উপমহাদের প্রখ্যাত আলেম, হাকিমুল উম্মত হিসেবে খ্যাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রচিত মুসলমানের হাসি বই-এ নাসির গাজীর অনেকগুলো বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয় গল্প স্থান পেয়েছে। গল্পগুলো থেকে শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য অনেক হাস্যরসাত্মক শিক্ষণীয় গল্প রয়েছে। সেখান থেকে গল্পগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-
সম্পদের ওসীয়তনামা
বহুদিন আগের কথা। ইরান শহর থেকে বহু দূরে বাস করতো এক ব্যক্তি। লোকটি ছিল খুব দরিদ্র। কিন্তু অনেক কষ্ট করে আপন বুদ্ধির বলে সে বেশ টাকা-কড়ি উপার্জন করেছিল।
তার তিনটি আদরের ছেলে ছিল। তাদের চেহারাও ছিল ভারী সুন্দর। ক্রমে ক্রমে দিন যায়, বছর যায়। এতে তার বয়স বাড়ে, যুবকের পর বৃদ্ধের কোটায় উপনীত হয়। সেই সাথে সে আরো ধনী হয়ে উঠে। তার ছেলেরাও ধীরে-ধীরে বড়ো হতে থাকে, তারা পিতাকে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক সাহায্য-সহযোগিতা করতে থাকে।
কিন্তু সাহায্য করলে কি হবে, তারা কেউ পিতার মত বুদ্ধিমান ছিলো না। তাই লোকটি যতই বৃদ্ধ হতে থাকে, ততই তার চিন্তা আরো বাড়তে থাকে। ছেলেদের ভবিষ্যতের চিন্তা করে অত্যন্ত মুষড়ে পড়ে। সে দেখলো যে, তাঁর ঘর-বাড়ী, টাকা-কড়ি যা কিছু আছে, তা ছেলেরা বাড়িয়ে কোন কিছু করতে পারবে না। সারা জীবনে যতটুকু সে আয় করেছে, তত টুকুই খেয়ে শেষ করবে। কেননা, কোন কিছু করার মত যোগ্যতা একটি ছেলেরও নেই। কাজেই ছেলেরা যাতে করে তাদের সারাটি জীবন খেয়ে-দেয়ে সুখে-শান্তিতে কাটাতে পারে, সে জন্য সে ঠিক করলো যে, তাদরেকে প্রচুর ধন-রত্ন দিয়ে যাবে। এই কথা ভেবে সে একজন উকিল এবং দু’জন সাক্ষীকে ডেকে একটি ওসীয়তনামা তৈরী করে ফেললো।
অতঃপর লোকটি একদিন মৃত্যুবরণ করলো। ছেলেরা তখন জানতে পারলো যে, তাদের পিতা তাদের জন্য একটা ওসীয়তনামা রেখে গেছেন। তখন ওসীয়তনামা তারা বের করলো। দেখা গেল যে, তাতে লেখা রয়েছে: ছেলেরা সোনা রূপা, বিষয়-সম্পত্তি সব কিছুরই সমান অংশ পাবে। কিন্তু এসব ছাড়াও উক্ত লোকটির সতেরটি হাতি ছিল। আর এই হাতির ভাগ বাটোয়ারা নিয়েই ছিল এই ওসীয়ত নামার সবচেয়ে জটিলতা। ওসীয়ত নামায় উল্লেখ করা হয়েছিল- তার বড় ছেলে পাবে হাতির সমষ্টির অর্ধেক, আর মেজো ছেলে পাবে এক তৃতীয়াংশ এবং ছোট ছেলে পাবে এক নবমাংশ।
ছেলেরা তাদের পিতাকে খুবই ভালবাসতো। সে জন্য তারা তাদের পিতার আদেশ পালন করার জন্য খুবই তৎপর হয়ে উঠলো। তারা সব কিছুরই ভাগ বাটোয়ারা করে নিল, কিন্তু হাতীর ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে বাঁধলো এক ভয়ানক বিভ্রাট। তারা নিজেরা তো পারলোই না, তাদের আত্মীয়-স্বজনরাও এই ওসীয়তনামা অনুযায়ী ভাগ বাটোয়ারার সমাধান দিতে পারলো না।
তারা যে শহরে বাস করতো, সে শহরে একবার বেড়াতে এলেন নাসির গাজী। তারা তিন ভাই নাসির গাজীর সাথে সাক্ষাৎ করে আবেদন জানাল এই বিষয়টির সুন্দর সমাধানের জন্য। ব্যাপারটা বুঝে দেখে নাসির গাজীর মত জ্ঞানী লোকের মাথাও গেল ঘুলিয়ে। কিন্তু যথাযথ সমাধান দেয়াটাই তাঁর কাজ। সে জন্য তিনি জোর গলায় বললেন: ছেলেরা! তোমরা এখন বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম করো। আগামীকাল আমি নিজে তোমাদের বাড়িতে যাবো এবং তোমাদের পিতার ওসীয়তনামা অনুযায়ী হাতি বন্টন করে দিয়ে আসব।
এভাবে ছেলেরা নিজেদের ঝামেলা নাসির গাজীর ঘাড়ে চাপিয়ে শান্ত মনে বাড়ি ফিরে এলো এবং তারা রাতের বেলা আরাম করে ঘুমালো। কিন্তু নাসির গাজীর চোখে ঘুম নেই। রাতে তিনি বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে লাগলেন। হঠাৎ তার মাথায় একটি বুদ্ধির উদ্রেক হলো। তখন তিনি মনে মনে বলতে লাগলেন, বারে, ব্যাপারটাতো একেবারে সহজ।
পরদিন সকাল বেলা ঐ বাড়িতে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটেছে। তারা দেখতে এসেছে-নাসির গাজী কিভাবে সমস্যার সমাধান দেন। নাসির গাজী একটি হাতি জোগাড় করে সেটার উপর আরোহণ করে সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি খুব উচ্চঃস্বরে ওসীয়তনামা পাঠ করলেন। অতঃপর বললেন- ছেলেরা শুন! তোমাদের পিতার রেখে যাওয়া সতেরোটি হাতীর সাথে আমি দিলাম একটি হাতি। মোট হলো আঠারোটি হাতি। বড় ছেলে যেহেতু অর্ধেক পাবে, তাই হিসেবে মতে নয়টি পাবে। আর মেজো ছেলে যেহেতু এক তৃতীয়াংশ পাবে, সেই হিসেবে পাবে ছয়টি হাতি। আর ছোট ছেলে যেহেতু এক নবমাংশ পাবে, তাই সে পাবে দু’টি হাতি। এখন ৯+৬+২ = ১৭টি হতি হলো? আর বাকী রইলো একটি হাতী, যা আমি দিয়েছিলাম। অতএব, আমি আমার হাতী নিলাম। তোমরা সবাই খুশি হয়েছো তো? সবাই এক কণ্ঠে বলে উঠলো, জি, আমরা খুশী হয়েছি। সাথে সাথে উপস্থিত জনতা নাসির গাজীর বুদ্ধির তারিফ করতে লাগল।
নাসির গাজীর অন্যান্য গল্পসমূহ
- এক সিংহ ও পথচারীর গল্প ➜ পড়ুন
- জ্বি হুজুর! জ্বি হুজুর!! ➜ পড়ুন
- মূল্যবান সম্পদ ➜ পড়ুন
- আজ নগদ কাল বাকী ➜ পড়ুন
- মাছের মাথা-খাওয়ার লোভ ➜ পড়ুন
- ওয়াজ না করার ফন্দি ➜ পড়ুন
- একসাথে দু’জন ➜ পড়ুন
- হতবাক ইহুদি ➜ পড়ুন
- উচিত বিচার ➜ পড়ুন
- তিন টাকার সদাই ➜ পড়ুন
- বাদশাহ’র ছেলের লেখাপড়া ➜ পড়ুন
- ফুলদানির জন্য মৃত্যুদন্ড ➜ পড়ুন
- পন্ডিত খেতাবের বিড়ম্বনা ➜ পড়ুন
- সৎ লোকের সন্ধানে ➜ পড়ুন
- চৈতন্য ফিরে এল ➜ পড়ুন
- ঝাড়-ফুঁকের এ্যাকশন ➜ পড়ুন
- দিতে জানে না, নিতে জানে ➜ পড়ুন
- সম্পদের ওসীয়তনামা ➜ পড়ুন
- আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যেই করেন ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- চোর ধরার আজব বুদ্ধি ➜ পড়ুন
- দুনিয়া ধ্বংসের আগেই ধ্বংস ➜ পড়ুন
- অল্প সময়ের জন্য বিনা খরচে সুখের আস্বাদ ➜ পড়ুন
- পনের দিনের মজুরীর ভয়ে ➜ পড়ুন
- কুকুর তাড়ানো ভণ্ডপীর ➜ পড়ুন
- সব জায়গায় একই সূত্র ➜ পড়ুন
- পবিত্র কোরআনের আয়াতের ফুঁকের ক্ষমতা