন তা হাত কাটার সমপরিমাণ হলে তার হাতও কেটে দেয়া হবে।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর বিন্ ‘আস্ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে গাছের ফল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘কেউ প্রয়োজনের খাতিরে সাথে কিছু না নিয়ে (কারোর কোন ফলগাছের ফল) শুধু খেলে তাকে এর জরিমানা স্বরূপ কিছুই দিতে হবে না। আর যে শুধু খায়নি বরং সাথে কিছু নিয়ে গেলো তাকে ডবল জরিমানা দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর যে ফল শুকানোর জায়গা থেকে চুরি করলো এবং তা ছিলো একটি ঢালের সমমূল্য তখন তার হাত খানা কেটে দেয়া হবে। আর যে এর কম চুরি করলো তাকে ডবল জরিমানা দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে’।
অনেকেই রাষ্ট্রীয় তথা জাতীয় সম্পদ চুরি করতে একটুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, সবাই তো করে যাচ্ছে তাই আমিও করলাম। এতে অসুবিধে কোথায়? মূলত এ ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ, জাতীয় সম্পদ বলতে রাষ্ট্রের সকল মানুষের সম্পদকেই বুঝানো হয়। সুতরাং এর সাথে বহু লোকের অধিকারের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষভাবে তাতে রয়েছে গরিব, দু:খী, ইয়াতীম, অনাথ ও বিধবাদের অধিকার। তাই ব্যক্তি সম্পদের তুলনায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং এর চুরিও খুবই মারাত্মক।
আবার কেউ কেউ কোন কাফিরের সম্পদ চুরি করতে এতটুকুও দ্বিধা করে না। তাদের ধারণা, কাফিরের সম্পদ আত্মসাৎ করা একেবারেই জায়িয। মূলত এরূপ ধারণাও সম্পূর্ণটাই ভুল। বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে এমন সকল কাফিরের সম্পদই হালাল যাদের সঙ্গে এখনো মুসলিমদের যুদ্ধাবস্থা বিদ্যমান। মুসলিম এলাকায় বসবাসরত কাফির ও নিরাপত্তাপ্রাপ্ত কাফির এদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
উপসংহার
সব ধর্মেই চুরি একটি জঘন্যতম অপরাধ। সব ধর্মই চুরি নিষিদ্ধ করেছে। তবে ইসলাম দেখিয়েছে তা কিভাবে অর্জন করতে হয়। শয়তানের ধোঁকায় চুরি করে ফেললে তাকে অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট খাঁটি তাওবা করে চুরিত বস্ত্তটি উহার মালিককে ফেরৎ দিতে হবে। চাই সে তা প্রকাশ্যে দিক অথবা অপ্রকাশ্যে। সরাসরি দিক অথবা কোন মাধ্যম ধরে। যদি অনেক খোঁজাখুঁজির পরও উহার মালিক বা তার ওয়ারিশকে পাওয়া না যায় তা হলে সে যেন বস্ত্তটি অথবা বস্ত্তটির সমপরিমাণ টাকা মালিকের নামে সাদাকা করে দেয়। যার সাওয়াব মালিকই পাবে, সে নয়।
• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam •
[…] চুরির শাস্তির বিধান বিস্তারিতভাবে বর্ণনা দিন। ➔ উত্তর দেখুন […]