▶ প্রশ্ন: কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব আলোচনা করুন। ▶ বিষয়: IST-601 : Study of Al Tafsir ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)
কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে ন্যায়বিচারের গুরুত্ব আলোচনা করুন।
ভূমিকা
ইসলামে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামি বিধান মতে, বিচারক ও সাক্ষ্যদাতা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে চলবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থেকো। কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদের সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা ন্যায়বিচার করো—এটি আল্লাহভীতির নিকটতর। আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা করো নিশ্চয়ই আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন।’
ন্যায় বিচারের গুরুত্ব
ন্যায় বিচার স্বয়ং আল্লাহ তাআলারই অন্যতম একটি গুণ। তিনি জমিনে তার প্রতিনিধিকেও ন্যায় বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের সূরা সোয়াদ এর ২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
یٰدَاوٗدُ اِنَّا جَعَلْنٰکَ خَلِیْفَۃً فِی الْاَرْضِ فَاحْكُمْ بَیْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوٰی فَیُضِلَّکَ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ ؕ اِنَّ الَّذِیْنَ یَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِیْدٌۢ بِمَا نَسُوْا یَوْمَ الْحِسَابِ ﴿۠۲۶﴾
অর্থ: হে দাউদ! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছি। সুতরাং তুমি মানুষের মধ্যে যথাযথভাবে বিচার করো।
ন্যায়নিষ্ঠ বিচারকের অনন্য মর্যাদা দান করেছে ইসলাম। কেননা ন্যায়নিষ্ঠ বিচারক সমাজে অবিচারের পরিবর্তে সুবিচার, অপরাধের পরিবর্তে শৃঙ্খলা, অন্যায়ের পরিবর্তে ন্যায়, মন্দের পরিবর্তে ভালো প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তুমি বিচার করো, তখন তাদের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে ফায়সালা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়নিষ্ঠদের ভালোবাসেন।’
হাদিসে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিচারকাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের যথাযথ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের পুরস্কারের ও ঘোষণা রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন—
‘কোনো বিচারক যখন বিচার করে এবং বিচারকাজে (সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে) যথাযথ প্রচেষ্টা চালায় আর তার রায় সঠিক হয়, তবে তার জন্য দুটি নেকি। আর বিচারক যখন বিচার করে এবং বিচারকাজে যথাযথ প্রচেষ্টা চালায় (ইজতিহাদ করে) আর তার রায় ভুল হয়, তবে তার জন্য একটি নেকি।’
উক্ত হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, যিনি বিচারকাজে নিযুক্ত হবেন তিনি বিধান উদ্ভাবন, সত্য-মিথ্যা যাচাইকরণ এবং দলিল-প্রমাণ মূল্যায়নের যোগ্যতা রাখেন। আল্লাহ তায়ালা সুরা হুজরাতের ৬ নম্বর আয়াতে বলেন, “হে মুমিনরা! যখন তোমাদের কাছে কোনো ফাসিক ব্যক্তি সংবাদ নিয়ে আসে, তোমরা তা যাচাই করো।”
মূর্খ ও অযোগ্যদের বিচারক পদ গ্রহণ করা বৈধ নয়। বিশেষত বিচারকাজে নিযুক্ত ব্যক্তি অবশ্যই কোরআন, সুন্নাহ, ইসলামি আইনের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে পূর্ববর্তী আলেমদের মতামত এবং কিয়াস (অন্য বিধানের আলোকে বিধান উদ্ভাবন) করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করা জরুরি।
ইসলাম যেমন বিচারকের জন্য পুরস্কার ও মর্যাদা ঘোষণা করেছে, তেমনি বিচারকদের সতর্কও করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যাকে মানুষের মধ্যে বিচারক বানানো হলো, তাকে ছুরি ছাড়া জবাই করা হলো।’
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার বিচারক জান্নাতি আর অপর দুই প্রকার বিচারক জাহান্নামি। জান্নাতি হলো সেই বিচারক, যে সত্যকে জেনে-বুঝে সে অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করে। আর যে বিচারক সত্যকে জানার পর বিচারে জুলুম করে সে জাহান্নামি এবং যে বিচারক অজ্ঞতাবশত ফায়সালা দেয় সেও জাহান্নামি।’
মনে রাখতে হবে, একটি সুন্দর সমাজের মেরুদণ্ড শক্তিশালী থাকে ন্যায় বিচারের ওপর। আর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে আল্লাহর বিধান। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি আমার রাসুলদেরকে নিদর্শনাদি দিয়ে প্রেরণ করেছি এবং তাদের সঙ্গে নাজিল করেছি কিতাব ও মাপার পাল্লা, যেন মানুষ ন্যায় বিচার কায়েম করতে পারে।’
সূরা হুজরাতের ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘যদি মুসলমানদের দুদল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি ওদের একদল অন্য দলের উপর চড়াও হয় তাহলে তোমরা সকলে সেই চড়াওকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে, তবে উভয় দলের মাঝে ন্যায়ের সঙ্গে বিচার করে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সুবিচারকারীদেরকে ভালোবাসেন।’
নবী কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সাত শ্রেণির লোক হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে। প্রথম শ্রেণি হচ্ছেন ন্যায়পরায়ণ শাসক।
ন্যায়বিচার যেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলোও জটিল। কোরআনের ভাষায় মৌলিকভাবে দুটি কারণে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা থেকে বিচ্যুত হয়। সেগুলো হলো- স্বজনপ্রীতি ও ভালোবাসা।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতে বলেন, “হে ইমানদারগণ! তোমরা ইনসাফের পূর্ণ প্রতিষ্ঠাকারী, আল্লাহর জন্য সাক্ষ্য প্রদানকারী হয়ে যাও, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা (তোমাদের) মাতাপিতা ও আত্মীয়স্বজনের বিপক্ষে হয়। অতএব তোমরা ইনসাফ করার বিষয়ে অন্তরের খেয়াল খুশির অনুসরণ করো না।”
উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহর জন্য সাক্ষ্যদানকারী ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যদি নিজেদের, পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়র বিপক্ষে গিয়েও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হয় তাও করতে হবে। মুফাসসিরগণ বলেন, একথা বলার কারণ হচ্ছে, মানুষকে সতর্ক করা। কারণ, এদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়েই মানুষ ইনসাফের পথ থেকে বিচ্যুত হয়। এখানে কিছু শ্রেণির কথা উল্লেখ করে মূলত পারস্পরিক সম্পর্কের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সম্পর্কের কারণে মানুষ ইনসাফের পথ থেকে সরে আসে, যাকে স্বজনপ্রীতি বলা হয়।
উপসংহার
বর্তমানে স্বজনপ্রীতি মহামারির রূপ নিয়েছে। আদালত, প্রশাসন, রাজনীতি ও সামাজিক সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে মানুষ নিজের লোকদেরকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে মানুষ ইনসাফ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদের সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা সুবিচার করো, এটাই তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী।’ আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুবিচার করার তাওফিক দান করুন।
• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam •