উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা
এক বাদশাহ দ্বীনী বিষয় নিয়ে তার দরবারে নাসির গাজীর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি একটি শিশুকে নিয়ে নাসির গাজীর খিদমতে আরজ করলো-হুজুর! আমার এই ছেলেটির পেট ফেঁপেছে, ব্যথায় খুব কষ্ট পাচ্ছে। দয়া করে কিছু করুন, যেন আল্লাহ পাক আরোগ্য দান করেন। নাসির গাজী ‘কুরআনের কয়েকটি আয়াত পড়ে ছেলেটির পেট লক্ষ্য করে ফুঁক দিলেন এবং বললেন- “যাও, নিয়ে যাও। ইনশাআল্লাহ ভাল হয়ে যাবে।”
বাদশাহ বিষয়টি লক্ষ করলেন। কিন্তু সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি নাসির গাজীকে বললেন- গাজী সাহেব! আমি আপনাকে জ্ঞানী মনে করতাম। কিন্তু আপনি যা করলেন, তার কোন যুক্তি দেখিনা। শিশুটি যন্ত্রণায় কাতর, অথচ তার চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা না করে শুধুমাত্র একটি ফুঁক দিলেন। এই ফুঁতে কি হবে?
নাসির গাজী বললেন- বাদশাহ! আপনার লক্ষণ বেশী ভাল নয়। দেশের লোক আপনার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছে। তারা আপনার বদনাম করে বেড়াচ্ছে। জনগণের অসন্তুষ্টি মঙ্গলজনক হয় না।
এ কথা শুনে বাদশাহর মুখমণ্ডল কালো হয়ে একেবারে যেন নুয়ে পড়ল। নাসির গাজী এরপর বললেন, বাদশাহ নামদার! তবে দুষ্ট প্রকৃতির লোকেরা শুধু বদনাম ছড়ায়। কারণ, দুষ্টের দমনের জন্য আপনার কঠোরতায় তারা সন্তুষ্ট হতে পারে না। এতে প্রকৃতপক্ষে আপনার মর্যাদাই বৃদ্ধি পাবে।
তখন বাদশাহর মুখ হাস্যোজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আনন্দে মুখে কথায় খৈ ফুটতে লাগলো। নাসির গাজী এরপর বললেন- কিন্তু দুষ্ট লোকের সংখ্যাই অধিক। এরা বিদ্রোহ করলে আপনার ক্ষমতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
একথা শুনে বাদশাহর মুখ লাল হয়ে গেল। ক্রোধে তিনি ফেটে পড়লেন। আসন ছেড়ে উঠে দুই হাতের আস্তিন গুটাতে গুটাতে বললেন, কে আমার সঙ্গে বিদ্রোহ করবে? আমার সৈন্য আছে, অস্ত্র আছে-বিদ্রোহ কিভাবে দমন করতে হয়, তাও আমার জানা আছে।
নাসির গাজী তখন বললেন, দুষ্ট লোকেরা সংখ্যায় অধিক হলেও তাদের সাহস কম। বিদ্রোহ করার মত মনোবল তাদের নেই। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আপনার মত ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ ইনশাআল্লাহ শান্তিতে থাকবেন এবং দেশেও শান্তি বিরাজ করবে।
এই কথা শুনে বাদশাহ শান্ত সুবোধ ছেলের মত আসনে বসে পড়লেন। তার চেহারায় প্রশান্তির ভাব ফিরে এলো। যেন তার কিছুই হয়নি।
এবার নাসির গাজী বললেন- “দেখুন বাদশাহ! আমি আপনাকে চারটি কথা বলেছি। এর দ্বারা আপনার অবস্থা চার বার পরিবর্তন হয়েছে। প্রথম কথায় লজ্জায়-অপমানে আপনার চেহারা কালো হয়ে পড়লো। দ্বিতীয় কথায় আপনি আনন্দিত হলেন। তৃতীয় কথায় আপনার মুখমন্ডল ক্রোধে লাল হয়ে উঠলো, আপনি আসন ছেড়ে উঠে ছটফট করতে লাগলেন। চতুর্থ কথায় আপনার মুখমন্ডলে শান্ত ভাব ফিরে এলো। আপনি নিশ্চিন্তে আসন গ্রহণ কররেন।”
নাসির গাজী বলতে লাগলেন, “দেখুন, আমি আল্লাহ পাকের এক নগন্য বান্দা। আমার কথা যদি আপনার উপর এতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তাহলে মহান আল্লাহর কথায় কি কোন প্রভাব নেই? তাঁর পবিত্র বাণীর প্রভাবে কি পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যেতে পারেনা? তাঁর কথা কি মানুষের দেহের উপর প্রভাব বিস্তার করবে না? তবে কেন আপনার এই ধারণা জন্মালো যে, শিশুটির দেহের উপর প্রয়োগ করা পবিত্র কুরআনের আয়াত তার উপর কোন প্রতিক্রিয়া করবে না, তার রোগের উপশম হবে না?’ নাসির গাজীর কথা শুনে বাদশাহ এবার নিজের ভুল বুঝে লজ্জিত হলেন। তাওবা করলেন— জীবনে আর এরূপ কথা বলবেন না। তারপর নাসির গাজীকে অনেক পুরস্কার দিলেন।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা