▶ প্রশ্ন: ইহরাম কী? ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজগুলো উল্লেখ করুন। ▶ বিষয়: IST-601 : Study of Al Tafsir ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)
ভুমিকা
ইসলামের মূল পাঁচটি কাজের মধ্যে হজ্জ পালন করা অন্যতম একটি। হজ্জ পালন করার জন্য বিভিন্ন ধরণের নিয়ম ও আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। ইহরাম বিষয় হজ্জের আনুষ্ঠানিকতার একটি। আভিধানিক অর্থে ইহরাম অর্থ বারণ করা। শরীয়াতে ইহরাম হজ্বের একটি আমলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে হজ্বকর্মে প্রবেশের নিয়ত করা কে নির্দেশ করে।
ইহরাম কী
ইহরাম শব্দের আভিধানিক অর্থ নিষিদ্ধ করা। ইহরাম বাঁধার মধ্য দিয়ে হজ্জ ও উমরা পালনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। হজ্জ ও উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি যখন হজ্জ বা উমরা কিংবা উভয়টি পালনের উদ্দেশ্যে নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করে, তখন তার ওপর কতিপয় হালাল ও জায়েয বস্তুও হারাম হয়ে যায়। এ কারণেই এ প্রক্রিয়াটিকে ইহরাম বলা হয়।
শুধু হজ্জ বা উমরার সংকল্প করলেই কেউ মুহরিম হবে না। যদিও সে নিজ দেশ থেকে সফর শুরুর সময় হজের সংকল্প করে। তেমনি শুধু সুগন্ধি ত্যাগ অথবা তালবিয়া পাঠ আরম্ভ করলেই মুহরিম হবে না। এ জন্য বরং তাকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করার নিয়ত করতে হবে। তাই হজ ও উমরা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি গোসল ও পবিত্রতা অর্জন সম্পন্ন করে ইহরামের কাপড় পরিধান করবেন, অতঃপর হজ অথবা উমরা কিংবা উভয়টি শুরুর নিয়ত করবেন।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহের বিষয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- মাথার চুল মুণ্ডন করা: ইহরাম অবস্থায় থাকা ব্যক্তির জন্য শরীরের কোন চুল দূর করা জায়েয নয়। চুল উঠানো বা কাটা, হাত ও পায়ের নখ কাটা ইত্যাদি কাজ ইহরাম অবস্থায় নিষেধ। তবে শরীর চুলকানোর সময় ভুলে বা অজ্ঞাতসারে যদি কিছু চুল পড়ে যায় তাতে অসুবিধা নেই।
- সুগন্ধি ব্যবহার করা: ইহরাম বাঁধার পর সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। ইহরাম অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে সুগন্ধি নাকে টানা বা আরবী কফীতে (ক্বাহ্ওয়া) জা’ফরান মিশানো, যা কাহ্ওয়ার সাথে বা ঘ্রাণে প্রভাব বিস্তার করে, কিংবা চায়ে গোলাপজল বা এমন কিছু মিশানো যাতে সুগন্ধি হয় জয়েয নয়। তেমনি সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করা জায়েয নয়। তবে ইহরামের পূর্বে যে সুগন্ধি ব্যবহার করা হয় তা ইহরাম করার পরে অবশিষ্ট থাকলে তাতে কোন ক্ষতি নেই। কারণ, আয়িশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সিঁথিতে তাঁর ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধির চমক দেখতে পেতাম।
- স্ত্রী সহবাস: ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস, যৌনক্রিয়া বা উত্তেজনার সাথে স্ত্রীর দিকে তাকানো, তাকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা, মর্দন ও আলিঙ্গন করা বা এ জাতীয় কথা বলা নিষেধ। হাজ্জ হয় কয়েকটি নির্দিষ্ট মাসে। এ মাসগুলোতে যে কেউ হাজ্জ করার মনস্থঃ করবে, তার জন্য হাজ্জের মধ্যে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়। স্ত্রী সম্ভোগ-এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, সহবাস ও তার পূর্ব কার্যাবলী, যেমন চুম্বন দেয়া, খোঁচা দেয়া, কামভাব নিয়ে রসিকতা করা। আর মহিলা যদি ইহরাম অবস্থায় থাকে তাহলে তার জন্য স্বামীকে এ ধরণের সুযোগ দেয়াও জায়েয নয়।
- বিবাহ করা বা দেয়া: ইহরাম অবস্থায় নিজের অথবা অপরের বিবাহ বন্ধন করা নিষেধ। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মুহরিম ব্যক্তি (ইহরাম অবস্থায়) নিজে বিবাহ করবে না, কোন মেয়ের অভিভাবক বা উকীল হয়ে বিবাহও দিবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিবে না। অনুরূপ কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠানোও জায়েয নয়।
- শিকার করা: শিকারী পশু হচ্ছে এমন স্থলচর প্রাণী যা খাওয়া হালাল কিন্তু তা সাধারণতঃ মানুষের পোষ মানে না। যেমন, হরীণ, খরগোশ এবং পায়রা। ইহরাম অবস্থায় এসব স্থলজ প্রাণী শিকার করা বা হত্যা করা নিষিদ্ধ। হারামের সীমানার ভিতর প্রাণী শিকার করা ইহরাম বিহীন লোকদের জন্যও নিষেধ।
- সেলাইযুক্ত কাপড় পরা: ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত করা পরিধান করা যাবে না। তবে ঘড়ি, আংটি, চশমা, কানের শ্রবণ যন্ত্র, বেল্ট, মানিব্যাগ ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে। তবে মহিলারা সেলাইযুক্ত কাপড় পরতে পারবে। ইহরাম অবস্থায় সেলাইকৃত কাপড় পরিধান করা।
- মাথা ঢেকে রাখা: মাথা ঢেকে রাখা নিষেধ। মুখও ঢাকবে না। ইহরামের কাপড়, পাগড়ী, টুপি তোয়ালে, গামছা বা অন্য কোন কাপড় দিয়েও মাথা ঢেকে রাখা যাবে না। তবে ছাতা, তাবু, গাড়ীর বা ঘরের ছাদের ছায়ার নীচে বসতে পারবেন। ভুলে বা অজ্ঞাতসারে যদি মাথা ঢেকে ফেলে তবে স্মরণ হওয়া মাত্র তা সরিয়ে ফেলতে হবে। মেয়েরা মাথা ঢেকে রাখতে পারবে।
- মহিলাদের মোজা পরিধান: মহিলারা হাত মোজা পরবে না। নিকাব দিয়ে মুখ ঢাকবে না। পর্দার প্রয়োজন হলে উড়না দিয়ে ঢাকবে।
- ঝগড়া-ফাসাদ: ইহরাম অবস্থায় কোন ঝগড়া-ঝাটি করা যাবে না।
- গাছ কাটা: ইহরাম অবস্থায় থাকুক বা না থাকুক মক্কা শরীফের হারামের সীমানার ভিতরে কেউ এমনিতেই গজিয়ে উঠা কোন গাছ বা সবুজ বৃক্ষলতা কাটতে পারবে না।
উপসংহার
হজ আল্লাহ তাআলা কর্তৃক অকাট্য দলিলের ভিত্তিতে জারিকৃত ফরজ ইবাদত। হজ ও ওমরার ইবাদতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রথম রুকনই হলো ইহরাম। ইহরাম সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই কোনো ধারণা নেই। অথচ হজ ও ওমরা পালনে ইহরাম বাঁধা হলো ফরজ।
• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam •