▶ প্রশ্ন: তাকওয়া কাকে বলে এর গুরুত্ব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে আলোচনা করুন। ▶ বিষয়: IST-601 : Study of Al Tafsir ▶ কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (ফাইনাল)
তাকওয়া কাকে বলে এর গুরুত্ব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে আলোচনা করুন।
ভূমিকা
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষের হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা মানুষকে হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ, ভাল-মন্দ বিচার করে চলার জন্য তাকিদ দিয়েছেন। অন্যায়, অবৈধ, অবিচার ও অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকর জন্য খোদাভীতির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিহার্য। একজন মানুষকে সৎ, যোগ্য ও আদর্শবান ব্যক্তি হতে হলে তাক্বওয়ার বিকল্প নেই। তাকওয়া হচ্ছে সব ভালো কাজের উৎস, পুণ্য কাজের জন্য পথের দিশারি। তাকওয়া হচ্ছে ভালো কাজের মাধ্যমে আল্লাহর আজাব থেকে বেঁচে থাকা। আগের ও পরের সব উম্মতকে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাকওয়া কি
তাক্বওয়া আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল ভয় করা, বিরত থাকা, সংকোচ বোধ করা, হারাম থেকে বিরত থাকা, (বিশেষ অর্থে) হালাল ও মুবাহ বস্তু থেকে বিরত থাকা, আল্লাহভীতি, বেছে চলা, আত্নশুদ্ধি, রক্ষা করা, সতর্কতা অবলম্বন করা ইত্যাদি।
তাকওয়ার গুরুত্ব
কোরআনের পরতে পরতে তাকওয়া অর্জনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তাকওয়ার সবচেয়ে ভালো সংজ্ঞা দিয়েছেন বিশিষ্ট সাহাবি উবাই ইবনে কাব (রা.)। একবার উমর (রা.) উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তাকওয়া কী? উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আপনি কি কখনো কাঁটা বিছানো পথে হেঁটেছেন? উমর (রা.) বলেন, হ্যাঁ। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, (কাঁটা বিছানো পথে) আপনি কিভাবে হেঁটেছেন? উমর (রা.) বলেন, খুব সাবধানে, কষ্ট সহ্য করে হেঁটেছি, যাতে আমার শরীরে কাঁটা বিঁধে না যায়। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, এটাই হচ্ছে তাকওয়া। কাঁটাযুক্ত পথে কাঁটা থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যেভাবে সতর্ক হয়ে চলে, ঠিক সেভাবে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন সেগুলো থেকে বেঁচে থাকা এবং আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য আল্লাহ যা ভালোবাসেন, সেই অনুযায়ী আমল করার নাম তাকওয়া।
তাকওয়াবানদের নিকট সত্য-মিথ্যার পরিচয় সুস্পষ্ট
যাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় প্রবল, তাদের নিকট আল্লাহর আদেশ-নিষেধ তথা জায়িয-নাজায়িয, হালাল-হারাম, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদি বিষয়গুলোর অতি সুক্ষ সুক্ষ প্রার্থক্যগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। দুনিয়াদাররা কিন্তু তা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র আল কুরআনুল কারীমের সূরা আনফাল এর ২৯ নম্বর আয়াতে বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا ﴿الأنفال: ٢٩
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে সত্য-মিথ্যার প্রার্থক্য নির্ণয়কারী একটি মানদণ্ড দান করবেন।
উত্তম ও অধমের মাপকাঠি হল তাকওয়া
মানুষের কাছে মানুষের সম্মান ও সুখ্যাতি অর্থ-বিত্ত, ক্ষমতা, পদমর্যাদা ইত্যাদি দ্বারা ছড়িয়ে পরলেও আল্লাহ তা‘আলার নিকট সম্মান ও মর্যাদার একমাত্র মানদন্ড হল তাক্বওয়া বা খোদাভীতি। আল্লাহ তা‘আলা সূরা হুজরাতের ১৩ নম্বর আয়াতে বলেন, “নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার নিকট সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাক্বওয়াবান।’’
No posts
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ যর (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুমি সাদা বা কাল এর ভিত্তিতে উত্তম হতে পারবে না, যদি তাকওয়ার দিক থেকে তুমি এগিয়ে না থাক।’’
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে একবার জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশী সম্মানিত। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে বেশি পরহিযগার সে বেশি সম্মানিত।
তাকওয়া উত্তম পাথেয়
আল্লাহ্ তা‘আলা সূরা বাকারার ১৯৭ নম্বর আয়াতে বলেন, “তোমরা পাথেয় সঞ্চয় কর, আর উত্তম পাথেয় হল তাকওয়া। অতঃএব ওহে জ্ঞানী ব্যক্তিরা! তোমরা আমাকেই ভয় কর।’’
জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আগমন করে আরয করল: ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমি সফরে যেতে ইচ্ছা করেছি। আমাকে কিছু পাথেয় দান করুন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে পাথেয় হিসেবে তাকওয়া বা পরহিযগারী দান করুন।
Click to see Ad
তাকওয়ার স্তর
তাকওয়ার তিনটি স্তর
- অন্তর ও সব অঙ্গ গুনাহ ও হারাম কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখা।
- মাকরুহ বা ঘৃণিত কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।
- অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।
তাকওয়ার উপকারিতা
- আল্লাহর সাহায্য ও নৈকট্য পাওয়া যায়।
- শেষ পরিণাম ভালো হয়।
- উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়।
- সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
- দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জিত হয়।
- উপকারী ইলম অর্জনে সহায়ক হয়।
- সত্য ও বিশুদ্ধ বিষয় পেতে সহায়ক হয়।
- অফুরন্ত রিজিক পাওয়া যায়।
- জান্নাত পাওয়া যায়।
- জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
উপসংহার
আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ব্যাপারে অবগত আছেন। আমাদের অপরাধগুলো পৃথিবীর কেউ দেখুক আর না দেখুক, আল্লাহ তায়ালা কিন্তু সব ঠিকই দেখছেন। পৃথিবীর অন্য কোনো শক্তি নয়। শুধুমাত্র এই অনুভূতিটাই আপনাকে হারাম কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। এই অনুভূতিটা থাকার কারণেই সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আইয়ামে জাহেলিয়াতের সময়েও সোঁনার মানুষে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা আল্লাহকে ভয় করে সব ধরনের গুনাহর কাজ থেকে বিরত থেকেছেন।
• IST-601 : Study of al Tafsir (Tafsir Ibn Kathir : Surah-al-Maieda verse 1 to 77) • IST-602 : Study of al-Fiqh • IST-603 : Philosophy of religion and Comparative Religion • IST-604 : History of Sufism in Bangladesh and some prominent • IST-605 : Trade, Commerce and Business Studies in Islam •