উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
রক্ত ছাড়া এক কেজি গোশত
এক গ্রামে হাতিম নামে এক লোক বাস করতো। সে খুবই ভাল লোক। আচার-ব্যবহার খুবই ভাল-নামায-রোযায় পাকা। তার টাকা-পয়সার কোন অভাব নেই। সে গরীব-দুখীকে বেশী ভালবাসে। তাদের দান-খয়রাতও করে, গ্রামের সবাই তাকে খুবই ভালবাসে।
হাতিমের আচার-ব্যবহারের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। তার সুনাম ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো।
হাতিমের গ্রামে ছিল এক সুদখোর। তাকে গ্রামের লোকেরা সুদখোর বলে ডাকে। সুদখোরের মনে হিংসার আগুন জ্বলে উঠলো। কারণ, গ্রামের লোকেরা তাকে সুদখোর বলে ডাকে, আর হাতিমকে দাতা হাতিম বলে ডাকে। সুদখোর ভাবতে লাগলো, কিভাবে হাতিমকে অপমান করা যায়?
হঠাৎ হাতিমের বড় ধরনের অসুখ হল। এর চিকিৎসায় তার সব ধন-সম্পদ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে গেল। হাতিম এক সময় সুস্থ হয়ে উঠলো।
এদিকে এক বৃদ্ধা হাতিমের কাছে এলেন মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য সাহায্য নিতে। বৃদ্ধা হাতিমের কাছে খুবই মিনতি করতে লাগলেন টাকার জন্য। কিন্তু হাতিমের কাছে তখন দেয়ার মত কোন টাকা নেই। বৃদ্ধাকেও ফিরাতে পারছেনা। হাতিম এক্স বৃদ্ধাকে নিয়ে রওয়ানা হল সুদখোরের কাছে। সুদখোরের কাছে হাতিম বৃদ্ধার জন্য কিছু টাকা কর্জ চাইলো।
সুদখোর ভাবলো- এ সুযোগে হাতিমকে অপমান করা যায়। তাই সে কৌশল করল। সে বলল- এ শর্তে টাকা দেব যে, ঠিক ঠিক সময় টাকা না দিতে পারলে আপনার শরীর থেকে এক কেজি গোশত দিতে হবে। এজন্য লিখিত কাগজ দিতে হবে। হাতিম মনে মনে ভাবলো- টাকা আমি দিতে পারবো, অসুবিধা নেই। তাই শর্ত মেনে নিয়ে কাগজে সই করলো। বৃদ্ধা খুশী হয়ে টাকা নিয়ে চলে গেলেন। মেয়ের বিয়েও সুন্দরভাবে দিলেন।
এদিকে যথাসময়ে হাতিম টাকা জোগাড় করতে পারল না। সময় পার হতেই সুদখোর এসে হাজির। টাকা দিতে না পারায় বিচার বসল হাতিমের বিরুদ্ধে। বিচারক হিসেবে ডাক পড়লো নাসির গাজীর।
সুদখোরতো মহাখুশী। আজ হাতিমের শরীর থেকে এক কেজি গোশত কেটে নিবে। হাতিমকে অপমান করবে। বিচার শুরু হল। নাসির গাজী সব কথা শুনলেন। নাসির গাজী মনে মনে কি যেন ভাবলেন। তারপর বললেন- সুদখোর! তুমি হাতিমের শরীর থেকে গোশত পাবে। হাতিম চমকে উঠলেন। নাসির গাজী এবার বললেন,
- তবে এক শর্তে।
- সুদখোর বলল, কি শর্ত?
- নাসির গাজী বললেন- কাগজে এক কেজি গোশত কেটে নেয়ার কথা আছে, রক্ত বের করার কথা নেই। তাই গোশত এমনভাবে কাটতে হবে, যেন রক্ত বের না হয়।
- সুদখোর এবার বলল-হুজুর! এটা সম্ভব নয়। তাই আমার কোন গোশত নেয়ার প্রয়োজন নেই। আমাকে মাফ করবেন।
বিচারে উপস্থিত সকলে হাতিমের জয় দেখে খুশী হল।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা