Saturday, November 16, 2024

লোভী দারোয়ানের শাস্তি | নাসির গাজীর বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প

উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-



লোভী দারোয়ানের শাস্তি

এক বাদশাহ ছিলেন তিনি খুব দান করতেন। তার কাছে ধনী-গরীব যেই গিয়েছে, কোন দিন খালি হাতে ফিরে আসেনি। তার দানশীল হাত দিয়ে সকলের হাত পূর্ণ করে দেয়াই তার বাদশাহী রেওয়াজ।

বাদশাহর দানের কথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু তাতে কি হবে, বাদশাহ যা দান করেন, তা তার মহলের চার দেয়ালের মধ্যেই থেকে যায়। তা নিয়ে দীন-দুঃখীরা বাড়ী পর্যন্ত এসে অভাব মোচন করতে পারে না। কারণ, বাদশাহ যা দেন, তা নিয়ে ফেরার পথে বাদশাহর দুই দারোয়ান তাতে ভাগ বসিয়ে নিয়ে নেয়। আর যা অবশিষ্ট থাকে, তা দিয়ে তেমন অভাব মোচন হয় না। অভাব অভাবই থেকে যায়। এভাবে মোটা অংকের ভাগ বসিয়ে বাদশাহর দুই দারোয়ান দিব্বি সুখেই আছে।

লোভী দুই দারোয়ানের কথা বুদ্ধির রাজা নাসির গাজীর কানে গেল। নাসির গাজী ঐ দুই দারোয়ানকে শিক্ষা দেয়ার জন্য গেলেন বাদশাহর দরবারে।

ভিতরে ঢুকতেই বাধা দিল প্রধান দারোয়ান- ভিতরে ঢোকা যাবেনা। তখন নাসির গাজী বললেন- আমি বাদশাহর দরবারে যাবো, আমাকে ভিতরে যেতে দিচ্ছো না কেন? তখন দারোয়ান বলল, যেতে দিতে পারি একটা শর্তে। গাজী সাহেব বললেন- ঠিক আছে, কি শর্ত তাড়াতাড়ি বল। তখন দারোয়ান বলল- শোন, বাদশাহর কাছে গেলে তিনি তোমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন না। তাই বাদশাহ হুজুর তোমাকে যা দেবেন, তার অর্ধেক যদি আমাকে দাও, তাহলে ঠিক ভিতরে যেতে দিব। নইলে কেটে পড়ো। তখন গাজী সাহেব বললেন, ঠিক আছে।

নাসির গাজী ভিতরে গেলেন। বাদশাহর দরবারে ঢোকার পথে দ্বিতীয় আরেকটি দারোয়ান বাধা দিল। তারও একই কথা। গাজী সাহেব সেটাও মেনে নিলেন। তারপর সালাম দিয়ে ভিতরে ডুকলেন।

বাদশাহ নাসির গাজীকে বসতে বলেন। গাজী সাহেব বললেন- হুজুর! আপনাকে এক নজর দেখতে চেয়েছিলাম। এখন দেখেছি, চলে যাই। তখন বাদশাহ বললেন- দেখ, আমার দুয়ারে কেউ এসে খালি হাতে ফিরে যাবে- এমন নজির স্থাপন করতে চাইনা। এ বলে বাদশাহ নাসির গাজীকে পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন কিছু একটা নেয়ার জন্য।

তখন নাসির গাজী বললেন, কিছু যদি নিতেই হয়, তাহলে আমি যা চাইব, তা-ই দেবেন। তখন বাদশাহ বললেন- ঠিক আছে, কি চাও বল। তখন নাসির গাজী বললেন- কিছু যদি দিতেই হয়, তাহলে আপনার পায়ের জুতো খুলে চারটা জুতোর বারি দেন আমার গায়ে। তাতেই আমি বেশী সন্তুষ্ট হবো।

তখন বাদশাহ কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন- এ তুমি কেমন জিনিস চাইলে? আজ পর্যন্ত আমার কাছে কেউ এমনটি চায়নি। তবে যারা শাস্তি স্বরূপ পেয়েছে, তারা বরং আমার কাছে হাত ঝোড় করে ক্ষমা চেযেছে, যাতে মাফ করে দেই। অথচ তুমি কিনা আমার কাছে সেই জিনিসটাই চেয়ে বসলে। নাসির গাজীও নাছোড়বান্দা। যে জিনিস চেয়েছেন, তা না নিয়ে এক বিন্দুও সরবেন না। শেষ পর্যন্ত বাদশাহ বাধ্য হয়ে নাসির গাজীর গায়ে চারটা জোতার বারি দেবার হুকুম দিলেন।

যখন চাপরাশি নাসির গাজীর গায়ে জুতা দিয়ে বারি দিতে যাচ্ছেন, ঐ মুহূর্তে নাসির গাজী জুতাটা ধরে বললেন- আগে গেটের দারোয়ান দু’টোকে ডাকা হোক। তখন দারোয়ান দু’জন বাদশাহর সামনে হাজির হয়ে সালাম দিল। বাদশাহ তখন গাজী সাহেবকে বললেন, এবার বল- কি ঘটনা। তখন নাসির গাজী বললেন, হুজুর! আমাকে যে চারটা বারি দেবার কথা ছিল, তার দু’টো জুতার বারি মেইন গেটের দারোয়ানকে দিন। কারণ, সে বলে ছিল- আপনি আমাকে যা দেবেন, তার অর্ধেক যেন তাকে দেই। আমি তো আর টাকা-পয়সা নেইনি। যা নিয়েছি, তা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করতে চাই না। অবশিষ্ট দু’টো বারি থাকে। ঐ দু’টো থেকে একটি দ্বিতীয় গেটের দারোয়ানকে দেয়া হোক। কেননা, সেও এ রকম বলেছিলেন।

তখন প্রধান দারোয়ানকে জুতার দু’টো বারি এবং দ্বিতীয় দারোয়ানকে একটি বারি দেয়া হল। আর থাকে অবশিষ্ট একটি। নাসির গাজী তখন বললেন- অবশিষ্ট আমারটা আমাকে দিয়ে দিন, চলে যাই।

তখন বাদশাহ বললেন- তোমার বুদ্ধি দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। আসল ঘটনা খুলে বল তো! তখন নাসির গাজী বললেন- তাহলে শুনুন, আপনার দানের কথা দেশের সবাই জানে। তাই আপনার কাছে লোক আসে দান নিতে। কিন্তু ঐ লোভী দারোয়ানের কারণে যা দেয়া হয়, তা আর দরিদ্র মানুষ বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে না। তাদের যার যে অভাব, সে অভাবই থেকে যায়। মাঝখান থেকে লোভী দারোয়ানদের পকেট ভারি হচ্ছে। তাই দরিদ্র মানুষের পক্ষ থেকে এসেছি দারোয়ানদের কিছু শিক্ষা দিতে। নাসির গাজীর কথা শুনে বাদশাহ খুবই দুঃখ পেলেন এবং বললেন- ওদের মতো লোভী দারোয়ান আমার দরবারে থাকতে পারে না। গাজীর পায়ের জুতা খুলে মালা বানিয়ে ওদের গলায় পরিয়ে সারা রাজ্য ঘুরিয়ে আনা হোক। আমার রাজ্যের প্রজা সাধারণ বুঝুক-আমি কারো লোভকে বরদাস্ত করি না, কারো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না। লোভী দারোয়ানদেরকে জুতার মালা পরিয়ে সারা রাজ্যে ঘুরিয়ে লোভের উচিত শিক্ষা দেয়া হলো।

নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ

  • এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
  • জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
  • মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
  • আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
  • মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
  • ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
  • একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
  • হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
  • উচিত বিচার ➜ পড়ুন
  • তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
  • বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
  • ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
  • পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
  • সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
  • চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
  • ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
  • দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
  • সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
  • আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
  • সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
  • চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
  • দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
  • অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
  • পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
  • কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
  • সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
  • পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,606FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles