উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
মিরাজ-সিরাজ দুই ভাইয়ের কথা
এক গ্রামে বাস করতো এক চাষী। সে চিল খুব ভাল এবং সরল সোজা মানুষ। কিছুদিন পর চাষী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল। চাষীর দুই ছেলে ছিল। বড় ছেলে সিরাজ, আর ছোট ছেলে মিরাজ। মিরাজ খুব চতুর ছিল। আর সিরাজের বুদ্ধি ছিল একটু হালকা। চাষী তাদের জন্য একটি কম্বল, একটি তালগাছ, আর একটি গাভী রেখে গিয়েছিল। তারা এগুলো ভাগ করার সিদ্দান্ত নিল।
প্রথমে তালগাছ ভাগ হল। মিরাজ তো খুব চালাক, এজন্য সে তালগাছের উপরের অংশ নিল। আর সিরাজকে নিচের অংশ দিল। এদিকে গাভীর পিছনের অংশ মিরাজ নিল, আর সিরাজকে দিল সামনের অংশ। কম্বলের ভাগ হল। মিরাজ রাত্রে ব্যবহার করবে, দিনের বেলায় সিরাজ ব্যবহার করবে।
মিরাজ রাত্রে খুব আরামে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমায়, আর সিরাজ ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপতে থাকে। গাভীর দুধও মিরাজ পুরোটাই নিয়ে যায়, কিন্তু সম্মুখের মুখে সিরাজকে গাভীর খাবার দিতে হয়। এমনিভাবে তালগাছের সব তাল মিরাজ নিয়ে যায়। সিরাজ কিছুই পায় না। উপরন্তু গাছের গোঁড়ায় পরিচর্যার জন্য তার খাটতে হয়।
নাসির গাজী একদিন তাদের এই অবস্থা অবলোকন করলেন। তারপর সিরাজকে ডেকে বললেন- কম্বল তোমার তো দিলেন বেলা, ঠিক আছে, তুমি দিনের বেলা কম্বল ভিজিয়ে রাখবে। সিরাজ নাসির গাজীর কথা মত তাই করল। রাত্রে মিরাজ পানিতে ভেজা কম্বল আর গায়ে দিতে পারল না। তখন বাধ্য হয়ে সিরাজকে বলল- আজ থেকে তুই আর কম্বল ভিজাবিনা, আমরা দু’জন একসাথে ঘুমাব।
তারপর তাল গাছের উপরের অংশ তো মিরাজের। এজন্য তাল যা হয়, সব হাটে বিক্রয় করে আসে, কিন্তু তা সিরাজকে এক টাকাও দেয়না। তাই সিরাজ আবার নাসির গাজীর কাছে এল। এবার নাসির গাজী বলল যে, সে যখন গাছে উটবে, তখন তুই গাছের গোড়ায় অর্থাৎ তোর নিচের অংশে কুড়াল দিয়ে কোপাতে থাকবে। সিরাজ ঠিক তাই করল। মিরাজ তখন উপর থেকে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগল, ভাইয়া কোপ দিওনা, আমি পড়ে যাব, মরে যাব। এভাবে চিৎকার দিতে লাগল। তারপর নিচে এসে বলল, আজ থেকে তালগাছে যে তাল হবে, তা আমরা দু’জনে ভাগ করে নিব।
তারপর গাভীর পিছনের অংশ তো মিরাজের, এজন্য গাভীর দুধ যা হয়, তার সব মিরাজ বিক্রয় করে আর কিছু নিজে ভক্ষণ করে। কিন্তু সিরাজকে দেয় না। তাই সিরাজ আবার নাসির গাজীর কাছে এল। নাসির গাজী বলল, মিরাজ যখন গাজীর দুধ দোহন করবে, তখন তুমি গাভীর মুখে পিটাতে থাকবে। সিরাজ গাভীর মুখে পিটাতে লাগল। গাভী তখন লাফাতে লাগল। ওদিকে গাভীর লাথির ভয়ে মিরাজ দৌড় দিল। তারপর কাছে এসে বলল যে, ভাই! আজ থেকে গাভীর যে দুধ হবে, তা আমরা দু’জনে ভাগ করে নিব। তারপর তারা সবকিছুতে উভয়ে সমান অংশীদার হয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। নাসির গাজীর বুদ্ধির বলে সিরাজের দুঃখ ঘুচল।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা