উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
সব জায়গায় একই সূত্র
দ্বিপ্রহর হয় হয় অবস্থা-এমন সময় আখদ্দছ আলী গাছে উঠে একটি ডালের ডগায় বসে সেই ডালটির মূল কাটতে লাগল। ঠিক সেই মুহূর্তে নাসির গাজী এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলেন, আখদ্দছের এই আহম্মাকী কান্ড দেখে তাকে ডেকে বললেন— ভাই! অন্য ডালে বসে কাট, না হয় ডালসহ তুমি পড়ে যাবে। কিন্তু না, নাসির গাজীর কথায় সে কোন কর্ণপাতই করল না, সে কাটতেই লাগল।
কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই সে ডাল সমেত ধপ্ করে পড়ে গেল। অতঃপর নাসির গাজী সাহেবকে দৌড়ে এসে বলতে লাগল, আপনি নিশ্চয়ই কামিল লোক হবেন। না হয় ভবিষ্যতের খবর কি করে জানেন? আমার সামনে কি হবে আপনার বলে দিতে হবে। গাজী সাহেব অপারগতা প্রকাশ করলেও সে নাছোড়বান্দা, কিছুতেই তাকে ছাড়লো না। বাধ্য হয়েই গাজী সাহেব বললেন, তোমার সামনে অনেক বিপদ আছে।
পরের ঘটনা। সে বাড়ীতে এসে গাজী সাহেবের বলে দেয়া কথা পরিবারের অন্যান্যদেরকে জানাল, সবাই চিন্তিত হলো, না জানি সামনে আবার কোন্ বিপদ আসে। একদিন সে নদীতে গোসল করতে গিয়ে সাঁতার না জানার কারণে পানিব গভীরে গিয়ে হাবু ডুবু খেতে খেতে হাউ মাউ শুরু করে দিল। নদীর পাড়ের লোকেরা অবস্থা বেগতিক দেখে তাদেরও একই অবস্থা। কারো সাহস হচ্ছে না নামার। কারণ, যে নামবে সেই শেষ। তখন তার স্ত্রীর গাজী সাহেবের কথা স্মরণ হতেই নদীর পাশেই তার নিজ বাড়িতে দৌড়ে গিয়ে তাকে নিয়ে এল। গাজী সাহেব এসে লম্বা রশি আনার হুকুম দিতেই রশি উপস্থিত। রশির একটি মাথা তার হাতে দিয়ে অন্য মাথায় ধরে তাকে নিয়ে এলেন। গাজী সাহেবের জ্ঞানের প্রখরতা দেখে সবাই মারহাবা জানাল। তিনি উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন- আজ আমাদের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে এধরনের কঠিন সমস্যায় পড়তে হয়, তাই সর্বক্ষেত্রে সকলেরই জ্ঞানী গুণীদের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এরপর সালাম বিনিময় করে তিনি প্রস্থান করলেন।
আরেকদিন হল কি, আখদ্দছ আলী সুপারী পারতে গিয়ে অনেক উঁচু এক সুপারী গাছে উঠল। সুপারী পারার পর সে আর নামতে পারছে না। চেষ্টার ত্রুটি নেই, কিন্তু নামা যাচ্ছে না। এখন কি হবে? নিচের দিকে তাকাতেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। শুরু হয়ে গেল, হৈ হুল্লোড়। আশ-পাশের সবাই এসে উপস্থিত। সবার একই চিন্তা। এত লম্বা মইও যে নেই। সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হঠাৎ ছদর উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি সেই দিনের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিল।
শুনে বুদ্ধিটা মনে পড়ায় সকলের মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। পলকে রশি উপস্থিত করা হল। লম্বা বাঁশের মাধ্যমে তার হাতে দেয়া হল রশির এক মাথা। এরপর দেয়া হল টান। ফলে হুড়মুড় করে পড়ল সে মাটিতে। ততক্ষণে সব শেষ!!
শিক্ষা: কোন কিছু জানা থাকলেই সব জায়গায় তা ব্যবহার করতে নেই। অবস্থা বুঝে তা ব্যবহার করতে হয়।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা