Friday, November 22, 2024

মুসা আল খাওয়ারিজমী কে ছিলেন৷ গণিত শাস্ত্রে তার অবদান মূল্যায়ন করুন৷

প্রশ্ন: মুসা আল খাওয়ারিজমী কে ছিলেন৷ গণিত শাস্ত্রে তার অবদান মূল্যায়ন করুন৷ বিষয়: IST-512 : Muslim Contribution to Science and Technology কোর্স: এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ (১ম পর্ব)



ভূমিকা

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান (complete code of life)। ইসলামের উৎস কুরআন ও হাদীসকে যতদিন মুসলিমরা আকঁড়ে ধরেছে, ততদিন তাদের মর্যাদা পৃথিবীর বুকে উজ্জল ছিলো। কুরআন ও হাদীসকে ভুলার সাথে সাথে তাদের মর্যাদা ও দাপটও হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে কুরআন ও সহীহ হাদীসকে ছেড়ে দেয়ায় তারা আজ অত্যাচারিত, অবহেলিত। অথচ পাশ্চাত্যের এই জ্ঞান বিজ্ঞানের এই রূপের পিছনে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান অপরিসীম। কিন্ত আমরা মুসলিম হিসেব দাবী করলেও মুসলিম বিজ্ঞানীদের নাম-পরিচয় জানি না। বীজগণিতের জনক আল-খোয়ারিজমী, রসায়নের জনক জাবির ইবনে হাইয়্যান, চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ইবনে সীনা’র নাম আমাদের অনেকেরই অজানা।

মুসা আল খাওয়ারিজমী কে ছিলেন৷ গণিত শাস্ত্রে তার অবদান মূল্যায়ন করুন৷

মুসা আল খাওয়ারিজমীর পরিচয়

আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি (Abu Abdullah Muhammad ibn Musa al- Khwarizmi) (৭৮০-৮৫০) মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম একজন। একই সাথে তিনি গণিতবিদ, ভূগোলবিদ এবং জ্যোতির্বিদও ছিলেন।

তিনি তার আল-জাবের ওয়াল মুকাবলায় আল-খারেজমি দ্বারা রৈখিক এবং দ্বিঘাত সমীকরণের প্রথম পদ্ধতিগত সমাধান প্রবর্তন করেন। বর্গক্ষেত্রের সাহায্যে দ্বিঘাত সমীকরণ সমাধান করা ছিল বীজগণিতে তার প্রধান কৃতিত্ব যার জন্য তিনি জ্যামিতিক প্রমাণ প্রদান করেছিলেন। তিনি বীজগণিতকে একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে সর্বপ্রথম প্রবর্তন করেন এবং সমীকরণ সমাধানের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন, তাই আল-খারেজমিকে বীজগণিতের জনক বা প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। বীজগণিত (Algebra) শব্দটি এসেছে তার বই আল জিবার ওয়াল মুকাবিলার শিরোনাম থেকে। এটির নাম Guarismo (স্প্যানিশ) এবং Algarismo (পর্তুগিজ) উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে, উভয়ের অর্থ অঙ্ক।

জ্যোতির্বিজ্ঞান ও গণিতের প্রধান কাজগুলি লেখা যা হিন্দু-আরবি সংখ্যাগুলি এবং ইউরোপীয়ান পণ্ডিতদের কাছে বীজগাণির ধারণা। তার নামের Latinized সংস্করণ আমাদের শব্দ “অ্যালগরিদম,” দিয়েছেন এবং তার সবচেয়ে বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ শিরোনাম আমাদের শব্দ “বীজগণিত।”

মুহম্মদ ইবনে মুসা আল-খারিজিমি 780 খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। প্রায় সময় হরুন আল-রশিদ পঞ্চম আব্বাসীয় খলিফা হন। হারুনের পুত্র এবং উত্তরাধিকারী আল মামুন, “হাউস অব উইসডম” (দারুল হিকমা) নামে পরিচিত বিজ্ঞান বিভাগের একটি একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল এবং বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক চুক্তিগুলি অনুবাদ করা হয়েছিল, বিশেষত পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের গ্রিক রচনাগুলি আল Khwarizmi উইসডম হাউস একটি পণ্ডিত হয়ে ওঠে।

শেখার এই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে, আল-খারিজিমি বীজগণিত, জ্যামিতি এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন এবং বিষয়গুলিতে প্রভাবশালী গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। তিনি আল-মামুনের বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন বলে মনে হয়, যাকে তিনি তাঁর দুইটি বই উৎসর্গ করেছেন।

পাটিগণিত বিষয়ে তিনি একটি বই রচনা করেন যা পরে ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতকে হিন্দুগণিতবিদগণ দশমিক পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।এই পদ্ধতিকে খোয়ারিজমীই প্রথম ইসলামী জগতে নিয়ে আসেন। তার রচিত The Book of Addition and Substraction According to the Hindu Calculation (যোগ বিয়োগের ভারতীয় পদ্ধতি) তারই উদাহরণ।

গ্রীক ও ভারতীয় হিন্দু গণিতবিদদের মধে গণিতের যে অসূম্পূর্ণতা ছিল, সে অসম্পূর্ণতা পূরণ করেছিলেন আল-খাওয়ারিজমী।তার গণিতের বিষয়-আশায় উপস্থাপনা ছিল অসাধারণ ও অনন্য। আরবীয়রা ভারতীয়দের নিকট থেকে সংখ্যা লিখন প্রণালী শিক্ষা লাভ করেন। মুসলমান বৈজ্ঞানিকেরা নিজেরা এটিকে সংশোধন করেন। খাওয়ারিজমী শূণ লিখন প্রণালী নিজেরা উদ্ভাবন করেন।খাওয়ারিজমী এ শূণ্য লিখন প্রণালীকে সর্বশেষ রূপদান করেন।

এই শূণ্য ব্যবহার করার ফলে গণিত এসে দাড়ালো পরিপূর্ণ প্রেক্ষিতে। তিনি এখানেই থামলেন না। তার মগজে ঝড় বয়ে গেলো। এই শূণ্য ব্যবহার গণিতে নিয়ে আসলো এক অসাধারণ বিপ্লব। ভারতীয় পরিসংখ্যান ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার সময়ে তিনি আবিষ্কার করেন ভগ্নাংশের বিস্ময়কর দিক।

তার এই কাজগুলো পরিচিত ছিলো আরব্য-কর্ম হিসেবে। শিগগিরই তা কর্ম-অবদানগুলো পৌছে গেলো ইউরোপে। ইউরোপীয়রা দ্রুত তার বই ও লেখাগুলো অনুবাদ করে নেয়। সেই সাথে তিনি ইউরোপেও বিখ্যাত হয়ে যান।তিনি দশমিক ব্যবস্থাকে এক নতুন দিগন্তে পৌছে দিতে চাইলেন। এক্ষেত্রে তার অবদান প্রশংসনীয়।

গণিতের আরেকটি শাখা হলো ত্রিকোণমিতি। সমকোণী ত্রিভুজের তিন কোণ আর বাহু নিয়ে ত্রিকাণমিতির কারবার। আল-খাওয়ারিজমী উদ্ভাবন করেন ত্রিকোণমিতির বিস্তারিত উপাত্ত। তিনিই কনিক সেকশনে”-এর গাণিতিক ধরণের আধুনিকায়ন করেন।


এরপর তিনি হাত বাড়িয়ে দেন ক্যালকুলাসে। তিনি ক্যালকুলাসের উন্নয়ন ঘটি এর আধুনিকায়ন করেন। ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস হচ্ছে এর একটি শাখা। এটি নিয়ে তিনি কাজ করা শুরু করেছিলেন।

তিনি প্রথম বীজগণিতের সমীকরণের জ্যামিতিক সমাধান নির্ণয় করেন। জ্যামিতির ক্ষেত্রে আয়ত, বর্গ, ত্রিভুজ প্রভৃতি জ্যামিতিক ক্ষেত্রগুলোর যে ধারণা দিয়েছিলেন তা হুবহু আজও একই রকম রয়েছে। তিনিই কনিক সেকশনের গাণিতিক ধরণের আধুনিকায়ন করেন।


উপসংহার

গণিত ছাড়াও আল-খারিজিমি বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি আল মামুনের জন্য একটি বিশ্ব মানচিত্র তৈরি করতে সাহায্য করেন এবং পৃথিবীর পরিধি খুঁজে পাওয়ার জন্য একটি প্রকল্পে অংশ নেন, যেখানে তিনি সিন্জারের সমতলভূমির একটি মৃত্তিকা দৈর্ঘ্যের পরিমাপ করেন। তাঁর বই কিতাব সূত আল-আরা টলেমি ভূগোলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি বিশ্বের 2400টি স্থানের স্থানাঙ্ক প্রদান করেছে, যার মধ্যে রয়েছে শহর, দ্বীপ, নদী, সমুদ্র, পর্বতমালা এবং সাধারণ ভৌগোলিক অঞ্চল।



সম্ভাব্য প্রশ্ন এবং উত্তরসমূহ (এমএ ইন ইসলামিক স্টাডিজ)

• IST-507 : Study of Al-Hadith (Al-Mishkat Al-Masabih: Al-Iman, AlILM and Al-Salat (Selected Hadith) • IST-508 : Principles and History of Hadith literature • IST-509 : Muslim Personal Law and Law of Inheritance in Islam • IST-510 : Banking and Insurance in Islam • IST-511 : Study of Religions (Islam, Buddhism, Hinduism, Judaism, Christianity) • IST-512 : Muslim Contribution to science and technology

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles