উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস
নাসির গাজীর এক সময় একটি খাসী ছিল। তিনি সেটিকে খুব আদর যত্ন করে বড় করেছেন। তিনি নিজ হাতে আদর করে তাকে খাবার খাওয়ান। সেও নাসির গাজীকে খুব ভালবাসে। ফাঁক পেলেই দৌড়ে এসে তাঁর কোল ঘেঁষে দাঁড়ায়, তার খালি গা, হাত, পিঠ চাটতে থাকে। নাসির গাজী আদর করে তার নাম রেখেছেন ‘ইবনি শাত’-যার অর্থ হচ্ছে ‘বকরীর বাচ্চা’।
খাসীটি এখন বেশ বড় হয়ে উঠেছে। দেখতে শুনতে বেশ তেলতেলে, নাদুস-নুদুস। গায়ের লোম বেশ চিকন মসৃণ, যেন তেল চুইয়ে পড়ছে।
পাড়া -প্রতিবেশীরাও ‘ইবনি শাত’কে খুব ভালবাসে। মাঝে মাঝে তার জন্য কাঁঠালের বুথা ও পাতা, পাকা কলার খোসা, আমের চোকলা, বরই এসব হাতে করে নিয়ে এসে নাসির গাজীর সামনেই খাওয়ায়, গায়ে হাত বুলায়, আদর করে। তাদের খাসীটিকে আদর করার কারণ-তারা এটি মজা করে খেতে চায়। তাই এর প্রতি তাদের খুব লোভ। উপর দিয়ে আদর দেখায়, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তাদের ইচ্ছা এটি জবাই করে ধুমধাম করে ভক্ষণ করা। কতবার তারা নাসির গাজীকে এ প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু কিছুতেই তাকে রাজী করাতে পারেনি। এ অজুহাত সে অজুহাত দেখিয়ে গাজী সাহেব তাদের খাসীটি মজা করে খাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
একদিন মহল্লার তরুণেরা মিলে এক ফন্দি আঁটল। তারা নাসির গাজীর কাছে গিয়ে চোখে-মুখে দুঃখের ভাব দেখিয়ে বলল, গাজী সাহেব! খুবই দুঃসংবাদ! শহরে গিয়েছিলাম। শুনে এলাম, সকলেই বলাবলি করছে, আগামীকাল নাকি দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। একথা বলে ইতস্ততঃ করে মাথা চুলকিয়ে দলের নেতা বলল, তাই বলছিলাম কি, সকল কিছু যখন ধ্বংসই হয়ে যাবে, তখন আমাদের আদরের খাসীটি আর রেখে লাভ কি? বরং এটি সৎ কাজে লাগালে সবাই সন্তুষ্ট চিত্তে মরতে পারতাম।
নাসির গাজী সকলের কথা শুনে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে জেনে নিজেও খুব দুঃখ করলেন। অনেকক্ষণ চিন্তা-ভাবনা করে আজকেই সন্ধ্যায় তার বাড়িতে এসে সকলকে চারটি ডাল-ভাত খাওয়ার জন্য দাওয়াত করলেন।
সকলেই মহাখুশী। মাগরিবের পরে একে একে সবাই এসে নাসির গাজীর বাড়িতে হাজির। তারা পাড়া-প্রতিবেশী সকলকেই একথা জানিয়ে দিয়েছিল তাই নাসির গাজীর বাড়িতে লোকে গমগম করছে। নাসির গাজীও যথারীতি খাসীটি জবাই করে পরিবেশন করে সবাইকে খাওয়ালেন।
সবাই তৃপ্তি সহকারে আহার করে বিশ্রামে গেল। এদিকে খাওয়া দাওয়া করতে রাতও ভারী হয়ে এল। তারা গায়ের জামা ও পায়ের জুতা খুলে বৈঠকখানায় যে যেখানে পারে শুয়ে পড়ল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সুখনিদ্রায় নাক ডাকতে লাগল। ওদিকে হল কি, সুযোগ বুঝে নাসির গাজী সবার জামা, চাদর ও জুতা একত্র করে গাইট বেঁধে বাজারে নিয়ে গেলেন এবং সেগুলো পুরনো কাপড় ও জুতোর দোকানে বিক্রি করে এলেন। সকলেরই খাওয়া একটু বেশী হয়েছিল, তাই ঘুমও একটু ভারী হয়েছিল। তারা ঘুম থেকে উঠে তো অবাক! দেখে-তাদের জামা-কাপড়, জুতো উধাও। তারা নাসির গাজীর কাছে জানতে চাইল, গাজী সাহেব! আমাদের জামা-কাপড়, জুতো কোথায়? নাসির গাজী অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে বললেন, জামা-কাপড়, জুতো এসব রেখে আর লাভ কী? দুনিয়া ধ্বংসের আগেই আমি সেগুলো খাসীটির মত ধ্বংস করে ফেলেছি।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা