উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর
একবার নাসির গাজীর পাশ্ববর্তী গ্রামের এক ভণ্ড লোক নিজেকে ‘পীর’ দাবী করল। সে ভন্ডামী করে মানুষের ধন-সম্পদ ও টাকা-পয়সা হারিয়ে নিতে লাগল এবং কয়েক জন অনুসারী ও জোগাড় করে ফেলল। এলাকার ভাল লোকজনেরা এসে নাসির গাজীর কাছে সেই ভন্ডপীরের ভন্ডামী থেকে রেহাই দিতে আবেদন জানাতে লাগল।
নাসির গাজী একদিন সেই ভন্ডপীরের গ্রামে গেলেন তার কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করতে। নাসির গাজী তাঁর কামরায় প্রবেশ করা মাত্রই দেখতে পেলেন, সে চোখ বন্ধ করে, হাত নেড়ে নেড়ে বলছে- চেই! চেই! চেই! দূর হ, দূর হ! তখন তাঁর অনুসারীরা জিজ্ঞেস করল, কি তাড়াচ্ছেন বাবাজী? তখন ভন্ডপীর বলল, একটি কুকুর হেরেম শরীফের ভেতর ঢুকে যাচ্ছিল, কুকুরটাকে তাড়ালাম।
নাসির গাজী বুঝতে পারলেন- লোকটি বিষম ভন্ড, তাকে তাঁর ভন্ডামীর সমুচিত শিক্ষা দিতে হবে। নাসির গাজী ধীরে ধীরে তাঁর নিকট গেলেন এবং তাকে ও তাঁর অনুসারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আগামী শুক্রবার দুপুর আমার বাড়িতে আপনাদের সবার খাওয়ার দাওয়াত রইল।
দিন ঘুরে শুক্রবার এল, জুমু’আর নামায পড়ে নাসির গাজী তাঁর আমন্ত্রিত অতিথিদের খাবার পরিবেশন করতে লাগলেন। সকলের তরকারী দিলেন ভাতের উপরে, শুধু ভন্ড পীরের তরকারী দিলেন গোপনে ভাতের নীচে। সকলে খেতে শুরু করল, আর ভন্ডপীরজী এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল। সে মনে মনে ভাবতে লাগল— “হায়! আমার তরকারী কোথায়?” নাসির গাজীর বাড়িতে ভোজ সভায় নিমন্ত্রিত অতিথি ব্যতীতও শত শত উৎসুক জনসাধারণ দেখতে এল-কিভাবে নাসির গাজী ভন্ডপীরের ভন্ডামী থেকে মানুষকে রেহাই দেন। এদিকে ভন্ডপীর তরকারী না দেখতে পেরে বসে বসে অপমানবোধ করছে। হঠাৎ সে মুখ ফুটে বলেই ফেলল- আমার তরকারী কোথায়?
তখন নাসির গাজী উপস্থিত লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, দেখলেন তো ভাইসব! আপনাদের পীর সাহেব ঘরে বসে মক্কা শরীফের কুকুর তাড়াতে পারেন, অথচ ভাতের নিচের তরকারীর কথা বলতে পারেন না। তিনি আসলে সত্যিকারের পীর নন, তিনি একজন ভন্ড।
তখন ভন্ডপীরের অনুসারীরাও তাঁর ভন্ডামী বুঝতে পারল এবং গ্রামবাসীসহ সকলে মিলে ভন্ডপীরকে আচ্ছা ধোলাই দিয়ে বিচার বিভাগের হাতে তুলে দিল। অতঃপর সবাই নাসির গাজীর বুদ্ধির প্রসংশা করতে করতে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে গেল।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা